www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এক বৃন্তে দুটি কুসুম ২য় অংশ

-১ম অংশের পরঃ-
একদিনের ঘটনা আমার আজও স্পষ্ট মনে আছে। সেদিনটা ছিল ২৪শে ডিসেম্বর। পরীক্ষার রেজাল্ট আউটের দিন।সে বছর আমি ফার্স্ট হয়েছিলাম।কিন্তু স্বপ্না ফেল করেছিল।তাই ফার্স্ট হওয়ার আনন্দ একেবারেই উপভোগ করতে পারিনি। বরং স্বপ্নার ফেলের খবর শুনে চোখে জল এসে গিয়েছিল। কিন্তু স্বপ্না নিজের ফেলের খবর শুনে প্রথমে দুঃখ পেলেও আমি ফার্স্ট হয়েছি জেনে ওর সে কী আনন্দ! আমাকে কাঁদতে দেখে বললো,আমার জন্যে দুঃখ কোরো না তো,আমি পাশ করে জজ ব্যারিস্টার হবো না কি? তোমাকে কিন্তু মস্ত বড় ডাক্তার হতে হবে। তখন কিন্তু ভুলে যেও না আমাকে। বলে এক ছুটে ওর মাকে খবরটা দিতে গেল। আমিও পিছনে পিছনে গেলাম।

      গিয়ে শুনলাম স্বপ্না ওর মাকে বলছে, জানো মা সরিফুল্দা ফার্স্ট হয়েছে।
      মাসিমা বললেন, তাই নাকি। সরিফুল অবশ্য খুব ব্রেণী ছেলে। আগেই জানতুম ও ফার্স্ট হবে।কিন্তু তোর খবর কি?
      এবার চুপ করে গেল স্বপ্না, কিন্তু মুখে দুঃখের কোন চিহ্ন নেই। বরং মিষ্টি মিষ্টি হাসছে।আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম।নিজে ফেল করেছে, সেজন্য ওর কোন দুঃখই নেই, আমি ফার্স্ট হয়েছি বলেইওর এত আনন্দ। এবারও আমার চোখে জল এসে গেল। তবে দুঃখে নয়, নিদারুণ আনন্দে।বড় বেশি আপন মনে হল ওকে।

       শৈশবের সেই সোনালী দিনগুলো বেশ কাটছিল ঝর্ণার উচ্ছল গতির মতো।কিন্তু জীবনের পথ বোধ হয় চিরদিন একই দিকে অগ্রসর হয় না। মাঝে মাঝে বাঁক নেয়।

       আমার আনন্দোজ্জ্বল জীবনেও নেমে এল দুর্দিনের ঘোর অমানিশা। গ্যাস্ট্রিক আলসারে বাবা মারা গেলেন। বাবাছোট খাট একটা ব্যবসা করতেন। তার আয়েই চলতো আমাদের সংসার। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাকে নিয়ে অথৈ জলে পড়লেন। তাঁর আশা ছিল আমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করবেন। কিন্তু যেখানে অন্ন-সংস্থানই সমস্যার ব্যাপার সেখানে লেখাপড়ার খরচ যোগানো স্বপ্ন মাত্র।

       তবু মা নিদারূণ পরিশ্রম করে, পরের বাড়িতে কাজ করে আমার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে লাগলেন।মায়ের দুঃখে আমি আড়ালে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। আমার জন্যেই মাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে--এ কথা ভেবে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল। তাই মাকে একদিন বললাম, মা আমি আর স্কুলে যাবো না, আমিও রোজগার করবো, আমার বয়সী কত ছেলেই তো জনমজুর খাটছে।এই কথা শুনে মা প্রচন্ড রেগে গিয়ে আমাকে একটা চড় কষিয়ে দিলেন।আমি পুকুর পাড়ে গিয়ে নীরবে চোখের জল ঝরাতে লাগলাম।হঠাৎ কাঁধের উপর কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখি,  স্বপ্না।আমার পাশে বসে আমার একটা হাত ওর কোলের উপর টেনে নিয়ে বললো, তুমি কাঁদছো কেন সরিফুলদা? ওর চোখদুটোও ছল ছল করছিল'
         বললাম, আমরা বড় গরিব স্বপ্না, আমার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে মাকে খুব কষ্ট করতে হয়। তাই ভাবছি স্কুল ছেড়ে দেবো।

         স্বপ্না আমার মুখের উপর হাত চাপা দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,ও কথা আর কক্ষণো বলবে না, তোমার উপর আমার কত আশা, বড় হয়ে তুমি ডাক্তার হবে। দাদা হয়ে বোনের এই আশাটা তুমি পূরণ করতে পারবে না?
         আমি বললাম, কিন্তু খরচ যোগাবো কেমন করে ?' স্বপ্না বললো, আমি দেবো। আমার বাবা আমাকে যা হাত-খরচ দেয় আমারতো তা লাগে না। মায়ের কাছে সব রেখে দিয়েছি। মাকে তোমার কথা বললে নিশ্চই দেবে।
---তা হয় না স্বপ্না।
---কেন হয় না?
---কারও দানে আমি বড় হতে চাই না।একথা শুনে কেঁদে ফেললো স্বপ্না। তুমি আমাকে পর ভাবো সরিফুলদা? আমি যদি তোমার নিজের বোন হতাম, পারতে এমন কথা বলতে?
           
               (৩য় অংশ আগামীকাল )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নির্ঝর রাজু ২৬/০৯/২০১৩
    পুরোটা পড়েই মন্তব্য করব,তবে মনে হচ্চে একরৌখিক অনুভুতি ভেঙ্গে বৈচিত্রের আগমন ঘটবে
  • আগামী অংশ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ।
  • Înšigniã Āvî ২৬/০৯/২০১৩
    যতটা পড়ছি...
    মনকে নাড়িয়ে দিচ্ছে
  • ইব্রাহীম রাসেল ২৬/০৯/২০১৩
    পড়লাম পুরোটা পড়ি তারপর বলি
 
Quantcast