www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নাম না জানা সেই মেয়েটি

নাম না জানা সেই মেয়েটি
---রেজাউল রেজা---
_____________________
বুড়ি তিস্তা নদী। সাতজান ঘাট।
নদী পারাপারের জন্য এখানে কোন সাঁকো নেই।এই গ্রামের সব মানুষকে নৌকা দিয়েই নদী পার হয়ে কাজে কিংবা বাজারে যেতে হয়।সুনীল মাঝির ভাঙা নৌকাই সবার একমাত্র ভরসা। বুকে ভয় নিয়ে,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও উঠতে হয় সুনীল মাঝির নৌকায়।সুনীলের নৌকায় নদী পার হতে গিয়ে কয়েকজনের জীবনও খোয়া গেছে।
কিন্তু উপায় নেই! নৌকা শুধু সুনীল মাঝিরই আছে।
একবার নৌকায় উঠলেই মাথা প্রতি গুণতে হয় বারো আনা।
অবশ্য পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পার করতে টাকা নেয়না সুনীল মাঝি।
সেটা অবশ্য নতুন কোন লোক আসলে পুষিয়ে নেয় সে।
নতুন লোকের কাছে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে সুনীল।
আজ একদল লোক এসেছে,একেবারেই অপরিচিত লাগল সুনীলের কাছে।
শিশু-কিশোর,নারী-পুরুষ সব মিলিয়ে গোটা দশেক তো হবেই।
মনে মনে অনেক খুশি হলো সুনীল, সেই সাথে টাকার হিসেবটাও গুণতে লাগল।
আগন্তুকদের একজন সুনীলের দিকে এগিয়ে আসল।
সুনীলকে লক্ষ্য করে বলল,এ্যাইযে ভাই!
যাবেন নাকি ঐ পাড়ে?
না যাই ক্যানে!যাবার জন্যেই তো এটে বসি আছি।
চড়ো নৌকাত।বলল-সুনীল মাঝি।
কয় টাকা দিতে হবে?বলল-আগন্তুক লোকটি।
এক টাকা এক জনে।বলল-সুনীল।
নতুন লোক দেখে সিকি পয়সা বাড়িয়ে বলল।
উপায়ন্তর না দেখে আগন্তুক দল উঠে পড়ল নৌকায়।
প্রায় আধা ঘন্টার পথ নদীর ঐ পাড়।
তোমা কোটে থাকি আইচছেন?যাইবেন কার বাড়ি?
লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বলল সুনীল।
আগন্তুক লোকগুলো সবাই সবার দিকে তাকাচ্ছে,তারা সুনীলের কথা বুঝেনি।
এটা বুঝতে পারল সুনীল মাঝি।
আবার বলল,কোন জাগা থাকি আইসতেছেন?
আর কার বাড়ি যাইবেন?
লোকগুলোর একজন কিছুটা বুঝেছে সুনীলের প্রশ্ন।
আমরা রহিম তরফতারের বাড়ি যাব।বলল-লোকটি।
ও,তোমা রহিম তরপদারের সাগাই!
নৌকায় একটা সুন্দরী মেয়ে ছিল।
অসম্ভব সুন্দর!
গায়ের রং রক্ত লাল,গালে তিল,ছিপছিপে গড়নের স্বাস্থ্য।
এক কথায় অমায়িক।
সুনীল নৌকার বৈঠা চালাচ্ছে কিন্তু আঁড় চোখে তাকাচ্ছে মেয়েটার দিকে।
মেয়েটা প্রথমে খেয়াল করেনি বিষয়টা।
পরে বুঝতে পারল যে,বার বার মাঝি তার দিকে তাকাচ্ছে।
সুনীল মাঝি হলেও সুদর্শন, ২৪-২৫ বয়সী তাগড়া জোয়ান।
এখনও বিয়ে করেনি।
সুনীল নিজ মনে নৌকা চালাচ্ছে আর চুপি চুপি মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে।
মেয়েটা মনে মনে হাসছে সুনীলের কাণ্ড দেখে।
মেয়েটারও ইচ্ছে করছে সুনীলের দিকে তাকাতে।
সেও না দেখার ভঙ্গিতে সুনীলের দিকে তাকাচ্ছে।তবে,খুব সাবধানে।যাতে মাঝি বুঝতে না পারে।
নৌকা নদীর কিনারায় এসে গেল।
সুনীল নৌকা থামিয়ে লোকগুলোকে নামিয়ে দিল।
ভাড়া বুঝে দিয়ে লোকগুলো চলে যাচ্ছে গ্রামের দিকে।
সুনীল পেছন থেকে মেয়েটার হেটে যাওয়া দেখছে।
মনে মনে ভাবছে আর একটা বার কিভাবে মেয়েটাকে দেখা যায়।
এ্যাইযে ভাই শুনছেন!
তোমা কি তরপদারের বাড়ি চেনেন?
সুনীল লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল।
সবাই ফিরে তাকালো,মেয়েটাও।
সুনীলের বুদ্ধি কাজে লাগল।
সে এটাই চেয়েছিল,মেয়েটা একটা বার যেন ফিরে তাকায়।
সুনীল মেয়েটার দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।
মেয়েটাও হাসতে বাধ্য হলো।
চলে গেল ওরা,সুনীল মাঝি পড়ে থাকল ঘাটেই।
সুনীলের মনের আঙিনায় এখন মেয়েটা হেটে বেড়াচ্ছে।
সুনীল ভাবছে,সে কি আবার আসবে এই ঘাটে!
তাঁর নামটা কি জানা হবে!
মেয়েটা তাদের আত্মীয় রহিম তরফদারের বাড়ি গেল।
রাত হয়ে গেছে তাই সবাই দ্রুত খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমাতে গেল।
শুইলো ঠিকই কিন্তু মেয়েটার ঘুম আসছেনা।
সবসময় তাঁর চোখে ভাসছে সুনীল মাঝির বৈঠা চালানো,তাঁর মুচকি হাসি।
অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারল না মেয়েটি।
পরের দিন,সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটে আসল ঘাটে,সুনীল মাঝিকে এক নজর দেখার জন্য।
এসে দেখল সুনীল নিজ মনে নৌকা বাইছে।
গাছের আঁড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল সুনীল মাঝির পাড়ে ফেরা পর্যন্ত।
সুনীল মাঝি পাড়ে ফিরল।
যাত্রী নামিয়ে দিল,তাঁর মনে পড়ল মেয়েটির কথা।
আনমনে হয়ে চতুর্দিকে খুঁজতে লাগল সুনীল।
সুনীলের মন বলছে মেয়েটি হয়ত আসবে তাঁর খোঁজে।
মেয়েটি সুনীলকে দেখে গাছের আঁড়াল থেকে বেরিয়ে আসল।
অবশেষে,চোখাচুখি হলো।
মুচকি হাসির বিনিময় হলো কিন্তু কোন কথা হলোনা।
মেয়েটি লজ্জায় লাল হয়ে দৌড়ে চলে গেল তরফদারের বাড়ির দিকে।
পরের দিন তরফতারের বাড়ি থেকে বিদায় নিল বেড়াতে আসা লোকগুলো।
আসল সাতজান ঘাটে।
আবার উঠল সুনীল মাঝির নৌকায়।
সুনীল মাঝি আজ কোন কথা বলছেনা,তাঁর মন খুব খারাপ।
কারণ,মেয়েটি আজ চলে যাচ্ছে।
আজ মাঝি তাকাচ্ছেনা মেয়েটির দিকে।
মেয়েটি অবাক হলো মাঝির আচরণ দেখে।
মেয়েটি অনেক চেষ্টা করল মাঝির সাথে একটু কথা বলার জন্য কিন্তু পারল না কারণ নৌকায় তাঁর বাবা-মা সবাই আছে।
নৌকা নদী নদীর কিনারায় আসল,সবাই নৌকা থেকে নামল।
সুনীলকে ভাড়া দিল সেই প্রথম সুনীলের সাথে কথা বলা লোকটি।
এই লোকটিই মেয়েটির বাবা।
সবাই চলে যাচ্ছে।
সুনীল আঁড় চোখে তাকাচ্ছে মেয়েটির দিকে।
মেয়েটিরও ইচ্ছে করছে পিছন ফিরে তাকাতে।
অবশেষে,সাহস করে এক নিমিষের জন্য পিছনে ফিরে তাকাল মেয়েটি।
তাকিয়েই ঘুরে চলতে শুরু করল।
হনহন করে হেটে চলে গেল।
সুনীল তাকিয়েই থাকল মেয়েটির চলার পথে।।
----------------------
★আজকের কুমিল্লা-১৫/০৭/১৮
★অনাবিল সংবাদ-১৫/০৭/১৮
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৩৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/০৮/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast