www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সহানুভূতি

পারার একজন দাদু....
অনেক বৃদ্ধ। তিনি অকারনেই প্রায়ই আমার উপর ক্ষ্যাপা...!
উনি কানে ঠিকমত শুনতে পাই না...!
৭০+ বয়স হলে যা হয় আর কি, এক্ষেত্রে তারও ঠিক সেটিই ঘটেছে...।
আমি রাস্তায় সাইকেল নিয়ে বের হলে, যদি তিনিও সেই রাস্তা দিয়ে চলেন তবে দূর থেকে বেল দেওয়া শুরু করলেও ঠিক কাছে গিয়ে তিনি ঘুড়ে তাকান..!
আর আমিও চমকে নরবর হয়ে যায়...!
বৃদ্ধের বয়স হলেও, রাগের জোর আছে...।
.
চেচিয়ে বলে,
এই অমুকের ছাওয়ালডা এক্কেরে বজ্জাত! বেল/টেল কিছু দেই না, ওমনি বেয়াক্কেলের মতো সাইকেল চালাই...!!!
বাপ মা মানুষ করতে পারে নি..!
আমি তখন তার বয়সের কথা ভেবে, একগাদা গালি খেয়েও হাসি মুখে তাকে হাত তুলে সালাম দিয়ে চলে যাই...
.

একদিন সকাল বেলা, ৯টা কি সাড়ে ৯টা বাজে।
বাবার আদেশে আমি তেমন ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাখি নি।
তবে বাসা থেকে একটু দূরে সাজু নামের একজন বন্ধু আছে, সে আমার একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
সাজুদের বাসা আমাদের গ্রামের সুক নদীর ধারে পাকা রাস্তা সংলগ্নে..।
.
সেখানে একটি বাগানও রয়েছে, বাগানে মহসিন দাদুর ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় চা এবং ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর।
আমি সাজুকে ফোন দিলে, সাজু দোকানে আসে। আমরা দুজনে চায়ের আড্ডা দেই, গল্প গুজব করি....।
তো সেদিন আমি দোকানে হাজির হলেও সাজু একটু দেড়িতেই আসে।
তখন সেই বৃদ্ধ দাদুটি আমাকে দেখেছিল এবং তিনি তার কাজে কোথাও যাচ্ছিলেন।
সাজু আসলে সেদিন অনেক্ষণ আড্ডা দেই...!
প্রথমে আমি চা'য়ের বাজেট দেই, গল্প করি।
পরে সাজু দেই... সেদিন একটু অবসর ছিল..।
তাই দুজনে অনেক্ষণ আড্ডা দেই...।
.
ঠিক তখন, বৃদ্ধ দাদু কাজ শেষে ফিরে আসছিলেন..।
আর আমাকে তখন সেখানে দেখে বলেন, "কি রে? এতো বন্ধুর নেশা? বন্ধু তো তোকে বাঁশ দিয়ে, নেশা ছুটায় দিবে, মরবি! "
সাজু ভাল ছেলে...! আমি খারাপ ছেলেদের সাথে মিশি না...।
কিন্তু সাজুর সামনে এভাবে আমাকে বলাতে, আমার খারাপ লাগে..।
আমি পাশেই তার নাতিকে বেশ কয়েকজন বখাটের সাথে আড্ডা দিতে দেখি এবং তাকে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দেই...!
বৃদ্ধ তা বুঝতে পেরে, আমার উপর আরো চরাও হলেন! বললেন, নিজের গুলো দেখতে পাস না, খালি মানুষের ভুল দেখিস শয়তান!
আমি তখন ভাবছিলাম, "বৃদ্ধ হলে কি সত্যিই মানুষ বাচ্চা-সূলভ আচরণ করে..?"
আমি তাকে তখনও কিছু বলি না কারন এই ভেবে যে, বুড়ো মানুষ..! যে কোন সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারেন। বরাবরের মত, তার গাল-মন্দের কোন জবাব দেই নি!
আমি বেচারি! নিরবে গাল গিলে, হজম করে ফেলি..!
.
তো এভাবেই চলতে থাকে.......
.
একদিন আমি সাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছি। তিনি আসলে রংপুরিয়া!
তো আমাকে দেখে, আমার কাছে এসে ক্লান্ত এবং আবেগ অনুভূতিতে বলেন,
"ওই, মোক তোর সাইকেলুত ওড (রোড) নিয়া যাবু...?"
আমি :- মাথা নারালাম...! হু।
বৃদ্ধ :- নিয়া যাবু...?
আমি :- চলেন।
বৃদ্ধ :- দ্বারা ব্যাগটা নিয়া আসু! আজ মুই খুব ক্লান্ত! মোক খুব খারাপ লাগিছে।
(সেদিন আমাকে কলেজ থেকে জাতীয় মুটের ফর্ম পূরণের জন্যে SRM তাড়াতাড়ি করে যেতে বলছিলেন, কিন্তু বৃদ্ধের দূঃবস্থা দেখে......)
.
আমি সাইকেল একটু জোরেই চালালেও, তার কথা ভেবে সেদিন আস্তে এবং আরামদায়ক ভাবে চালিয়েছিলাম।
.
রোডে এসে গেছি! ওনাকে নামিয়ে দিলাম। আমার ফোন আসছে, তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্যে..!
বৃদ্ধের মুখের দিকে তাকালাম। তিনি কাঁদো কাঁদো প্রায়।
তখন তিনি আমাকে বলেন,
মোর নিজের নাতিডা সাইখেল খান নিয়ানে ওডোত আসিল, মুই ওক বার বার মোক নে যাবা কহিনু... অথচ, সাইখেল খান, মুহে কিনে দিসু দিন মুজুরি করে, ৬হাজার টাকা জড়াহেনে।
বৃদ্ধ আমার প্রতি খু্ব খুশি...! তিনি বললেন, আল্লাহ তোর ভাল করুক।
.
তাকে বিদায় দিলাম। আমি কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
এই ভেবে খুশি হলাম যে, অবশেষে বৃদ্ধের আমার উপর রাগ চলে গেছে! তাকে তার শেষ জীবনে খুশি করতে পারলাম।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ২৬/১২/২০১৬
    দীপ্তিময় লিখনীতে দ্যুতি ছড়িয়ে পডুক
  • সোলাইমান ২৪/১২/২০১৬
    প্রাতাশার গল্প , সুন্দর আশাবাদী মুগ্ধ হলাম. অভিনন্দন কবি ।
  • বেশ ভাল লিখছেন। এই রকম শ্রদ্ধা বোধ থাকা উচিত।
  • Carry On. lekha ta onek valo lugse.
 
Quantcast