দরিদ্রের লড়াই
. -: দরিদ্রের লড়াই :-
হরিচাঁদ বিশ্বাস রিক্সা ওয়ালা, এক ডাকে গোটা গ্রামের লোক চেনে, রিক্সা চালানতে তার ওপরে গোটা বাবুল নগড়িতে কেউ আছে বলে আর কারো জানা নেই, রাত যাই হোক, কেউ যদি ভোর রাতেও এসে হরিচাদের ঘরের সামনে হরি হরি বলে হাক দেয় তবে তাকে আর মুখফিরিয়ে ফিরে যেতে হয় না। বেশ ভালোই চলছিল হরির সংসার,তার চারকুলে কেউ নেই একটা মেয়ে আর হরির স্রী এই নিয়েই ছোট্ট পরিবার। ভালোই চলছিল হঠাৎ কি যে হলো সংসারটা দুমরে -মুচরে প্রায় একরাশ অবস্থা। কিছুদিন হলো শহরে চারচাকাওয়ালা এক প্রকার গাড়ি বেরিয়েছে সেই গ্রামে হরির শত্রু নিমাইচাঁদ সবার প্রথমে সেই গাড়ি কেনে, তারা শত্রু হয়েছিল কেমনে তা হরি কাউকেই বলেনি শুধু বলেছিল নিমাই আমার শত্রুর ছিল আছে থাকবে। নিমাইও এক ঘেযে মানুষ সেও এক সুরে তাল মিলিয়ে একই কথা বলে।নিমাই কতকাল থেকে অপেক্ষা করে ছিল কি উপায়ে হরিকে টাইট দেওয়া যায়। আজ হরির রিক্সায় কেউ ওঠে না, নিমাইএর চারচাকা গাড়িতে ওঠে কারনটা খুবই সহজ, গাড়ি করে গেলে যে কোনো জাগায় তারা-তারি পৌছানো যায় আর ভাড়াটাও কম লাগে, তাছারাও আরামটাতো আছেই। হরির কেমন যেন রাগ হয় সে ভাবে রিক্সা বেঁচে সেও চারচাকাওয়ালা গাড়ি কিনবে! কিন্তু গাড়ির দাম শুনে হরি নির্বাক হয়ে যায়। কদিন ধরে ঘরে চালের একটুকুও দানা নেই হরির মাথায় আকাশ ভেঙে পরে এরই মাঝে হরির স্রীর ক্যানসার ধরা পরে ভালো চিকিৎসা না করায় সেও অকালে প্রান হারায়। আজ হরি একা আর কেউ নেই তার পাশে কোলে চার বছরের মেয়েটি বাদে, দুদিন হলো কিচ্ছু খাইনি। হরির নিজেকে নিয়ে চিন্তা হয়না চিন্তা হয় তার ছোট্টো পরী টাকে নিয়ে, দারা মা দেখি কিছু ভিক্ষে পাই নাকি? বাবা বেরিয়ে গেল, এত তরুন এক যুবককে কেই বা ভিক্ষা দেয়, যখন হতাস হয়ে ফিরতে যায় তখনই করুন মুখখানির কথা তার মনে পড়ে যায়, "বাবা বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে"; "বাবা বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে"; চোখ ঝলসে ওঠে যেভাবেই হোক খাবার তাকে জোগার করতেই হবে, ভাবতে ভাবতেই চোখ যায় রাস্তার পাশে রাখা ডাসবিনটার দিকে দুটো কুকুর কাড়াকাড়ি করছে, আজ যে তাকে কুকুর হতেই হবে; সেও যুক্ত হয় সেই কাড়াকাড়ির খেলায় হাতে-পায়ে কুকুরের আচড়ের দাগ নিয়ে অর্ধেক রুটি পেয়েও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে সে, রুটি নিয়ে বাড়ি আসে, মেয়েকে খাওয়ায়, মেয়ে বলে বাবা তুমি খাবে না? না রে মা তুই খা। তবুও এক টুকরো রুটি মেয়ে বাবার মুখে পুরে দেয়। তারপর আবদারের সুরে বলে বাবা আজ তো কালিপুজো তাই না? হ্যাঁ। দেখো সবাই কত বাজি ফাটাচ্ছে আমাকে বাজি কিনে দেবে না? কোথা থেকে দিব মা? আমরা যে তাদের মতো সৌখিই নই, না আমার বাজি লাগবে লাগবে লাগবে, বাবার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে যায়, মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয় মেয়ে রাগ করে বলে যাও তোমার সাথে কথা বলবো না, তুমি বাজে বাবা। হরিচাঁদ ভাবে কিকরে সে তার মেয়ের সখ মেটাবে, তারি বা কি দোষ বছর চারের মেয়ে আর কি বুঝবে?
হঠাৎ দরজায় কড়া নারে কেউ, হরি ওই হরি বলি বাড়িতে আছিস? কে? আমি রে... গলাটা অনেকটা নিমাইচাঁদের মতো লাগছে না? কিন্তু সে তো শত্রুর সে কেন তার কাছে আসবে? দরজা খুলতেই হরি অবাক নিমাইযের চোখ জলে ছল ছর করছে, কি হয়েছে নিমাই? এত কথার সময় নেই আমার বউটা বড়ো অসুস্থ আমার গাড়িটা আজ সকাল থেকে নস্ট হয়ে পরে আছে তুই আমাকে একটু সাহায্য করবি ভাই, আমাকে আর ওকে একটু হসপিটাল পৌছে দিবি? তোর রিক্সা দিয়ে! এককালের শত্রু তারকাছে সাহায্য চাইলে, আসলে দুঃখ-কষ্টে সব রাগ গুলো জল হয়ে গেল। এখন এতো ভাবার সময় নেই, রিক্সাটা অনেকদিন ধরে পরে আছে সেটা বের করলো হরি তারপর কোমরে গামছা বাঁধতে বাঁধতে বললো ভাড়াটা কিন্তু বেশ কড়া করে নেব নিমাই, সে নে তবুও আমাকে সাহায্য কর। হরির মুখে হাসি ফুটে ওঠে, সে তার মেয়েকে বলে দারা মা আমি তোর জন্য বাজি নিয়ে আসছি, মেয়েও খুব খুশি, হরি তার রিক্সায় নিমাই কে বসিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে অমাবস্যার ঝাপসা আলোয় মিলিয়ে যায়, আর পরী জালনা দিয়ে বাজি ফাটানোর শব্দ দেখতে থাকে....।
[সৌরভ তালুকদার]
হরিচাঁদ বিশ্বাস রিক্সা ওয়ালা, এক ডাকে গোটা গ্রামের লোক চেনে, রিক্সা চালানতে তার ওপরে গোটা বাবুল নগড়িতে কেউ আছে বলে আর কারো জানা নেই, রাত যাই হোক, কেউ যদি ভোর রাতেও এসে হরিচাদের ঘরের সামনে হরি হরি বলে হাক দেয় তবে তাকে আর মুখফিরিয়ে ফিরে যেতে হয় না। বেশ ভালোই চলছিল হরির সংসার,তার চারকুলে কেউ নেই একটা মেয়ে আর হরির স্রী এই নিয়েই ছোট্ট পরিবার। ভালোই চলছিল হঠাৎ কি যে হলো সংসারটা দুমরে -মুচরে প্রায় একরাশ অবস্থা। কিছুদিন হলো শহরে চারচাকাওয়ালা এক প্রকার গাড়ি বেরিয়েছে সেই গ্রামে হরির শত্রু নিমাইচাঁদ সবার প্রথমে সেই গাড়ি কেনে, তারা শত্রু হয়েছিল কেমনে তা হরি কাউকেই বলেনি শুধু বলেছিল নিমাই আমার শত্রুর ছিল আছে থাকবে। নিমাইও এক ঘেযে মানুষ সেও এক সুরে তাল মিলিয়ে একই কথা বলে।নিমাই কতকাল থেকে অপেক্ষা করে ছিল কি উপায়ে হরিকে টাইট দেওয়া যায়। আজ হরির রিক্সায় কেউ ওঠে না, নিমাইএর চারচাকা গাড়িতে ওঠে কারনটা খুবই সহজ, গাড়ি করে গেলে যে কোনো জাগায় তারা-তারি পৌছানো যায় আর ভাড়াটাও কম লাগে, তাছারাও আরামটাতো আছেই। হরির কেমন যেন রাগ হয় সে ভাবে রিক্সা বেঁচে সেও চারচাকাওয়ালা গাড়ি কিনবে! কিন্তু গাড়ির দাম শুনে হরি নির্বাক হয়ে যায়। কদিন ধরে ঘরে চালের একটুকুও দানা নেই হরির মাথায় আকাশ ভেঙে পরে এরই মাঝে হরির স্রীর ক্যানসার ধরা পরে ভালো চিকিৎসা না করায় সেও অকালে প্রান হারায়। আজ হরি একা আর কেউ নেই তার পাশে কোলে চার বছরের মেয়েটি বাদে, দুদিন হলো কিচ্ছু খাইনি। হরির নিজেকে নিয়ে চিন্তা হয়না চিন্তা হয় তার ছোট্টো পরী টাকে নিয়ে, দারা মা দেখি কিছু ভিক্ষে পাই নাকি? বাবা বেরিয়ে গেল, এত তরুন এক যুবককে কেই বা ভিক্ষা দেয়, যখন হতাস হয়ে ফিরতে যায় তখনই করুন মুখখানির কথা তার মনে পড়ে যায়, "বাবা বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে"; "বাবা বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে"; চোখ ঝলসে ওঠে যেভাবেই হোক খাবার তাকে জোগার করতেই হবে, ভাবতে ভাবতেই চোখ যায় রাস্তার পাশে রাখা ডাসবিনটার দিকে দুটো কুকুর কাড়াকাড়ি করছে, আজ যে তাকে কুকুর হতেই হবে; সেও যুক্ত হয় সেই কাড়াকাড়ির খেলায় হাতে-পায়ে কুকুরের আচড়ের দাগ নিয়ে অর্ধেক রুটি পেয়েও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে সে, রুটি নিয়ে বাড়ি আসে, মেয়েকে খাওয়ায়, মেয়ে বলে বাবা তুমি খাবে না? না রে মা তুই খা। তবুও এক টুকরো রুটি মেয়ে বাবার মুখে পুরে দেয়। তারপর আবদারের সুরে বলে বাবা আজ তো কালিপুজো তাই না? হ্যাঁ। দেখো সবাই কত বাজি ফাটাচ্ছে আমাকে বাজি কিনে দেবে না? কোথা থেকে দিব মা? আমরা যে তাদের মতো সৌখিই নই, না আমার বাজি লাগবে লাগবে লাগবে, বাবার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে যায়, মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয় মেয়ে রাগ করে বলে যাও তোমার সাথে কথা বলবো না, তুমি বাজে বাবা। হরিচাঁদ ভাবে কিকরে সে তার মেয়ের সখ মেটাবে, তারি বা কি দোষ বছর চারের মেয়ে আর কি বুঝবে?
হঠাৎ দরজায় কড়া নারে কেউ, হরি ওই হরি বলি বাড়িতে আছিস? কে? আমি রে... গলাটা অনেকটা নিমাইচাঁদের মতো লাগছে না? কিন্তু সে তো শত্রুর সে কেন তার কাছে আসবে? দরজা খুলতেই হরি অবাক নিমাইযের চোখ জলে ছল ছর করছে, কি হয়েছে নিমাই? এত কথার সময় নেই আমার বউটা বড়ো অসুস্থ আমার গাড়িটা আজ সকাল থেকে নস্ট হয়ে পরে আছে তুই আমাকে একটু সাহায্য করবি ভাই, আমাকে আর ওকে একটু হসপিটাল পৌছে দিবি? তোর রিক্সা দিয়ে! এককালের শত্রু তারকাছে সাহায্য চাইলে, আসলে দুঃখ-কষ্টে সব রাগ গুলো জল হয়ে গেল। এখন এতো ভাবার সময় নেই, রিক্সাটা অনেকদিন ধরে পরে আছে সেটা বের করলো হরি তারপর কোমরে গামছা বাঁধতে বাঁধতে বললো ভাড়াটা কিন্তু বেশ কড়া করে নেব নিমাই, সে নে তবুও আমাকে সাহায্য কর। হরির মুখে হাসি ফুটে ওঠে, সে তার মেয়েকে বলে দারা মা আমি তোর জন্য বাজি নিয়ে আসছি, মেয়েও খুব খুশি, হরি তার রিক্সায় নিমাই কে বসিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে অমাবস্যার ঝাপসা আলোয় মিলিয়ে যায়, আর পরী জালনা দিয়ে বাজি ফাটানোর শব্দ দেখতে থাকে....।
[সৌরভ তালুকদার]
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃআরাফাত হোসাইন ২৬/০২/২০১৮hm
-
শাফিউল কায়েস ২১/০২/২০১৮খুব ভালো।লাগলো