www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পাখির বন্ধু বাধঁন

বাঁধন দেখতে যেমন মিষ্টি, দুষ্টুমিতেও হয়েছে সবার সেরা। খুব রাগ। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে যায় না কারণ কান্নাকাটি শুরু করে দিলে দুবেলা পার হয়ে যাবে তবুও তার সুমধুর সুরের কন্দনসংগীত আর শেষ হবে না। বাঁধনের বাবা শহরে চাকুরি করে। সেই সুবাদে ওরা ঢাকাতেই থাকে। বাধঁন ঢাকার একটি স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। শীতকালীন ছুটি। তাই বাবা মায়ের সাথে দাদু বাড়ী বেড়াতে এসেছে।
শীত প্রায় যাই যাই করছে। তবুও সকালে ইদানিং বেশ শীত পরে। বাঁধনের বাবা তখনও ঘুম থেকে উঠেনি। বাধঁন কোত্থেকে দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে
বললঃ বাবা, ‘বাবা দেখ বকের বাচ্চা ধরেছি!’
বাধঁনের বাবা মনির  চোখ মেলে দেখল, ছোট একটা বকের বাচ্চা কাঁদা জলে লুটোপুটি খেয়ে তার নাকের উপর ঝুলছে। মনির সাহেব চোখ মেলতেই ছোট্ট কর্দমাক্ত বকের বাচ্চাটা “খ্যাচ” শব্দ করে বুলে উঠল। যেন মনির সাহেবকে দেখে বলতে চাইল, গুড মনির্ং টাইপ কিছু কিন্তু ঠান্ডা জলে ভিজে বকের বাচ্চার গলাটা বসে গিয়েছিল তাই পুরাটা বুঝা গেল না। মনির সাহেব বাধঁনের মুখের দিকে তাকাতেই সে আনন্দে নেচে উঠল আর হাস্যবিচ্ছুরিত কণ্ঠে গানের মত করে বারবার শুধু বলতে লাগল,
‘হা-হা দেখ বাবা,দেখ।  কত সুন্দর বকের ছানা, ধরে নিয়ে এসেছি! হা-হা দেখ বাবা... ’
মনির সাহেব চেঁচিয়ে উঠল, ‘কই গেলে দেখ তোমার ছেলে কি ধরে এনেছে। তারাতারি এসো দেখ, তাও আবার বিছানার উপর নিয়ে এসেছে।’
মায়ের কথা শুনে দিল দৌড়। সাথে পাড়ার বয়াতি বাড়ীর দুটি সমবয়সী বাচ্চা ছিল তারাও বাঁধনকে অনুসরণ করে দৌড়াল।
মনির সাহেব ছেলেকে কখনো শাসন করে না। শুধুই আদোর করে। পৃথিবীর যত আদোর আছে সব তার ছেলের জন্য বরাদ্ধ দিয়ে রাখে। বাঁধনের কাছে তার বাবা-মা দুজনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কে ভাল জানতে চাইলে তার নানী বাড়ীর লোকেদের মুখগুলো কেমন হাড়ি হাড়ি হয়ে থাকে। তার দৃষ্টিতে বাবা খুব খুব ভাল আর মা একটু ভাল অনেক পঁচা।

বাঁধনের মা ছেলের কথায় কিন্তু মোটেও রাগ করে না। বরং ছেলে কথায় তার আহ্লাদ আর ধরে না। ছেলেকে দৌড়ে ধরে এনেছে। দৌড়ে তিনি কম যান না। গ্রামের মেয়ে। বৌ ছি খেলার বয়সটার রেশ এখনো যাই যাই করছে।

টিউবওয়েলের পাড়ে নিয়ে বাঁধনের মা বাধঁনের গায়ের কাঁদামাটি ধুঁয়ে দিলো। আর বকের ছানা পঁচা। ভাল না। বকের ছানা পচাঁরা ধরে। কত্তো কথা কিন্তু বাঁধনের সাফ কথা, সে কাউকে বকের ছানা ধরতেও দেবে না। এমনকি তার দাদুকেও না।
উপায়ন্তর না দেখে বাঁধনের মা বললঃ ‘আচ্ছা বকের ছানা কারো কাছে দিতে হবে না। তুমি ওটা দিয়ে কি করবে বলো?’ বাঁধন সোজা উত্তার ‘ওটা আমি আমাদের কবুতরের সাথে পুষবো।’ বাঁধনের মা ছেলের কথায় সায় দিল। বাঁধনের মা জানে কিভাবে ছেলেকে পটাতে হয়। তার সাথে জোর করলে হবে না। তাকে গায়ের করার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে আদোর। আদোর দিলে বাঁধন আস্ক্রিমের মত গলে পানি হয়ে যায়। ‘আমার লক্ষী বাবাটা পাখি পুষবে।’ বলে বাধঁনের গালে বাধঁনের মা একটা চুমু দিল। বাধঁন এবার বেশ খুশি। বাঁধনের মা বকের বাচ্চাটা গোসল করিয়ে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।
নাস্তার সময় হয়ে গেল কিন্তু  বাঁধনের নাস্তার টেবিলে যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই। বাবা, দাদু, দাদি, চাচ্চু, ফুপি কারও কথায় সে কর্ণপাত করছে না। বাঁধনের বাবা ছুটির দিনে সাধারণত ছেলেকে ছাড়া নাস্তা খায় না। বাঁধনের মা গেল দেখল বাধঁন আর পাড়ার গোত্রালঙ্গ কিছু ছেলে মেয়ে উঠুনে গোল করে বসে আছে আর মধ্যে বকের বাচ্চাটা। পায়েল ব্যাপারটা বুঝতে পারল। জিজ্ঞেস করলঃ ‘বাবা কি করছ?’ বাধঁন হেসে হেসে বললঃ ‘ছানাটার অনেক শীত ধরেছে তাই রোদে রেখেছি।’
-‘ঠিক আছে।’  পাড়ার ছেলেগুলোকে দিল একটা ধমক,
-‘এই তোরা কি করছিস। যা । যার যায় বাড়ী চলে যায়।’
বাঁধনের মা লক্ষ্য করে দেখল মা পাখিটা দূরে রেন্টি গাছের ডালে মন খারাপ করে বসে আছে। বাঁধনের মায়ের বিষয়টা খুব খারাপ লাগল।
বাঁধনকে ডেকে বলল, ‘বাবা ঐ যে আর একটা বড় বক দেখতে পাচ্ছ।’ বাধঁন মায়ের কথায় সায় দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি।’
-‘ওটা এই বাচ্চাটার মা। বাচ্চার জন্য মা পাখিটার মনটা দেখ কেমন খারাপ করে আছে। তুমি বরং বাচ্চাটা ছেড়ে দাও।’ বাঁধন না কিছুতেই ছাড়বে না। মা বাঁধনকে আবার বুঝালো,
-‘দেখ। বাচ্চাটার জন্য মা বকটা কেমন কান্না করছে আর বলছে তুমি আমার বাচ্চাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে অনেক দোয়া করবো, তুমি একদিন অনেক বড় হবে।’
বাঁধনের মনে এবার কৌতুহল জাগল। বাঁধন মাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তাহলে পাখিও কথা বলতে পারে? কিন্তু কই আমি তো শুনতে পাইনি।’ বাঁধনের মা বুঝালো, ‘হ্যাঁ পাখি কথা বলতে পারে তবে তুমি যখন আমার মত বড় হবে তখন ঠিকই পাখির কথা বুঝতে পারবে।’
বাধঁন বিশ্বাস করল তার মা পাখির কথা বুঝতে পারে। এবার আবার জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা পাখিটা আর কিছু বলে না?’
-হ্যাঁ বলে, বলে আমি যদি তোমাকে তোমার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে যাই তোমার কেমন লাগবে?
বাধঁন তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আমার ভীষণ খারাপ লাগবে। আমি তোমাকে ছাড়া কখনো থাকতে পারবো না।’
বাঁধনের মা শুনে হেসে দিয়ে বলল, ‘তা হলে যে বলো আম্মু অনেক পচাঁ?’
বাঁধন কাদো কাদো গলায় বলল, না আর কখনো বলল না।
বাঁধনের মা বাঁধনকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে দু গালে চুমু খায়। বলে, ‘আমার সোনা যাদু, টিয়া পাখি বাবাটা। এখন থেকে মায়ের সব কথা শুনবে তো?’
বাধঁনও মায়ের গালে চুমু দিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ সব কথা শুনবো।’
বাঁধনের মা বলল, ‘তা হলে বকের বাচ্চাটা ছেড়ে দেই?’
বাঁধন রাজি হল। বাচ্চাটা ছেড়ে দেওয়া হল। বাচ্চাটা উড়াল দিয়ে মায়ের কাছে রেন্টি গাছের ডালে গিয়ে বসলো। মা পাখিটা আনন্দে আত্মাহারা হলো। বাচ্চার পালকে ঠোট বুলিয়ে আদোর দিয়ে দিলো। দৃশ্যটা দেখে বাধঁনের খুব আনন্দ হলো। বাঁধন মাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, ওরা মা এখন ওকে কি বলছে?’  
বাঁধনের মা বলল ওর বাচ্চাটাকে ও বকা দিচ্ছে। বলছে, ‘তোকে না কতো বার শিখিয়েছি। মানুষের কাছে যাবি না। মানুষেরা আমাদের ক্ষতি করে। তারপরও কেন ওদের কাছে ধরা দিতে গেলি।’
বাঁধন মন খারাপ করে বলল, ‘কেন?  আমরা তো ওর কোন ক্ষতি করিনি, বাচ্চাটা তো শুকনো পুকুরে কাদায় আটকে ছিল, আমরা ওকে এনে গোসল করালাম।  কত কিছু খেতে দিলাম কিন্তু খায়নি। ওর বাড়ী কোথায় জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু পেঁচার মত গাল ফুলিয়ে ছিল কোন কথা বলেনি। আমরা কেউ ওকে তো মারিনি।’
বাঁধনের মা বলল, ‘হ্যাঁ বাচ্চাটা তো ওর মাকে সে কথা বলেছে। তোমরা ওকে অনেক আদোর করেছো। মারনি বরং আদোর করেছো। তাইতো ওর মা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছে। আর বলেছে তুমি খুব ভাল। তুমি আজ থেকে ওদের বন্ধু হয়ে গেলে।’ শুনে বাঁধনের মুখে আনন্দের ঝিলিক বিচ্ছুরিত হল। পাখিরাও তার বন্ধু। এবার স্কুলে গিয়ে এশা, জাহান, রনি,জায়মাকে সব বলবে। ওরা শুনে খুব অবাক হবে। সবাই বলবে পাখির বন্ধু বাঁধন।
                              ***

[বন্ধুরা আমি অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলছি আামর পূর্বের একাউন্টটিতে আমি প্রবেশ করতে পারছি না যার কারণে আমার মনটা খুব খারাপ। আমার পূর্বের একাউন্টটি জিমেইল এর মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারতাম কিন্তু এখন জিমেইল এবং তারুণ্য কেউই আমাকে আমার পূর্বের আইডিতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কেউ যদি আমাকে হেল্প করতে পারেন যাতে আমি আমার পূর্বের একান্টটা ফিরে পেতে পারি। সবাইকে ধন্যবাদ
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৪/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast