www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফ্ল্যাশব্যাক

আজ ১৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার
রুদ্র আর বৃস্টির বিয়ে।
লোক সমাগমে গমগম করছে বৃস্টিদের বাড়ি। লাউড
স্পিকারে হিন্দি গান বাজাচ্ছে বৃস্টির কাজিনরা।
রুদ্র বরের আসনে সেই চিরায়ত বাঙালী বরের মত লাজুক
ভঙ্গিতে বসে আছে।কাজী আসতে কেন
জানি দেরি হচ্ছে আর সেই দেরিটার ব্যাপ্তি রুদ্রের
কাছে বহুমাত্রায় বিবর্ধিত
হয়ে মস্তিষ্কে অস্থিরতা বিস্তৃত করছে।
হঠাৎ লাউড স্পিকারে একটা গান রুদ্রের মনকে দারুণ
ভাবে আলোরিত করে,
'কিসিকা তো হোগা হি তু
কিউনা তুমহে মেহি জিতু'
গানটা কয়েকদিন আগে বের হয়েছে কিন্তু গানের এই
কথাটাই রুদ্রের মনে আন্দোলিত হয়েছে লক্ষ কোটিবার
'তুমি কারো না কারো তো হবেই তবে আমার নয় কেন?’
আজ রুদ্র বৃস্টির জন্য বর সেজে বসে আছে কিন্তু
পাগড়ি পরে এ বিয়ের আসর পর্যন্ত আসার পথটা মোটেও
মসৃণ ছিলোনা রুদ্রের।
কাজীর জন্য ক্ষনেক অপেক্ষা অন্তহীন
অপেক্ষা মনে হওয়া রুদ্রের মাথায় ভেসে ওঠে সেই কঠিন
পথচলার কথা।

চৈত্রের একটা সকাল।
সেটা শুধু একটা সকাল ছিলোনা।
সেটা একদিকে ছিলো স্বপ্নচূড়ায় ওঠার সিড়ির প্রথম ধাপ
অন্যদিকে ছিল অন্তর্দহন কে প্রজ্জ্বলিত করার প্রথম
স্ফুলিঙ্গ।
সেদিন প্রথম বৃস্টিকে দেখে রুদ্র।
বৃস্টির বাবা চিকিৎসক। রুদ্র তার অসুস্থ
বাবাকে নিয়ে যায় বৃস্টির বাবার কাছে।রুদ্র বসে ছিল
বৃস্টিদের সদর দরজার পাশে ওর বাবার চেম্বারে। ওর
বাবার আসতে দেরি হচ্ছিল এমন সময় বৃস্টি বের হয়,
তেরো চৌদ্দ বছরের বৃস্টির দিকে রুদ্র
তাকিয়ে থাকে অপলক, হারিয়ে যায় ঘোর লাগা স্বপ্নে।
এভাবে কেটে যায় পাঁচ, দশ বা পনেরো মিনিট তারপর
বৃস্টির বাবার কথায় সম্বিৎ ফিরে রুদ্রের।
যথারীতি বাড়ি চলে যায় রুদ্র কিন্তু মনের ভিতর
বইতে থাকে অদ্ভুত এক ভালোলাগার ঝড়।
রাতে বিছানায় শুয়ে কদমছাট দেয়া মাথায় হাত
বুলাতে থাকে বারবার।
খোলা চোখ খুজতেই থাকে বৃস্টিকে আর চোখ বুজলেই
সমুখে ভেসে ওঠে বৃস্টির সেই মায়াময় অথচ চষ্ণল মুখাবয়ব,
ডাগর চোখের মায়াকাড়া চাহনি।
এভাবেই ঘোরের মাঝেই কয়েকটা দিন কেটে যায় রুদ্রের।
সাতদিনের সংক্ষিপ্ত ছুটি ফুরিয়ে যায়
যাত্রা করে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।রুটিন বাধা চরম
ব্যাস্ততার মাঝে বৃস্টিকে নিয়ে অবিরত ভাবনায় ছেদ
পরে রুদ্রের তবুও হঠাৎ হঠাৎ একটু অবসরে সেই
মুখটা ভেসে ওঠে সহসায়।

তিন বছর কেটে যায়।
রুদ্র তার মামাতো ভাই সজল সহ বাস
স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছে।
একটি মোটরবাইক এসে রুদ্রের সামনে দাড়ায়,বাইকের
পিছনে একটা মেয়ে বসা।
খুব চেনা চেনা মনে হয় রুদ্রের কিন্তু ঠিক
চিনতে পারেনা,বারবার চেস্টায় ব্যার্থ
হয়ে সজলকে জিগ্যেস করে
-মেয়েটাকে চিনিস?
-তুই চিনিস না? ও তো বৃস্টি ।
মুহুর্তেই ভ্যাবাচ্যাকা খায় রুদ্র,ফ্ল্যাশব্
যাকে ভেসে ওঠে তিন বছর আগের সেই সকাল, সেই একই
চাহনি কিন্তু সেই কৈশোর হারিয়ে গিয়ে ভর
করেছে সপ্তদশী লাবন্য।
রুদ্র পুরোপুরি ডুবে যায় অসীমে,কোথায় যেন হারিয়ে যায়
যখন বাস্তবে ফিরে তখন মানবী আর সেখানে নেই, বাসের
সিটে বসে আর বেরসিক বাসটা একটুও
দেরি না করে ধীরে ধীরে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়।
তিন বছর আগের সেই ঘোরটা আবার আচ্ছন্ন
করে ফেলে রুদ্রকে।
এবারে আর কোনো কিছুই সেই ঘোর আর
কাটাতে পারেনা রুদ্রের।
খুজতে থাকে একটা পথ সেটা শুধু বৃস্টির কাছে পৌছার
কিন্তু পথ খুজে পায়না রুদ্র, সময় গুলো যেন
তিতকুটে হয়ে যায়।
হঠাৎ রুদ্রের মনে হয় ফেসবুক আইডি থাকতে পারে বৃস্টির।
ফেসবুকে বৃস্টি লিখে খুজতে থাকে,হাজারো বৃস্টির
মাঝে কোনটা রুদ্রের বৃস্টি সেটা খুজতে হিমশিম খায়
রুদ্র।

১৫ আগস্ট ২০১৩
বৃস্টির আইডিটা চিনতে পারে রুদ্র, অনুরোধ পাঠায় বন্ধু
হওয়ার।
দুদিন বাদে অনুরোধ গ্রহন করে বৃস্টি। তারপর হাই
হ্যালো হয়।বৃস্টি রুদ্রকে জিগ্যেস
করে তাকে চিনে কিনা রুদ্র হ্যাবোধক উত্তর দেয়।
এভাবে মাঝে মাঝে একটু আধটু কথা হতে থাকে।
রুদ্র কি করবে,কিভাবে এগোবে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা।
রুদ্রের কবিতা লেখার সখ।
সে বৃস্টিকে নিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করে আর সেসব
কবিতা বৃস্টিকে মেসেজ করে।
বিব্রতবোধ করে বৃস্টি তারপর রুদ্রকে কিছু
বলতে চাইলে সরাসরি বলতে বলে।কি বলবে কিছুই
ভেবে পায়না রুদ্র।
তারপর একথা সেকথা দিয়ে বোঝাতে চায়
এতে আরো বিব্রত হয় বৃস্টি আর রুদ্রের আইডিটা ব্লক
করে দেয়।
রুদ্র হতাশ হয়ে ভাবতে থাকে কি করা যায়।
তারপর আবার একটা নতুন ফেসবুক আইডি খোলে।প্রতিদিন
কবিতা লিখে আর বৃস্টির কাছে মেসেজে পাঠায়।
বৃস্টি রুদ্রের কবিতা পড়ে,পড়তে ভাল লাগতে শুরু করে।
কখনো কখনো একটু আধটু প্রশংসা করে কিন্তু কিন্তু রুদ্রের
ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়না বা সেভাবে আমলেই
নেয়না ব্যাপারটা।
দিনদিন রুদ্রের সময় গুলো অনেক অস্থির আর স্লোথ
হয়ে যায়।কবিতা লিখে পাঠায়, মেসেজ পাঠায় আর
সারাক্ষণ প্রতীক্ষায় থাকে উত্তরের জন্য।
বৃস্টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তারপর ঢাকা চলে আসে।
সে বিশ্ববিদ্যালয় হলে ওঠে।
রুদ্রের বৃস্টিকে নিয়ে কবিতা লেখা বাড়তে থাকে আর
বৃস্টির নির্বিকার আচরণে বাড়তে থাকে অন্তর্দহন।
পুরোপুরি স্থবির হয়ে ওঠে রুদ্রের জীবনের পথ।
বারবার মনে করে মরীচিকার পেছনে ছুটে লাভ
নেই,ভুলে যাবে বৃস্টিকে কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারেনা।
আবেগের মাত্রা বাড়তে থাকে জ্যামিতিক হারে যদিও
২৫ বছরের রুদ্রের আবেগের বয়স নয় এটা।

রুদ্রের মেসেজ দেয়া,আর কবিতা লেখা চলতেই থাকে।
কবিতা আর মেসেজ পড়তে পড়তে রুদ্রের জন্য একটু
মায়া হয় বৃস্টির কিন্তু সেটা ভালোবাসা নয় একটুও।
বৃস্টি রুদ্রকে নানা ভাবে বোঝাতে চেস্টা করে যে এটা সম্ভব
নয় কিন্তু রুদ্র কিছুতেই সেটা মানতে পারেনা।
রুদ্র চাকুরীর কাজে ঢাকা যায় একমাসের জন্য,যাওয়ার
আগে বৃস্টিকে মেসেজ পাঠায় যে সে ঢাকা আসছে।
ঢাকা এসে রুদ্র বারবার বৃস্টিকে অনুরোধ করে একবার তার
সাথে দেখা করার জন্য, রুদ্র বৃস্টির কাছে তার ফোন
নাম্বার চায়। কোনোটাতেই রাজি হয়না বৃস্টি। বারবার
বলতে বলতে একবার রুদ্রকে ক্যাম্পাসে আসতে বলে বৃস্টি।
রুদ্র যারপরনাই খুশি হয় আর ভাবতে থাকে রাত কখন
পোহাবে, কখন বিকেল হবে।
কি বলবে বৃস্টিকে আর বৃস্টিই বা কি বলবে তাকে।
রাত পোহায়,রুদ্র বৃস্টিকে মেসেজ দেয় কখন
আসবে,বৃস্টি প্রথমে উত্তর
দেয়না পরে বলে যে দেখা হচ্ছেনা সময় নাই।রুদ্র
পুরোপুরি হতবিহবল হয়ে যায়।
তারপর রুদ্র প্রায়দিন বিকেলে বৃস্টির ক্যাম্পাসে যায়
আর বৃস্টিকে মেসেজ দেয় কিন্তু সে মেসেজের আর উত্তর
পায়না।কবিতা লিখে,সন্ধ্যার পর উদ্দেশ্য বিহীন
ঘুরতে থাকে শহরের রাস্তায় উদভ্রান্তের মত তারপর
চলে যায় একটু বেশি রাত হলে।
পরদিন আবার আসে আবার সেই একই কাজ
একাকী হেটে চলা।
এভাবেই মাস ফুরিয়ে যায় রুদ্রের ঢাকা ছাড়ার সময় হয়।
বৃস্টির আশা ছেড়ে দিতে চায় রুদ্র কিন্তু
ছাড়তে পারেনা।
রুদ্র বৃস্টিকে মেসেজ দেয়, পরদিন তার ফ্লাইট। সেদিনের
ফ্লাইটটা বাতিল হওয়ায় রুদ্রের ঢাকায় আরো দুদিন
থাকার সুযোগ হয় রুদ্র ভাবে যে আল্লাহ চাইলে হয়ত এ
দুদিনের মধ্যেই দেখা মিলে যাবে বৃস্টির। কিন্তু
না বিধিবাম, দুদিন পরের ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়ে রুদ্র একবুক
কষ্ট আর হতাশা নিয়ে।যাওয়ার সময় সেই কষ্টের
কথাগুলো লিখে মেসেজ দেয় বৃস্টিকে আর ভাবে এই শেষ
আর কখনো বৃস্টির সাথে যোগাযোগের চেস্টা করবেনা।

কয়েকদিন পর বৃস্টি একটা মেসেজ পাঠায়
'আপনি অনেক ভালো,তাইনা?’
এই একটি প্রশ্নই রুদ্রের প্রতিজ্ঞা ভেঙে দেয় নিমিষেই।
তারপর আবার চলতে থাকে কথার পর কথার মালা গাথা।
আলোচনা হতে থাকে দুজনের ভালোলাগার, মন্দলাগার
বিষয় গুলো আর দুজনের পড়ালেখা, ক্যারিয়ার ভবিষ্যত
কিন্তু বৃস্টি আগের জায়গায়
অটল,কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায়না সে।
চলতে থাকে কথা আর রুদ্র দুলতে থাকে আশা নিরাশার
দোলাচলে।
একটুখানি পুলক আর অনেকখানি ব্যাথা সর্বদাই আচ্ছন্ন
করে রাখে রুদ্রকে।
তবুও রুদ্রের অনেক কবিতা, অনেক কথার মাঝে বৃস্টির
টুকরো টুকরো কথা,সামান্য একটু প্রশংসায় রুদ্রের
মেঘাচ্ছন্ন মনের আকাশে একটু খানি রোদের ঝিলিক
উকি দেয়।শুন্যের মাঝেই রুদ্র গড়তে থাকে প্রেমের সৌধ।
এতকিছুর মাঝে বৃস্টির সিদ্ধন্তের একটুও নড়চড় হয়না।
রুদ্রের আবেগ মিশ্রিত কবিতাগুলো পড়ে বৃস্টির মনে হয়
রুদ্রকে বেশি প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে,হয়ত এটা রুদ্রের জন্য বড়
কষ্টের কারন হবে কারন সে রুদ্রের সাথে কোন
সম্পর্কে জড়াতে চায়না। তাই বৃস্টি আবার মেসেজের
উত্তর দেয়া বন্ধ করে দেয় কিন্তু রুদ্র কিছুতেই
মানতে পারেনা,সে লিখতেই থাকে।বৃস্টি ইচ্ছে করেই
দীর্ঘ সময় মেসেজ গুলো খোলেনা আবার কখনো দীর্ঘ সময়
পর ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মেসেজ গুলো পড়ে।কিন্তু উত্তর
দেয়না আর, রুদ্র জ্বলতে থাকে সতত কষ্টের অনলে।
বৃস্টির বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি হয়।বৃস্টির
ইচ্ছে ছিল এ ছুটিতে রাঙ্গামাটি ঘুরতে যাবে,ছুটির পর খুব
বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে তাই
রাঙ্গামাটি না গিয়ে বাড়ি চলে যায় বৃস্টি।
বাড়িতে দুদিন খুব ভালো কাটে বৃস্টির। তৃতীয় দিন বাড়ির
মধ্যে একটা চাপা গুঞ্জন টের পায় বৃস্টি আর
সেটা যে তাকেই ঘিরে এটা বুঝতে দেরি হয়না তার।
রাতে বৃস্টির মা বৃস্টির পাশে বসে তারপর অনেক ভুমিকার
পর তাকে বলেই ফেলে বিয়ের কথাটা আর সাথে ছেলের
নানা ভালো বিশেষণ।বৃস্টি কিছু না বলে চুপ থাকে,তার
মা মৌনতাই সম্মতির লক্ষন ধরে নেয়।
একদিন পর বৃস্টির মা তাকে বলে যে ওকে ছেলেপক্ষ
দেখতে আসছে।
যথারীতি ছেলেপক্ষ আসে আর বৃস্টিকে পছন্দ করে আর
বৃস্টির পরিবার আগে থেকেই রাজি তাই বিয়ের জন্য
কোনো বাধা থাকেনা।কথা হয় ৪/৫ দিন পর দুই পরিবার
বসে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবে আর বাগদান
পর্বটা সেরে ফেলবে।

দিন ফুরিয়ে যায়, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে আর বৃস্টির মনেও
ঘনিভূত হতে থাকে হাজার ভাবনা।এমন সময় রুদ্রের মেসেজ
আসে 'কেমন আছো?'
বৃস্টি মেসেজ পড়ে কিন্তু কোন উত্তর খুজে পায়না,কোন
উত্তর দেয়না সে।বিছানায়
ঘুমুতে গিয়ে বৃস্টি ভাবতে থাকে রুদ্রের কথা।বৃস্টির
ফ্ল্যাশব্যাকে অজস্র আবেগ আর ভালবাসা মাখা রুদ্রের
সব কবিতা আর একটু খানি কাছে পাওয়ার
আকুতি জ্বলজ্বল করে দৃশ্যায়িত হয়।এই প্রথম বৃস্টি অনুভব
করে রুদ্রের জন্য এক অসীম শুন্যতা। রুদ্রের
পুরোনো মেসেজ গুলো বারবার পড়তে থাকে বৃস্টি। রুদ্রের
জন্য অপার ভালোবাসায় মুহুর্তেই বৃস্টির হৃদয় পূর্ণ হয়ে যায়
কানায় কানায়।সে দগ্ধ হতে থাকে অনুশোচনার
আগুনে,ধিক্কার জানায় নিজেকে রুদ্রকে এত কষ্ট
দিয়েছে তাই।
পরমুহুর্তেই আবার তার বাবা মার কথা মনে হয়,মনে হয় তার
বিয়ে প্রায় ঠিকঠাক।
সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা এই মুহুর্তে তার
কি করা উচিৎ। একটি নির্ঘুম রাত
কেটে যায়,সকালে অস্থির
চিত্তে ভাবতে থাকে কি করা যায়?
সেলফোন হাতে নিয়ে রুদ্রের নাম্বার ডায়াল করে।ফোন
বেজে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা, প্রতিটি মুহুর্ত অনন্ত
মনে হচ্ছে বৃস্টির,কল কেটে যায়,আবার ডায়াল করে বৃস্টি।
এবার কল রিসিভ করে রুদ্র
-আসসালামুয়ালাইকুম
-ওয়ালাইকুমুসসালাম
-কে বলছেন প্লিজ
- আমি বৃস্টি,লুবাবা বৃস্টি
-বৃস্সসটি
সহসা বিদ্যুৎ খেলে যায় রুদ্রের শরীরে,
হারিয়ে ফেলে কথা বলার শক্তি, সে চুপ
থাকে,নীরবতা ভাঙ্গে বৃস্টি
-আপনি কাল রংপুর আসতে পারবেন?
-কালকেই?
-হ্যা কালকেই
-দেখি চেস্টা করে
-চেস্টা না কাল আপনাকে আসতেই হবে
-ঠিক আছে
-রংপুরের কাছাকাছি এসে ফোন
দিয়েন,আমি অপেক্ষা করবো।
-ওকে
-রাখি,বাই
-বাই

সাত পাঁচ ভাবেনা রুদ্র,কেন ডেকেছে, কি হতে পারে?
রুদ্র পুরোপুরি মোহাবিষ্ট হয়ে যায়।
অফিসে কথা বলে সন্ধায় রংপুরের
উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রুদ্র,বাসে উঠে বৃস্টিকে জানিয়ে দেয়
রুদ্র যে সে যাচ্ছে।
পরদিন সকালে আবার ফোন করে রুদ্র
সে দুই ঘন্টার মধ্যে রংপুর আসছে।
বাস রংপুর পৌছায়, বাস থেকে নামে রুদ্র। রুদ্র অবাক
বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে বাস স্ট্যান্ডের
পাশে দাড়িয়ে আছে বৃস্টি।
পাশেই খেয়াপার্ক রেস্টুরেন্ট এ বসে দুজন,দুজনের মুখেই
কোন কথা নেই,দুজনেই যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
নীরবতা ভাঙ্গে রুদ্র
-কেমন আছো?
-কাল আমার এঙ্গেজমেন্ট
বৃস্টির এ উত্তরের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা রুদ্র।
আবার বলে বৃস্টি
-খুবতো ভালোবাসেন, এখন কি করবেন?
রুদ যেন সহসায় পাতাল ফুঁরে আকাশপানে চলে যায়।
বৃস্টি বলে আমাকে বিয়ে করলে তোমার
বাবা মা না করবেন না?
-না,তাদেরকে আমি তোমার কথা বলেছি।
তারপর বৃস্টি গত তিনদিনের কাহিনি সবিস্তার
বর্ণনা করে।
রুদ্রকে বলে আমার সাথে চলেন
-কোথায়?
-আমাদের বাড়িতে।
-কেন?
-আমার বাবা মার কাছে,তাদের গিয়ে সবকিছু বলবেন।
সাহস নেই?
-ব্যাপারটা আসলে সাহসের না,কাজটা কি ঠিক হবে?
-অবশ্যই হবে,আপনিএখনি চলেন।

রুদ্র এখন বৃস্টিদের বসার ঘরে, সামনে বসা বৃস্টির
বাবা মা, বৃস্টি ওর মার চেয়ারের হাতল
ধরে দাড়িয়ে আছে।
পিনপতন নিরবতা,হেমন্তের ঠান্ডা আবহাওয়াতেও রুদ্র শুধু
ঘামছে আর ঘামছে।
রুদ্র এবং বৃস্টির বাবা পুর্বপরিচিত।
বৃস্টির বাবা জিগ্যেস করলেন'
-কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ, ভাল
-তারপর?
রুদ্র নিশ্চুপ, কি বলবে সে
বৃস্টির বাবা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও নিজের থেকে কিছু
বলছেন না,তাকিয়ে আছেন রাগি চেহারায় রুদ্র ঠিক
বুঝে উঠতে পারছেনা কি বলা বা কি করা উচিৎ।
এমন সময় বৃস্টি রুদ্র সম্পর্কে সবিস্তারে বর্ণনা করতে শুরু
করে এবং সবশেষে বলে আমরা দুজন দুজনকে অনেক অনেক
ভালোবাসি।বৃস্টির এমন কথায় যারপরনাই বিস্মিত হয় রুদ্র
আর নিজেকে তার খুব একটা ভীতু মানুষ মনে হয়।
আবার ঘরজুড়ে নেমে আসে পিনপতন নিরবতা।
গম্ভীর মুখে বৃস্টির বাবা,উৎকন্ঠায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল
বৃস্টি আর রুদ্রের, বৃস্টির বাবার দিকে অপলক
তাকিয়ে আছেন বৃস্টির মা।রুদ্র একবার বৃস্টির
দিকে তাকাচ্ছে আর আরেকবার ওর বাবার দিকে।
এভাবেই বেশকিছুটা সময় কেটে গেল,উঠে দাঁড়ালেন
বৃস্টির বাবা,বললেন
-বৃস্টি তুমি আগেই আমাকে বলতে পারতে তাহলে এত
হাঙ্গামা হতোনা।
রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন, রুদ্র তুমি তোমার
পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলো আর
তাদেরকে আমার সাথে কথা বলতে বলো।
একথা বলে গম্ভীর মুখে একটু হাসির রেখা ফুটিয়ে ঘর
থেকে বেড়িয়ে গেলেন।
এত সহজে এটা মিটে যাবে কখনো ভাবতে পারেনি রুদ্র।
আনন্দের অতিশয্যে উড়তে চাইছে যেন রুদ্রের মন,মনের
অজান্তেই রুদ্রের চোখের কোণ
বেয়ে গড়িয়ে পরে দুফোঁটা অশ্রু আর ঝাপসা চোখে অপলক
তাকিয়ে থাকে সমুখে দাড়িয়ে থাকা তার স্বপ্নের
মানবীর টলোমলো চোখের দিকে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৯৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩১/০১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জয়শ্রী রায় ০৯/০২/২০১৫
    ফাগুনের পলাশ ...... আপনার গল্প পড়লাম । গল্প পড়তে পড়তে আমার নিজস্ব অনুভূতি থেকে কিছু কথা বলি । গল্পের থিম ভালো, কিন্তু মাঝে মাঝে গল্প পরিবেশন করার ঢঙ শুধু মাত্র গল্পের আউটলাইন-এ সীমাবদ্ধ বলে মনে হয়েছে । পরিবেশনের ত্রুটিগুলি একটু ভালো করে দেখে নিলে আরও ভালো থিমের গল্প আমাদের উপহার দিতে পারবেন বলে আশা রাখি । শুভেচ্ছা রইল ।
  • ০১/০২/২০১৫
    বেশ ভালো লাগল ।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ৩১/০১/২০১৫
    welcome @@@@@@
  • প্রথম লেখে অনেক ভালো লাগলো। আসরে আপনাকে সু-স্বাগতম। চালিয়ে যান।
 
Quantcast