www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভালোবাসার একদিন

১.
একদমে বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে,
ছেলেটা প্রতিদিনের মত আজও অপেক্ষার প্রহর গুনছে আর চায়ের কাপে ঠোট ভিজাচ্ছে।
কয়েকবার ঠোট ভিজাতেই
হঠাৎ কলেজ বাস এসে থামলো।
অপেক্ষার প্রহর শেষ।
বাস দেখতেই ছেলেটা চায়ের কাপটা রেখে দিয়ে বলল মামা
কতটাকা হইছে?
২৯টাকা।
তিনটা ১০টাকার নোট দিয়ে বলল
এই নিন মামা।
দোকানদার বলল মামা একটা চকলেট নিয়ে জান ভাংতি নাই।
ছেলেটা বলল চকলেট লাগবেনা
একটা পলিব্যাগ দিন মোবাইল আর ওয়ালেটটাকে বৃষ্টির পানি থেকে দুরে রাখার জন্য।
.
ওদিকে প্রত্যাশিত মায়াবতী বাস থেকে নেমে ছাতা হাতে বাসার দিকে হাটা শুরু করেছে।
.
ছেলেটাও প্রতিদিনের মত মায়াবতীর পিছু নিল। তবে আজকের মত এরকম একদমা বৃষ্টি আগে কোন বারই ছিলনা। ছেলেটার কাছে ছাতা ছিলনা,এই একদমা বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজেই মায়াবতীর পিছু পিছু হাটতেছে। আজকে ছেলেটা প্রতীজ্ঞা করে এসেছে
মায়াবতীর সাথে কথা বলবেই
যেকোন উপায়। এর আগেও এরকম প্রায় ২৯বার প্রতীজ্ঞা
করে বরা বরই ফেল মারছে :-D
মায়াবতী সামনে আর ছেলেটা পিছনে। তাদের মধ্যবর্তী দুরত্ব প্রায় ২০/২৫ ফুটের মত।
কিছুখন হাটার পরে মায়াবতী বুজতে পারল ছেলেটা তাকে পতিদিনের মতই অনুসরন করে চলেছে। তবে আজকে একটু ভিন্ন ভাবে অনুসরন করতেছে ( ঐ যে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে)।
মায়াবতী পিছনে তাকাতেই ছেলেটা থমকে দাড়ায়ে অন্য দিকে তাকায়। এমন ভাব নিচ্ছে যে সে কিছুই জানে না।
মায়াবতী আবার হাটা শুরু করল।
ছেলেটাও একি কাজ করতে লাগল। মনে হচ্ছে ট্রেন চলতেছে।
মায়াবতী ইঞ্জিন আর ছেলেটা বগি। কিছুদুর চলার পরে ইঞ্জিন হঠাৎ দাড়িয়ে গেল,
বগিও আগের মত চোর চোর ভাব দেখাচ্ছে। মায়াবতী সরাসরি ছেলেটাকে বলল→
মায়াবতী : এই ছেলে এদিকে এসো।
ছেলে : ডানে বামে পিছনে একপলক দেখে বলল আমাকে
ডাকছেন?
মায়াবতী : জ্বি জনাব, আপনাকেই ডাকছি। যেহেতু রাস্তায় এখন আপনি আর আমি ছাড়া আর কেউ হাটছে না।
ছেলে: ভয়ে ভয়ে মায়াবতীর কাছে গিয়ে বলল আপু আমি কিন্তু আপনাকে অনুসরন করিনি।
মায়াবতী : আপনাকে কি বলছি
আপনি আমাকে অনুসরন করতেছেন? চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।
ছেলে : ওহ! তাইতো। সরি।
মায়াবতী : It's ok. যাহোক, যেজন্যে আপনাকে ডাকা তাহলো আপনার কাছে ১০/২০ টাকা আছে?ছেলে : হ্যাঁ হবে। এই নিন....
মায়াবতী : আমারে দিতে হবে না আপনি এই টাকাটা নিয়ে ঐ যে রাস্তার পাশে ফর্মেসির দোকান দেখতেছেন, ওখান থেকে ২টা নাপা এক্সটা নিয়ে আসুন।
ছেলে : এক দৌড়ে নিয়ে চলে আসল। এই নিন...
মায়াবতী : ওখান থেকে একটা বের করে খেয়ে নিন।
ছেলে : আবাক ভংগিতে তাকিয়ে বলল। মানে কি....? আমার জ্বর/ ঠান্ডা লাগে নি। দিব্যি সুস্থ আছি।
মায়াবতী : আপনি যে ভাবে একদমা বৃষ্টিতে ভিজতেছেন আর আমাকে অনুসরন করতেছেন তাতে কিছুখনের মধ্যেই ঠান্ডা, জ্বর, অসুস্থতা সবি আপনার সাথে দেখা করতে চলে আসবে।কাজেই যেটা বলছি সেটা করুন।
ছেলে : পানি কই পাবো...?
মায়াবতী : একটা কাজ করুন, আমার ছাতাটার কর্নারে হাত পেতে বা সরাসরি হা করে মুখে পানি নিয়ে নিন তারপর ওষুধটা খেয়ে ফেলুন।
ছেলে : এরকম হয় নাকি? লোকে দেখলে কি ভাববে?
মায়াবতী : হ্যা এরকমি হয়। এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমাকে অনুসরন করতেছেন এটা দেখে লোকে যা ভাবতেছে, আশাকরি এরথেকে বেশি কিছু ভাববে না। যা বলছি তারাতারি তাই করুন।
ছেলে : ঠিক আছে, যাহা আদেশ আপনার মহাশয়া।
.
ওষুধ খেয়ে দুইজনেই হাটতেছে আর কথা বলতেছে। তবে মজার বিষয় হল। মায়াবতী ছাতার মধ্যে আর ছেলেটা একদমা বৃষ্টিতে ভিজতেছে আর হাটতেছে।
কিছুদুর যাবার পরে ছেলেটা বলল→
ছেলে : এই যে আপনার বাসায় সামনে চলে এসেছি।
মায়াবতী : তো কি হইছে?
ছেলে : বাসায় যাবেন না?
মায়াবতী : সেটা আপনাকে বলতে হবে নাকি?
বাইক্কা প্যাচাল না পাইরা চলেন হাটি।
ছেলে : আহা! কি দারুন আপনি।
মায়াবতী: দারুন না হইলে তো আর আপনি এতোদিন পিছু পিছু ঘুরতেন না ? তা আপনার বোন এবং আম্মু কেমন আছেন?
ছেলে : তাও ঠিক বলেছেন। ভাল। আচ্ছা আমার বোন আর আম্মু আছে সেটা জানলেন কিভাবে?
মায়াবতী : আপনি এতোকথা বলেন কেন? চুপচাপ হাটেন আর যা জিগাই তার উত্তর দিন।
কতদিন অনুসরন করতেছেন আমাকে?
ছেলে : এই তো প্রায় ২ / ৩ মাসের মত হবে।
মায়াবতী: মাত্র এই কটাদিনেই একটা মেয়েকে আপনার করে নিলেন? তাও আবার কোন রকম কথা বার্তা ছাড়াই শুধু পিছু পিছু হেটে। বাহ! দারুন ম্যাজিশিয়ান তো আপনি।
ছেলে : কি যে বলেন না আপনি।
মায়াবতী :
By-the-way আপনার বাসার গেইট দেখা যাচ্ছে। বাসায় গিয়ে কাপড় চোপড় পাল্টান। নইলে নাপা এক্সটায় কাজ করবে না। নাপা এক্সটায় কাজ না করলে আগামীকাল আর আমার পিছু নিতে পারবেন না।
Bye.
ছেলে : আমি আপনাকে আগায়ে দেই...?
মায়াবতী : যেটা বলেছি সেটা করুন।
ছেলে: যথা আজ্ঞা মহাশয়া।
.

→ ৪ (চার) দিন পর ছেলেটা সেই চায়ের
দোকানে বসে বসে অপেক্ষা করতেছে।
হঠাৎ কলেজ বাস এসে দাড়ালো। ছেলেও দোকান থেকে বের হয়ে মেইন রোডের পাশে এসে বাসের গেইটের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা সময় দেখলো বাস থেকে আর কেউ নামছে না। ছেলেটা দৌড়ে বাসের কাছে গেল। বাসের মধ্যে উকি দিয়ে দেখল। ভিরতে আর কেউ নেই। তখন ছেলেটা মাথা নিচু করে হাটতেছে আর ভাবতেছে কেন আসলনা? কেন আসলনা? কেন আসলনা আজ? ছেলেটা আবার দৌড় দিয়ে বাসের হেল্পারের কাছে গিয়ে বলল।
→মামা ঐ মেয়েটা আজকে কি কলেজে যায়নি..?
→ কোন মেয়েটা..?
→ ঐ যে আমি প্রতিদিন যেই মেয়েটার পিছু পিছু হাটতাম সেই মেয়েটা।
→ আপনি কার পিছনে হাটতেন সেটা আমি দেখছি নাকি।
→ ওহ তাওতো ঠিক। আচ্ছা ঐ যে কালো লম্বা চুল ওয়ালী, চোখ দুটো বড় বড় ভাসানো, চোখের ভিতরের গোল অংশটা চুলের মত কালো আর বাকিটা হালকা ব্লুইশ, গায়ের রং কাচা চিনা বাদামের খোসার মত,শরীরের গঠন পাতলা, দাঁতগুলো পিয়ানোর সাদা কী গুলোর মত ধবধবে এবং উচ্চতা ৫'-৩" হবে (may be)
→ মামা আমি জানিনা আপনি কার কথা বলতেছেন। আমার জানামতে এরকম কোন মেয়েকে আমি দেখিনি। আগামীকাল আইসেন এখন জান। আমিও যাচ্ছি। খিদা লাগছে কিছু খাইতে হবে।
→ ওহ!
ছেলে মন খারাপ করে ওখান থেকে চলে আসল। হাটতেছে আর চিন্তা করতেছে
কি করা যায়। হঠাৎ মাথায় আসল মায়াবতীর বাসায় যাবে। যেই চিন্তা সেই কাজ, মায়াবতী বাসায় গেল।
সেখানে গিয়ে দেখে গেইটে তালা ঝুলানো। তালাটা হাত থেকে কয়েকবার টেনে বাসায় ফিরে আসল।
বাসায় ফিরতেই ছেলেটার মা বলল.....
.
→ কিরে বাবা এতোখন কই ছিলি? সেই কতখন যাবৎ তোর জন্য অপেক্ষা করতেছি ডাক্তারের কাছে যাবো বলে।
যা Ready হয়ে নে। এখুনি বের হবও।
→ আমি Ready আছি চল যাই।
.
ডাক্তারের চেম্বারে সিরিয়াল নিয়ে মা এবং ছেলে বসে আছে কখন ডাক পরে।
পাশ থেকে একজন মধ্যবয়সী মহিলা ছেলেটার মাকে জিজ্ঞেস করল,
→ কে অসুস্থ,আপনার ছেলে?
→ জ্বি।
→ কি হয়েছে?
→ প্রায় এক বছর আগে। ও একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ করত। সারাখন মেয়েটার পিছু পিছু ঘুরতো। কিন্তু কখনও মেয়েটার সাথে ভয়ে কথা বলতে পারতো না। একদিন মেয়েটা ওকে নিজে থেকে ডেকেই কথা বলতে বলতে
আমাদের বাসা পর্যন্ত এসেছিল। বাসায় ছেলেটাকে এগিয়ে দিয়ে মেয়েটা ওর বাসায় ফিরে যাচ্ছিল। মেয়েটা হাটছিল আর একটু একটু পিছনে ফিরে আমার ছেলের দিকে তাকাচ্ছিল। হঠাৎ একটা ট্রাক এসে মেয়েটাকে ধাক্কা দিলে মেয়েটা ঐ জায়গাতেই মারা যায়। আমার ছেলে দৌড়ে গিয়ে মেয়েটাকে ঐ অবস্থায় দেখে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যার।
এরপর থেকেই ছেলেটা মানসিক ভারসাম্য হারায়।
আগে যেভাবে মেয়েটার পিছু পিছু ঘুরত এখনও একই ভাবে একই সময় পিছু পিছু ঘুরে আর ভাবে মেয়েটার পিছনেই ঘুরতেছে। একা একা কথা বলে আর ভাবে মেয়েটার সাথেই কথা বলতেছে।
→ So sad.
.
২৯ নাম্বার সিরিয়াল ধরে ডাকতেই ডাক্তারে কক্ষে মা এবং ছেলে ২ জনেই প্রবেশ করল।
তাদেরকে প্রবেশ করতে দেখেই ডাক্তার মশাই বললেন....
→ কিরে আপনাদের তো আরও ২ দিন আগে আসার কথা ছিল।
→ দুঃখিত। আসলে হইছে কি ছেলেটার গত ৪দিন যাবৎ জ্বর ছিল। তাই আসতে পারিনি।
→ ও আচ্ছা। তা আপনার ছেলের কি আগের থেকে কোন উন্নতি হইছে?
→ না জনাব। সে গত এক বছর যাবৎ একি রকম আচরন করেই আসতেছে।
প্রতিদিন সেই চায়ের দোকন, সেই কলেজ বাস সেই একা একা হাটা, একা একা কথা বলা এইসব নিয়েই আছে।
→ So sad. তা বাবা তোমার সাথে কি সেই মায়াবতীর এখনও দেখা, কথা হয়?
→ ডাক্তার মশাই, আজকে সহ গত ৪দিন একবারও দেখা হয়নি। ওদের বাসায়ও গেছিলাম গিয়ে দেখি তালা ঝুলানো।
→ ওহ! তাহলেতো বেশ ভালোই।
এই নিন আরও ২টা ওষুধ লিখে দিলাম।
আশা করি ও খুব শিগ্রই মানসিক ভারসাম্য ফিরে পাবে।
আর হ্যাঁ আরেকটা কথা সেটা হল।
ওকে নিয়ে মাস খানেক কোথাও ঘুরে আসুন। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
************The End***********
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৮/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর শুরু। গল্প তরতর করেই এগুচ্ছিল। টুইস্টও আছে। তবে কোথাও যেন একটু তাড়াহুড়ো। এটা আমার লেখারও সমস্যা। যা হোক ভাল লাগল।
  • ন্যান্সি দেওয়ান ২৮/০৮/২০১৮
    Darun...
    • রুজমান রুবেল ০৭/০৯/২০১৮
      ধন্যবাদ
  • ইবনে মিজান ২১/০৮/২০১৮
    বেশ
  • পড়েছি।
  • মধু মঙ্গল সিনহা ২০/০৮/২০১৮
    অপূর্ব। অনেক অনেক শুভকামনা রইল প্রিয় কবি।
 
Quantcast