ডায়েরী ১৯৭১ (০২)
মুলাদী, বরিশাল। ১৯৭১, ২৯ মার্চ
চারদিক থমথমে, মিলিটারী ঢুকছে গ্রামে। ভাইয়া কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছাড়ছে। মা ভাত পানি খাওয়া বন্ধ করছে। বাবা অফিসে যাওয়া বন্ধ করেছে।সারাক্ষণ স্বাধীন বাংলা শুনছে আর উঁচ্চ স্বরে বলছে জয় বাংলা। অামার পরীদের বাড়ি যাওয়া নিষেধ, চাঁদ সূর্য দেখা নিষেধ। তাই সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকি।
১৯৭১, ০৩ এপ্রিল
মন্টু ভাই খবর নিয়ে আসছে, ভাইয়া ভারত চলে গেছে। মা'র অঝোরে কান্না।। বাবা চুপ, আমি শব্দহীন। ছোট্ট বাঁশির জন্য কাঁদছে। চুলোয় আগুন জ্বলে নাই। ক্ষিদেয় পেট চো চো করছে। তার উপর গান গাইতে ইচ্ছা করছে। "পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল"।
১৯৭১, ১০ এপ্রিল
আজ পরীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু যুদ্ধ চলছে বলে হয় নি। কুটনি বুড়িরা বলতে শুরু করছে, পরীর কপালে লাবক (দুঃখ) আছে, নইলে বিয়ার সময় দজ্জাল উপস্থিত কেন? পরী শুধু কাঁদছে। পরীর মা দরজা বন্ধ করে দিছে। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না, এমন কি আমাকেও না। শেষে অনেক বলে কয়ে ভিতরে গেলাম। পরী, পরীর মা, বাবা কে বুঝালাম। কিছু বুঝেছে কি না জানি না, তবে কাঁন্না থামিয়েছিল ক্ষণিক আবার শুরু করেছিল।
১৯৭১, ১৪ এপ্রিল
আজ পহেলা বৈশাখ। ছেলে মেয়েরা মেলায় যাচ্ছে না। পুচকে বাঁশি বাঁচাচ্ছে না। বৈশাখী ঝর বৈছে কিন্তু আনন্দ বৈছে না। বাঙালির জাতীয় উৎসবে আমার বাংলাটাকে দেখা নিষেধ। আমি নারী, আমাকে সবাই খাবে, তাই মা বাবা আমাকে রুমের মধ্যে বন্ধি করেছে যেন কোনো শিকারির চোখে না পরি। অনেক বলে কয়েও মা কে রাজি করাতে পারলাম না, সূর্যটাকে একবার দেখার জন্য।
১৯৭১, ১৫ এপ্রিল
মা ভাত রাঁধছে। খড় গুলো পুড়ছে না ভালবাবে। পুড়বে কি করে, এমনিতেই ভিজা ভিজা খড় তার উপর আবার আলগা চুলা। প্রতিদিন ভাত তরকারি থেকে ধোঁয়ার গন্ধ আসে খেতে ভাল লাগে না। প্রত্যেক বেলায় পাতে থুই আর মা'র বকুনি খাই। আজ বকুনির ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। মা বাবা দরজা জোর পূর্বক খুলালো। ভয় পেয়েছিল বুঝি, যদি আত্মহত্যা করি। মা এমনটাই বলল। আমি বন্ধি থেকে থেকে বুঝি দুনিয়ার প্রতি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। বিরক্ত হচ্ছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীনতা না দেখে মরবো না।
( বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তাঁদের তৎকালীন পারিবারিক অবস্থান জানতে চাইলে, যা বলে তাতে আমার ভিতর যে কল্পনার সৃষ্টি হয় তাই তুলে ধরার চেষ্টা করতেছি "ডায়েরি,১৯৭১" এ। " ডায়েরি,১৯৭১" এর সাথে ঐতিহাসিক কোন মিল আছে কিনা জানি না। "ডায়েরি,১৯৭১" এর সমস্ত চরিত্র, স্থান, তারিখ, ঘটনা কাল্পনিক।)
চারদিক থমথমে, মিলিটারী ঢুকছে গ্রামে। ভাইয়া কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছাড়ছে। মা ভাত পানি খাওয়া বন্ধ করছে। বাবা অফিসে যাওয়া বন্ধ করেছে।সারাক্ষণ স্বাধীন বাংলা শুনছে আর উঁচ্চ স্বরে বলছে জয় বাংলা। অামার পরীদের বাড়ি যাওয়া নিষেধ, চাঁদ সূর্য দেখা নিষেধ। তাই সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকি।
১৯৭১, ০৩ এপ্রিল
মন্টু ভাই খবর নিয়ে আসছে, ভাইয়া ভারত চলে গেছে। মা'র অঝোরে কান্না।। বাবা চুপ, আমি শব্দহীন। ছোট্ট বাঁশির জন্য কাঁদছে। চুলোয় আগুন জ্বলে নাই। ক্ষিদেয় পেট চো চো করছে। তার উপর গান গাইতে ইচ্ছা করছে। "পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল"।
১৯৭১, ১০ এপ্রিল
আজ পরীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু যুদ্ধ চলছে বলে হয় নি। কুটনি বুড়িরা বলতে শুরু করছে, পরীর কপালে লাবক (দুঃখ) আছে, নইলে বিয়ার সময় দজ্জাল উপস্থিত কেন? পরী শুধু কাঁদছে। পরীর মা দরজা বন্ধ করে দিছে। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না, এমন কি আমাকেও না। শেষে অনেক বলে কয়ে ভিতরে গেলাম। পরী, পরীর মা, বাবা কে বুঝালাম। কিছু বুঝেছে কি না জানি না, তবে কাঁন্না থামিয়েছিল ক্ষণিক আবার শুরু করেছিল।
১৯৭১, ১৪ এপ্রিল
আজ পহেলা বৈশাখ। ছেলে মেয়েরা মেলায় যাচ্ছে না। পুচকে বাঁশি বাঁচাচ্ছে না। বৈশাখী ঝর বৈছে কিন্তু আনন্দ বৈছে না। বাঙালির জাতীয় উৎসবে আমার বাংলাটাকে দেখা নিষেধ। আমি নারী, আমাকে সবাই খাবে, তাই মা বাবা আমাকে রুমের মধ্যে বন্ধি করেছে যেন কোনো শিকারির চোখে না পরি। অনেক বলে কয়েও মা কে রাজি করাতে পারলাম না, সূর্যটাকে একবার দেখার জন্য।
১৯৭১, ১৫ এপ্রিল
মা ভাত রাঁধছে। খড় গুলো পুড়ছে না ভালবাবে। পুড়বে কি করে, এমনিতেই ভিজা ভিজা খড় তার উপর আবার আলগা চুলা। প্রতিদিন ভাত তরকারি থেকে ধোঁয়ার গন্ধ আসে খেতে ভাল লাগে না। প্রত্যেক বেলায় পাতে থুই আর মা'র বকুনি খাই। আজ বকুনির ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। মা বাবা দরজা জোর পূর্বক খুলালো। ভয় পেয়েছিল বুঝি, যদি আত্মহত্যা করি। মা এমনটাই বলল। আমি বন্ধি থেকে থেকে বুঝি দুনিয়ার প্রতি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। বিরক্ত হচ্ছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীনতা না দেখে মরবো না।
( বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তাঁদের তৎকালীন পারিবারিক অবস্থান জানতে চাইলে, যা বলে তাতে আমার ভিতর যে কল্পনার সৃষ্টি হয় তাই তুলে ধরার চেষ্টা করতেছি "ডায়েরি,১৯৭১" এ। " ডায়েরি,১৯৭১" এর সাথে ঐতিহাসিক কোন মিল আছে কিনা জানি না। "ডায়েরি,১৯৭১" এর সমস্ত চরিত্র, স্থান, তারিখ, ঘটনা কাল্পনিক।)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।