নীলশালুক
কাল মনসাপূজা। বাজার বেশ জমজমাট। সময়টা বর্ষা কাল তাই সময়ে আসময়ে বর্ষাদেবী তার জোর দেখাতে তৎপর। ইতিমধ্যেই দু তিনবার বৃষ্টি হয়ে গেছে, রাস্তায় জল থৈ থৈ করছে। দুরে একটি কুড়ে ঘড়ে হ্যারিকেনের আলো মিট মিট করে জ্বলছে।ছোটুর মা খুব অসুস্থ, পাশে বসে তার ছেলে তার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে, রাত হচ্ছে আকাশ আরো মেঘলা হয়ে আসছে, চারিদিগে ঘনিয়ে আসছে ঘুট-ঘুটে অন্ধকার.... কপাল পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে, ছেলেটির চোখে অবশা পানি, সে চুপ করে কাঁদছে আর গুমরে গুমরে বলছে, মা তোমার কিচ্ছু হবে না আমি কালই তোমার জন্য ওষুধ নিয়ে আসবো,সেই রাত পার হতে চায় না... খড়ের চাঁলের ওপর দিয়ে বৃষ্টি গতিবেগে বেয়ে যাচ্ছে.. টিনের ফুটো দিয়ে জল পরছে ঘরের মেঝেতে, এইভাবে রাত যায় জ্বর থার্মমিটারেরর কাটা ছাড়িয়ে যায়.. ভোর তখন ৪ টা বাঁজে, ছেলেটি তখনো জেগে সে ধরপরিয়ে উঠলো মায়ের কপালে হাত দিয়ে একটু স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে আলতো গলায় বলে উঠলো মা আমি আসছি, এখুনি তোমার জন্য ডাক্তার নিয়ে আসছি......
ঘার থাকা একটা চটের বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো নীমগাছ তলার পুস্করনিটার দিগে, জল থৈ থৈ করছে তারই মধ্যে ফুটে আছে হাজারো নীলশালুকের দল,ঘড়ে একটা ছোট বেঁটের ডালি ছিল সেটা সে হাতে করে নিয়ে এসেছিল। এখন আকাশ প্রায় পরিস্কার কালো মেঘ সরে গিয়েছে পশ্চিম পানে, বাঁশ বনের পেঁচাটা নিঃভয়ে ডেকে চলেছে নিম গাছের শেষ প্রান্তে বসে। ডালিটা আরগোছে জল ভাসিয়ে দিল আর তারই মধ্যে বসে পড়লো ছোটু, সে কিছুটা নৌকোর ভঙ্গিতেই, জল এতোটাই গভীর যে তার ভয় করতে লাগলো, তবুও তাকে পুস্করনির নীলশালুক জোগার করতেই হবে, কারন সে সেই শালুক বাজারে বেঁচে তার মার জন্য ওষুধ কিনে নিয়ে যাবে, তার চোখে তখন হাজারো স্বপ্ন তার মা আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে, খোকা খোকা বলে ডাকবে তাকে, নিজের হাতে আদর করে খাইয়ে দেবে তাকে, হঠাৎ একটা কুকুরের ডাকে ভ্রন ভাঙলো তার, তখন সে মাঝ পুকুরে। তাকে ঘিড়ে আছে হাজারো নীল শালুক সে প্রতিটা নীলশালুকেই তার মায়ের হাসি দেখতে পাচ্ছিলো, বেশি কিছু না ভেবে বস্তায় পীঠে যতগুলো হয় ততগুলোই তুলতো সে, আজ মনসাপূজো নীলশালুক বেশ বিকোবে। অবশেষে ফুল তোলা শেষ হলো কিন্তু ভীষন ভারী, ১৪ বছরের ছেলে ছোটুর সেটা ওঠানো যেন একটা অসম্ভব ব্যাপার, তবুও তার মনে অগাধ শক্তির সৃষ্টি হয়, মা অসুস্থ ওষুধ কিনতে হবে.......
বেশ কষ্ট করেই বস্তাটি পিঠে উঠিয়ে রওনা দিল সে ফুল বাজারের দিগে, তখন সময় সকাল ৫ টা বেজে ৪২ মিনিট.... বাজার বেশ জমেছে, মূর্তি থেকে শুরু করে পান-সুপুরি কিছুই বাদ নেই, গোটা বাজার যেন লোকে থৈ থৈ। ছোটু সেই ভীরের মধ্যেই একটু ফাঁকা রাস্তা দেখে বসলো, শুধু বসবারি দেরি ফুল বিকোতে দেরি হলো না। একঘন্টার মধ্যে তার সব নীলশালুক বিক্রী হয়ে গেলো, তার মনে আবার আনন্দের ছোয়া লাগে একটুও সময় নষ্ট না করে সে দৌড়ে গেল হাবুল ডাক্তারের বাড়িতে, ডাক্তারবাবু ডাক্তারবাবু আমার মা খুব অসুস্থ একটু চলোনা আমার মাকে দেখে আসবে, ডাক্তার কড়া শব্দে উওর দিল গতসপ্তাহেই তো তোর মাকে দেখতে গেছিলাম কিন্তুু তোর মা আমার ফিস দিতে পারেনি, আজ আবার তুই এসেছিস! যা পালা বলছি এখান থেকে। না ডাক্তারবাবু আমি এবার টাকা নিয়ে এসেছি, এই বলে তার হাতে থাকা সব মিলিয়ে ৮৬৭ টাকা ডাক্তারের হাতে দিল, ডাক্তার বেশ লজ্জা পেল ঠিকই কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে ছোটু কে বললো, চল দেখে আসি তোর মায়ের শরীর এখন কেমন আছে?
ছোটুর ভয়পাপ্ত মুখে স্বপ্ন জেগে উঠলো তার মা আবার ভালো হবে তাকে আবার খোকা বলে ডাকবে,,,, বেশ দৌড়ানোর ভঙ্গিতেই ডাক্তার নিয়ে বাড়ির দিগে রওনা দিল সে,, তখনো সে শুধু ভাবছে কখন ডাক্তারবাবু যাবে আমার মাকে ওষুধ দেবে আর আমার মা ভালো হয়ে উঠবে? বাড়ির সামনে পৌছেই সব চুপ, বাড়িতে সব পাড়ার লোকেরা ভীর করে আছে। কি হয়েছে এই বলে যখনই ছোটু দৌ মেরে ভীর ঠেলে ধুকলো তখন সে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো মাটিতে শোয়ানো সাদা কাপড়ে ঢাকা তার মার নিথর দেহটির দিগে, মা মা বলে চেচিয়ে উঠলো সে, কিন্তু আজ চোখে জল নেই কেন? চারিদিগে চেয়ে সে শুধু জানতে চাইলো তার মার কি হয়েছে তার মা কথা বলছে না কেন? সবাই চুপ! মাথা ফেরাতেই তার চোখ পড়লো পুকুরে ফুটে থাকা শেষ নীলশালুকটার দিগে, ছোটু তখন আপনা আপনি বলে উঠলো কত নীলশালুককে আমি হত্যা করলাম আজ প্রাকৃতি আমার মাকে বাঁচিয়ে রাখবে কোন শর্তে?
সৌরভ তালুকদার
ঘার থাকা একটা চটের বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো নীমগাছ তলার পুস্করনিটার দিগে, জল থৈ থৈ করছে তারই মধ্যে ফুটে আছে হাজারো নীলশালুকের দল,ঘড়ে একটা ছোট বেঁটের ডালি ছিল সেটা সে হাতে করে নিয়ে এসেছিল। এখন আকাশ প্রায় পরিস্কার কালো মেঘ সরে গিয়েছে পশ্চিম পানে, বাঁশ বনের পেঁচাটা নিঃভয়ে ডেকে চলেছে নিম গাছের শেষ প্রান্তে বসে। ডালিটা আরগোছে জল ভাসিয়ে দিল আর তারই মধ্যে বসে পড়লো ছোটু, সে কিছুটা নৌকোর ভঙ্গিতেই, জল এতোটাই গভীর যে তার ভয় করতে লাগলো, তবুও তাকে পুস্করনির নীলশালুক জোগার করতেই হবে, কারন সে সেই শালুক বাজারে বেঁচে তার মার জন্য ওষুধ কিনে নিয়ে যাবে, তার চোখে তখন হাজারো স্বপ্ন তার মা আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে, খোকা খোকা বলে ডাকবে তাকে, নিজের হাতে আদর করে খাইয়ে দেবে তাকে, হঠাৎ একটা কুকুরের ডাকে ভ্রন ভাঙলো তার, তখন সে মাঝ পুকুরে। তাকে ঘিড়ে আছে হাজারো নীল শালুক সে প্রতিটা নীলশালুকেই তার মায়ের হাসি দেখতে পাচ্ছিলো, বেশি কিছু না ভেবে বস্তায় পীঠে যতগুলো হয় ততগুলোই তুলতো সে, আজ মনসাপূজো নীলশালুক বেশ বিকোবে। অবশেষে ফুল তোলা শেষ হলো কিন্তু ভীষন ভারী, ১৪ বছরের ছেলে ছোটুর সেটা ওঠানো যেন একটা অসম্ভব ব্যাপার, তবুও তার মনে অগাধ শক্তির সৃষ্টি হয়, মা অসুস্থ ওষুধ কিনতে হবে.......
বেশ কষ্ট করেই বস্তাটি পিঠে উঠিয়ে রওনা দিল সে ফুল বাজারের দিগে, তখন সময় সকাল ৫ টা বেজে ৪২ মিনিট.... বাজার বেশ জমেছে, মূর্তি থেকে শুরু করে পান-সুপুরি কিছুই বাদ নেই, গোটা বাজার যেন লোকে থৈ থৈ। ছোটু সেই ভীরের মধ্যেই একটু ফাঁকা রাস্তা দেখে বসলো, শুধু বসবারি দেরি ফুল বিকোতে দেরি হলো না। একঘন্টার মধ্যে তার সব নীলশালুক বিক্রী হয়ে গেলো, তার মনে আবার আনন্দের ছোয়া লাগে একটুও সময় নষ্ট না করে সে দৌড়ে গেল হাবুল ডাক্তারের বাড়িতে, ডাক্তারবাবু ডাক্তারবাবু আমার মা খুব অসুস্থ একটু চলোনা আমার মাকে দেখে আসবে, ডাক্তার কড়া শব্দে উওর দিল গতসপ্তাহেই তো তোর মাকে দেখতে গেছিলাম কিন্তুু তোর মা আমার ফিস দিতে পারেনি, আজ আবার তুই এসেছিস! যা পালা বলছি এখান থেকে। না ডাক্তারবাবু আমি এবার টাকা নিয়ে এসেছি, এই বলে তার হাতে থাকা সব মিলিয়ে ৮৬৭ টাকা ডাক্তারের হাতে দিল, ডাক্তার বেশ লজ্জা পেল ঠিকই কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে ছোটু কে বললো, চল দেখে আসি তোর মায়ের শরীর এখন কেমন আছে?
ছোটুর ভয়পাপ্ত মুখে স্বপ্ন জেগে উঠলো তার মা আবার ভালো হবে তাকে আবার খোকা বলে ডাকবে,,,, বেশ দৌড়ানোর ভঙ্গিতেই ডাক্তার নিয়ে বাড়ির দিগে রওনা দিল সে,, তখনো সে শুধু ভাবছে কখন ডাক্তারবাবু যাবে আমার মাকে ওষুধ দেবে আর আমার মা ভালো হয়ে উঠবে? বাড়ির সামনে পৌছেই সব চুপ, বাড়িতে সব পাড়ার লোকেরা ভীর করে আছে। কি হয়েছে এই বলে যখনই ছোটু দৌ মেরে ভীর ঠেলে ধুকলো তখন সে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো মাটিতে শোয়ানো সাদা কাপড়ে ঢাকা তার মার নিথর দেহটির দিগে, মা মা বলে চেচিয়ে উঠলো সে, কিন্তু আজ চোখে জল নেই কেন? চারিদিগে চেয়ে সে শুধু জানতে চাইলো তার মার কি হয়েছে তার মা কথা বলছে না কেন? সবাই চুপ! মাথা ফেরাতেই তার চোখ পড়লো পুকুরে ফুটে থাকা শেষ নীলশালুকটার দিগে, ছোটু তখন আপনা আপনি বলে উঠলো কত নীলশালুককে আমি হত্যা করলাম আজ প্রাকৃতি আমার মাকে বাঁচিয়ে রাখবে কোন শর্তে?
সৌরভ তালুকদার
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মো: মাসুদুর রহমান ২১/০৬/২০১৭সুন্দর
-
ARUNABHA MUKHERJEE ১৮/০৬/২০১৭ভালো লিখেছেন ।
-
ফয়জুল মহী ১৫/০৬/২০১৭সুন্দর চিত্রকল্প