www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দানের প্রতিদান দান

দানের প্রতিদান দান। ইসলাম ধর্মে দান বা সদকার গুরুত্ব অপরিসীম। সৎ ও হালাল রুজি হতে দান প্রাচুর্য আনে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যে কোন মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোন শস্য বপন করে এবং তা হতে মানুষ, পশু-পাখি কোন না কোন ভাবে উপকৃত হবে এবং এই গাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে যত গাছ জন্মাবে যতদিন এই গাছের ধারাবাহিকতা থাকবে ততদিন এটা নিশ্চয় তার দান হিসেবে পরিগণিত হবে। (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। সেদিন আমি মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হচ্ছিলাম ঠিক সেই সময়ে একজন ভিক্ষুক যথারীতি নিয়মে আমার কাছে ভিক্ষা চাইল, আমি হ্যাঁ বা না কিছুই না বলে ঐ বয়স্ক ভিক্ষুক ব্যাক্তিটিকে অতিক্রম করলাম। সে বুঝতে পারেনি আমি তাকে ভিক্ষা দেব কি দেব না! আর ফিরে দেখলাম সেই ভিক্ষুক লোকটি নিজের হাত হতে দুই টাকার একটি নোট মসজিদের সামনে রাখা কাঁচের সেই দান বাক্সে (মসজিদ উন্নয়নের জন্যে দান করুন এমন লিখা) দান করলেন। আর আমি ইতোমধ্যে ঐ ভিক্ষুক কে তার দ্বিগুনের বেশী দান করলাম। তিনি ঐ টাকা হাতে নিলেন আর আমি দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করলাম। তবে ভিক্ষুক দের দান প্রবনতা নিজ চোখে দেখা আমার কাছে খুবই নতুন অভিজ্ঞতা। সবাই মানুষ আর ভিক্ষুকরা তো বটেই। মহান আল্লাহ্‌ পাকের কাছে ও সকল মানুষই মানুষ (আশরাফুল মাখলুকাত)। আল্লাহ্‌র কাছে নিজেদের আমল, আখলাক, চরিত্র অনুসারে তার বান্দাগন একেক রকম মর্যাদার অধিকারী। দুনিয়াতে যার আছে ভুরি ভুরি, অটেল পাহাড়ের মতো ধনরাশি, বালা খানা তারা যদি যাকাত, ফিতরা, দান না করে মুসলমান হয়ে তবে তার ঐ ধনভান্ডার পরকালে শাস্তির কারন হয় কিনা তা ভেবে দেখা উচিৎ। আর দানশীল ব্যক্তি এখানে ঘটনাক্রমে বলা ফকীর (ভিক্ষুক) হলে ও তিনি অধিক মর্যাদাবান তার চেয়ে যিনি অগাধ গচ্ছিত ধনভান্ডারের মালিক যিনি অসহায়, দুঃস্থ, এতিম/মিসকিণদের মাঝে যাকাত প্রদান করেন না। অনেকে দেখিয়ে দান করেন, পত্রিকায় নিউজ করার জন্যে দানশীল ব্যক্তি বলার জন্যে দান করেন, এমনটা করা আদৌ ঠিক নহে। দান এমন হতে হবে ডান হাতে দান করলে বাম হাত যেন না জানে এমন। কিছু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। দানের প্রতিদান মহান আল্লাহ্‌ নিজ হাতে প্রদান করেন ঐ দানকারী ব্যাক্তিকে এ ঘটনা থেকে আমাদের বুঝে নেয়া উচিৎ। অনেকে এমন ও ধারণা পোষণ করেন যে, আগে নিজে ধনী হয়ে নিও তারপরে দান করবো! এমন ধারণা পোষণ করা আসলেই ঠিক নয় বরং দান করুন নিজে সচ্ছল হবার জন্যে। দান করার জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই,নিজ মনের সদ ইচ্ছাই যথেষ্ট। দান শুধু অর্থ বা সম্পদ প্রদানে সীমাবদ্ধ নয়। কারো জন্যে শুভ কামনা, সুন্দর আচার ব্যবহার, সুপরামর্শ, পথ হারাকে পথ দেখানো, পথ থেকে অনিষ্টকারী বস্তু সরিয়ে ফেলা- এ জাতীয় সকল কৃতকর্মই দান হিসাবে গণ্য হবে। আমার ব্যক্তি জীবনে ছোট খাটো কয়েকটি দান করে মহান আল্লাহ্‌র দেয়া ঘোষণা ও হাদিসে দানের মর্যাদার সত্যতা পেয়েছি বলেই এই পোষ্টের মাধ্যমে জানা কথাটি শেয়ার করলাম।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা দান করে গোপন রাখে এবং গ্রহীতাকে খোটা ও কষ্ট না দেয় তারা পুরস্কৃত হবে, তাদের কোনো ভয় বা পেরেশানি থাকবে না।(সূরা বাকারা আয়াত-২৬৩)। মহান আল্লাহ বলেন, তুমি যা দান করবে আমি এর প্রতিদান অবশ্যই দেবো। প্রাচুর্যের পঞ্চসূত্রের একটি হল দান, বৈষয়িক ও আত্মিক প্রাচুর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দান পাঁচভাবে ভূমিকা রাখে।

১। দান উপার্জনকে শুদ্ধ করে ।
২। দান আয়-রুজি ও সম্পদে বরকত দেয়।
৩। বালা-মুসিবত দূর করে অকল্যাণের ৭০টি দরজা বন্ধ করে দেয়।
৪। দান দারিদ্র্য বিমোচন করে এবং দাতার অন্তরে তৃপ্তি দান করে।
৫। দান পাপ মোচন করে ।

তবে উল্লেখ্য যে, আল্লাহ প্রতিদানের আশা না করে দান করাকে খুব বেশি পছন্দ করে থাকেন। মহান রব প্রতিটি শর্তহীন দানের প্রতিদান হিসাবে দাতাকে কমপক্ষে ৭০০ গুণ, প্রয়োজনে আরও বেশি প্রদান করেন। দান অনেক উপায়ে মানুষকে নিরাপদে রাখে এবং মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি আনে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল :
## দান কিভাবে মানুষের জীবনে প্রাচুর্য ও বৈষয়িক সমৃদ্ধি আনে তার একটি ঘটনা মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এক ব্যক্তি মাঠে অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায় মেঘের মধ্যে একটি শব্দ শুনতে পেল, অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ কর, অতঃপর মেঘমালা ঐ বাগানের দিকে সরে গেল এবং ঐ বাগানে পানি বর্ষণ হল, ঐ ব্যক্তি বাগানের মালিককে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি এমন কি কাজ কর যার বদৌলতে মেঘমালাকে তোমার বাগানে পানি বর্ষণ করার জন্য নির্দেশ করা হল। বাগানের মালিক বললো আমি বাগানের ফসলকে তিনভাগে ভাগ করি, একভাগ দান করি, একভাগ আমার পরিবারের জন্য ব্যয় করি এবং একভাগ বাগানের খরচের কাজে ব্যবহার করি(সহীহ মুসলিম)।

## দান কিভাবে মানুষের জন্যে আত্মিক সমৃদ্ধি বয়ে আনে তার একটি সত্য ঘটনা আছে- কামেল বুজুর্গ হযরত জুন্নুন মিসরি হজ্ব পালনকালে আরাফাতের ময়দানে মোরাকাবায় বসে শুনলেন এ বছর সর্বপ্রথম হজ্ব কবুল হয়েছে আহমেদ আশফাক নামে দামেস্কের একজন মুচির, যিনি হজ্বে আসেননি। বুজুর্গ হযরত জুন্নুন মিসরি কৌতূহলী হলেন- রহস্যটা কি জানতে? তিনি দামেস্কে গিয়ে ঐ মুচিকে আবিষ্কার করে ঘটনা বললেন এবং জানতে চাইলেন হজ্ব নিয়ে মুচির অভিমত। মুচি বললেন, সে গত ৪০ বছর ধরে তার উপার্জন থেকে হজ্ব করার নিয়তে টাকা জমা করে এ বছরই হজ্বে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে একটি মজার ঘটনা ঘটলো। একদিন তার ছোট ছেলে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে কাঁদতে কাঁদতে এসে বলল, বাবা ওদের ঘরে মাংস রান্না করেছে, আমি একটু মাংস খেতে চেয়েছি, আমাকে মাংস দেয়নি বরং আমাকে চলে যেতে বলেছে। শুনে মুচি আহত হলেন এবং প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে জানতে চাইলেন কেন এমন নিষ্ঠুর আচরণ করা হল? প্রতিবেশী বলল, ভাই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দুদিন ধরে অনাহারে আছি, নিরুপায় হয়ে মাঠের একটি মরা ছাগল থেকে কিছু মাংস কেটে এনে রান্না করেছি, আমরা ক্ষুধার জ্বালায় মরা ছাগল খাবো, তা থেকে তোমার ছেলেকে কেন খাওয়াবো? জীবিত হলে অবশ্যই খাওয়াতাম। ঘটনা শুনে মুচি আহত হলেন! হজ্বের জন্য জমানো সমস্ত অর্থ তাদের দান করলেন, হজ্বে গেলেন না। সে বছর আল্লাহ সর্বপ্রথম তার হজ্ব কবুল করলেন যা কামেল বুজুর্গ হযরত জুন্নুন মিসরি আরাফাতের ময়দানে মোরাকাবায় বসে জানলেন- এ বছর সর্বপ্রথম হজ্ব কবুল হয়েছে আহমেদ আশফাক নামে দামেস্কের একজন মুচির, যিনি হজ্বে আসেন নি।
উপরোক্ত দুটি ঘটনা প্রমাণ করে বৈষয়িক ও আত্মিক উভয় ক্ষেত্র দানের মাধ্যমেই দান পাওয়া যায় ও ব্যাক্তি মর্যাদা সু-সমৃদ্ধ হয়।
দান সম্পর্কিত কয়েকটি সহীহ হাদিস নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, তবে আমি তখনই সন্তুষ্ট হব যখন তিন দিন শেষ হতে না হতেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়, তার সামান্য পরিমাণ ব্যতীত যা ঋণ পরিশোধের জন্য রাখি। (অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ঐ পরিমাণ রেখে বাকি অর্থ দান করে দেয়াই আমি পছন্দ করি। (সহীহ বুখারী)
২) হযরত আবু হুরাইরা(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, তুমি দান কর বিনিময়ে আমি তোমাকে দান করবো।(সহীহ বুখারী)
৩) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-যখন আল্লাহর বান্দাগণ ভোরে ঘুম থেকে উঠে তখন দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! তুমি দানকারীকে প্রতিদান দাও, আর একজন বলেন, হে আল্লাহ! তুমি কৃপণকে ধংস কর। (সহীহ বুখারী)
৪) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন-কারো আপন জীবনকালে এক দিরহাম দান মৃত্যু মুহূর্তে একশত দিরহাম অপেক্ষা অধিক।(আবু দাউদ, মিশকাত)
৫) হযরত আসমা (বিনতে আবী বাকর) (রাঃ) বলেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেন– তুমি দান করতে থাকবে তাতে হিসাব করবে না, যাতে আল্লাহ হিসাব করেন তোমাকে দান করতে। আর ধরে রেখো না, যাতে আল্লাহ তোমার ব্যাপারে ধরে রাখেন। তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী সামান্য হলেও দান করবে। (সহীহ বুখারী, মুসলিম)
৬) হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুবহানাল্লাহ বলা একটি দান, আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি দান, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা একটি দান এবং আল্লাহু আকবর বলা একটি দান। ভালো কাজের আদেশ একটি দান, মন্দ কাজের নিষেধ করাও একটি দান এবং স্ত্রী সংসর্গও একটি দান।(মুসলিম)
৭) হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুবহানাল্লাহ বলা একটি দান, আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি দান, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা একটি দান এবং আল্লাহু আকবর বলা একটি দান। ভালো কাজের আদেশ একটি দান, মন্দ কাজের নিষেধ করাও একটি দান এবং স্ত্রী সংসর্গও একটি দান।(মুসলিম)

৮) হযরত আবু হুরাইরা(রাঃ)বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)বলেছেন- মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে প্রতিদিনই যাতে সূর্য উদিত হয় একটি করে দান হওয়া উচিত। দু’ব্যক্তির মধ্যে ন্যায় বিচার করাও একটি দান, কোন মানুষকে কোন কাজে সহযোগিতা করাও একটি দান, কারো সাথে উত্তম কথা বলাও একটি দান, নামাজের প্রতিটি পদক্ষেপ একটি দান, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াও একটি দান। (মুত্তাফাকুন আলাইহ)

৯) একটি হাদিসে আছে- কোন গরিব অসহায়কে পোশাক দান করলে সে পোশাক ঐ গরিব অসহায় যতদিন এই পোশাক পরিধান করে তার ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করবেন ততদিন আল্লাহ দানকারীর ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করবেন ।

১০) হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যে কোন মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোন শস্য বপন করে এবং তা হতে মানুষ, পশু-পাখি কোন না কোন ভাবে উপকৃত হবে এবং এই গাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে যত গাছ জন্মাবে যতদিন এই গাছের ধারাবাহিকতা থাকবে ততদিন এটা নিশ্চয় তার দান হিসেবে পরিগণিত হবে। (সহীহ বুখারী, মুসলিম)

দান সর্বোত্তম মানবীয় গুন। আপনি নিজে দানশীল হন, অপরকে ও দান, অনুদান প্রদানের মর্যাদা বুঝিয়ে দানশীলতার মতো মহৎ কর্মে শরীক হোন। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে দানের মর্ম বুঝার তাওফিক দিন ও বেশী বেশী দান ও অনুদান দেয়ার সৌভাগ্য নসীব করুন। আমিন।

 রেজাউল আবেদীন। সহকারী পরিচালক (অর্থ), নর্থ ইষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, সিলেট। সিইও, থট ওয়ার্স কন্সাল্টিং এন্ড এম এস আই, সিলেট। ২৭.১১.২০১৭ইং রোজ সোমবার।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১০৯১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সাঁঝের তারা ৩০/১১/২০১৭
    সুন্দর লেখা। দুঃখের বিষয় সমাজে কেউ এসব মেনে চলছে না - সবাই ব্যস্ত নিজে সম্পদের পাহাড় গড়তে। ধন্যবাদ চমৎকার এই লেখাটির জন্য।
  • ইসলামী নৈতিকতার সুন্দর উপস্থাপন । দানের মর্যাদার উপর রাসূল সাল্লাঃ এর বাণী । ভাল লাগলো ।
    এভাবে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা অব্যাহত রাখুন । আল্লাহ আপনাকে উত্তম মর্যাদা দান করুন । আমীন ।
    • রেজাউল আবেদীন ০৮/১২/২০১৭
      মন্তব্য করে অনুপ্রাণিত করার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ্‌ আপনার মঙ্গল করুন। আমিন
 
Quantcast