www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সময়ের আক্ষেপ

ধসে পরা বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তুপের মাঝে চার বছরের ছেলে সিয়ামকে নিয়ে আটকে আছে মায়া। চারিদিকে ক্রন্দনের মৃদু শব্দ তাদের কানে এসে পৌছায়। কিন্তু মা-ছেলের আত্মচিৎকার শুধু ধ্বংসস্তুপের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। তারা এমন একটা মৃত্যুপুরিতে আটকে আছে যেখান থেকে স্বাভাবিক জীবনের দুরত্ব মাত্র হাত দশেক! জীবন-মৃত্যুর মাঝে দাড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তুপের ভয়ঙ্কর দেয়াল, যা ভেদ করা তাদের পক্ষে সম্বভ না! অথচ কিছুক্ষন আগেও ছিলো সবাই স্বাভাবিক জীবনে। কেউ কল্পনাও করতে পারেনী এই নির্মমতার কথা।
আর দশটা স্বাভাবিক সকলের মতই হয়েছিলো আজকের সকালটা। যে যার দৈনন্দিন কাজে ব্যাস্ত ছিলো। ৯ তলার লেফট ফ্লাটে থাকা মায়াও ছেলেকে স্কুলের জন্য রেডি করিয়ে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তীব্র ঝাকুনি! এবং মুহুর্তেই বালুচড়ে বানানো ঘরের মত হরহর করে ধসে পরে নরম ভিতের এই বহুতল ভবন।
ক্রমাগত কান্না ও আত্মচিৎকার করছে মায়া ও সিয়াম। কিন্তু তাদের আত্মচিৎকার এই দেয়াল ভেদ করে কিছুতেই বাইরে যাচ্ছে না! সোহানের মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগে রক্তক্ষরন হচ্ছে। মায়ার বাঁ পা-টা আটকে আছে। শরিরের সর্বশক্তি দিয়েও ছাড়াতে পারছেনে না! কিন্তু মায়ার যতটা না কষ্ট হচ্ছে নিজের শরিরের জন্য তার থেকে বেশী কষ্ট হচ্ছে ছেলের জন্য। কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে সিয়াম। মায়ার শরিরের সবটুকু শক্তি যেন কেউ কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে বাক শক্তি ও! তার কন্ঠ থেকে কোন কথা বেড় হচ্ছে না! এভাবে কেটে যায় অনেকক্ষন। সিয়ামের বাঁ হাতের ঘড়িটা বলছে সময় তিনটে বেজে নয় মিনিট। সিয়াম জেগে ওঠে! জেগে ওঠেই পানির জন্য কান্না করতে থাকে! "মা, পানি দাও পানি খাবো। খুব ক্ষুধা লেগেছে। খেতে দাও!" বাইরে ততক্ষনে উদ্ধার কাজ চলছে। মায়ার কানে মানুষের কলরব ও চিৎকার ভেসে আসে। কিন্তু এইটুকু দুরত্বও এখন তার কাছে সাত আসমান দুরত্ব! না পারছে ছেলের মুখে একটুকু পানি দিতে, না পারছে ছেলেকে কিছু খেতে দিতে।
কান্না করতে করতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে অনেক আগেই! সিয়াম কিছুক্ষন পর পর একটু জেগে ওঠে আর বলে-"মা পানি খাবো। একটু পানি দাও! আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে!" কিন্তু মায়া অসহায়, চোখের সামনে ছেলের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজের মাথা ঠুকে রক্ত ঝরিয়ে ছেলের মুখে দেয়। মায়ের রক্ত অমৃতের মত খেতে থাকে সিয়াম!

রাত ১০টা। উদ্ধারকারীদের লাইটের আলো খুজে পায় মা-ছেলেকে! সিয়াম মিনিট পাঁচেক আগেই পানি ও ক্ষুদার জন্য চিৎকার করতে করতে ঘুমিয়েছে। মায়ার মনে চঞ্চলতার সঞ্চয় হয়। কিন্তু তার গলা থেকে কথা বেড় হয় না। শুধু মুখ নাড়ানোটা বোঝা যায়।
উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তুপ সরাচ্ছে। দেয়াল কেটে বেড় করার রাস্তা তৈরী করছে। সিয়ামও জেগে ওঠে। কথা বলার ক্ষমতা নেই! শুধু মুখ নাড়িয়ে কয়েকবার অস্পষ্ট স্বরে বলে-"মা পানি দাও, পানি খাবো" এর পর থেমে যায় ক্রন্দন।
উদ্ধরারীরা এসে পৌছেছে। ধ্বংস্তুপ সরানো হয়েছে। মায়ার কোলে সিয়ামের মাথা। বাঁ হাতের হাত ঘড়িটা চলছে, অথচ দেহ ঘড়ি থেমে গেছে একটু আগেই! মায়ার ফ্যালফ্যাল চোঁখ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন বলছে, আর একটু আগে কেন এলে না?
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০৭/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast