বুনো যৌবনে একজন বিলকিস (১ম কিস্তি)
রেলস্টেশন। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গার একটি। রাত-দিন এখানে জন ও যানের পদচারনায় কোলাহল উদ্দীপ্ত থাকে। এখানে প্রিয়জনকে নিতান্তই অপরিহার্য্য কারণে বিদায় দিতে এসে প্রিয়সীরা বুকভরা চাপা কান্নায় নিজের মুখ আঁচলে লুকায়। আবার বহুদিন পরে প্রিয় মানুসের সাথে সাক্ষাতের আনন্দ ভরা নয়নে অতি উৎকণ্ঠার সহিত নির্ধারিত ট্রেনের অপেক্ষা।
এই স্টেশনে এতসব গন্তব্যে ফেরা মানুষের ভীরে, গন্তব্যহীন মানুষও আছে অনেক। যাদের ফেরার কোন তাড়া নেই। তবে উৎকণ্ঠা আছে। যুদ্ধের উৎকণ্ঠা। জিবিকার জন্য যুদ্ধ।
সারাদিনে প্রাণপণ ছোটাছোটি করেও যারা দু’বেলা পেট ভরে খাবারের বন্ধবস্ত করতে পারে না। তবে মাথা গোজার ঠাঁই এদের যথেষ্ঠ আছে। মাথা গোজার জন্য এদের বিলাসিতা নিষ্প্রয়োজন। রেলওয়ের প্লাটফর্মে পরিত্যাক্ত পেপারের আশ্রয়ে এদের আনন্দ শয্যার দস্তুর আয়োজন চলে।
বিলকিস ইদানিং স্টেশনের অদূরে পরিত্যাক্ত একটি মালগাড়ীর বগিতে ঠাই খুঁজে পেয়েছে। পাশে ওর মাও ঘুমায়। যাত্রীদের লাথি খেতে হয় না আবার বৃষ্টিতেও আপাতত নিশ্চিন্ত নিরাপদ আশ্রয়, যতদিন রেলওয়ের লোকেরা তাড়িয়ে না দেয়।
তবে ভয় আছে মাংশাসী হিংস্র পশুরূপী অমানুষ পুরুষগুলোকে। যারা ওর নোংরা কাপড়ের গন্ধে ভমি করে দেয়। কিন্তু বাড়ন্ত শরীরের পচাঁ গন্ধেও মাতাল হতে চায়। দেশি মদের তৈরি প্রণালীও না-কি সস্তা ও পঁচা ফল এবং সবজি।
বিলকিস এই স্টেশনেই নিতান্ত অযত্নে আর অবহেলায় বেড়ে উঠেছে। এখানকার সবকিছু তার জানা। প্রতিটা ইট পাথরে ওর শরীরে গন্ধ মিশে আছে। এই স্টেশনের নোংরা কাঁদা মাটিই ওর বাড়ী। ওর আপন। পরমাত্মিয়। ছোটবেলায় সারাদিন যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা করতো। রাতে কোথাও একটি নোংরা ধূলাকালিতে লুটোপটি অবস্থা কম্বল মুড়ি দিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিতো। ওর মাও তখন সুস্থ ছিল। নেংড়া এক ভিক্ষুকের ঠেলা ঠেলে দিত। প্রতিদিন তিনভাগের একভাগে কুঁড়ি বা ত্রিশ টাকা পেত। যেদিন কোন কিছু পেতনা সেদিন অনাহারে থাকতো। এখন সেই নেংড়া ভিক্ষুকটি আর স্টেশনে আসে না; হয়তো মারা গেছে অথবা দুরারোগ্য কোন রোগে বিছানায় পরে পরে মৃত্যুর দিন গুনছে।
বিলকিসের এখনো ভাসা ভাসা মনে পড়ে। সে ছোট সময় খুব ভাবতো, যেদিন তার মা তার জন্য কোন খাবারের টাকা যোগার করতে পারতো না সেদিন কেন এক প্লেট ভাতের বিনিময় তার মাকে অন্য ভিক্ষুকের নোংরা কম্বলে মধ্যে থাকতে হতো। কিন্তু বিলসিক এখন বুঝতে পারে। তাকে বড় করার জন্য তার মায়ের ত্যাগ। তার মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য তাকে কত সংগ্রাম করতে হয়েছে।
বিলকিসের মা এখন মরণ রোগে আক্রান্ত। তিলে তিলে মুত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব কম বয়সে নিস্তেজ হয়ে পরেছে। হাড্ডিসার দেহ কোথাও একটুকরা মাংস অবশিষ্ট নেই। কোনমতে শুধু নিশ্বাসটুকু স্বচল রয়েছে। মায়ের প্রতিদিনকার মুত্যু যন্ত্রণা দেখে দেখে বিলকিসের এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। বিলকিস বিটলু কামালের মাদকদ্রব্যের খুচরা বিক্রেতা। প্রতিদিনে আশি থেকে একশত টাকা পায়। তাতে তার মায়ের চিকিৎিসা আর তার করা হয় না। বিনাচিকিৎসায় যতদিন হায়াৎ আছে বাঁচবে তারপর একদিন মরে গেলে সে জামেলামুক্ত হবে। তার জন্য তার মায়ের অবদান আর মায়ের জন্য তার কতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা দরকার সেটা এখানে তাকে কেউ স্বরণ করিয়ে দেয় না।
বিলকিস দেখতে কালো কিন্তু তার গোলগাল মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক ভদ্রলোক পথচারীরা আফসুস করে। এই মেয়েটি কোন ভদ্রঘরে জন্ম নিলে নিশ্চই তার শরীরের নোংরা কালো ত্বক আর এমন কালো থাকতে পারতো না। সারাদিন রোদ্রতাপে, অযত্ন আর অবহেলায়ও কেমন তার সর্বাঙ্গে নবযৌবনের জোয়ার ঠিকরে পরছে। সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।
এই স্টেশনে এতসব গন্তব্যে ফেরা মানুষের ভীরে, গন্তব্যহীন মানুষও আছে অনেক। যাদের ফেরার কোন তাড়া নেই। তবে উৎকণ্ঠা আছে। যুদ্ধের উৎকণ্ঠা। জিবিকার জন্য যুদ্ধ।
সারাদিনে প্রাণপণ ছোটাছোটি করেও যারা দু’বেলা পেট ভরে খাবারের বন্ধবস্ত করতে পারে না। তবে মাথা গোজার ঠাঁই এদের যথেষ্ঠ আছে। মাথা গোজার জন্য এদের বিলাসিতা নিষ্প্রয়োজন। রেলওয়ের প্লাটফর্মে পরিত্যাক্ত পেপারের আশ্রয়ে এদের আনন্দ শয্যার দস্তুর আয়োজন চলে।
বিলকিস ইদানিং স্টেশনের অদূরে পরিত্যাক্ত একটি মালগাড়ীর বগিতে ঠাই খুঁজে পেয়েছে। পাশে ওর মাও ঘুমায়। যাত্রীদের লাথি খেতে হয় না আবার বৃষ্টিতেও আপাতত নিশ্চিন্ত নিরাপদ আশ্রয়, যতদিন রেলওয়ের লোকেরা তাড়িয়ে না দেয়।
তবে ভয় আছে মাংশাসী হিংস্র পশুরূপী অমানুষ পুরুষগুলোকে। যারা ওর নোংরা কাপড়ের গন্ধে ভমি করে দেয়। কিন্তু বাড়ন্ত শরীরের পচাঁ গন্ধেও মাতাল হতে চায়। দেশি মদের তৈরি প্রণালীও না-কি সস্তা ও পঁচা ফল এবং সবজি।
বিলকিস এই স্টেশনেই নিতান্ত অযত্নে আর অবহেলায় বেড়ে উঠেছে। এখানকার সবকিছু তার জানা। প্রতিটা ইট পাথরে ওর শরীরে গন্ধ মিশে আছে। এই স্টেশনের নোংরা কাঁদা মাটিই ওর বাড়ী। ওর আপন। পরমাত্মিয়। ছোটবেলায় সারাদিন যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা করতো। রাতে কোথাও একটি নোংরা ধূলাকালিতে লুটোপটি অবস্থা কম্বল মুড়ি দিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিতো। ওর মাও তখন সুস্থ ছিল। নেংড়া এক ভিক্ষুকের ঠেলা ঠেলে দিত। প্রতিদিন তিনভাগের একভাগে কুঁড়ি বা ত্রিশ টাকা পেত। যেদিন কোন কিছু পেতনা সেদিন অনাহারে থাকতো। এখন সেই নেংড়া ভিক্ষুকটি আর স্টেশনে আসে না; হয়তো মারা গেছে অথবা দুরারোগ্য কোন রোগে বিছানায় পরে পরে মৃত্যুর দিন গুনছে।
বিলকিসের এখনো ভাসা ভাসা মনে পড়ে। সে ছোট সময় খুব ভাবতো, যেদিন তার মা তার জন্য কোন খাবারের টাকা যোগার করতে পারতো না সেদিন কেন এক প্লেট ভাতের বিনিময় তার মাকে অন্য ভিক্ষুকের নোংরা কম্বলে মধ্যে থাকতে হতো। কিন্তু বিলসিক এখন বুঝতে পারে। তাকে বড় করার জন্য তার মায়ের ত্যাগ। তার মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য তাকে কত সংগ্রাম করতে হয়েছে।
বিলকিসের মা এখন মরণ রোগে আক্রান্ত। তিলে তিলে মুত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব কম বয়সে নিস্তেজ হয়ে পরেছে। হাড্ডিসার দেহ কোথাও একটুকরা মাংস অবশিষ্ট নেই। কোনমতে শুধু নিশ্বাসটুকু স্বচল রয়েছে। মায়ের প্রতিদিনকার মুত্যু যন্ত্রণা দেখে দেখে বিলকিসের এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। বিলকিস বিটলু কামালের মাদকদ্রব্যের খুচরা বিক্রেতা। প্রতিদিনে আশি থেকে একশত টাকা পায়। তাতে তার মায়ের চিকিৎিসা আর তার করা হয় না। বিনাচিকিৎসায় যতদিন হায়াৎ আছে বাঁচবে তারপর একদিন মরে গেলে সে জামেলামুক্ত হবে। তার জন্য তার মায়ের অবদান আর মায়ের জন্য তার কতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা দরকার সেটা এখানে তাকে কেউ স্বরণ করিয়ে দেয় না।
বিলকিস দেখতে কালো কিন্তু তার গোলগাল মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক ভদ্রলোক পথচারীরা আফসুস করে। এই মেয়েটি কোন ভদ্রঘরে জন্ম নিলে নিশ্চই তার শরীরের নোংরা কালো ত্বক আর এমন কালো থাকতে পারতো না। সারাদিন রোদ্রতাপে, অযত্ন আর অবহেলায়ও কেমন তার সর্বাঙ্গে নবযৌবনের জোয়ার ঠিকরে পরছে। সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দেবব্রত সান্যাল ২৬/১০/২০১৫বানান অবহেলা করে লেখক হবেন কি করে। লিখে নিজে পড়বেন , অন্যদের পড়াবেন। লেখার ভাষা আর বলার ভাষার প্রভেদটা বুঝুন