মন আমার
মৃত্যু এসে খেলছে আমার পায়ে। গ্রীণ লাইফ হাসপাতালের নীল কম্বল দিয়ে আমি ঢেকে দিচ্ছি মৃত্যুর লালাভ মুখ, দশ চোখের উদগ্র ক্ষুধা। শাদা ডানা মেলে উড়তে চাইছে ডাক্তারের হাতের প্রেস্ক্রিপসন্, যেন মৃত্যু পরোয়ানা। কেঁপে যাচ্ছে ডক্টরের গলা। ষ্টেজ টু প্লাস। আপনারা কেউ কিছু বুঝতে পারেন নি? কি করে বুঝি! মুক্তি আর স্বাধীনতার আনন্দে গেল মে মাসে আড়ং এর ক্যন্টিন থেকে মানিক মিয়া এভিনিউকে ত আমি সমুদ্র বানিয়ে ফেলেছিলাম। কাঁটা চামচের খোঁচা খেয়ে হুঁশ ফেরে। “ওর ভবিষ্যৎ গোল্লা”-- টেবিল কাঁপিয়ে যখন হাসছিলাম তখন কে জানত ভবিষ্যৎ রেড লাইট চোখ মেরে গেল আমাদের দিকে। আজ এখন কেউ কারো দিকে না তাকিয়ে বসে আছি হাসপাতালের বারান্দায়।
হাতের তালুতে বেতের বাড়ি পড়তে না পড়তে কে যেন চেঁচিয়ে বলে, ও ত নতুন ছাত্রি। মিশন ইশকুলে ছিল। হোম ওয়ার্ক কি ও তা জানে না কমলা দিদিমনি! বেত খেয়ে কান্না লুকোতে লুকোতে দেখি কালো বিদ্যুতের মত একটি মুখ। অন্য ক্লাশের। ফার্স্ট বেঞ্চের সেকেন্ড সিট সেই থেকে আমার। খেলতে গেলে আমারই কাটে ছেঁড়ে , বৃস্টির দিনের ধপাস আছাড়, মাত্র চার ফুটের দেয়াল টপকাতে গিয়ে পুকুরে পড়ে যাওয়া ,আর খেলার মাঠে দল হেরে যাওয়ায় অন্যদের অমুকের বাচ্চা, তমুকের বাচ্চা গাল আমিই শুনি কেবল। আর আমার হয়ে লড়ে যায় ও। তুই কি রে একটা গালি দিতে পারিস না! পারি না আবার ! ভুরি ভুরি পারি। কিন্তু বড় বড় কাপড় শুকানোর ক্লিপ দেখিয়ে মা বলে দিয়েছে মুখ খারাপ করলেই উলটো করে তারে ঝুলিয়ে দেবে। তার বেলা!
একটা গূঢ় কারণে যেদিন ওদের সরাসরি ছুঁয়ে ফেললাম জেস্মি, মনু, রেবা,অ্যানি, ক্ষমা, কচিদের বাঘের মত থাবা থেকে ও আমাকে আড়াল করে রেখেছে। ভার্সিটির পরীক্ষা পন্ড করতে ওর দুরমুজ টিমের দিকে “বাঁচা না বাঁচা” চোখে তাকিয়ে থাকতাম আমরা। ম্যাক্সির উপর শাড়ি, টি শার্টের উপর শাড়ি পেঁচিয়ে শীত সকালের সাতটায় হি হি করে কে পরীক্ষা দেয়! পরীক্ষার সাদা খাতা দিতেই শুরু হত খেলা। খুব নিরীহ প্রশ্ন করত ওদের টিমের কেউ, স্যার এটা ত মাঘ মাস তাই না? স্যার বলতেন, না না, বাংলায় ডেট দিও না, ইংরেজিতে দাও। কিন্তু স্যার পলিটিকাল মুভমেন্টগুলো কেন শীতকালেই বেশী হয়, কারণ কি ? এবার রেগে যেতেন স্যার। পরীক্ষা দিতে এসেছ পরীক্ষা দাও। এরপরেই শোনা যেত ওর করুন মিহিন গলা , “ আপনি কি নিষ্ঠুর স্যার। এমন শীত সকালে সবাই খেজুরের রস খায় আর আপনি পরীক্ষা নিচ্ছেন। আফসোস বাংগালী আর বাংগালী থাকল না।” জাস্ট এটুকুর অপেক্ষায় থাকতাম আমরা। বেঞ্চ পিটিয়ে হো হো শুরু হতেই রেগে বেরিয়ে যেতেন স্যার। পরীক্ষা পিছিয়ে এক মাস।
হাসপাতালের বিছানায় নীরব হয়ে আছে দুরন্ত মেয়েটা। ওর চোখে মুখে মৃত্যু ফড়িং পায়ের এলোমেলো কালো কালো ছাপ ফেলেছে। মাঝে মাঝে চোখ মেলে শুধু বলছে, উহ, বমি করব। ঈশ্বর আমাকে ধৈর্য্য দাও। বিপদেই ত মানুষ মানুষকে চিনে নেয়। একবারের জন্যে মানুষ হও ঈশ্বর। ভাল মানুষ! বন্ধু মানুষ! ভেজা টিস্যু দিয়ে ওর মুখ মুছে দিই। তুই যা, পারবি না, কস্ট হবে—মরণের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে ও লাপ্পুলুপ্পু ক্যাবলু ভাবছে! ও কি জানে পরিবর্তিত এই আমি যখন তখন ছুরি বের করতে পারি! অশ্রাব্য মুখ খারাপ করতে পারি! ঝগড়ায় আমি এখন একজন স্পেশালিস্ট! ফুল ছেঁড়ার মত যখন তখন মিথ্যে বলতে পারি! ঘাড় শক্ত করে ঠাণ্ডা গলায় বলি, একদম চুপ। যা বলব তাই শুনবি। ঝরে পড়া কামিনীর মত সাদা হেসে চোখ বন্ধ করে ও।
(অসমাপ্ত)
হাতের তালুতে বেতের বাড়ি পড়তে না পড়তে কে যেন চেঁচিয়ে বলে, ও ত নতুন ছাত্রি। মিশন ইশকুলে ছিল। হোম ওয়ার্ক কি ও তা জানে না কমলা দিদিমনি! বেত খেয়ে কান্না লুকোতে লুকোতে দেখি কালো বিদ্যুতের মত একটি মুখ। অন্য ক্লাশের। ফার্স্ট বেঞ্চের সেকেন্ড সিট সেই থেকে আমার। খেলতে গেলে আমারই কাটে ছেঁড়ে , বৃস্টির দিনের ধপাস আছাড়, মাত্র চার ফুটের দেয়াল টপকাতে গিয়ে পুকুরে পড়ে যাওয়া ,আর খেলার মাঠে দল হেরে যাওয়ায় অন্যদের অমুকের বাচ্চা, তমুকের বাচ্চা গাল আমিই শুনি কেবল। আর আমার হয়ে লড়ে যায় ও। তুই কি রে একটা গালি দিতে পারিস না! পারি না আবার ! ভুরি ভুরি পারি। কিন্তু বড় বড় কাপড় শুকানোর ক্লিপ দেখিয়ে মা বলে দিয়েছে মুখ খারাপ করলেই উলটো করে তারে ঝুলিয়ে দেবে। তার বেলা!
একটা গূঢ় কারণে যেদিন ওদের সরাসরি ছুঁয়ে ফেললাম জেস্মি, মনু, রেবা,অ্যানি, ক্ষমা, কচিদের বাঘের মত থাবা থেকে ও আমাকে আড়াল করে রেখেছে। ভার্সিটির পরীক্ষা পন্ড করতে ওর দুরমুজ টিমের দিকে “বাঁচা না বাঁচা” চোখে তাকিয়ে থাকতাম আমরা। ম্যাক্সির উপর শাড়ি, টি শার্টের উপর শাড়ি পেঁচিয়ে শীত সকালের সাতটায় হি হি করে কে পরীক্ষা দেয়! পরীক্ষার সাদা খাতা দিতেই শুরু হত খেলা। খুব নিরীহ প্রশ্ন করত ওদের টিমের কেউ, স্যার এটা ত মাঘ মাস তাই না? স্যার বলতেন, না না, বাংলায় ডেট দিও না, ইংরেজিতে দাও। কিন্তু স্যার পলিটিকাল মুভমেন্টগুলো কেন শীতকালেই বেশী হয়, কারণ কি ? এবার রেগে যেতেন স্যার। পরীক্ষা দিতে এসেছ পরীক্ষা দাও। এরপরেই শোনা যেত ওর করুন মিহিন গলা , “ আপনি কি নিষ্ঠুর স্যার। এমন শীত সকালে সবাই খেজুরের রস খায় আর আপনি পরীক্ষা নিচ্ছেন। আফসোস বাংগালী আর বাংগালী থাকল না।” জাস্ট এটুকুর অপেক্ষায় থাকতাম আমরা। বেঞ্চ পিটিয়ে হো হো শুরু হতেই রেগে বেরিয়ে যেতেন স্যার। পরীক্ষা পিছিয়ে এক মাস।
হাসপাতালের বিছানায় নীরব হয়ে আছে দুরন্ত মেয়েটা। ওর চোখে মুখে মৃত্যু ফড়িং পায়ের এলোমেলো কালো কালো ছাপ ফেলেছে। মাঝে মাঝে চোখ মেলে শুধু বলছে, উহ, বমি করব। ঈশ্বর আমাকে ধৈর্য্য দাও। বিপদেই ত মানুষ মানুষকে চিনে নেয়। একবারের জন্যে মানুষ হও ঈশ্বর। ভাল মানুষ! বন্ধু মানুষ! ভেজা টিস্যু দিয়ে ওর মুখ মুছে দিই। তুই যা, পারবি না, কস্ট হবে—মরণের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে ও লাপ্পুলুপ্পু ক্যাবলু ভাবছে! ও কি জানে পরিবর্তিত এই আমি যখন তখন ছুরি বের করতে পারি! অশ্রাব্য মুখ খারাপ করতে পারি! ঝগড়ায় আমি এখন একজন স্পেশালিস্ট! ফুল ছেঁড়ার মত যখন তখন মিথ্যে বলতে পারি! ঘাড় শক্ত করে ঠাণ্ডা গলায় বলি, একদম চুপ। যা বলব তাই শুনবি। ঝরে পড়া কামিনীর মত সাদা হেসে চোখ বন্ধ করে ও।
(অসমাপ্ত)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আসগার এইচ পারভেজ ১৭/০৭/২০১৪এক নিঃস্বাসে পড়লাম, সত্যি বলছি একবারও পলক ফেলিনি!......
-
মঞ্জুর হোসেন মৃদুল ১৫/০৭/২০১৪চমৎকার লেখনী। ভাল লাগল। অসাধারন এককথায়!
-
কবি মোঃ ইকবাল ১৪/০৭/২০১৪খুব ভালো লাগলো আপু।
-
শিমুল শুভ্র ১৪/০৭/২০১৪বেশ ভালো একটা প্রবন্ধ । মুগ্ধ হলাম।
-
মুহাম্মদ দিদারুল আলম ১৩/০৭/২০১৪ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম...