টিউটর
কলমের কালি ফুরিয়ে যাচ্ছে।চোখের সামনের সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে।আবিদ এখন উভয় সংকটে পড়েছে।আগামিকাল তার ছাত্রীর পরীক্ষা।তার জন্য প্রশ্ন তৈরী করতে হবে। এই মুহুর্তে গ্রামে যাওয়া আবিদের পক্ষে সম্ভব নয়।কিন্তু তার সমস্যাটাও যে ঘোরতর।হোম টিউটর আবিদ এখন তার সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছে।
আবিদ খান, এই শহরে পা রাখার আগে চট্টগ্রামের এক ছোট্ট গাঁয়ে থাকত।ঢাকার একটি বিখ্যাত কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র আবিদ।বাড্ডার এক ঘুপচি গলির ভেতরে তিন তলা বাড়িটিতে শুধু ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া হয়।মেস ভাড়া,টিউশন ফি আর হাত খরচের একমাত্র উপায় "টিউশনি"।তাই আবিদ আজ একজন হোম টিউটর।
দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে পড়ায় আবিদ।তারই জন্য প্রশ্ন তৈরী করছে।কলমের কালি ফুরিয়ে যাওয়ায় আবিদ হাল ছাড়ে।না,সে গ্রামেই যাবে।ছোট বোন টা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছে।এই মুহুর্তে বোনের পাশে তাকে থাকতেই হবে।
-কিরে কটা বাজে,রিশমি?
-মা,ছয় টা বাজে।
-তোর স্যার তো আজ এলো না।
-কোন কাজ আছে হয়তো।
-ছাই আছে।এরকম ফাকিবাজ টিউটর আর রাখা যাবে না।সামনে পরীক্ষা।আর এখনই সে আসে না।
এই রিশমিকেই আবিদ পড়ায়।আবিদ না আসায় তারা খুবই বিরক্ত।
এই শহরে টিউশনি পাওয়াটাই দুষ্কর।তার ওপর যদি কাজে অবহেলা করা হয়,তাহলে তো কথাই নেই।দেওয়া নেওয়ায় সবাই ব্যাস্ত।চার হাজার টাকার মাস্টার যদি একদিন না পড়ায়,তাহলে তো বিশাল ক্ষতি।
কিন্তু হায়!চুক্তিবদ্ধ মাস্টারের ও যে কোন সমস্যা থাকতে পারে তা কেউ ভাবে না।তাদেরও যে মাঝে সাঝে ছুটি নিতে হয়।
আবিদের মরার উপর খাড়ার ঘা পড়েছে।গ্রামে যাওয়ার সময় ফোন চুরি হয়ে গেছে।তার অযাচিত,অনধিকার ছুটির কথা সে রিশমির মা কে জানাতে পারেনি।তাও একদিন দুইদিন নয়।সাত সাত টি দিন তাকে গ্রামে থাকতে হয়েছে।ওদিকে পকেটে টাকাও নেই।কোন মতে ধার দেনা করে আবিদ ঢাকায় ফিরেছে।
সারাদিন ভ্রমনের পথে আবিদ কিছুই খায় নি।সেই সকালে ভাত খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।বিকেলেই যে তাকে টিউশন ধরতে হবে।আবিদ ভাবে যে,কিছুদিন আগেই তাকে মাইনেটা চেয়ে নিতে হবে।
কাঠের চেয়ারে চুপচাপ আবিদ বসে আছে।রিশমিকে পদার্থবিজ্ঞানের গতি সংক্রান্ত কয়েকটি অংক কষতে দিয়ে নিরিবিলি ঝিমুচ্ছে।
সামনে এক কাপ চা আর কয়েকটি কাঠ সদৃশ শক্ত টোস্ট।সশব্দে একটি টোস্টে কামড় বসাল সারাদিন অভুক্ত আবিদ।এতে কি খিদে মিটে?
আবিদ যতদিন রিশমিকে পড়ায়,সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই এই চা-টোস্ট দিয়ে শিক্ষক আপ্যায়ন চলে আসছে এ বাসায়।তাও প্রতিদিন নয়।মাঝে দু একদিন খালি মুখেই দেড় ঘন্টা বসে থাকতে হয়।তার পর দিন হয়তো এই চা-বিস্কুট সমাদর।
চা শেষ করে পিরিচে রাখতেই ও ঘর থেকে রিশমির মা এর আগমন।
-আবিদ,এতদিন আস নি যে?
-আন্টি,জরুরী কাজে গ্রামে গিয়েছিলাম।
-ও।শোন, রিশমিকে যে এখন ছুটি দিতে হবে।একটি বিয়ের দাওয়াত আছে।
-আচ্ছা।
-ওকে ছুটি দিয়ে একটু বোসো।কথা আছে।
হঠাৎ যেন দুর্বল হয়ে গেছে আবিদ।শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে তার।চারতলা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামবার সময় মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকায় রেলিং শক্ত করে ধরে সে।
চার হাজার টাকার এই টিউশনিতে আবিদের অনেক কষ্টে শিষ্টে চলে যাচ্ছিল।কিন্তু এই টিউশনিটাও এখন নিপাত গেলে বেশ ভালোই ভালোই বিপদে পড়তে হবে তাকে।সামনের মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাইনে নিয়ে যেতে বলেছেন রিশমির মা।আর পড়াতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি।সাতদিনের অঘোষিত ছুটিই যে আবিদের রুজি খোয়ানোর কারণ, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আবিদ।উলটো দিকে দোকানে সদ্য ভাজা গরম সিঙাড়া কড়াই থেকে তোলা হচ্ছে।প্যান্টের শূণ্য পকেট একবার হাতড়িয়ে নেয় সে।আশ্বস্ত হওয়ার মত কিছু পেলো না।হঠাৎ করে তার পেটে মোচড় দিল।কে যেন পাকস্থলিটা মুঠোয় চেপে নিংড়ে দিতে চাইছে।আবিদের যে বড্ড খিদে।
সমস্তদিন অভুক্ত আবিদ শুকনো মুখে শুধু চেয়ে থাকে দোকানের "সদ্য ভাজা গরম সিঙাড়া"র পানে.....................
আবিদ খান, এই শহরে পা রাখার আগে চট্টগ্রামের এক ছোট্ট গাঁয়ে থাকত।ঢাকার একটি বিখ্যাত কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র আবিদ।বাড্ডার এক ঘুপচি গলির ভেতরে তিন তলা বাড়িটিতে শুধু ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া হয়।মেস ভাড়া,টিউশন ফি আর হাত খরচের একমাত্র উপায় "টিউশনি"।তাই আবিদ আজ একজন হোম টিউটর।
দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে পড়ায় আবিদ।তারই জন্য প্রশ্ন তৈরী করছে।কলমের কালি ফুরিয়ে যাওয়ায় আবিদ হাল ছাড়ে।না,সে গ্রামেই যাবে।ছোট বোন টা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছে।এই মুহুর্তে বোনের পাশে তাকে থাকতেই হবে।
-কিরে কটা বাজে,রিশমি?
-মা,ছয় টা বাজে।
-তোর স্যার তো আজ এলো না।
-কোন কাজ আছে হয়তো।
-ছাই আছে।এরকম ফাকিবাজ টিউটর আর রাখা যাবে না।সামনে পরীক্ষা।আর এখনই সে আসে না।
এই রিশমিকেই আবিদ পড়ায়।আবিদ না আসায় তারা খুবই বিরক্ত।
এই শহরে টিউশনি পাওয়াটাই দুষ্কর।তার ওপর যদি কাজে অবহেলা করা হয়,তাহলে তো কথাই নেই।দেওয়া নেওয়ায় সবাই ব্যাস্ত।চার হাজার টাকার মাস্টার যদি একদিন না পড়ায়,তাহলে তো বিশাল ক্ষতি।
কিন্তু হায়!চুক্তিবদ্ধ মাস্টারের ও যে কোন সমস্যা থাকতে পারে তা কেউ ভাবে না।তাদেরও যে মাঝে সাঝে ছুটি নিতে হয়।
আবিদের মরার উপর খাড়ার ঘা পড়েছে।গ্রামে যাওয়ার সময় ফোন চুরি হয়ে গেছে।তার অযাচিত,অনধিকার ছুটির কথা সে রিশমির মা কে জানাতে পারেনি।তাও একদিন দুইদিন নয়।সাত সাত টি দিন তাকে গ্রামে থাকতে হয়েছে।ওদিকে পকেটে টাকাও নেই।কোন মতে ধার দেনা করে আবিদ ঢাকায় ফিরেছে।
সারাদিন ভ্রমনের পথে আবিদ কিছুই খায় নি।সেই সকালে ভাত খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।বিকেলেই যে তাকে টিউশন ধরতে হবে।আবিদ ভাবে যে,কিছুদিন আগেই তাকে মাইনেটা চেয়ে নিতে হবে।
কাঠের চেয়ারে চুপচাপ আবিদ বসে আছে।রিশমিকে পদার্থবিজ্ঞানের গতি সংক্রান্ত কয়েকটি অংক কষতে দিয়ে নিরিবিলি ঝিমুচ্ছে।
সামনে এক কাপ চা আর কয়েকটি কাঠ সদৃশ শক্ত টোস্ট।সশব্দে একটি টোস্টে কামড় বসাল সারাদিন অভুক্ত আবিদ।এতে কি খিদে মিটে?
আবিদ যতদিন রিশমিকে পড়ায়,সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই এই চা-টোস্ট দিয়ে শিক্ষক আপ্যায়ন চলে আসছে এ বাসায়।তাও প্রতিদিন নয়।মাঝে দু একদিন খালি মুখেই দেড় ঘন্টা বসে থাকতে হয়।তার পর দিন হয়তো এই চা-বিস্কুট সমাদর।
চা শেষ করে পিরিচে রাখতেই ও ঘর থেকে রিশমির মা এর আগমন।
-আবিদ,এতদিন আস নি যে?
-আন্টি,জরুরী কাজে গ্রামে গিয়েছিলাম।
-ও।শোন, রিশমিকে যে এখন ছুটি দিতে হবে।একটি বিয়ের দাওয়াত আছে।
-আচ্ছা।
-ওকে ছুটি দিয়ে একটু বোসো।কথা আছে।
হঠাৎ যেন দুর্বল হয়ে গেছে আবিদ।শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে তার।চারতলা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামবার সময় মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকায় রেলিং শক্ত করে ধরে সে।
চার হাজার টাকার এই টিউশনিতে আবিদের অনেক কষ্টে শিষ্টে চলে যাচ্ছিল।কিন্তু এই টিউশনিটাও এখন নিপাত গেলে বেশ ভালোই ভালোই বিপদে পড়তে হবে তাকে।সামনের মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাইনে নিয়ে যেতে বলেছেন রিশমির মা।আর পড়াতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি।সাতদিনের অঘোষিত ছুটিই যে আবিদের রুজি খোয়ানোর কারণ, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আবিদ।উলটো দিকে দোকানে সদ্য ভাজা গরম সিঙাড়া কড়াই থেকে তোলা হচ্ছে।প্যান্টের শূণ্য পকেট একবার হাতড়িয়ে নেয় সে।আশ্বস্ত হওয়ার মত কিছু পেলো না।হঠাৎ করে তার পেটে মোচড় দিল।কে যেন পাকস্থলিটা মুঠোয় চেপে নিংড়ে দিতে চাইছে।আবিদের যে বড্ড খিদে।
সমস্তদিন অভুক্ত আবিদ শুকনো মুখে শুধু চেয়ে থাকে দোকানের "সদ্য ভাজা গরম সিঙাড়া"র পানে.....................
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরশ ২০/০৫/২০১৬দারুন
-
প্রবাল ১৯/০৫/২০১৬অনেক ভাল লাগল
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ০৯/০৫/২০১৬গল্পের থিমটা বেশ ভালো । কিন্তু গল্প-কথাকে সাজিয়ে পরিবেশন করাটা গল্পের সবচেয়ে দামি অলঙ্করণ । আপনার এই গল্পে সেটারই অভাব অনুভূত হচ্ছে । ভালো ভালো বিখ্যাত কাহিনীকারের গল্প বেশী করে পড়ুন । গল্পের শেষ দিকে প্রাইভেট টিউটরের মানসিক অবস্থার থিম দারুণ জায়গায় নিয়ে গিয়েও সুন্দর ভাবে পরিবেশন করার অভাবে পাঠক পাঠিকারা গল্পের সারাংশ থেকে বঞ্চিত হল । চেষ্টা চালিয়ে যান । নিশ্চয়ই সফল হবেন ।
-
একরামুল হক ০৯/০৫/২০১৬অসাধারণ
-
দ্বীপ সরকার ০৮/০৫/২০১৬ভাল লাগলো।
-
মোঃনুরউদ্দীন রিয়াজ ০৩/০৫/২০১৬মূল্যবান উপদেশের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।ভালো লিখার জন্য আপনাদের সাহায্য কামনা করছি।
-
দেবব্রত সান্যাল ০২/০৫/২০১৬ভাই এভাবে গল্প হয়না। গল্পকে পরিবেশন করতে হয়। ঘটনা প্রবাহ কে বিশ্বাস যোগ্য করতে হয়। তাছাড়া সব চেয়ে বড় কথা পাঠক কে কি দিলেন ?