অতঃপর নাম বিভ্রাট
১৯৯৮ সালের ৭ই মার্চ.......
.
জন্মের আগে,
মায়ের শরীর রক্তশূণ্য..! মায়ের শরীরে চাহিদা অনুযায়ী রক্ত নেই। আমি তখন মায়ের গর্ভে। এর আগে দুটি মৃত সন্তান প্রসবের পর তৃতীয় বারের মতো যখন বাবা তার সন্তানের জন্যে আকুতি করছিলেন, ঠিক তখন এবারও সন্তান মরে যাওয়ার আশঙ্কা করছিল সবাই!
বাবা আমার থেমে নেই। পর পর দুটি সন্তান হারিয়েছেন! এবার আর হারাতে চান না।
কিন্তু ডাক্তার এবার শুধু সন্তান হারানোর নয়, মা কে হারানোরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
.
বাবা এমনেই একটু ভীতু প্রকৃতির মানুষ!
তার উপর এসব কথা শুনে বাবা হতাশায় ডুবছিলেন। উপরে আল্লাহ্, নিচে সব আত্নীয়-স্বজনরা বাবার পাশে, বাবাকে সাহস ভড়সা দিচ্ছিলেন। অনেক রক্তের প্রয়োজন। সঙ্গে অনেক টাকার। ঋণ করে টাকার যোগার হলো বটে! কিন্তু মায়ের শরীরের জন্যে O+ রক্তের প্রয়োজন। অনেক খোঁজাখুঁজি চলল........
.
অবশেষে খুঁজতে খুঁজতে O+ রক্তের এক রিক্সাওয়ালা কে পাওয়া গেল। এ যেন সোনার হরিণ পাওয়া..!
কিন্তু রিক্সাওয়ালা পাতলা পাপর! রক্ত দিতে তিনি রাজি নন।
অনেক অনুরোধ- বিনোরোধ করে, মাত্র ১ব্যাগ রক্ত মার শরীরে প্রদান করা হলো।
.
কিন্তু এখানেই শেষ নয়! মার শরীরে আরও এক ব্যাগ রক্তের জরুরী প্রয়োজন। ডাক্তার সবাইকে বললেন, সন্তান প্রসবের সময় হয়ে গেছে, এ অবস্থায় এক ব্যাগ রক্ত নাহলে মা, শিশু কাউকেই বাঁচানো ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব হবে না..!
.
খোঁজাখুঁজির অন্ত নেই!
সাল'টা তখন ১৯৯৮... তখন, এখনকার মতো জুরুরি রক্তের জন্যে কোন সোস্যাল প্রতিষ্ঠান ছিল না..!
রক্তের খোঁজ মিলল না...
ডাক্তার নাজমা বেগম -কে তা জানানো হলে, তিনি আত্মীয়-স্বজনদের রক্ত পরিক্ষা করার পরামর্শ দেন।
সবাই রাজি হলো, মা -শিশুকে বাঁচাতে!
এক -এ, এক-এ, সকলের রক্ত পরিক্ষা করা হলো..!
ডাক্তার একজনের শরীর থেকে O+ রক্তের সন্ধান পেলেন। তিনি রেখা বেগম.....রেখা বেগম কে বলে উচ্ছাসিত হয়ে ডাকলেন......
রেখা বেগম আমার ৩নম্বর খালা, মার বড় বোন।
খালা সাড়া দিলেন... রক্ত দিয়ে খালা মা ও আমাকে বাঁচালেন। আমি দুনিয়ার মুখ দেখলাম।
বাবা-মা তাঁদের প্রথম সন্তান পেলেন।
খোদার কাছে সবার শুকরিয়া পাঠ।
.
মার চিকিৎসা করতে করতে বাবার অনেক দেনা হয়ে গেছে..... বাবা তাঁর প্রথম সন্তান পেলেন,
তাই তিনি আকিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
অভাব অনটনের মাঝে আকিকা......??????
অসম্ভব প্রায়.....!
তখন আকিকা করা শুধু ধনী পরিবারেই দেখা যেত।
বাবার অপার ভালবাসায় , খোদার রহমতে,
বাবা একটি গরু, দুটি ছাগল কুরবানি দিয়ে আমার আকিকা করলেন।
আমরা, হযরত পীর কীবলাহ্ (আঃ) -এর মুরিদ।
দাদু তাই আকিকায় হুজুরের কাছ থেকে আমার নাম সংগ্রহ করলেন।
হুজুর নাম রাখলেন, "রেজওয়ান উল হক রেজা"।
.
যদিও ডাক নাম হিসেবে "রেজা" ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু, অবুঝ প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন'রা "জীবন" নামে ডাকছিলেন!!!
আমি আমার বাবা-মার জীবন।
বাবা-মার অনেক সাধনার পর তাঁরা আমাকে পেয়েছেন। তাই সকলেই নাছড় বান্দা! আকিকায় "রেজওয়ান উল হক রেজা" নাম রাখা হলেও তারারা জীবন বলেই ডাকতো......
.
আমার ৬বছর বয়স হলে,
বাবা,মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন।
দাদু গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি করে দিলেন।
ভুলটা কার ছিল জানি না....!
স্কুলে আমার নাম দেওয়া হল, "মোঃ জীবন আলী"।
বাবার চোখে প্রাইমারী সার্টিফিকেটে তা ধরা পরলে, সংশোধনের আর কোন উপায় নেই বলেন সবাই।
আজ আমি, "রেজওয়ান উল হক রেজা" থেকে "মোঃ জীবন আলী" পরিচয়ে.....
তবুও আকিকা করা নামটি আমি আদৌ ভুলতে পারি নি....!
.
ফেসবুকে, "রেজওয়ান উল হক জীবন" পরিচয়ে সকলের কাছে মোটামুটি পরিচয় পেয়েছি।
কবিতা লিখাতে, পেপারে /ম্যাগাজিনে "রেজওয়ান উল হক জীবন" পরিচয়ে পরিচিত।
.
আমি আজও "রেজওয়ান" পরিচয়ে পরিচিতি হতে চাই।
তবে, "নামে নয়, গুণে পরিচয়" এই বিশ্বাসে।
.
জন্মের আগে,
মায়ের শরীর রক্তশূণ্য..! মায়ের শরীরে চাহিদা অনুযায়ী রক্ত নেই। আমি তখন মায়ের গর্ভে। এর আগে দুটি মৃত সন্তান প্রসবের পর তৃতীয় বারের মতো যখন বাবা তার সন্তানের জন্যে আকুতি করছিলেন, ঠিক তখন এবারও সন্তান মরে যাওয়ার আশঙ্কা করছিল সবাই!
বাবা আমার থেমে নেই। পর পর দুটি সন্তান হারিয়েছেন! এবার আর হারাতে চান না।
কিন্তু ডাক্তার এবার শুধু সন্তান হারানোর নয়, মা কে হারানোরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
.
বাবা এমনেই একটু ভীতু প্রকৃতির মানুষ!
তার উপর এসব কথা শুনে বাবা হতাশায় ডুবছিলেন। উপরে আল্লাহ্, নিচে সব আত্নীয়-স্বজনরা বাবার পাশে, বাবাকে সাহস ভড়সা দিচ্ছিলেন। অনেক রক্তের প্রয়োজন। সঙ্গে অনেক টাকার। ঋণ করে টাকার যোগার হলো বটে! কিন্তু মায়ের শরীরের জন্যে O+ রক্তের প্রয়োজন। অনেক খোঁজাখুঁজি চলল........
.
অবশেষে খুঁজতে খুঁজতে O+ রক্তের এক রিক্সাওয়ালা কে পাওয়া গেল। এ যেন সোনার হরিণ পাওয়া..!
কিন্তু রিক্সাওয়ালা পাতলা পাপর! রক্ত দিতে তিনি রাজি নন।
অনেক অনুরোধ- বিনোরোধ করে, মাত্র ১ব্যাগ রক্ত মার শরীরে প্রদান করা হলো।
.
কিন্তু এখানেই শেষ নয়! মার শরীরে আরও এক ব্যাগ রক্তের জরুরী প্রয়োজন। ডাক্তার সবাইকে বললেন, সন্তান প্রসবের সময় হয়ে গেছে, এ অবস্থায় এক ব্যাগ রক্ত নাহলে মা, শিশু কাউকেই বাঁচানো ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব হবে না..!
.
খোঁজাখুঁজির অন্ত নেই!
সাল'টা তখন ১৯৯৮... তখন, এখনকার মতো জুরুরি রক্তের জন্যে কোন সোস্যাল প্রতিষ্ঠান ছিল না..!
রক্তের খোঁজ মিলল না...
ডাক্তার নাজমা বেগম -কে তা জানানো হলে, তিনি আত্মীয়-স্বজনদের রক্ত পরিক্ষা করার পরামর্শ দেন।
সবাই রাজি হলো, মা -শিশুকে বাঁচাতে!
এক -এ, এক-এ, সকলের রক্ত পরিক্ষা করা হলো..!
ডাক্তার একজনের শরীর থেকে O+ রক্তের সন্ধান পেলেন। তিনি রেখা বেগম.....রেখা বেগম কে বলে উচ্ছাসিত হয়ে ডাকলেন......
রেখা বেগম আমার ৩নম্বর খালা, মার বড় বোন।
খালা সাড়া দিলেন... রক্ত দিয়ে খালা মা ও আমাকে বাঁচালেন। আমি দুনিয়ার মুখ দেখলাম।
বাবা-মা তাঁদের প্রথম সন্তান পেলেন।
খোদার কাছে সবার শুকরিয়া পাঠ।
.
মার চিকিৎসা করতে করতে বাবার অনেক দেনা হয়ে গেছে..... বাবা তাঁর প্রথম সন্তান পেলেন,
তাই তিনি আকিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
অভাব অনটনের মাঝে আকিকা......??????
অসম্ভব প্রায়.....!
তখন আকিকা করা শুধু ধনী পরিবারেই দেখা যেত।
বাবার অপার ভালবাসায় , খোদার রহমতে,
বাবা একটি গরু, দুটি ছাগল কুরবানি দিয়ে আমার আকিকা করলেন।
আমরা, হযরত পীর কীবলাহ্ (আঃ) -এর মুরিদ।
দাদু তাই আকিকায় হুজুরের কাছ থেকে আমার নাম সংগ্রহ করলেন।
হুজুর নাম রাখলেন, "রেজওয়ান উল হক রেজা"।
.
যদিও ডাক নাম হিসেবে "রেজা" ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু, অবুঝ প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন'রা "জীবন" নামে ডাকছিলেন!!!
আমি আমার বাবা-মার জীবন।
বাবা-মার অনেক সাধনার পর তাঁরা আমাকে পেয়েছেন। তাই সকলেই নাছড় বান্দা! আকিকায় "রেজওয়ান উল হক রেজা" নাম রাখা হলেও তারারা জীবন বলেই ডাকতো......
.
আমার ৬বছর বয়স হলে,
বাবা,মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন।
দাদু গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি করে দিলেন।
ভুলটা কার ছিল জানি না....!
স্কুলে আমার নাম দেওয়া হল, "মোঃ জীবন আলী"।
বাবার চোখে প্রাইমারী সার্টিফিকেটে তা ধরা পরলে, সংশোধনের আর কোন উপায় নেই বলেন সবাই।
আজ আমি, "রেজওয়ান উল হক রেজা" থেকে "মোঃ জীবন আলী" পরিচয়ে.....
তবুও আকিকা করা নামটি আমি আদৌ ভুলতে পারি নি....!
.
ফেসবুকে, "রেজওয়ান উল হক জীবন" পরিচয়ে সকলের কাছে মোটামুটি পরিচয় পেয়েছি।
কবিতা লিখাতে, পেপারে /ম্যাগাজিনে "রেজওয়ান উল হক জীবন" পরিচয়ে পরিচিত।
.
আমি আজও "রেজওয়ান" পরিচয়ে পরিচিতি হতে চাই।
তবে, "নামে নয়, গুণে পরিচয়" এই বিশ্বাসে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দ্বীপদেশ ১০/০১/২০১৭হুম
-
পরশ ২৯/১২/২০১৬যাচ্ছে তাই কবে মনে হলো
-
আশরাফুল ইসলাম শিমুল ২৮/১২/২০১৬হচ্ছে হবে
-
সোলাইমান ২৫/১২/২০১৬প্রতিদিন কোথায় না কোথাও হচ্ছে।
-
আব্দুল হক ২৪/১২/২০১৬এসব প্রায়ই হয়।