হস্তরহস্য
""আজকেও তাকিয়ে আছি মোড়ের মানসিক হাসপাতাল এবং মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের দোতলায় বারান্দার ভেতর গ্রীলের জানালা দিয়ে একজোড়া হাত,খুব সম্ভবত সে বাইরে দেখছে আমাকেই..কারণ আমি ছাড়া আর কেউ প্রতিদিন এই দৃশ্য দেখার প্রয়োজন বোধ করেনা..!
এই শহরে সবাই ব্যস্ত,কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকার সময় নেই,যদিওবা তার পরেও রক্ষণশীল পরিবারের ষোড়শী যুবতী বুকের ওপর ওড়নাটা আর পিছনের জামাটা বারবার ঠিক করে নেয়,কারণ,কিছু মানুষের ব্যস্ত থাকার কারণই হলো যুবতীদের বুক আর পাছার দিকে তাকিয়ে থাকা..আমিও তাদের ভেতর পড়ি কিনা এসব মাঝেমাঝে চিন্তা করি,পরবর্তীতে আর চোখ দিতে ইচ্ছা করেনা,কারণ মহাপুরুষদের ইহজাগতিক কাম,লালসা,টাকার মোহ থাকলে চলবেনা,এটা হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন,আর আমার ঐতিহাসিক বন্ধু আলিফ (হুমায়ুন আহমেদ এর বিশাল ভক্ত) এর কাছে বহুদিন পরে এসে আবার এসব কৈশোর ভাবনার কথা শুনে আর একবার নিজেকে মহাপুরুষ হিসেবে তৈরী করতে ইচ্ছা হয়..!
যাক সে কথা,
আমি ভাবছি ওই হাত দুটো নিয়ে,যেটার কথা আমি আগে আমার বন্ধুদের বলেছি,দেখানোর চেষ্টা করেছি,তারা আমার মাথায় ঠুয়া মেরে আমাকে বারবার গিলাতে চেষ্টা করেছে সেখানে কোনো হাত টাত নেই,যদিও জীবন রিশি দুই একবার দেখেছে বলে জানিয়েছে কিন্তু এতটা আমলে নেয়নি,আসলে না দেখার পর্যাপ্ত কারণও ছিলো,কারণ সেখানে রুমটা পুরোপুরি অন্ধকার ছিলো,বাহিরে আলো থাকলে ভেতরের অন্ধকারে কিছু দেখা খুব সহজ নয়,যাই হোক,আমি আবারো আমার বন্ধুদের মাঝে নিগৃহিত..!
কিন্তু কথায় আছে,কিছু পেতে হলে তার ভেতরে ঢুকতে হয়,দিনরাত চেষ্টা করতে হয়,ভাবতে হয়,তাই আমিও সিরিয়াস যে ওই হাতের রহস্য আমি বের করবো..! এর জন্য সুদূর চীনে যেতে হলেও আমি রাজি..!
প্রথমত বের করতে হবে যে হাতগুলো ছেলের নাকি মেয়ের,একটা বিষয় আমি স্পষ্ট যে,হাতগুলোর গ্রীল ধরার অবস্থান এবং বাইরের দিকের তাকিয়ে থাকার ভঙ্গি সম্পূর্ণরূপে একজন হালকা বয়সী যুবক কিংবা যুবতীর..! কারণ, যৌবন পার হলে মানুষের আবেগ কমে যায়,বাস্তবতার চাপে পিষ্ট হয়ে মানুষ জীবনযুদ্ধে নেমে পড়ে,যার বিন্দুমাত্র লক্ষণ ওই হাতের মধ্যে আমি দেখিনি,তাই নিঃসন্দেহে সেগুলো একজন প্রাণবন্ত তরুণ কিংবা তরুণীর..!
.
সেদিন এক মোক্ষম আইডিয়া হাতে এসেছিলো আম্মুর মানসিক চিকিৎসার জন্য আলাপ করতে আমি উপরে যেতে পারি,সেই সুযোগে ওই রুমটা দেখে আসা যাবে,যেই ভাবা সেই কাজ,এক বন্ধুর সাথে উপরে গেলাম,ইনফরমেশন টেবিলের লোকের সাথে কিসব বকবক করার ফাঁকে আমি বললাম,
-আচ্ছা আপনাদের এখানে মানসিক রোগী,বা মাদকাসক্ত কয়জন ভর্তি আছেন?
-এইতো মোটে সাতজন,এরমধ্যে তিনজন মাদকাসক্ত,আর তিনজন মানসিকভাবে অসুস্থ..!
-এই না বললেন সাতজন? একজন আবার কি হলো?
-আসলে উনার এখনো পরীক্ষা চলছে,উনার আচরণ অস্বাভাবিক,তাই তাকে রোগী বলিনা আমরা,রোগী হওয়ার কোনো চিহ্ন নেই,কিন্তু কি মনে করে যে তার গার্ডিয়ান রেখে গেছেন তা আমরা বলতে পারিনা,আমাদের কাজ টাকা নিয়ে সেবা করা আমরা তাই করছি..!
-এটা কেমন কথা?? টাকা দিয়ে যায় আর আপনি একজন লোককে কোনো ধরণের বাছবিচার ছাড়াই বন্দী করে রাখছেন? সে রোগীও না,মাদকাসক্তও না,আপনি কি জানেন এটা নিউজে আসলে আপনার কি হতে পারে?
-ধুরমিয়া বাইর হন তো,ওনার বাপ বিশাল বড়লোক,বালও ছিড়তে পারবেননা,আপনার কাজের কথা থাকলে বলেন নয়তো যান,আপনার সাথে বকবক করার টাইম নাই আমার..
-আমাকে তার রুমটা-মানে তার সাথে একবার দেখা করা যাবে?
-ফাইজলামী পাইছেন?বাইরের লোকের সাথে এখানে রোগীদের দেখা করতে দিমু ক্যান?
-এখনিতো বললেন যে সে রোগী না,আজব।
-ঐ মিয়া,আপনি এনারে বের কইরা নিয়া যাবেন না আমি সিকিউরিটি ডাকবো?
সেদিন আমাকে মাহিন(ছদ্মনাম) জোর করে সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলো,অনেক কাছে গিয়েও রহস্য উদঘাটন করা হলোনা,আমি হাল ছাড়ছিনা...!
.
ইদানিং কেমন যেনো জানোয়ার টাইপ হয়ে গেছি,নিজে সিগারেট খেলে কোনো সমস্যা নেই,কিন্তু আমার রুমে যখন ফ্রেন্ডরা এসে সিগারেট ধরাচ্ছে আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে,মানুষজন মোটেও সহ্য হচ্ছেনা,আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা আমাকে একা থাকতে বাধ্য করছে...যেদিন রাত থেকে শামান প্র্যাক্টিস করছি সেদিন থেকেই মনে হয় কিছু হয়েছে,রাতারাতি আমি টেলিকিনেসিস টা অনেকটাই আয়ত্ব করে ফেলছিলাম,ভাবছিলাম এটা ভালোমতো শিখতে পারলে একটা মারাত্মক কাজই হবে,কিন্তু জীবন রিশি সেদিন একটা অকাজ করে বসে,আমার প্র্যাক্টিস এর সময়ই ওকে রুমে আসা লাগলো,...! তারপর থেকে সব এলোমেলো..!
.
মেয়েটার মাঝে অন্যরকম একটা মাদকতা আছে,আমি অপলক তাকিয়ে আছি,ও ঘুমাচ্ছে..একবারে হুরপরীর মতো সুন্দর না,কারণ,মানুষ অত সুন্দর হলে সে আর মানুষ থাকেনা,পুতুল কিংবা পরী হয়ে যায়,আমার পরী বা পুতুল ভালো লাগেনা,একটু খুঁত থাকা মেয়ে ভালো লাগে,খুঁত থাকা মেয়েদের ওর খুঁত নিয়ে খোটা দেয়া যাবে,ওরা কাঁদবে, আর কান্না করে চোখে জল আসবে,সেই জল গাল বেয়ে পড়তে দেয়ার আগেই চোখে চুমু দিতে হবে..এতে তার যে চেহারায় যে অভিমান হবে সেটা পরীদের মাঝে পাওয়া যাবেনা..যদিও আমি এই মেয়েটার মধ্যে তেমন কোনো খুঁত পেলামনা,তবে অনেক খুঁজে একটা কিছু পেলাম,ওর ঘুমানোর সময় উপরের দুটো দাঁত হালকা বের হয়ে থাকে..এটা খুঁত কিনা বলতে পারিনা,তবে পরীরা নিশ্চয়ই এভাবে ঘুমায়না,একটা ডিফারেন্স পেয়ে শান্ত হলাম,এখন ভাবার বিষয় এই মেয়েটাকে কি কারণে এখানে বন্দী করে রাখা হয়েছে..!
দেখে না মনে হচ্ছে এ কোনো মানসিক রোগী,না কোনো মাদকাসক্ত...!
যাই হোক,
অনেক কষ্টে এই রুমের ভেতর ঢোকা গেছে,সিকিউরিটি গার্ড ঘুষখোর এটা ভাবলোনা যে একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে কতবড় অপরাধ করার সুযোগ করে দিচ্ছে,আমার এখন দুটো কাজ,প্রথমত,এই মেয়েকে এখান থেকে উদ্ধার করা,দ্বিতীয়ত, সিকিউরিটি গার্ডকে একটা উচিত শিক্ষা দেয়া,তুই গরীব মানুষ,তুই কেন ঘুষ খাবি,বড়লোকেরা অসৎ, ওরা ঘুষ খাক পাপ বাড়াক,তুই গরীব গার্ড তোর এত আহ্লাদ কিসের,যতই ওর জন্য আমার উপকার হোক,আমি ওকে ছাড়ছিনা...!
.
-"আমি রেডি,চলো..."
ঠিক যতটুকু রহস্যজনক ভেবেছিলাম এই মেয়েকে ও তার থেকেও একমানুষ বেশি,নয়তো চেনা নেই জানা নেই এমনভাবে আমাকে কথাটা বললো যে সে রেডি,মনে হলো কতদিন থেকে যেনো আমার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলো,জানতো আমি আসবো ওকে নিয়ে যাবার জন্য..!
-"হ্যাঁ চলো",
- "আচ্ছা তোমার ইনহেলার নিয়েছো?যখন তখন তোমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়,বলেছি কখনো পকেট থেকে বের করবেনা..!"
আমি আকাশ থেকে পড়ার মতো চমকে উঠলাম,ও আমার সম্পর্কে এতকিছু কিভাবে জানে? এটা কিভাবে পসিবল? তারপর ভাবলাম হয়তো এ কারণেই হয়তো ওর জায়গা হয়েছে এই নিরাময়কেন্দ্রে,ও সবার থেকে আলাদা,অনেক আলাদা,কিছু একটা আছে ওর ভেতরে...!
-"আচ্ছা তুমি আমার সম্পর্কে এতকিছু জানো কিভাবে?"
-"অনু?আবার সব ভুলে গেছো?তোমার সম্পর্কে এতকিছু জানি কিভাবে মানে?আমি তোমার উড বি ওয়াইফ,আমাদের বিয়ে হবে আর কয়েক মাস পর সব ভুলে গেছো তুমি,কিছুই কি মনে পড়ছেনা তোমার?তোমার প্রিয়তাকে চিনতে পারছোনা??"
মেয়েটা আসলেই অনেক রহস্যজনক,আমার সাথে প্রিয়তার রিলেশান,আমাদের বিয়ে হবার কথাও জানে,কি আজব,আপাতত ওকে আমার বের করতে হবে,মোটামুটি আমি ওকে কি নিয়ে যাবো ওর ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ওই আমাকে উদ্ধার করতে এসেছে এখান থেকে,আমি বাধ্য ছেলের মত যাচ্ছি ওর পিছু পিছু..
আমি জিজ্ঞেস করলাম,আমরা কোথায় যাচ্ছি বলোতো?
-আজব তো,কোথায় আবার,সিলেট,যাও তাতাড়ি রিকশা নাও লেট হয়ে যাচ্ছে,ট্রেন একটু পরই ছাড়বে,টিকেট টা নিয়েছো? না ওটাও ভুলে গেছো??
আমি এই মেয়ের কথাবার্তা নিয়ে গবেষনা করলে পাগল হয়ে যাবো,তাই বেশি না ভেবে বেরিয়ে পড়লাম খুব সাবধানে,আর যাওয়ার আগে সিকিউরিটি গার্ডের জুতা আর কিছু জিনিষ মেয়েটার রুমে রেখে বেড টা এলোমেলো করে দিলাম..আঙুল হালকা কেটে কিছু রক্ত বেডে ছড়িয়ে দিলাম,এবার গরীব ব্যাটার শাস্তি হবে..!
.
পানির মধ্যে পা দিয়ে অরু আর আমি বসে আছি,ও আকাশ দেখছে আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি,ওর চোখগুলো পৃথিবীতে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর চোখ,জাফলঙ এর পানিতে ওর প্রতিবিম্ব আরো চকচকে দেখাচ্ছে,মেয়েটার নাম অরু দিয়েছি,প্রিয়তা আর অরুর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রিয়তা আমার ব্যাপারে কখনো শিওর ছিলোনা,অথচ এই মেয়ে আমাকে নিয়ে শতভাগ শিওর যে সে আমাকেই বিয়ে করছে কয়েকমাস পর,যাই হোক,ও ধীরেধীরে সেরে উঠবে এটাই আমার বিশ্বাস,এই সবুজ অরণ্যে,নদীর কাছে যদি একটুকরো অকৃত্তিম ভালোবাসা কেউ দিতে চায়,তবে তা নিতে ক্ষতি কি? অরুকে খুব ভালো লেগে গেছে আমার,পৃথিবীটাই এরকম,সকলে নতুনত্বের পূজারী...!""
.
.
নাহ্ আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা,মাথাটা প্রচুর ধরেছে,বৃষ্টি হচ্ছে,কফিটা শেষ করতে হবে,আজ যদি অনু ভালো থাকতো তবে আমার লিখার কতই না মন্তব্য করতো,ওর প্রিয়তা নিজ ইচ্ছায় গল্প লিখছে,ও কেন এরকম হলো,সৃষ্টিকর্তা কি ওকেই পেয়েছে শুধু পরীক্ষা করার জন্য? প্রতিদিন মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রের বদ্ধ রুমের জানালা দিয়ে ওর হাতদুটো দেখতে আর ইচ্ছে করেনা,এত অন্ধকার রুমে চেহারাটাও দেখা যায়না বাহির থেকে,কেমন যেনো তাকিয়ে থাকে বাহিরে,আমাকেই হয়তো দেখে,খুব ইচ্ছে করে সেদিন রাতের মত ও আমাকে ওর শক্ত হাতে পিষে ফেলুক,ওর ভালোবাসায় আবারো সিক্ত হই...! অনেক মিস করছি মিস্টার অনুভব...তাড়াতাড়ি সুস্থ হও প্লিজ...!
.
#শঙ্খনীল_অনুভব
এই শহরে সবাই ব্যস্ত,কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকার সময় নেই,যদিওবা তার পরেও রক্ষণশীল পরিবারের ষোড়শী যুবতী বুকের ওপর ওড়নাটা আর পিছনের জামাটা বারবার ঠিক করে নেয়,কারণ,কিছু মানুষের ব্যস্ত থাকার কারণই হলো যুবতীদের বুক আর পাছার দিকে তাকিয়ে থাকা..আমিও তাদের ভেতর পড়ি কিনা এসব মাঝেমাঝে চিন্তা করি,পরবর্তীতে আর চোখ দিতে ইচ্ছা করেনা,কারণ মহাপুরুষদের ইহজাগতিক কাম,লালসা,টাকার মোহ থাকলে চলবেনা,এটা হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন,আর আমার ঐতিহাসিক বন্ধু আলিফ (হুমায়ুন আহমেদ এর বিশাল ভক্ত) এর কাছে বহুদিন পরে এসে আবার এসব কৈশোর ভাবনার কথা শুনে আর একবার নিজেকে মহাপুরুষ হিসেবে তৈরী করতে ইচ্ছা হয়..!
যাক সে কথা,
আমি ভাবছি ওই হাত দুটো নিয়ে,যেটার কথা আমি আগে আমার বন্ধুদের বলেছি,দেখানোর চেষ্টা করেছি,তারা আমার মাথায় ঠুয়া মেরে আমাকে বারবার গিলাতে চেষ্টা করেছে সেখানে কোনো হাত টাত নেই,যদিও জীবন রিশি দুই একবার দেখেছে বলে জানিয়েছে কিন্তু এতটা আমলে নেয়নি,আসলে না দেখার পর্যাপ্ত কারণও ছিলো,কারণ সেখানে রুমটা পুরোপুরি অন্ধকার ছিলো,বাহিরে আলো থাকলে ভেতরের অন্ধকারে কিছু দেখা খুব সহজ নয়,যাই হোক,আমি আবারো আমার বন্ধুদের মাঝে নিগৃহিত..!
কিন্তু কথায় আছে,কিছু পেতে হলে তার ভেতরে ঢুকতে হয়,দিনরাত চেষ্টা করতে হয়,ভাবতে হয়,তাই আমিও সিরিয়াস যে ওই হাতের রহস্য আমি বের করবো..! এর জন্য সুদূর চীনে যেতে হলেও আমি রাজি..!
প্রথমত বের করতে হবে যে হাতগুলো ছেলের নাকি মেয়ের,একটা বিষয় আমি স্পষ্ট যে,হাতগুলোর গ্রীল ধরার অবস্থান এবং বাইরের দিকের তাকিয়ে থাকার ভঙ্গি সম্পূর্ণরূপে একজন হালকা বয়সী যুবক কিংবা যুবতীর..! কারণ, যৌবন পার হলে মানুষের আবেগ কমে যায়,বাস্তবতার চাপে পিষ্ট হয়ে মানুষ জীবনযুদ্ধে নেমে পড়ে,যার বিন্দুমাত্র লক্ষণ ওই হাতের মধ্যে আমি দেখিনি,তাই নিঃসন্দেহে সেগুলো একজন প্রাণবন্ত তরুণ কিংবা তরুণীর..!
.
সেদিন এক মোক্ষম আইডিয়া হাতে এসেছিলো আম্মুর মানসিক চিকিৎসার জন্য আলাপ করতে আমি উপরে যেতে পারি,সেই সুযোগে ওই রুমটা দেখে আসা যাবে,যেই ভাবা সেই কাজ,এক বন্ধুর সাথে উপরে গেলাম,ইনফরমেশন টেবিলের লোকের সাথে কিসব বকবক করার ফাঁকে আমি বললাম,
-আচ্ছা আপনাদের এখানে মানসিক রোগী,বা মাদকাসক্ত কয়জন ভর্তি আছেন?
-এইতো মোটে সাতজন,এরমধ্যে তিনজন মাদকাসক্ত,আর তিনজন মানসিকভাবে অসুস্থ..!
-এই না বললেন সাতজন? একজন আবার কি হলো?
-আসলে উনার এখনো পরীক্ষা চলছে,উনার আচরণ অস্বাভাবিক,তাই তাকে রোগী বলিনা আমরা,রোগী হওয়ার কোনো চিহ্ন নেই,কিন্তু কি মনে করে যে তার গার্ডিয়ান রেখে গেছেন তা আমরা বলতে পারিনা,আমাদের কাজ টাকা নিয়ে সেবা করা আমরা তাই করছি..!
-এটা কেমন কথা?? টাকা দিয়ে যায় আর আপনি একজন লোককে কোনো ধরণের বাছবিচার ছাড়াই বন্দী করে রাখছেন? সে রোগীও না,মাদকাসক্তও না,আপনি কি জানেন এটা নিউজে আসলে আপনার কি হতে পারে?
-ধুরমিয়া বাইর হন তো,ওনার বাপ বিশাল বড়লোক,বালও ছিড়তে পারবেননা,আপনার কাজের কথা থাকলে বলেন নয়তো যান,আপনার সাথে বকবক করার টাইম নাই আমার..
-আমাকে তার রুমটা-মানে তার সাথে একবার দেখা করা যাবে?
-ফাইজলামী পাইছেন?বাইরের লোকের সাথে এখানে রোগীদের দেখা করতে দিমু ক্যান?
-এখনিতো বললেন যে সে রোগী না,আজব।
-ঐ মিয়া,আপনি এনারে বের কইরা নিয়া যাবেন না আমি সিকিউরিটি ডাকবো?
সেদিন আমাকে মাহিন(ছদ্মনাম) জোর করে সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলো,অনেক কাছে গিয়েও রহস্য উদঘাটন করা হলোনা,আমি হাল ছাড়ছিনা...!
.
ইদানিং কেমন যেনো জানোয়ার টাইপ হয়ে গেছি,নিজে সিগারেট খেলে কোনো সমস্যা নেই,কিন্তু আমার রুমে যখন ফ্রেন্ডরা এসে সিগারেট ধরাচ্ছে আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে,মানুষজন মোটেও সহ্য হচ্ছেনা,আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা আমাকে একা থাকতে বাধ্য করছে...যেদিন রাত থেকে শামান প্র্যাক্টিস করছি সেদিন থেকেই মনে হয় কিছু হয়েছে,রাতারাতি আমি টেলিকিনেসিস টা অনেকটাই আয়ত্ব করে ফেলছিলাম,ভাবছিলাম এটা ভালোমতো শিখতে পারলে একটা মারাত্মক কাজই হবে,কিন্তু জীবন রিশি সেদিন একটা অকাজ করে বসে,আমার প্র্যাক্টিস এর সময়ই ওকে রুমে আসা লাগলো,...! তারপর থেকে সব এলোমেলো..!
.
মেয়েটার মাঝে অন্যরকম একটা মাদকতা আছে,আমি অপলক তাকিয়ে আছি,ও ঘুমাচ্ছে..একবারে হুরপরীর মতো সুন্দর না,কারণ,মানুষ অত সুন্দর হলে সে আর মানুষ থাকেনা,পুতুল কিংবা পরী হয়ে যায়,আমার পরী বা পুতুল ভালো লাগেনা,একটু খুঁত থাকা মেয়ে ভালো লাগে,খুঁত থাকা মেয়েদের ওর খুঁত নিয়ে খোটা দেয়া যাবে,ওরা কাঁদবে, আর কান্না করে চোখে জল আসবে,সেই জল গাল বেয়ে পড়তে দেয়ার আগেই চোখে চুমু দিতে হবে..এতে তার যে চেহারায় যে অভিমান হবে সেটা পরীদের মাঝে পাওয়া যাবেনা..যদিও আমি এই মেয়েটার মধ্যে তেমন কোনো খুঁত পেলামনা,তবে অনেক খুঁজে একটা কিছু পেলাম,ওর ঘুমানোর সময় উপরের দুটো দাঁত হালকা বের হয়ে থাকে..এটা খুঁত কিনা বলতে পারিনা,তবে পরীরা নিশ্চয়ই এভাবে ঘুমায়না,একটা ডিফারেন্স পেয়ে শান্ত হলাম,এখন ভাবার বিষয় এই মেয়েটাকে কি কারণে এখানে বন্দী করে রাখা হয়েছে..!
দেখে না মনে হচ্ছে এ কোনো মানসিক রোগী,না কোনো মাদকাসক্ত...!
যাই হোক,
অনেক কষ্টে এই রুমের ভেতর ঢোকা গেছে,সিকিউরিটি গার্ড ঘুষখোর এটা ভাবলোনা যে একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে কতবড় অপরাধ করার সুযোগ করে দিচ্ছে,আমার এখন দুটো কাজ,প্রথমত,এই মেয়েকে এখান থেকে উদ্ধার করা,দ্বিতীয়ত, সিকিউরিটি গার্ডকে একটা উচিত শিক্ষা দেয়া,তুই গরীব মানুষ,তুই কেন ঘুষ খাবি,বড়লোকেরা অসৎ, ওরা ঘুষ খাক পাপ বাড়াক,তুই গরীব গার্ড তোর এত আহ্লাদ কিসের,যতই ওর জন্য আমার উপকার হোক,আমি ওকে ছাড়ছিনা...!
.
-"আমি রেডি,চলো..."
ঠিক যতটুকু রহস্যজনক ভেবেছিলাম এই মেয়েকে ও তার থেকেও একমানুষ বেশি,নয়তো চেনা নেই জানা নেই এমনভাবে আমাকে কথাটা বললো যে সে রেডি,মনে হলো কতদিন থেকে যেনো আমার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলো,জানতো আমি আসবো ওকে নিয়ে যাবার জন্য..!
-"হ্যাঁ চলো",
- "আচ্ছা তোমার ইনহেলার নিয়েছো?যখন তখন তোমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়,বলেছি কখনো পকেট থেকে বের করবেনা..!"
আমি আকাশ থেকে পড়ার মতো চমকে উঠলাম,ও আমার সম্পর্কে এতকিছু কিভাবে জানে? এটা কিভাবে পসিবল? তারপর ভাবলাম হয়তো এ কারণেই হয়তো ওর জায়গা হয়েছে এই নিরাময়কেন্দ্রে,ও সবার থেকে আলাদা,অনেক আলাদা,কিছু একটা আছে ওর ভেতরে...!
-"আচ্ছা তুমি আমার সম্পর্কে এতকিছু জানো কিভাবে?"
-"অনু?আবার সব ভুলে গেছো?তোমার সম্পর্কে এতকিছু জানি কিভাবে মানে?আমি তোমার উড বি ওয়াইফ,আমাদের বিয়ে হবে আর কয়েক মাস পর সব ভুলে গেছো তুমি,কিছুই কি মনে পড়ছেনা তোমার?তোমার প্রিয়তাকে চিনতে পারছোনা??"
মেয়েটা আসলেই অনেক রহস্যজনক,আমার সাথে প্রিয়তার রিলেশান,আমাদের বিয়ে হবার কথাও জানে,কি আজব,আপাতত ওকে আমার বের করতে হবে,মোটামুটি আমি ওকে কি নিয়ে যাবো ওর ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ওই আমাকে উদ্ধার করতে এসেছে এখান থেকে,আমি বাধ্য ছেলের মত যাচ্ছি ওর পিছু পিছু..
আমি জিজ্ঞেস করলাম,আমরা কোথায় যাচ্ছি বলোতো?
-আজব তো,কোথায় আবার,সিলেট,যাও তাতাড়ি রিকশা নাও লেট হয়ে যাচ্ছে,ট্রেন একটু পরই ছাড়বে,টিকেট টা নিয়েছো? না ওটাও ভুলে গেছো??
আমি এই মেয়ের কথাবার্তা নিয়ে গবেষনা করলে পাগল হয়ে যাবো,তাই বেশি না ভেবে বেরিয়ে পড়লাম খুব সাবধানে,আর যাওয়ার আগে সিকিউরিটি গার্ডের জুতা আর কিছু জিনিষ মেয়েটার রুমে রেখে বেড টা এলোমেলো করে দিলাম..আঙুল হালকা কেটে কিছু রক্ত বেডে ছড়িয়ে দিলাম,এবার গরীব ব্যাটার শাস্তি হবে..!
.
পানির মধ্যে পা দিয়ে অরু আর আমি বসে আছি,ও আকাশ দেখছে আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি,ওর চোখগুলো পৃথিবীতে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর চোখ,জাফলঙ এর পানিতে ওর প্রতিবিম্ব আরো চকচকে দেখাচ্ছে,মেয়েটার নাম অরু দিয়েছি,প্রিয়তা আর অরুর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রিয়তা আমার ব্যাপারে কখনো শিওর ছিলোনা,অথচ এই মেয়ে আমাকে নিয়ে শতভাগ শিওর যে সে আমাকেই বিয়ে করছে কয়েকমাস পর,যাই হোক,ও ধীরেধীরে সেরে উঠবে এটাই আমার বিশ্বাস,এই সবুজ অরণ্যে,নদীর কাছে যদি একটুকরো অকৃত্তিম ভালোবাসা কেউ দিতে চায়,তবে তা নিতে ক্ষতি কি? অরুকে খুব ভালো লেগে গেছে আমার,পৃথিবীটাই এরকম,সকলে নতুনত্বের পূজারী...!""
.
.
নাহ্ আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা,মাথাটা প্রচুর ধরেছে,বৃষ্টি হচ্ছে,কফিটা শেষ করতে হবে,আজ যদি অনু ভালো থাকতো তবে আমার লিখার কতই না মন্তব্য করতো,ওর প্রিয়তা নিজ ইচ্ছায় গল্প লিখছে,ও কেন এরকম হলো,সৃষ্টিকর্তা কি ওকেই পেয়েছে শুধু পরীক্ষা করার জন্য? প্রতিদিন মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রের বদ্ধ রুমের জানালা দিয়ে ওর হাতদুটো দেখতে আর ইচ্ছে করেনা,এত অন্ধকার রুমে চেহারাটাও দেখা যায়না বাহির থেকে,কেমন যেনো তাকিয়ে থাকে বাহিরে,আমাকেই হয়তো দেখে,খুব ইচ্ছে করে সেদিন রাতের মত ও আমাকে ওর শক্ত হাতে পিষে ফেলুক,ওর ভালোবাসায় আবারো সিক্ত হই...! অনেক মিস করছি মিস্টার অনুভব...তাড়াতাড়ি সুস্থ হও প্লিজ...!
.
#শঙ্খনীল_অনুভব
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ২৪/০২/২০২০ভালো,,
-
সেলিম রেজা সাগর ২৯/০৬/২০১৮দারুণ লিখনশৈলী।
-
আবুল খায়ের ২৪/০৬/২০১৮nice