ভালবাসার খেলা
হুশ করে ট্রেনটা কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল।চারদিক থেকে আর্ত চিৎকার,লোকটা পাগোল না মাতাল?আরে না না, দেখছো না কানে মোবাইল সাঁটা, এই হয়েছে আজকাল,সব সময় অদৃশ্য জগতে বিচরণ,আশপাশটা মগজে থাকে না।
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে মোবাইলটা পকেটে ভরে দ্রুত গতিতে লেভেল ক্রসিংটা পার হয় সুমন।কানে বাজছে তনুশ্রীর গলা,আমাকে ভুলে যাও সুমন, সেটাই তোমার পক্ষে মঙ্গল হবে।
---একি বলছো তুমি? এত দিনের সম্পর্ক ! তাছাড়া সেই সব দিনগুলোর কথা সব ভুলে গেলে তুমি? সব তোমার কাছে তুচ্ছ?
----কিচ্ছু ভুলিনি আমি, ওটা স্রেফ এক্সপেরিয়েন্স অ্যাকুয়ার করা ছাড়া কিছু না,তাছাড়া অভিজ্ঞ বন্ধুদের সামনে কম্প্লেক্স অফ ইনফিরিওরিটিতে ভুগতাম, সেটা দূর করার দরকার ছিল,বায়োলজিক্যাল ডিমান্ডটাও তো অস্বীকার করা যায় না, আর যত্তসব ব্যাকডেটেড মাসিমা-টাইপের ধ্যানধারনাগুলো ছাড়ো তো।আমি মেয়ে হয়ে মেনে নিতে পারি আর তুমি--
মাথাটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে। চিন্তা-শক্তি কি একেবারে লোপ পেয়ে গেল! কী করবে সে এখন কিছুতেই যেন বুঝে উঠতে পারছে না। শিমুল গাছের সাদা তুলো যেমন বাতাসের খেয়ালে উদ্দেশ্যহীনভাবে ভেসে ভেসে বেড়ায় ঠিক তেমনভাবেই হাঁটতে থাকে সে।
সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মতো কত না দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে।তনুশ্রী বলেছিল, তোমার-আমার মন যখন দেওয়া-নেওয়া হয়ে গেছে তখন আমাকে তুমি পুরোপুরি পেতে পারো, কিন্তু দেখো কোন বিপদ হয় না যেন,আই মিন ---।
---বুঝেছি বুঝেছি, চটপট বলেছিল সুমন।বন্ধুদের কল্যাণে সব কিছুই জানা আছে,কেবল প্র্যাক্টিক্যালটাই বাকি।
---আমারও। বলেছিল তনুশ্রী।
বন্ধুদের পরামর্শে বারাসাতের পলাশ হোটেলের একটা ঘর বুক করেছিল ২৩০ টাকায় ২৪ ঘণ্টার জন্যে।তারা অবশ্য সাড়ে দশটা থেকে পাঁচটা অবধি কাটিয়েছিল। কলেজ টাইম। বাড়ির লোকেদের কোনরকম সন্দেহের অবকাশ দিতে চায় নি তারা। জীবনের প্রথম মিলনের অভিজ্ঞতায় দুজনেই কলম্বাসের মতোই নতুন দেশ আবিষ্কারের আনন্দে মাতোয়ারা ছিল সাড়ে ছ ঘণ্টা।তারপর থেকে নিয়মিতই সপ্তাহে একদিন পলাশে মিলিত হত তারা। খরচ জোটাতে টিউশনি ধরেছিল সুমন।
যদিও অনার্সের পড়াশুনার চাপ ছিল,নিজের পড়া তৈরি করতেই সময়ে টান পড়তো, তবুও নতুন নেশায় আর তনুশ্রীর মন রাখতে টিউশনি করা ছাড়া উপায় ছিল না সুমনের।
একদিন বোকার মতো সুমন জিজ্ঞেস করেছিল, চাকরি পাওয়ার পরদিনই কিন্তু বিয়ে করবো, তুমি রাজি আছো তো।তনুশ্রী ফাজিল হেসে বলেছিল, বিয়ের আর কী বাকি আছে সোনা, সবই তো কমপ্লিট। আমরা হলাম গিয়ে কপোত-কপোতী, মুক্ত বিহঙ্গও বলতে পারো।বলেই প্রাণ-খোলা হাসিতে ফেটে পড়েছিল।
তনুশ্রীর বাবা ছিল নামী হোসিয়ারী কোম্পানির মালিক। আর সুমন নেহাতই এক কেরানির ছেলে। তবু সুমনের বাবা ছেলেকে নামী কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন প্রচুর খরচ করে।তাছাড়া সুমন মেধা-বৃত্তিও পেত সরকার থেকে।
সপ্তাখানেক হল ভাল একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে সুমন।তারপর থেকেই সে তনুশ্রীকে বার বার বিয়ের কথা বলতে থাকে। কিন্তু তনুশ্রী 'আমাকে একটু ভাবতে দাও' 'এত তাড়া কিসের' এসব বলে সুমনকে নিরস্ত করতে থাকে।
আজই প্রথম সরাসরি তাকে ভুলে যাওয়ার কথা বললো সুমনকে।
এই যে দাদা দেখেশুনে পথ চলতে পারেন না, ক্যাঁ-অ্যা-অ্যা-ক করে ব্রেক কষেই জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বিরক্তির সঙ্গে বললো ট্যাক্সি-ড্রাইভার।
সরি সরি। অস্বাভাবিক জোরে কথাটা বলেই অবাক হয় সুমন। যেন কথাটা সে নিজের মধ্যে থাকা আর এক সুমনকেই বললো।সরি সুমন,আমাকে ক্ষমা করে দে, আমি তোকে ঠকিয়েছি, তোকে আমি বোঝাতে পারি নি, তনুশ্রী তোকে স্রেফ ব্যবহার করছে, কান-খুশকির মতো, দাবা খেলার পার্টনারের মতো।পারিসতো আমাকে ক্ষমা করে দে ক্ষমা করে দে প্লী-ই-ই-ইজ, বুকের মধ্যে কখন থেকে মেঘ জমছিল কে জানে, অঝোর ধারায় চোখ বেয়ে নেমে আসতে থাকে শ্রাবণ-ধারার মতো .......
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে মোবাইলটা পকেটে ভরে দ্রুত গতিতে লেভেল ক্রসিংটা পার হয় সুমন।কানে বাজছে তনুশ্রীর গলা,আমাকে ভুলে যাও সুমন, সেটাই তোমার পক্ষে মঙ্গল হবে।
---একি বলছো তুমি? এত দিনের সম্পর্ক ! তাছাড়া সেই সব দিনগুলোর কথা সব ভুলে গেলে তুমি? সব তোমার কাছে তুচ্ছ?
----কিচ্ছু ভুলিনি আমি, ওটা স্রেফ এক্সপেরিয়েন্স অ্যাকুয়ার করা ছাড়া কিছু না,তাছাড়া অভিজ্ঞ বন্ধুদের সামনে কম্প্লেক্স অফ ইনফিরিওরিটিতে ভুগতাম, সেটা দূর করার দরকার ছিল,বায়োলজিক্যাল ডিমান্ডটাও তো অস্বীকার করা যায় না, আর যত্তসব ব্যাকডেটেড মাসিমা-টাইপের ধ্যানধারনাগুলো ছাড়ো তো।আমি মেয়ে হয়ে মেনে নিতে পারি আর তুমি--
মাথাটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে। চিন্তা-শক্তি কি একেবারে লোপ পেয়ে গেল! কী করবে সে এখন কিছুতেই যেন বুঝে উঠতে পারছে না। শিমুল গাছের সাদা তুলো যেমন বাতাসের খেয়ালে উদ্দেশ্যহীনভাবে ভেসে ভেসে বেড়ায় ঠিক তেমনভাবেই হাঁটতে থাকে সে।
সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মতো কত না দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে।তনুশ্রী বলেছিল, তোমার-আমার মন যখন দেওয়া-নেওয়া হয়ে গেছে তখন আমাকে তুমি পুরোপুরি পেতে পারো, কিন্তু দেখো কোন বিপদ হয় না যেন,আই মিন ---।
---বুঝেছি বুঝেছি, চটপট বলেছিল সুমন।বন্ধুদের কল্যাণে সব কিছুই জানা আছে,কেবল প্র্যাক্টিক্যালটাই বাকি।
---আমারও। বলেছিল তনুশ্রী।
বন্ধুদের পরামর্শে বারাসাতের পলাশ হোটেলের একটা ঘর বুক করেছিল ২৩০ টাকায় ২৪ ঘণ্টার জন্যে।তারা অবশ্য সাড়ে দশটা থেকে পাঁচটা অবধি কাটিয়েছিল। কলেজ টাইম। বাড়ির লোকেদের কোনরকম সন্দেহের অবকাশ দিতে চায় নি তারা। জীবনের প্রথম মিলনের অভিজ্ঞতায় দুজনেই কলম্বাসের মতোই নতুন দেশ আবিষ্কারের আনন্দে মাতোয়ারা ছিল সাড়ে ছ ঘণ্টা।তারপর থেকে নিয়মিতই সপ্তাহে একদিন পলাশে মিলিত হত তারা। খরচ জোটাতে টিউশনি ধরেছিল সুমন।
যদিও অনার্সের পড়াশুনার চাপ ছিল,নিজের পড়া তৈরি করতেই সময়ে টান পড়তো, তবুও নতুন নেশায় আর তনুশ্রীর মন রাখতে টিউশনি করা ছাড়া উপায় ছিল না সুমনের।
একদিন বোকার মতো সুমন জিজ্ঞেস করেছিল, চাকরি পাওয়ার পরদিনই কিন্তু বিয়ে করবো, তুমি রাজি আছো তো।তনুশ্রী ফাজিল হেসে বলেছিল, বিয়ের আর কী বাকি আছে সোনা, সবই তো কমপ্লিট। আমরা হলাম গিয়ে কপোত-কপোতী, মুক্ত বিহঙ্গও বলতে পারো।বলেই প্রাণ-খোলা হাসিতে ফেটে পড়েছিল।
তনুশ্রীর বাবা ছিল নামী হোসিয়ারী কোম্পানির মালিক। আর সুমন নেহাতই এক কেরানির ছেলে। তবু সুমনের বাবা ছেলেকে নামী কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন প্রচুর খরচ করে।তাছাড়া সুমন মেধা-বৃত্তিও পেত সরকার থেকে।
সপ্তাখানেক হল ভাল একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে সুমন।তারপর থেকেই সে তনুশ্রীকে বার বার বিয়ের কথা বলতে থাকে। কিন্তু তনুশ্রী 'আমাকে একটু ভাবতে দাও' 'এত তাড়া কিসের' এসব বলে সুমনকে নিরস্ত করতে থাকে।
আজই প্রথম সরাসরি তাকে ভুলে যাওয়ার কথা বললো সুমনকে।
এই যে দাদা দেখেশুনে পথ চলতে পারেন না, ক্যাঁ-অ্যা-অ্যা-ক করে ব্রেক কষেই জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বিরক্তির সঙ্গে বললো ট্যাক্সি-ড্রাইভার।
সরি সরি। অস্বাভাবিক জোরে কথাটা বলেই অবাক হয় সুমন। যেন কথাটা সে নিজের মধ্যে থাকা আর এক সুমনকেই বললো।সরি সুমন,আমাকে ক্ষমা করে দে, আমি তোকে ঠকিয়েছি, তোকে আমি বোঝাতে পারি নি, তনুশ্রী তোকে স্রেফ ব্যবহার করছে, কান-খুশকির মতো, দাবা খেলার পার্টনারের মতো।পারিসতো আমাকে ক্ষমা করে দে ক্ষমা করে দে প্লী-ই-ই-ইজ, বুকের মধ্যে কখন থেকে মেঘ জমছিল কে জানে, অঝোর ধারায় চোখ বেয়ে নেমে আসতে থাকে শ্রাবণ-ধারার মতো .......
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আরজু নাসরিন পনি ০১/১১/২০১৩
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ৩১/১০/২০১৩এটা অস্বীকার করা যাবে না যে প্রেম এখন শরীর কেন্দ্রীক।তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে যা হয় প্রেমিকাকে পস্তাতে হয় বেশী ।কেননা তার সবই শেষ হহয়ে যায়।আমার জানা মতে খুব কম নারী ই নিজের শরীর কে উপভোগ করে।
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ৩১/১০/২০১৩আমার ও চোখ বেয়ে নামতে চাইছে। অসাধারন লেখা। আজকাল আসলে প্রেম টা শারিরিক হয়ে উঠেছে অন্তর থেকে প্রেমের দাম নেই।
আমাদের কাছে ভালোবাসাটা একটা খেলো ব্যাপার হয়ে গেছে ।
পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ করাতেই আমরা যেন উঠে পড়ে লেগে গেছি ।
অথচ ভালোটার চেয়ে মন্দটাই নিচ্ছি বেশি ।
এর জন্যে পারিবারিক বন্ধনের দৃঢ়তাটা জরুরী ।
সচেতনতা মূলক লেখা, ভালো লাগলো ।।