এক্সাম
এক্সাম
সাবিরা শাওন
প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে মাহিরের। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে পানি খাবে এই সাহস করতে পারছেনা। নাহ অন্ধকার কে তার ভয় নেই। সত্যি বলতে সে অনেক কিছুই ভয় পায়না৷এমনকি তেলাপোকাও না। তার বন্ধুরা তাকে সাহসী বলেই জানে। তবে আম্মুর সামনে সে একেবারে চুপসে যাওয়া বেলুনের মত। আম্মুর যা রাগ!রেগে গিয়ে যখন ধমক দেয় তখন মনে হয় মাহির এবার সত্যি সত্যি নাই হয়ে যাবে। অনেক পানির তেষ্টা পেয়েছে, কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। কিছুক্ষন আগে নড়াচড়া করার জন্য আম্মুর কাছে জোর এক ধমক খেয়েছে। এখন তাকে ডিঙ্গিয়ে মশারি তুলে পানি খেতে যাওয়া আর স্কুলের গহীন পুকুর সাতরে পার হওয়া একই কথা। মাহির সাঁতার জানেনা তাই তার কাছে ঐ পুকুর আর ইংলিশ চ্যানেল সমান।
এখন কি করবো আমি? কাল থেকে ইয়ারলি এক্সাম শুরু,আর প্রথম দিনেই ম্যাথ। সেই ভয়ে আর চিন্তায় ঘুম পালিয়ে গেছে মাহিরের। আগামীকাল পরীক্ষা জন্য আম্মু বলেছে আগেই ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু ম্যাথ হলো মাহিরের কাছে নাইটমেয়ার। গতবার ফাইনালে আর এবারের ক্লাস টেস্টে সে সব সাবজেক্টে ভালো করেছে কিন্তু ম্যাথে পাক্কা ৫ নম্বর কম পেয়েছে। সেইজন্য আম্মু যা মার মেরেছিলো, নানুমনি না থাকলে সেদিন হয়তো মেরেই ফেলত। এই কথা মনে হয়ে মাহিরের তেষ্টা আরো বেড়ে যায়। কালকের এক্সামে কি করবো আমি? এসি রুমে ঘুমিয়েও ছোট্ট মাহির ঠিক বুঝতে পারে সে ঘামছে। মনে মনে টাইম টেবিল,ফ্র্যাকশন,মেজারমেন্টের রুলস গুলো মনে করার চেষ্টা করে। প্রায় সব মনে আছে। হায় হায়! আমি তো ভুলে গেছি ১২*৩ =? উফ! আম্মু যদি বুঝতে পারে আমি টাইমটেবিল এমনভাবে ভুলে গেছি তবে আমাকে এখনই উঠিয়ে শেখাবে। ডাকবো আম্মুকে? নাহ থাক, যদি মাইর দেয়। কিন্তু পানিতো খেতে হবে, এখন আবার কেমন বাথরুমের চাপ অনুভব করছে। কি হবে এখন?
আচ্ছা সামি,জায়েদ,জাজির ওরা এত ভালো ম্যাথ পারে আমি কেন পারিনা? আমিও তো প্রতিদিন হরলিকস খাই ওদের মত। তবু কেন ম্যাথে ফুল মার্কস পাইনা? ভাবতেই মন খারাপ হয় মাহিরের। আমার টিচাররা বলে আমি নাকি শুধু আর্ট করে সময় নষ্ট করি। আম্মুও বকে আর্ট করার জন্য। আচ্ছা আর্ট করা কি ভালো না? ম্যাথ কি পারতেই হয় সবার? ১০০ তে ১০০ পেতেই হবে? কাল আব্বুকে একবার জিজ্ঞেস করবো চুপিচুপি।
আম্মু বলে,আমি ম্যাথ পারিনা তাই নাকি হিমেল ভাইয়ার মত বড় ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবোনা। ইঞ্জিনিয়াররা নাকি অনেক বড় মানুষ,আমার স্কুলের টিচারদের থেকেও বড় হয়। যদিও মাহির এই বড় ব্যাপার টা ঠিক বুঝে না। যারা তার চেয়ে বড় তাদের সবাই কে ওর একই মনে হয়। পিপাসার সাথে এক আশ্চর্য মন খারাপ আর ভয় মাহির কে আঁকড়ে ধরে এবার। মাহির গুটিশুটি মেরে মায়ের কোল ঘেঁষে থাকে।
ঘুমে অচেতন মিসেস রহমান অভ্যাসবশত অথবা স্নেহের টানে মাহির কে কাছে নেন। আম্মুর কাছে গিয়ে মাহিরের প্রচন্ডরকম কান্না পেতে থাকে এবার। যদি সে কালকের পরীক্ষায় ফুল মার্কস না পায় তবে আম্মু কি আর কখনো তাকে এভাবে বুকে নিয়ে ঘুমোবে? আম্মু বলেছে এবার যত মার্কস কম পাবে ততগুলো মাইর দিবে। ছোট্ট মাহির অজানা আতংকে নীল হতে থাকে। গডের কাছে প্রে করতে থাকে কাল যেন মাহির অবশ্যই ম্যাথে ফুল মার্কস পায়। কারণ আম্মুর কাছে সে এভাবে সবসময় শুতে চায়, সবসময় আম্মুর আদর পেতে চায়। আর এক্সামে ভাল করলেই তা সম্ভব। তাই সে প্রাণপণে চেষ্টা করে ম্যাথের সব টার্মস,রুলস গুলো মনে রাখতে। এমন আবোল তাবোল ভাবনার জটে জড়িয়ে মাহির ভুলে যায় পানির তেষ্টা। একসময় ছোট্ট শরীর টা চোরা ভয় আর ভাবনার ক্লান্তিতে সমর্পিত হয় ঘুমের কাছে। গভীর ভাবে শুনলে হয়ত বুঝা যাবে মাহির ঘুমের ঘোরে বার বার ম্যাথের সব টার্মস বিড়বিড় করে বলছে।
সাবিরা শাওন
প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে মাহিরের। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে পানি খাবে এই সাহস করতে পারছেনা। নাহ অন্ধকার কে তার ভয় নেই। সত্যি বলতে সে অনেক কিছুই ভয় পায়না৷এমনকি তেলাপোকাও না। তার বন্ধুরা তাকে সাহসী বলেই জানে। তবে আম্মুর সামনে সে একেবারে চুপসে যাওয়া বেলুনের মত। আম্মুর যা রাগ!রেগে গিয়ে যখন ধমক দেয় তখন মনে হয় মাহির এবার সত্যি সত্যি নাই হয়ে যাবে। অনেক পানির তেষ্টা পেয়েছে, কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। কিছুক্ষন আগে নড়াচড়া করার জন্য আম্মুর কাছে জোর এক ধমক খেয়েছে। এখন তাকে ডিঙ্গিয়ে মশারি তুলে পানি খেতে যাওয়া আর স্কুলের গহীন পুকুর সাতরে পার হওয়া একই কথা। মাহির সাঁতার জানেনা তাই তার কাছে ঐ পুকুর আর ইংলিশ চ্যানেল সমান।
এখন কি করবো আমি? কাল থেকে ইয়ারলি এক্সাম শুরু,আর প্রথম দিনেই ম্যাথ। সেই ভয়ে আর চিন্তায় ঘুম পালিয়ে গেছে মাহিরের। আগামীকাল পরীক্ষা জন্য আম্মু বলেছে আগেই ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু ম্যাথ হলো মাহিরের কাছে নাইটমেয়ার। গতবার ফাইনালে আর এবারের ক্লাস টেস্টে সে সব সাবজেক্টে ভালো করেছে কিন্তু ম্যাথে পাক্কা ৫ নম্বর কম পেয়েছে। সেইজন্য আম্মু যা মার মেরেছিলো, নানুমনি না থাকলে সেদিন হয়তো মেরেই ফেলত। এই কথা মনে হয়ে মাহিরের তেষ্টা আরো বেড়ে যায়। কালকের এক্সামে কি করবো আমি? এসি রুমে ঘুমিয়েও ছোট্ট মাহির ঠিক বুঝতে পারে সে ঘামছে। মনে মনে টাইম টেবিল,ফ্র্যাকশন,মেজারমেন্টের রুলস গুলো মনে করার চেষ্টা করে। প্রায় সব মনে আছে। হায় হায়! আমি তো ভুলে গেছি ১২*৩ =? উফ! আম্মু যদি বুঝতে পারে আমি টাইমটেবিল এমনভাবে ভুলে গেছি তবে আমাকে এখনই উঠিয়ে শেখাবে। ডাকবো আম্মুকে? নাহ থাক, যদি মাইর দেয়। কিন্তু পানিতো খেতে হবে, এখন আবার কেমন বাথরুমের চাপ অনুভব করছে। কি হবে এখন?
আচ্ছা সামি,জায়েদ,জাজির ওরা এত ভালো ম্যাথ পারে আমি কেন পারিনা? আমিও তো প্রতিদিন হরলিকস খাই ওদের মত। তবু কেন ম্যাথে ফুল মার্কস পাইনা? ভাবতেই মন খারাপ হয় মাহিরের। আমার টিচাররা বলে আমি নাকি শুধু আর্ট করে সময় নষ্ট করি। আম্মুও বকে আর্ট করার জন্য। আচ্ছা আর্ট করা কি ভালো না? ম্যাথ কি পারতেই হয় সবার? ১০০ তে ১০০ পেতেই হবে? কাল আব্বুকে একবার জিজ্ঞেস করবো চুপিচুপি।
আম্মু বলে,আমি ম্যাথ পারিনা তাই নাকি হিমেল ভাইয়ার মত বড় ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবোনা। ইঞ্জিনিয়াররা নাকি অনেক বড় মানুষ,আমার স্কুলের টিচারদের থেকেও বড় হয়। যদিও মাহির এই বড় ব্যাপার টা ঠিক বুঝে না। যারা তার চেয়ে বড় তাদের সবাই কে ওর একই মনে হয়। পিপাসার সাথে এক আশ্চর্য মন খারাপ আর ভয় মাহির কে আঁকড়ে ধরে এবার। মাহির গুটিশুটি মেরে মায়ের কোল ঘেঁষে থাকে।
ঘুমে অচেতন মিসেস রহমান অভ্যাসবশত অথবা স্নেহের টানে মাহির কে কাছে নেন। আম্মুর কাছে গিয়ে মাহিরের প্রচন্ডরকম কান্না পেতে থাকে এবার। যদি সে কালকের পরীক্ষায় ফুল মার্কস না পায় তবে আম্মু কি আর কখনো তাকে এভাবে বুকে নিয়ে ঘুমোবে? আম্মু বলেছে এবার যত মার্কস কম পাবে ততগুলো মাইর দিবে। ছোট্ট মাহির অজানা আতংকে নীল হতে থাকে। গডের কাছে প্রে করতে থাকে কাল যেন মাহির অবশ্যই ম্যাথে ফুল মার্কস পায়। কারণ আম্মুর কাছে সে এভাবে সবসময় শুতে চায়, সবসময় আম্মুর আদর পেতে চায়। আর এক্সামে ভাল করলেই তা সম্ভব। তাই সে প্রাণপণে চেষ্টা করে ম্যাথের সব টার্মস,রুলস গুলো মনে রাখতে। এমন আবোল তাবোল ভাবনার জটে জড়িয়ে মাহির ভুলে যায় পানির তেষ্টা। একসময় ছোট্ট শরীর টা চোরা ভয় আর ভাবনার ক্লান্তিতে সমর্পিত হয় ঘুমের কাছে। গভীর ভাবে শুনলে হয়ত বুঝা যাবে মাহির ঘুমের ঘোরে বার বার ম্যাথের সব টার্মস বিড়বিড় করে বলছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Rabia Onti ১৩/১১/২০১৮সুন্দর
-
আব্দুল হক ১১/১১/২০১৮বেঃশ !!
-
মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন ১১/১১/২০১৮ভালো লাগা
-
মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন ১১/১১/২০১৮অতি শাসনের কিঞ্চিৎ নিদর্শন গল্পে উঠে এসেছে।
আবার শিশুমনে পড়ার প্রতি ভীতির ভাবনাও দৃশ্যমান।
বন্ধুদের সাথে পাল্লা দেয়ার যে আকুতি তা প্রতিফলিত হলো।
রচয়িতাকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই। -
Michael ১১/১১/২০১৮ভালো লাগ।
-
নৃ মাসুদ রানা ১১/১১/২০১৮ভালোই
-
প্রশান্ত কুমার ঘোষ ১১/১১/২০১৮দারুন,শুভেচ্ছা রইলো।
-
এন এম ইকবাল সাঈম ১১/১১/২০১৮ভাল চিন্তাভাবনা সমাজে মায়েরা সন্তানদের এভাবেই পরীক্ষা নামক পাহাড়ের বেঝা চাপিয়ে নিরব নির্যাতন করছে দিনকে দিন
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১১/১১/২০১৮শিশুতোষ গল্প!
-
শেখ ফারুক হোসেন ১০/১১/২০১৮চমৎকার