ডায়েরী ১৯৭১ (০৩)
রাজগঞ্জ, শরীয়তপুর।
২৫ এপ্রিল, ১৯৭১
সকাল, ০৬ :০৭ মিনিট।
ভোর থেকেই স্বর্ণঘোষ থরথর কাঁপছে। মিলিটারী ঘিরে রেখেছে পুরো পালং। বাবা বাজারে যায় প্রতিদিন ফজরের পরই। অাজ যাচ্ছে না। মা'র সাথে ফিসফিস করে কি যেন বলছে। সম্ভবত আমাকে নিয়েই। আমি পড়ছি, কী পড়ছি নিজেই জানি না।
সন্ধ্যা, ৭:২৩ মিনিট
ভাইয়া মনোহর বাজারে বিড়ির দোকানে চাকরী করে, এসেই আমাকে ডাকল, রহিমা...... ও রহিমা.... দরজা খোল। ভাইয়া ভিতরে এলো, বলল, মিলিটারী বাজারে ঢুকেছিল। জিগ্যেস করছিল, ভাইয়া কলেমা জানে কিনা, মালাউন কই? কলেমা শুনিয়ে দিলে সিগারেট চাইল। সাত প্যাক সিগারেট দিয়ে দিলে চলে গেল ঋষি পাড়ার দিকে।
২৬ এপ্রিল, ১৯৭১
ভাইয়ার বন্ধু প্রণব দাসের বাবা মহাদেব দাস ও আরও নয় জন হিন্দু কে মেরে ফেলেছে, কয়েকটা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে মিলিটারী। গতরাতে ভাইয়া প্রণব কে আমাদের বাড়ি নিয়ে এসেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলাম মা'র কাছ থেকে। হাতমুখ ধুতে পুকুরে ঘাটে যেতে চাইলাম। মা যেতে দিল না। বলল, জগে করে ধো। মুখ ধুয়ে প্রণব দাদার সাথে দেখা করলাম। আমাকে দেখে তাকিয়ে রইল, হঠাৎ করেই হাউমাউ করে আমার দিকে আঙুল তুলে ভাইয়া কে বলল, দেখ দেখ রহমান, প্রীতিকণা ঠিক রহিমার মতই ছিল। হালারা আমার বইনডারে নিয়া গেল। তারপর বেহুশ।
২৭ এপ্রিল, ১৯৭১
সকাল, ৭:৩৭
মা পাক ঘরে রাঁধছেন আর বকবক করে ভাইয়া কে গালি দিচ্ছেন। "বিয়ার লাক মাইয়া ঘরে থাকতে কেউ অমন জুয়ান বেঢারে কেউ ঘরে জায়গা দেয়। অারও অইছে যুদ্ধের সময়। ঘরে শেনা মাইয়া রাখা না যেন যম ডাইকা আনা। দামরার লাহান অইছে তাও মাথায় কোনো বুদ্ধি অয় নাই।" গালি গুলো ভাইয়ার চেয়ে আমার গায়েই বেশি লাগছে। মেয়ে বড় হলে কত সমস্যা এই সমাজে, আজ টের পেলাম।
২৮ এপ্রিল,১৯৭১
প্রণব দা যুদ্ধে যাবে। ভাইয়াও যাবে তবে পালিয়ে কারণ মা যেতে দিবে না। প্রণব দা সবার থেকে বিধায় নিচ্ছে আর কাঁদছে। শেষে আমার কাছে আসল, কতক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, রহিমা যাই দোয়া করিস। দুপা এগিয়ে আবার পিছু এলো। ব্যাগ থেকে কতগুলো রঙবেরঙ এর সুতা বের করল। বলল, আমার হাতে বেঁধে দে। বেঁধে দিলাম রাখি। চলে গেল প্রণব দা। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল প্রণবই আমার ভাই।
( সম্পূর্ণ ঘটনা,স্থান,সময়, চরিত্র কাল্পনিক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শোনা তৎকালীন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। এ ঘটনার সাথে ইতিহাস প্রমাণিত কোনো মিল আছে কি না জানি না।)
২৫ এপ্রিল, ১৯৭১
সকাল, ০৬ :০৭ মিনিট।
ভোর থেকেই স্বর্ণঘোষ থরথর কাঁপছে। মিলিটারী ঘিরে রেখেছে পুরো পালং। বাবা বাজারে যায় প্রতিদিন ফজরের পরই। অাজ যাচ্ছে না। মা'র সাথে ফিসফিস করে কি যেন বলছে। সম্ভবত আমাকে নিয়েই। আমি পড়ছি, কী পড়ছি নিজেই জানি না।
সন্ধ্যা, ৭:২৩ মিনিট
ভাইয়া মনোহর বাজারে বিড়ির দোকানে চাকরী করে, এসেই আমাকে ডাকল, রহিমা...... ও রহিমা.... দরজা খোল। ভাইয়া ভিতরে এলো, বলল, মিলিটারী বাজারে ঢুকেছিল। জিগ্যেস করছিল, ভাইয়া কলেমা জানে কিনা, মালাউন কই? কলেমা শুনিয়ে দিলে সিগারেট চাইল। সাত প্যাক সিগারেট দিয়ে দিলে চলে গেল ঋষি পাড়ার দিকে।
২৬ এপ্রিল, ১৯৭১
ভাইয়ার বন্ধু প্রণব দাসের বাবা মহাদেব দাস ও আরও নয় জন হিন্দু কে মেরে ফেলেছে, কয়েকটা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে মিলিটারী। গতরাতে ভাইয়া প্রণব কে আমাদের বাড়ি নিয়ে এসেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলাম মা'র কাছ থেকে। হাতমুখ ধুতে পুকুরে ঘাটে যেতে চাইলাম। মা যেতে দিল না। বলল, জগে করে ধো। মুখ ধুয়ে প্রণব দাদার সাথে দেখা করলাম। আমাকে দেখে তাকিয়ে রইল, হঠাৎ করেই হাউমাউ করে আমার দিকে আঙুল তুলে ভাইয়া কে বলল, দেখ দেখ রহমান, প্রীতিকণা ঠিক রহিমার মতই ছিল। হালারা আমার বইনডারে নিয়া গেল। তারপর বেহুশ।
২৭ এপ্রিল, ১৯৭১
সকাল, ৭:৩৭
মা পাক ঘরে রাঁধছেন আর বকবক করে ভাইয়া কে গালি দিচ্ছেন। "বিয়ার লাক মাইয়া ঘরে থাকতে কেউ অমন জুয়ান বেঢারে কেউ ঘরে জায়গা দেয়। অারও অইছে যুদ্ধের সময়। ঘরে শেনা মাইয়া রাখা না যেন যম ডাইকা আনা। দামরার লাহান অইছে তাও মাথায় কোনো বুদ্ধি অয় নাই।" গালি গুলো ভাইয়ার চেয়ে আমার গায়েই বেশি লাগছে। মেয়ে বড় হলে কত সমস্যা এই সমাজে, আজ টের পেলাম।
২৮ এপ্রিল,১৯৭১
প্রণব দা যুদ্ধে যাবে। ভাইয়াও যাবে তবে পালিয়ে কারণ মা যেতে দিবে না। প্রণব দা সবার থেকে বিধায় নিচ্ছে আর কাঁদছে। শেষে আমার কাছে আসল, কতক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, রহিমা যাই দোয়া করিস। দুপা এগিয়ে আবার পিছু এলো। ব্যাগ থেকে কতগুলো রঙবেরঙ এর সুতা বের করল। বলল, আমার হাতে বেঁধে দে। বেঁধে দিলাম রাখি। চলে গেল প্রণব দা। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল প্রণবই আমার ভাই।
( সম্পূর্ণ ঘটনা,স্থান,সময়, চরিত্র কাল্পনিক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শোনা তৎকালীন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। এ ঘটনার সাথে ইতিহাস প্রমাণিত কোনো মিল আছে কি না জানি না।)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনুপ্রাণীত নজরুল ২৫/০৯/২০১৬খুব ভালো
-
সোলাইমান ২০/০৯/২০১৬বেশ তো।