www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কর্মময় মনন আনন্দময় জীবন

চঞ্চল পৃথিবীর চঞ্চল জীব মানুষ, তাই মানুষের মন সর্বদাই অস্থির; কখনও বর্তমানের স্বাদ নিতে নিতে ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোড় হয় আবার অতীতের হতাশার স্মৃতিতে আলস্যে অকর্মা হয়। জীবনকে আনন্দদায়ক করার জন্য কাজই একমাত্র ভরসা। যারা বর্তমান সময়কে উপলদ্ধি করে কাজে মনোযোগয়ন ঘটাতে পারে তারাই অবহেলার সমুদ্র পারি দিয়ে জয়ের তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। আসলে - কাজ কি ? - এ প্রশ্নের জবাবে উপাদান ও উৎসগত ভিন্নতা হতে পারে। সাধারন অর্থে আমরা যখন যা কিছু করি তাই কাজ। সমাজ বিজ্ঞানীরা ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে এসে সমাজের কল্যানে নিবেদিত হয়ে যা কিছু করা হয় তাই কাজ বলে অভিহিত করে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বলেন, ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রের কল্যানে সাধিত কর্ম সকলই কাজ। রাজনীতিবিদদের ধারনা, জনগনের সাথে থেকে জনগণের আশা-অকাঙ্খা বাস্তবায়ন করাই কাজ। গণিতবিদগণ গাণিতিক সমতা বিধান করে বলেন, চেস্টার (বল) ফলে যদি ফল (পরিবর্তন) মিলে তাহাই কাজ। আর ব্যাপক অর্থে বুদ্ধিজীবিরা বলেন, যার বিনিময়ে জীবনে সাফল্য, সৌভাগ্য, প্রশান্তি ও প্রাচুর্য্য আসে তাই কাজ। মূলত: কাজকে আমরা যে ভাবেই দেখিনা কেন কাজ মানুষের জীবনকে আনন্দে বাঁচিয়ে রাখার মহৌষধ। কাজের আনন্দ উদ্গীরন করতে চাইলে সময়ের যথার্থতা উপলদ্ধি করা বাঞ্চনীয়। বর্তমানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অর্থাৎ বর্তমানকে কর্মময় রেখে জীবনে অর্জন করতে হবে কাঙ্খিত সফলতা, আর এই সফলতাই জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়।
সময়ের তারতম্যে কালের ভেদে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের শ্রেনীভেদ থাকলেও সর্বকালে বর্তমান’ -ই স্থায়ীরূপে ক্রিয়াশীল। কেননা ব্যর্থ ‘অতীত’ হতাশার শামীল, আগামী’ এক পরিকল্পিত অবয়ব আর বর্তমান’ চলমান। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বর্তমান একটি ক্ষণস্থায়ী বিষয়, তবে বাস্তবিক পক্ষে ঘড়ির কাঁটার সাথে সাথে বর্তমান যখন অতীত হয়ে আগামীতে অগ্রসর হয় ঠিক ঐ মুহূর্তে বর্তমান স্বয়ংক্রিয় ভাবে বিরাজমান হয়। তাই অনুধাবনের বিষয় এই যে, আমরা সব সময়েই বর্তমানের উপর দাঁড়িয়ে আছি। আগামীর যে স্বপ্ন প্রত্যেকের মানসপটে আঁকা আছে বর্তমানই তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সচল রাখে। এ ধারাবাহিকতায় যে সময়ে সফলতা অর্জিত হয় তা অতীতের অবস্থান থেকে আগামী হলেও উপস্থিত মুহুর্তে তা বর্তমান। মূলত: বর্তমান একটি চলমান পথ। আজকের আগামীতে সফলকাম হতে মূলত: বর্তমানেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। কথিত আছে , এক রাজা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ , ব্যক্তি ও সময়- এ তিনটি বিষয় জানার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। তিনি কারও উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য এক মনীষীর শরণাপন্ন হলেন। মনীষী উত্তরে বলেছিলেন, যে লোক ‘বর্তমান’এ আপনার সাথে আছে সেই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ , যে কাজ আপনার বর্তমান’এ করা প্রয়োজন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ এবং যে সময় আপনি ‘বর্তমান’এ অতিক্রম করছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ ‘সময়’। মনীষীর উত্তরে বর্তমানের অস্তিত্ব ও গুরুত্বের বিষয়টি সুস্পষ্ট। অর্থাৎ বর্তমান’ই জরুরী।
মূলত: অতীত ,বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কোন তার্কিক বিষয় নয়। বর্তমানের অস্তিত্ব যাই হোক না কেন মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল, বর্তমানকে কাজে ব্যস্ত রাখা জীবনের জন্য আশীর্বাদ। এটা একদিকে সফলতার ভীত রচনা কওে অপরদিকে জীবনকে আনন্দময় কওে দীর্ঘায়ু করে। প্রিয় জন হারানোর শোক, অতীতের ব্যর্থতা, ভূল বা অন্য কোন মনকষ্টদায়ক বিষয় মানুষকে পীড়া দেয়। আবার নিজের বা আপন জনের ভয়ানক বিপদের খবরে মন অস্থির হয়। অনুরূপ দূ:খ যন্ত্রনায় জীবন হতাশাগ্রস্ত হয়। আর দীর্ঘস্থায়ী হতাশা জীবনে অসহায়ত্বের অনুভূতি জাগায় । অনুতপ্ত হয়ে মানুষ অলস জীবন যাপন করে এবং কজে কর্মে অমনযোগী হয়ে আত্মধ্বংসী আচরন করে। এরূপ বেদনাক্লিষ্ট চলমান বর্তমানে জীবন ক্রমে আশংকাগ্রস্ত হয়ে বিষময় হয়ে উঠে। অথচ এরূপ পরিস্থিতি কখনও কোন শান্তনা বা সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করতে পারেনা বরং ব্যক্তি বা পরিস্থিতির সাথে জড়িত সকলের জীবনে স্থবিরতা আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কেননা জীবনের কাজ থেমে থাকলেও চাহিদা থেমে থাকে না। আর যোগান না থাকলে চাহিদা পূরণ হওয়ার সুযোগ থাকে না। ফলে চাহিদা আর যোগানে অসংগতিতে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা যা সমাধান কাজের মধ্যেই নিহিত থাকে। হতাশা নিয়ে অলস জীবন যাপন করলে দু:খ - শোকের কোন সুরাহা হয় না। বরং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে সামাল দিয়ে শোক আর ব্যর্থতাকে শক্তিতে পরিণত করে জীবন সংগ্রামে বেগবান থাকাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ। মনে রাখতে হবে, “ A strong person is the one, who cries and sheds tears for a moment then gets up and fights.”
অতীতের ভূল বা কষ্টের জন্য অনুশোচনা করা যায় যার ফলে তা পরিশুদ্ধ হয়। কিন্তু তা লালন করে জীবনকে বিষাদময় করাটা বোকামি বটে। কাজের মধ্যে নিজেকে মগ্ন রাখা গেলে সমস্ত দু:খ যন্ত্রনা ভূলে সময়টা ব্যস্ততার মধ্যে কাটে, তখন দূ:খ বোধ করার কোন অবকাশ থাকেনা। কাজ মানুষকে কষ্টের বেদনাময় অনুভূতি থেকে বাঁচিয়ে দেয়। যে যত বেশী কাজ করে সে তত মনকে জটিলতা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। ইতিবাচক দৃষ্টিতে সে জীবনে আগাতে পারে। সে সফল হয়, আনন্দে থাকে। বস্তত আমরা প্রতিদিন কাজ করি আর তাই প্রতিদিন সাফল্যের আনন্দ অনুভব করতে পারি। কিন্ত গভীরভাবে তা আমলে নিই না। সকাল থেকে রাত অবধি দৈনন্দিন প্রয়োজনে পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত হরেক রকমের কাজ করতে হয়, তার মধ্যে আমরা গুটিকয়েক ছাড়া প্রায় সব কাজই সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়। এক একটি সফলতার জন্য আমরা যদি এক একটি আনন্দ অনুভব করি তাহলে ঐ দিনটি আমাদেও আনন্দে পরিপূর্ণ হয়। এরূপ আনন্দময় দিনের সমষ্টিতে জীবন আনন্দে কেটে যায়। যেখানে জীবনের প্রতিটি দিনে রয়েছে সাফল্য আর সাফল্যের আনন্দ সেখানে শত প্রতিকূলতার মাঝেও কাজে ডুবে থাকা শ্রেয়। কাজেই বর্তমানের প্রতিটি মুহুর্তের কাজের সফলতাই জীবনের পরিপূর্ণ সফলতার চাবিকাঠি।
একটাই মানব জীবন ,তাও আবার দূর্লভ। এ জীবন শুধুমাত্র নিজের আরাম-আয়েশ, ধন-সম্পদ, যশ -খ্যাতি অর্জনের সফলতার আনন্দে বিভোর থাকার জন্যে নয়। স্রষ্টার সৃষ্টির উপকারে বা কোন কল্যানে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে না পারলে পরিপূর্ন সফলতা অর্জিত হয় না। এ পৃথিবীতে মানুষের দায়িত্ব অনেক। মোমবাতি যেমন শুধু দাঁড়িয়ে থাকেনা, জ্বলে জ্বলে আলোকিত করে। তেমনি সমাজের দূর্দশায় নীরব না থেকে নিজের কষ্টার্জিত অর্জন তথা ব্যক্তিগত সফলতার মাধ্যমে সমাজের সফলতায় কাজ করা আমাদের কর্তব্য। আমরা অনেক সময় সময়ের অজুহাতে ও অবহেলায় সমাজকল্যানে নিজেকে বিরত রাখি।এ অবহেলা কর্মস্পৃহা গ্রাস কওে এবং কাজের আত্মতৃপ্তি অনুভবে অন্তরায় হবে। মূলত: বর্তমানকে অবজ্ঞা কওে জীবনে ব্যর্থতার গ্লানি না বাড়িয়ে সফলতার জয়মালার জন্য প্রস্তুতি নেয়াই শ্রেয়। সীমিত এই জীবন পরিধিতে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা শেষ করা বুদ্দিমত্তার পচিায়ক। জীবন সমুদ্রে মৃত্যুর তরনী তীরে আসার আগেই দায়িত্ববোধে যতœশীল হয়ে দায়িত্বেও কাজ শেষ করা জরুরী। তবেই জীবনে মৃত্যুর তরণী আসলেও আনন্দেও সাথে মৃত্যু-তরণীতে উঠে মনীষীদেও ন্যায় দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষনা দেয়া যায়, ‘‘আমার কাজ শেষ হয়েছে- আমি আজ আনন্দিত । আমি পরিপূর্ণ হয়েছি- আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই।’’ অর্থাৎ পরিপূর্ণ কর্মানন্দে মৃত্যুকেও জয় করা সম্ভব।
কাজ হচ্ছে একটি আনন্দজাহাজ আর বর্তমান হল তার মাঝি।আমরা সকলেই সেই আনন্দজাহাজের যাত্রী।আনন্দময় ভ্রমনের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সুস্পষ্টভাবে গতিপথ চিহ্নিত করাই মূলকাজ। কাজের আনন্দের দিক গুলো চিহ্নিত করে আগ্রহ সৃষ্টি করা গেলে কাজে মনোযোগায়ন ঘটে; বর্তমান সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো সহজতর হয়। এতে আনন্দজাহাজের কর্মময় পথ সুগম হয়। আগামীর ভাল কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে বর্তমান কর্মে আনন্দযাত্রা ত্বরান্বিত হয়। সফল ভ্রমন পরিক্রমায় প্রত্যাশার প্রাপ্তিতে ভ্রমন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়। সেটাই তখন হয়ে উঠে একটি সুন্দর সফল বর্তমান। আসলে বিফলতা বলতে কিছুই নেই। সবকিছু সময় ও শ্রমের সামগ্রিক বিনিময়। মনকে স্থির করে বর্তমানে মনোযোগী হলে ভবিষ্যৎ এমনিতেই সুন্দর হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয়। একটি কর্মময় বর্তমান একটি সফল আগামীর ভিত্তি - একটি আনন্দময় জীবনের সূতিকাগার।
===
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৬৭৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/১২/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast