রেলমন্ত্রীর বিবাহ ও একটি দোয়া কবুল – না কবুলের কাহিনী
লিখেছেন chintito chintabid
৬৮ বছর বয়স্ক রেলমন্ত্রী হঠাত বিয়ের সাজে সজ্জিত। কিন্তু খবরটা শুনে আমার হৃদয় ডুকরে কেদে উঠেছে। ওয়েট, মন্তব্য করার আগে কেন আগে শুনে নেন!!
রেলভ্রমনের প্রতি আমার এক অন্যরকম আকর্ষণ রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত (বা সৌভাগ্য) জীবনে দুইবার বাংলাদেশের নীল-হলুদ ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রথমবার গিয়েছিলাম অনেকদিন আগে গুষ্ঠিশুদ্ধা চিটাগাং। এত আনন্দ জীবনে খুব কমই করেছি। আমার সব ভাইবোন-কাজিনরা মিলে এত্ত মজা করেছিলাম যে ট্রেনের অবস্থা দেখার সময় হয়নি। রাস্তায় ঝালমুড়ি, বুটমুড়ি, সিঙ্গারা, পিয়াজু কোনকিছু আমাদের করাল থাবা থেকে রেহাই পায়নি। সেদ্ধ ডিমওয়ালা দেখে আমার এক ভাই এত জোরে চিতকার দিয়েছিল যে বেচারা ডিমওয়ালা ডিমসহ লাফিয়ে উঠেছিল। মধুর স্মৃতি।
রেলভ্রমণের স্মৃতি সেখানেই শেষ হয়ে গেলে ভালো হতো। কিন্তু বিধি বাম। সম্প্রতি অতি উতসাহী আমরা আবার ট্রেনের টিকেট কাটলাম। এবার টিকেট ফার্স্ট ক্লাসের। হুমায়ুন আহমেদের গল্পে ট্রেন আর স্টেশনের সুন্দর সুন্দর বর্ণনা মনে করতে করতে স্বপ্নালু চোখ নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে মানুষের ধাক্কা ও দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় গিয়ে একটা বড়সড় ধাক্কা খেলাম। প্রথমে সিড়িতে পাড়া দিতেই দেখি ময়লা পানি আর কামড়ায় ঢুকতে একটা বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে ধাক্কা মারল। আমরা হতভম্ভ। জানালাগুলোতে ছেড়া ছেড়া ময়লা পর্দা। সিটগুলোতে ফোম চ্যাপ্টা মেরে গেছে। গন্ধটা এতই তীব্র, আমার বোন মন্তব্য করে ফেলল, নিশ্চয় বাথরুমের অবস্থা খুব খারাপ তাই ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রীরা সিটেই কর্ম সমাধা করেন। সিটের উপর অসংখ্য ব্যাখ্যাতীত দাগ দেখে আশংকাটা উড়িয়ে দিতে পারছিলাম না। ওকে, আমাদের যারা চেনেন না, তাদের হয়তো একটু বাড়াবাড়ি লাগতে পারে, কিন্তু বাই গড মনে হচ্ছিল দৌড়ে নেমে পড়ি এবং নেমে দৌড় মারি। সিটে বসা মাত্র দেখি তেলাপোকা – ওয়েল আমাদের জন্য তেলাপোকা আর ডাইনোসরের বাচ্চা ছুটোছুটি করা একই কথা। কান্নার বদলে হাসা শুরু করতে যারা এগিয়ে দিতে এসেছিলেন তারা শুকনো মুখে বললেন, এটাই নাকি সেই ট্রেনের বেস্ট অপশন। ঈদের পর পর হওয়ায় আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে টিকেট জোগাড় করা হয়েছিল।
আমার বোনের প্রিয় পারফিউম আমরা কেউ ধরলে সে আমাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকে, সে উদার হস্তে সিটের চারপাশে পারফিউম মারা আরম্ভ করল। ট্রেনও চলা শুরু করল। কোথায় একটু কানে হেডফোন লাগিয়ে রোমান্টিকভাবে বাইরের পরিবেশ দেখব, জানালার কাচ সম্পূর্ণ ঘোলা। একপাশে কাচই ভাঙ্গা। ট্রেনের গতি একটু বাড়লেই ট্রেন ভয়াবহভাবে ডানে বামে হেলতে আরম্ভ করে। এর মধ্যেও ছাদে লোকজন উঠে বসেছে দেখে বলতে ইচ্ছা করল, হে বীর বাঙ্গালী, স্যালুট তোমাদের!!
ভয়াবহ জার্নি বাই ট্রেনে আমি পুরো সময় রেল কর্তৃপক্ষর গুষ্ঠি উদ্ধার করেছি। মনে মনে হরেক রকম অভিশাপ দিয়েছি তাদেরকে যাদের দায়িত্ব আমাদের মতো লোকদের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে সেই অনুযায়ী সার্ভিস দেয়া। ফার্স্ট ক্লাসের যদি এমন অবস্থা হয়, অন্য ক্লাসের কথা আমি ভাবতেও পারছিলাম না। যাদের অপারগ হয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নিয়মিত ব্যবহার করতে হয় - কতিপয় মানুষের লোভের কাছে তারা কতটা অসহায়, কতটা জিম্মী ভেবে প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল। গালি-অভিশাপের টপে ছিল আমাদের রেলমন্ত্রী। ব্যাটার যেন রোজ এই ট্রেন দিয়ে চলা ভাগ্য হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমাদের ৮/৯ ঘন্টার অভিশাপের ফল হলো কি? ব্যাটার বিয়ের ফুল ফুটে গেল। এইডা কিসু হইল? তবে আমি আশাবাদী মানুষ। এখন দুটো জিনিস ঘটতে পারে। চাচা হয়তো চাচীকে নিয়ে ট্রেনভ্রমণে যেতে পারেন। চাচী যদি আমাদের সেই কাতরীয় রাণীর মতো ভিশনারী হয়, হয়তো আল্লাদী গলায় বলতে পারেন, ‘মজু, ট্রেনগুলো কিন্তু এবার ঠিক করতেই হবে’ চাচা কি নববিবাহিতার কথা ফেলে দিতে পারবেন? কিংবা আরেকটা সিনারিও হলো চাচী এতই দজ্জাল হবেন যে চাচা প্রায়ই ঘর থেকে পালিয়ে ট্রেনে আশ্রয় নিবেন। শুধু শুধু ঢাকা-চিটাগাং যাতায়াত করবেন। তারপর হয়তো ..... তারপর হয়তো ---- যাহোক সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ।
তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ-দৈনিক ফেইসবুক।
********************************
আবু সাহেদ সরকার
সাধারণ সম্পাদক, পল্লীকথা সাহিত্য পরিষদ, গাইবান্ধা।
পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক, গাইবান্ধা জেলা দৈনিক সমকাল সুহৃদ সমাবেশ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
স্বপন রোজারিও(১) ০৭/০৯/২০১৪ভাল
-
মল্লিকা রায় ০৫/০৯/২০১৪ওয়াও কি চমত্কার কাব্য কাহিনী।আপ্লুত হলাম।
-
একনিষ্ঠ অনুগত ০৫/০৯/২০১৪ট্রেন গুলোর অবস্থা সত্যিই করুণ।
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ০৪/০৯/২০১৪বাহ বেশ লিখেছেন তো।