www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হঠাৎ সাক্ষাৎ

পায়ের জুতো জোড়া ছিঁড়ে গেছে। জুতোগুলো চর্মকারের কাছে নিয়ে যেতে হবে সেলাই করানোর জন্য। তাই শনিবার দুপুরের দিকে জুতোগুলো নিয়ে বেরিয়ে পরলাম চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে কারণ সেখানে চর্মকার তো পেয়েই যাব। বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের পথ। গাজীপুরের মহানগরে থাকি এমনিতেই তো ব্যস্ত থাকে শহরের রাজপথগুলো। তার ওপর মানুষের ভিড়ে যেন আরও ফুটপাতে হাটার উপক্রমও হচ্ছে না। এই জনসমুদ্র ঠেলে অবশেষে পৌছুলাম চর্মকারের কাছে। দূর থেকে যখন চর্মকারকে দেখছিলাম তখন কেন জানি লোকটাকে দেখে খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল। সামনে গিয়ে দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “ জুতোর তলা ছিঁড়ে গেছে, ঠিক করা যাবে কী?” সে আমাকে দেখে কেমন যেনো উৎসুক দুষ্টিতে চেয়ে রইল। তাকে দেখে এমন মনে হলো যেন সে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চায়। কিন্তু সে কিছু বলল না। ইশরায় আমাকে জুতা দুটো দিতে বলল। জুতো গুলো আমি একটি ব্যাগে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। ব্যাগটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। এমন সময় একটি ছোট মেয়ে বয়স দশ অথবা এগারো হবে, ছেঁড়া একটা জামা পরা। মেয়েটি আমার মুখের সামনে হাত পেতে রয়েছে। “ দুইট্যা ট্যাহা ভিক্ষা দেন” মেয়েটি করুণ আর্তনাদের সুরে বলল। আমি বললাম, “ভিক্ষা করিস কেন? মা-বাবা নাই। স্কুলে যাস না?” “ মা-বাপ তো আছে। বাপে মায়েরে রাইখ্যা কই জানি চইলা গেছে। মায়ের এহন খুব অসুখ। চিকিৎসা করনের টাকা লাগব তার লেইগাই তো ভিক্ষমাঙি।” ওর কথা শুনে বডড মায়া হলো। পকেট থেকে পাঁচটা টাকা বের করে ওকে দিয়ে দিলাম। মেয়েটি চলে গেল। এদিকে আমার জুতা সেলাইয়ের কাজও দেখি প্রায় শেষ। আর খুব দ্রুতই তা শেষ হয়ে গেল। আমি জুতো গুলো ব্যাগে ভরে। চর্মকারের দিকে পঞ্চাশটা টাকা বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু সে নিতে চাইল না। আমার কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট হলো না। একটু পরে সে আমাকে জিজ্ঞেস করল,“ তুমি আমাকে চিনতে পারনাই, তাই না? আমি পিন্টু।” আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। যে পিন্টু আমার সাথে একসময় ক্লাস ফাইভে পড়ত আজ সে মুচি। দারিদ্রের কুঠারাঘাতের বিষময় ফল এর চেয়ে বেশি আর কী হতে পারে!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৪২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast