www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

করোনার সেকেন্ড ভ্যারিয়েন্ট ইস্যু

আহা, কি শোচনীয় অবস্থা ভারতের। #IndiaNeedsOxygen হ্যাশট্যাগে করা পোস্ট গুলো আর দেখার মতো নেই। সন্ধ্যা থেকে হ্যাশট্যাগের পোস্ট গুলো যতই দেখছি ততই দুঃখবোধ আর মনের মধ্যে যে ভয় কাজ করা শুরু হয়েছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও করুণ দৃশ্য- প্রিয়জন হারানোর আর্তনাদ।

কিন্তু এখন আমি হ্যাশট্যাগের বাইরের কিছু কথা বলবো। গত এক সপ্তাহ জুড়ে এদেশের মানুষের একটা কমন ফেসবুক পোস্ট ছিলো- ‘সরকারের লকডাউন সফল হয়েছে’। এই পোস্ট কেন ছিলো সেটা আপনি যেমন জানেন তেমন আমিও জানি। এরপর দেখলাম দোকানী ও শপিংমল ব্যবসায়ীদের লকডাউন খুলে দেওয়ার আন্দোলন। আরো দেখলাম লকডাউনে বাইরে যাওয়া নিয়ে সোনার বাংলা সার্কাস।
গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের মোনাজাতে খতিব সাহেবকে বলতে শুনলাম- আল্লাহ তুমি জালিমের দেওয়া লকডাউন থেকে আমাদের মুক্ত করো!

লকডাউন কঠোর থেকে শিথিল করা হলো। শপিংমল খুলে দেওয়ার ঘোষণা এলো। এসব করা হয়েছে আমাদেরই কথায়। কারণ সরকার লকডাউনে সাধারণ মানুষের চাহিদার বিকল্প বের করতে পারেনি তাই আমরাই চেয়েছি বন্ধ হোক এই প্রহসনের লকডাউন। কিন্তু আজ যখন দিল্লীর অস্থায়ী শ্মশান গুলোর ভিডিও, মসজিদ-মন্দিরে করোনা বেড এর ছবি গুলো দেখতে পাচ্ছি এবং হাসপাতাল গুলোতে যখন রোগী জায়গা দিতে ভারত অক্ষম হয়ে পড়েছে তখন করোনার প্রতি আমাদের কিছুটা টনক নড়েছে। কিন্তু আমরা চোখ তুলেও এতদিন তাকাইনি আমাদের দেশে দৈনিক রেকর্ড ভেঙে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যার দিকে। ভাবিনি কেন দিয়েছিলো এই লকডাউন।

আমরা সব বিষয়ে অতিউৎসাহী, ভন্ড ও দুমুখো জাতি। এখন ভারতের অবস্থা দেখে নিজেদের মধ্যে লকডাউন, শপিংমল কেনো খুলে দিলো তা নিয়ে দোষারোপ করা শুরু করে দিয়েছি। একদিকে সরকার সমন্বয়হীনতায় ভুগছে অন্যদিকে আমরা হচ্ছি আউলা পাগলাটে জাতি। জনগণ সরকারকে দোষ দেয় ও সরকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণের বৃথা চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু ভাই এসব করে কোন লাভ নেই। প্রতিবেশী দেশের অবস্থা আমদের জন্য একটা সতর্ক বাণীর মতো। করোনা মোকাবেলায় একতা প্রয়োজন, কিন্তু সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব না। তাই ব্যক্তিগত ভাবে হলেও করোনাকে এবার একটু পাত্তা দেওয়া দরকার। কেননা আমাদের দেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমার পর থেকে আমরা করোনাকে একবারেই পাত্তা দিচ্ছি না। যতক্ষন পর্যন্ত সমস্যাটা একান্তই আমাদের নাকের উপর না আসে ততক্ষন পর্যন্ত আমরা সেটাকে বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাই।

সন্ধ্যা থেকে দিল্লীর ছবি ও ভিডিও গুলোর কিছু কিছু আম্মুকে দেখালাম। আম্মুও ভীত হয়ে বলছে- ‘নাকি কিয়ামত আইসা পড়লো? পুরা একটা বছর রোগটা ভালোই হইতাছে না’!
মূলকথা হচ্ছে, এই যে চারপাশে এতো আর্তনাদ দেখছেন-এবার অন্তত একটু সতর্ক হোন। নিজে ভালো থাকুন পরিবারকে ভালো রাখুন। একে একে আমরা সবাই ভালো থাকবো। আর একে অপরকে দোষ দেওয়া বন্ধ করা উচিত। বর্তমানে আমাদের পরিস্থিতি হয়েছে এমন- ‘বিচার মানি, কিন্তু তালগাছ আমার’। লকডাউন দিলে মানবো না, না দিলে কেন দিলো না সে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করব। যত দোষ নন্দ ঘোষ কে দিয়েই আমরা বেঁচে যেতে চাই। কিন্তু এভাবে বাঁচা যায় না। ভারতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা গিয়েছে। ভারতের সাথে আমাদের পারস্পারিক সম্পর্ক তো অজানা নয়। তাহলে এবার একটু ভয় করা উচিত আমাদের।

আজ প্রতিবেশী দেশের করুণ ভিডিও/ছবি গুলো দেখা উচিত আমাদের জন্য সতর্ক বার্তা হিসেবে। আজ প্রতিবেশি দেশের জন্য আপনার যেমন বুক ভরে দুঃখবোধ হচ্ছে ঠিক তেমনি দোয়া ও সতর্ক হওয়ার এখনি সময় যেনো এই মহামারী আমাদের না হয় যা দেখে অন্যদেশের মানুষদের অনুশোচনা করতে হয়।

২৫ এপ্রিল ২০২১
নারায়ণগঞ্জ
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৪৯৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০৪/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast