www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অকস্মাত্‍ পুলসিরাত যাত্রা - মাধবকুণ্ড যাওয়ার রাস্তার নাম পুলসিরাত রোড দেওয়া হোক

ভূমিকা -
মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। এই বাক্যটাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বলেই আমি প্লান করে কাজ করায় বিশ্বাস করি না। তবু মাঝে মাঝে যদি প্লান অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করি তাহলে সেই প্লান এবং কাজ দুইই অতি অবশ্যই অকালে মাঠে মারা যাবে।

বর্ণনা -
প্লান ছিলো ফ্রেন্ডরা মিলে পরীক্ষা শেষ হলে রাতারগুল যাবো। রাতারগুলের অনেক প্রশংসা শুনেছি, বাংলাদেশের একমাত্র স্বাদু পানির Swamp forest। সিলেটে একবছর ধরে থাকা সত্তেও রাতারগুল না যাওয়া রীতিমত পাপের পর্যায়ে পড়ে। তো রাতারগুল যাওয়ার সেই প্লান মাঠে মারা যাওয়ার পরিবর্তে ভার্সিটি গেটে মারা গেল। প্লানের অকালমৃত্যুর কারণ জনবলহীনতা। সাথে যাওয়ার মত কেউ নাই। আমার সাথে আছে শুধুমাত্র একজন- আমার মেসমেট এবং ক্লাসমেট গোলাম কিবরিয়া। যখন দেখলাম আমরা দুজন ছাড়া কেউ নাই, তখন পুরা রাতারগুল প্রোগ্রামকে 'গুল্লি মারলাম'(এটা একটা সিলোটি কথা)। কোন প্রকার পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই কিবরিয়া সিদ্ধান্ত নিলো মাধবকুণ্ড যাবে!

মাধবকুণ্ডের কথা এর আগে শুনলেও আমার ঠিক জানা ছিল না এটা বাংলাদেশের কোন প্রান্তে অবস্থিত। কিবরিয়া শুধু জানে এটার অবস্থান সিলেট বিভাগে। কিন্তু তাতে কি? অসহায়ের সহায় হল GOOGLE মামা। মামার কাছ থেকেই সাথে সাথে জেনে নিলাম মাধবকুণ্ডের নাড়ি নক্ষত্র! যখন দেখলাম জায়গাটা হাতের নাগালেই, তখন বিন্দুমাত্র ভাবনা চিন্তা না করেই মাধবকুণ্ডের পথে রওনা দিলাম।

মাধবকুণ্ডের এই যাত্রার আমি নাম দিয়েছি পুলসিরাত যাত্রা। কারণ প্রতি পদে পদে এত বাধার সম্মুখীন হয়েছি যে এই নাম না দিয়ে উপায় ছিল না। কিন্তু এই বাধাগুলো কোনকিছুই না মেইন পুলসিরাতের কাছে। মেইন পুলসিরাত হল কাঁঠালতলী থেকে মাধবকুন্ডের রাস্তাটা।

সিলেট থেকে মাধবকুণ্ড সহজে যেতে হলে আগে ট্রেনে কুলাউড়া পর্যন্ত যেতে হয়। তারপর কুলাউড়া থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে সরাসরি মাধবকুণ্ড যাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের সমস্যা হল আমরা দুজন। তাই সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে চাইলে শার্ট প্যান্ট বিক্রি করে ভাড়া মেটাতে হবে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই পুরো রাস্তা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে হল। এইটাও কোন পেইন না, যতটা পেইন কাঁঠাল তলি থেকে মাধকুণ্ডের আট কিলোমিটার রাস্তা।

পুরা রাস্তা এত খানা খন্দে ভর্তি যে যেকোন মুহূর্তে সিএনজি উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। রাস্তার মধ্যেকার বিশাল গর্ত সিএনজি ড্রাইভারকে পার হতে হয় পুলসিরাতের চেয়েও বেশি সাবধানতায়। মাঝে একটা বড় গর্তে আমাদের সিএনজি প্রায় উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আমার মনে হয় এই রাস্তার একমাত্র উদাহরণ হতে পারে পুলসিরাত।

সিলেটে দু দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রী থাকা সত্তেও পাঁচ বছরেও কেউ এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন প্লেসে যাওয়ার পুলসিরাতকে রাস্তা বানানোর উদ্যোগ নেন নি। হয়তো মন্ত্রী এমপিগণ আল্লাহর মাল (পূণ্যবান বান্দা) বলে এইসব পুলসিরাত অনায়াসেই পার হয়ে যান। কিন্তু আমরা আম জনতা পাপীষ্ঠ বলে এই রাস্তাগুলো আমাদের কাছে পুলসিরাত অথবা মৃত্যু ফাদ বলে মনে হয়।

উপসংহার - পুলসিরাত পার হয়ে মানুষ জান্নাত পায়, আর আমরা পেয়েছি মাধবকুণ্ড। জান্নাতের সাথে এর একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে জান্নাতে মানুষ ক্লান্ত হয় না, কিন্তু আমরা মাধবকুণ্ডের গহীন অরণ্যে ঢুকতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝে নেন, জায়গাটা কত সুন্দর।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১০৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রাসেল আল মাসুদ ১৭/০৯/২০১৩
    জ্বি, সেইটাই। অন্যান্য রাস্তাঘাটের দিকে নজর নাই তো নাই, পর্যটন প্লেসের রাস্তাগুলো পর্যন্ত সরকার দেখে না! আপনাকে অভিনন্দন ইনসিগনিয়া।
  • রাসেল আল মাসুদ ১৭/০৯/২০১৩
    আপনাকেও ধন্যবাদ, ইব্রাহীম রাসেল। শুভকামনা রইল
  • Înšigniã Āvî ১৭/০৯/২০১৩
    আমাদের দেশেও এরকম ঘটনা প্রচুর আছে, আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।
  • ইব্রাহীম রাসেল ১৭/০৯/২০১৩
    --অনেকে কিছু জানতে পারলাম তোমার অভিজ্ঞতার কথা পড়ে। ধন্যবাদ--
 
Quantcast