ডায়েরী ১৯৭১
মুরাদপুর, চট্টগ্রাম। ১৯৭১, ২৫ আগষ্ট।
আজ পাক মিলিটারী মুরাদপুরে হামলা করেছে। তিনটা বাড়ি জ্বালিয়ে দিছে। প্রিয় বান্ধবী, বিথী কে ধরে নিয়ে গেছে। কলেজ ফ্রেন্ড কামাল, মাহফুজ, কার্তিক, সুবীর কে পিছনে হাত বেঁধে গুলি করেছে। আমি মুক্তিবাহিনী কে খাবার দিয়ে ঘরে ফিরছিলাম, দুজন পাক কুত্তা আমাকে ধাওয়া করেছিল। হাই স্কুল থেকে আমি দৌড়ে ফার্স্ট হতাম সবসময়। তাই পায় নি আমাকে। এবারের মত বেঁচে গেলাম।
১৯৭১, ০৩ সেপ্টেম্বর।
মা নেই, বাবা ২৬ এপ্রিল স্কুলে গেছে আর ফিরে আসেনি। শুনেছি মিলিটারী ধরে নিয়ে গেছে। বাবার বড় সখ ছিল, দেশের পরিস্থিতি ঠিক হলেই পশ্চিম পাড়ার মাহতাব মাস্টারের ছেলে মাহবুবের সাথে আমার বিয়ে দিবে। কথাও ঠিকঠাক করে রেখেছিল মাস্টারের সাথে। অাজ বাবা কে বেশি মনে পরছে। আজ বাবা একটা কেক আনত। তারপর হাতে চাকু ধরিয়ে দিয়ে বলত, কাট মা কাট, কেকটা কাট। সবার আগেই বলে উঠত হ্যাপি বার্থডে ময়না। আজ বাবা বলে না, তাই কেউ বলে না। বাবা, তুমি কবে আসবে?
১৯৭১, ১৭ সেপ্টেম্বর।
ভাইয়া, আজ ২ মাস নিখোঁজ। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে জুন এ । এসে অামার সাথে দেখা করেছিল সর্বশেষ পহেলা সেপ্টেম্বর। দেখা করার আগে চিঠি দিতো মাঝে মধ্যে। বলতো বন্ধুদের ও তাঁর বীরত্বের কথা। সব সময় ই একটা কথা লিখতো চিঠির শেষ লাইনে, " তুই কোনো চিন্তা করবি না, দেখবি আমি ভালয় ভালয় ফিরবো, আর আসার সময় তোর জন্য পতাকা নিয়ে আসবো "।
১৯৭১, ১৮ সেপ্টেম্বর।
আজ সকাল থেকেই কাঁদছি। অথচ কেউ একবারও বলেনি কাঁদিস না ময়না। বলবে কি করে, প্রাণ বলতে আছে, দুই টি মোরগ, ৪ জোড়া কবুতর। ওরা তো আর কথা বলতে পারে না। রান্না করবো না আজ, মুড়ি খাবো। রান্না করবো ই বা কী? চাল নাই, একবার রান্নার মত ডাল আছে। কবুতরের দুটি বাচ্চা আছে কিন্তু কোনো মসলা নাই। ভাল্লাগছে না। কী করি এখন? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনি..... ।
১৯৭১, ২২ সেপ্টেম্বর।
যাক, ভালই হলো, দুলাল ভাই চাল, ডাল, আদা, জিরা, লংগো দিয়া গেল। মুক্তি বাহিনীর খাবার রান্না করতে হবে। আজ আর বসে থাকার সময় নাই, রান্না করতে হবে, রান্না। বীরের জন্য রান্না।
১৯৭১, ৩০ সেপ্টেম্বর।
আজ আমার সতীত্ব নিল পাক কুত্তারা। আমার কোনো কষ্ট নাই এতে। কারণ আজই আমি বাঁচিয়ে দিয়েছি ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা।। এই অপরাধে আমার সতীত্ব কেন, জীবন নিলেও কষ্ট নাই। যখন মরার মত হয়েছিলাম, কুত্তাদের কামড়ে, তখন কুত্তারা আমাকে মৃত ভেবে চলে গেল।
(লেখাটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শোনা তৎকালীন অবস্থান নিয়ে লেখা)
আজ পাক মিলিটারী মুরাদপুরে হামলা করেছে। তিনটা বাড়ি জ্বালিয়ে দিছে। প্রিয় বান্ধবী, বিথী কে ধরে নিয়ে গেছে। কলেজ ফ্রেন্ড কামাল, মাহফুজ, কার্তিক, সুবীর কে পিছনে হাত বেঁধে গুলি করেছে। আমি মুক্তিবাহিনী কে খাবার দিয়ে ঘরে ফিরছিলাম, দুজন পাক কুত্তা আমাকে ধাওয়া করেছিল। হাই স্কুল থেকে আমি দৌড়ে ফার্স্ট হতাম সবসময়। তাই পায় নি আমাকে। এবারের মত বেঁচে গেলাম।
১৯৭১, ০৩ সেপ্টেম্বর।
মা নেই, বাবা ২৬ এপ্রিল স্কুলে গেছে আর ফিরে আসেনি। শুনেছি মিলিটারী ধরে নিয়ে গেছে। বাবার বড় সখ ছিল, দেশের পরিস্থিতি ঠিক হলেই পশ্চিম পাড়ার মাহতাব মাস্টারের ছেলে মাহবুবের সাথে আমার বিয়ে দিবে। কথাও ঠিকঠাক করে রেখেছিল মাস্টারের সাথে। অাজ বাবা কে বেশি মনে পরছে। আজ বাবা একটা কেক আনত। তারপর হাতে চাকু ধরিয়ে দিয়ে বলত, কাট মা কাট, কেকটা কাট। সবার আগেই বলে উঠত হ্যাপি বার্থডে ময়না। আজ বাবা বলে না, তাই কেউ বলে না। বাবা, তুমি কবে আসবে?
১৯৭১, ১৭ সেপ্টেম্বর।
ভাইয়া, আজ ২ মাস নিখোঁজ। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে জুন এ । এসে অামার সাথে দেখা করেছিল সর্বশেষ পহেলা সেপ্টেম্বর। দেখা করার আগে চিঠি দিতো মাঝে মধ্যে। বলতো বন্ধুদের ও তাঁর বীরত্বের কথা। সব সময় ই একটা কথা লিখতো চিঠির শেষ লাইনে, " তুই কোনো চিন্তা করবি না, দেখবি আমি ভালয় ভালয় ফিরবো, আর আসার সময় তোর জন্য পতাকা নিয়ে আসবো "।
১৯৭১, ১৮ সেপ্টেম্বর।
আজ সকাল থেকেই কাঁদছি। অথচ কেউ একবারও বলেনি কাঁদিস না ময়না। বলবে কি করে, প্রাণ বলতে আছে, দুই টি মোরগ, ৪ জোড়া কবুতর। ওরা তো আর কথা বলতে পারে না। রান্না করবো না আজ, মুড়ি খাবো। রান্না করবো ই বা কী? চাল নাই, একবার রান্নার মত ডাল আছে। কবুতরের দুটি বাচ্চা আছে কিন্তু কোনো মসলা নাই। ভাল্লাগছে না। কী করি এখন? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনি..... ।
১৯৭১, ২২ সেপ্টেম্বর।
যাক, ভালই হলো, দুলাল ভাই চাল, ডাল, আদা, জিরা, লংগো দিয়া গেল। মুক্তি বাহিনীর খাবার রান্না করতে হবে। আজ আর বসে থাকার সময় নাই, রান্না করতে হবে, রান্না। বীরের জন্য রান্না।
১৯৭১, ৩০ সেপ্টেম্বর।
আজ আমার সতীত্ব নিল পাক কুত্তারা। আমার কোনো কষ্ট নাই এতে। কারণ আজই আমি বাঁচিয়ে দিয়েছি ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা।। এই অপরাধে আমার সতীত্ব কেন, জীবন নিলেও কষ্ট নাই। যখন মরার মত হয়েছিলাম, কুত্তাদের কামড়ে, তখন কুত্তারা আমাকে মৃত ভেবে চলে গেল।
(লেখাটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শোনা তৎকালীন অবস্থান নিয়ে লেখা)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।