www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদে তরুণ-তরুণীরা


সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক এখন তরুণ-তরুণীদের প্রতারণার ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে এক ধরনের নগ্ন ভয়াবহতা। নোংরামি আর নগ্নতার উৎস এখন ফেসবুক। এ কারণে ফেসবুকের উপকারিতা এখন চলে গেছে পুরোপুরি পর্দার আড়ালে।  
২৪ বছর বয়সী তাসপিয়া রাকা। ধনাঢ্য পরিবারের রাকার মা একটি রাজনৈতিক দলের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। রাকার সাথে অনলাইনে পরিচয় হয় অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট তানজির ইসলাম পরাগের সঙ্গে। পরাগ ফেসবুকে বৃত্ত এবং সিডাটিপ হিপনোটিক্স নামে পরিচিত। অনলাইনে দুইজনের পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, ভাললাগা ও ভালবাসা। তানজীর বিভিন্ন সময় তাসপিয়া রাকার সরলতার সুযোগে প্রেমের অভিনয় করে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।

রাকার ভাষ্যমতে, প্রেমের অভিনয় করে টাকা নিয়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে ডেটিং করতে যেত তানজীর ইসলাম বৃত্ত ওরফে সিডাটিভ হিপনোটিক্স। রাকার কাছে ব্যাপারটি ফাঁস হয়ে গেলে তানজীর ইসলাম বৃত্ত অশ্লীল সব গালিগালাজের সাথে রাকাকে হুমকি দেয় ফটোশপের মাধ্যমে ছবি নগ্ন করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার। একজনের সাথে প্রেমের অভিনয় করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রেম করতে যাওয়ার ব্যাপারটি রাখা চুপচাপ মেনে নিলেও ফটোশপের মাধ্যমে ছবি বিকৃতি করে নগ্ন করার হুমকি এবং অশ্লীল গালি মেনে নিতে পারেননি রাকা। তাই নিজ ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস লিখে ব্যাপারটি ফাঁস করে দেন। রাকা ২১ জুলাই একটি স্ট্যাটাসে লিখেন, 'আমি রাকা। আম্মার কাছে তার প্রিয় সন্তান রাকা, বন্ধুদের কাছে গ্রাজুয়েশন করতে থাকা রাকা, পড়াশুনা পাগল ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করা রাকা। অনলাইনের বিশিষ্ট পীর বাহাদুর সিডাটিভের মতে আমি একজন বে.. মা..। ' রাকা দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বিভিন্ন সময়কার একটি অংশে লিখেছে 'আমাকে অনেকেই গালি দিচ্ছেন একজন পরিচিত আওয়ামী একটিভিস্টের সাথে কেন প্রেম করতে গেলাম। এত কিছু বুঝে প্রেম হয় না। আমি ভালবেসেছিলাম, সেই ভাল বাসায় খাঁদ ছিল না। তারপরও আমার ভালবাসার কারণেই আমিই শুধু গালি খাই, আর আমাকে প্রতারিত করার পরও বৃত্ত ওরফে সিডাটিভ থাকে সাধু। আমি কি চাই ? যেদিন আমি জেনেছি আমার কাছ থেকেই টাকা নিয়ে আরেকটা মেয়ের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা, কোন মেয়ে আছে, এ অবস্থায় হেসে খেলে বেড়াবে ?'

শিকার পুরুষও
রাকিব,পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ফেসবুকে গ্রুপ চ্যাটে পরিচয় হয় সামিয়া নামের একটি মেয়ের সাথে। সুন্দরী সামিয়া নিজের পরিচয় দেয় ঢাকার নামকরা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে। গ্রুপ চ্যাট থেকে ফ্রেন্ডলিষ্টে। কয়েকদিনের ফেসবুক চ্যাট থেকে স্কাইপে ভিডিও চ্যাটে। ধীরে ধীরে ভিডিও চ্যাট গড়ায় সেক্স ভিডিও চ্যাটে। সামিয়ার সেক্সুয়াল আহবানে সাড়া দিতে গিয়ে ওয়েবক্যামের সামনে নিজেকে নগ্ন করে রাকিব। বিভিন্ন সময় সামিয়াকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গিফটও পাঠায়। সামিয়াও এটা পছন্দ হয়েছে ওটা পছন্দ হয়েছে কিনে দাও আবদার করে। বেশ কয়েকবার বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে মোটা অংকের টাকা পাঠায় রাকিব। একদিন এক দুই নয় ১০ হাজার টাকা দাবি করে সামিয়া। রাকিবের কাছে ১০ হাজার টাকা না থাকায় কয়েকদিন পর দেওবার কথা বলতেই ক্ষেপে যায় সামিয়া। হুমকি দেয়, একদিনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা না দিলে রাকিবের নগ্ন ভিডিও ফাঁস করার। হতবিহ্বল রাকিব যখন বুঝতে পারে তখন কিছুই করার থাকেনা। শেষে ৩০ হাজার টাকায় রফাদফা করে। কিন্তু, সামিয়া কখন আবার নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় এই ভয় সবসময় তাড়া করে রাকিবকে। ঘুনাক্ষরেও কখনো রাকিব টের পায়নি সামিয়া স্কাইপেতে সেক্স ভিডিও চ্যাট রের্কড করে রেখেছে।



তাসপিয়া এবং রাকিব দু’জনের মধ্যে মিল হলো তাসপিয়া প্রতারিত হয়েছে একজন পুরুষের কাছে। বিপরীতে রাকিব প্রতারিত হয়েছে একজন নারীর কাছে। কিন্তু, দু’জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানটি হচ্ছে, তাসপিয়ার সেক্সুয়াল স্ক্যান্ডালের ভয় ছিলনা। তাই তাসপিয়া সহজেই একজন ভণ্ডের মুখোশ খুলে দিতে পেরেছে। অন্যদিকে রাকিবের সুযোগ নেই প্রতারক সামিয়ার মুখোশ খুলে দেয়ার। কারণ, যৌনতার ফাঁদে ফেলে রাকিবকে নগ্ন করলেও সামিয়া ওয়েবক্যামের সামনে নিজের শরীর মেলে ধরেনি। তাই সামিয়ার প্রতারণার কাহিনী কাছের কয়েকজন বন্ধুর সাথে শেয়ার করা ছাড়া জনসম্মুখে ফাঁস করার সযোগ নেই রাকিবের।

প্রেমের ফাঁদে সর্বনাশ

অনলাইনে প্রতিদিনই এমন ডজন ডজন সর্বনাশা প্রেমের খবর ঘুরে বেড়ায় এ ওয়াল সে ওয়ালে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এই সর্বনাশা প্রেম মহামারী আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশেও মহামারীর পর্যায়ে যাচ্ছে ব্যাপারটি। নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, সামাজিকভাবে বদনাম হওয়ার আশংকায় ৯৫ ভাগ সময় তাসপিয়া, রাকিবরা প্রতারিত হওয়ার কাহিনী ফাঁস করেন না। সাহসী হয়ে কোন তাসপিয়া করে ফেললেও তাসপিয়াকেই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

আড়ালে আবডালে প্রতিদিন কত ঘটনা শত শত তরুণ-তরুণীর জীবনে অন্ধকার ডেকে আনছে তা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।

***************************************
আবু সাহেদ সরকার
নির্বাহী সহ-সম্পাদক, মাসিক পল্লীকথা, গাইবান্ধা।
সাধারণ সম্পাদক-পল্লীকথা সাহিত্য পরিষদ, গাইবান্ধা।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৮৭২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফেইসবুক ব্যবহারে চাই সতর্কতা।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ১৭/০৯/২০১৪
    আসলে এই অবাধ মেলামেশার (ভার্চুয়ালে কিংবা বাস্তবে) জন্যই এমনটা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দু'জনেরই দোষ আছে আমি মনে করি।
  • অনেক উপকার করেছেন।
    • আবু সাহেদ সরকার ১৭/০৯/২০১৪
      ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
      • এধরনের লিখা আরও দিন।
        • আবু সাহেদ সরকার ১৮/০৯/২০১৪
          এধরনের লেখা প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ!
  • ১৬/০৯/২০১৪
    খুব ভালো শিক্ষামূলক পোষ্ট ।
  • আবু সাহেদ সরকার ১৬/০৯/২০১৪
    সবার সতর্ক হওয়া আবশ্যক।
 
Quantcast