গেয়োভূতদের সারকথা
এই চলমান একবিংশ শতাব্দীতে এসে নিশ্চয় আমি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতো প্রবন্ধ লিখতে পারবো না।এবং এতে কোন সন্দেহও নেই।তবে একই ধারায় কিছু কথা তো বলাই যেতে পারে।
এখন বলতে গেলে আমার বিরুদ্ধে যে প্রশ্নটি প্রথম আসবে তা হলো,তুমি বলার কে? এবং এই প্রবন্ধে তুমিও বাংলার পাশাপাশি বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছ,কেন? এই প্রশ্নের দুটোর উত্তর দিয়ে লেখাটা শুরু করলে আমার ধারানা লেখাটা অনেকেরই হজম হবে,যদিও লেখা কোন খাবার সামগ্রী না।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে,"আমি বাঙালি"।তাই যখনি আমি নিষ্পেষিত হবো তখনি আমি আমার অধিকার আর ইনসাফের কথা বলবো।সুতরাং কারো আর বাকবিতণ্ডা থাকার কথা না।এবং দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর,আত্মহত্যা বললে আপনাদের গায়ে লাগে না কিন্তু সুইসাইড বললে গায়ে লাগে।তাই গায়ে লাগানোর জন্যই ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছি।প্রবন্ধটা ঝাঁঝাল করতে হবে না?
এবার কিছু টপিকস বা ইস্যু নিয়ে কথা বলি তাহলে "গেয়োভূতদের সারকথা"প্রবন্ধ নবীণ প্রবীণ সকল পাঠকদেরই বুঝতে সুবিধা হবে।বাঙালিদের স্থানীয় কিছু ইস্যু আছে।কোন একটা জায়গায় হট্টগোল লাগলো,মারামারি হলো।বাঙালি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো চলচিত্রটি দেখলেও এগিয়ে গিয়ে থামানোর কোন প্রক্রিয়ায় তারা যেতে অনিচ্ছুক।কেননা বাসায় ফিরেই বা পথে অন্য সহচর বা স্বজন যাকেই পাবে তাকে এই গল্পের সাথে ডালাপালা জুড়ে বিস্তর আলোচনা করতে হবে।এছাড়াও বহুকাল ধরে প্রচলিত ধ্যান ধারণার অংশ হিসেবে রয়েছে,গর্ভবতী নারী সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণের সময় কোনভাবেই বসতে পারবে না।তাকে হাটতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।তা না হলে তার নবাগত সন্তান অটিজম বা হাত,পা,কান,চোখ ইত্যাদি ইফেক্টেট হবে।চোখে অঞ্জলি হলে ছোট বাচ্চা ছেলের যৌনাঙ্গ চোখে ঘষে দিলে ভালো হয়ে যাবে।ভুলবশত মাথায় মাথায় একবার ঠোকা খেলে দ্বিতীয় বার ইচ্ছাকৃত ঠোকা খেতে হবে তা না হলে মাথায় শিং উঠবে।মুসলিম সন্তানের খতনার পর যৌনাঙ্গের কর্তন করা অংশ কাউকে না দেখিয়ে কলাপাতায় মুড়ে মাটিতে পুতে দিতে হবে।অন্যকেউ দেখলে টুনটুনি শুকাবে না।এগুলো হলো অগাধ বিশ্বাস।অনেক তো হলো প্রথার ধারাবাহিকতা এবার আসা যাক সমকালীন ইস্যু নিয়ে।
বর্তমানের করালগ্রাসী ভাইরাস হলো কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। চীনের উহান থেকে সৃষ্টি এই ভাইরাসের শুরুর দিকে বাঙালির জল্পনা কল্পনার গল্প শোনা যাক।
ফেব্রুয়ারি মাসের দিকেও বাংলাদেশে করোনা প্রবেশ করেনি।সারাবিশ্ব যখন এর ভ্যাকসিন বানাতে হিমশিম খাচ্ছে,তখন বাংলাদেশের মানুষের মাছে ছড়িয়ে গেছে "থানকুনি পাতা/টাকা পাতা" খেলে করোনা ভালো হয়ে যাবে।গোটা দিন দুয়েক বাঙালিরা এই পাতার ব্যাবসা করলো।সভ্যতার করাল গ্রাসের মতো হাসতে হাসতেই বিদায় নিলো এই ঔষুধি।
তারপর দেশে করোনা সংক্রমিত হতে থাকলে বিভিন্ন এলাকা লক ডাউন করা হলো।যেহেতু এটা আফগানিস্তান,ইরান,তুর্কি বা উজবেকিস্তান না তাই বাঙালিরা এই লকডাউন সম্পর্কে অবগত নয়।তাই তারা হরহামেশা ঘুরতে ফিরতে থাকলো।দেশ কঠোর হলো।তারা মাছের ড্রামে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল শুরু করলো।তাদের মাস্ক ব্যবহার করতে বললো,তারা একটা মাস্ক তিন চারজনে ব্যবহার শুরু করলো।দশ টাকার মাস্ক একশ টাকা ছুঁয়ে গেল।হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেড়ে গেল।কোন একটা বাড়ি করোনা রোগীর জন্য লকডাউন করা হলো তো এলাকার আবাল,বৃদ্ধ সকলে গিয়ে রোগীর বাড়ির আশে পাশে ভিড় করলো।আবার যদি এলাকার কোন ভিআইপি করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় নেওয়া হবে জানলে উক্ত মাঠে মানুষের এতোটা ভির জমে যে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার জায়গা থাকে না।
তো এই হলো গেয়ো বাঙালির পরিচয়।এবার আসা যাক মূল বিষয়ে।আজকের এই বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশেই যে বাঙালিদের বাস তা নয়।দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ আমাদের থেকে আলাদা হয়েছে।আলাদা দেশ।তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বাংলা ভাষাভাষীর লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে।তাদের কথা আমি বলবো না।কারন তাদের সম্পর্কে আমার বিস্তর জানারও কথা না।আমি যাদের কথা বলবো সেসব বাঙালি থাকে ঢাকায়,থাকে দেশের চৌষট্টি জেলার সিটি কর্পোরেশনের আবাসিক এলাকায়,এবং নানাবিধ সোশ্যাল মিডিয়ায়।
একবিংশ শতাব্দীর সোশ্যাল মিডিয়া গুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য ব্যবহার যোগ্য ব্যবস্থা হচ্ছে "ফেসবুক"।বর্তমান কালের অবহেলিত বস্তি থেকে শুরু করে শেরাটনের মতো ফাইভ স্টার হোটেল/আবাসিক এলাকায় বসবাসরত ডিল্যাক্স সোসাইটির মানুষজন এটি ব্যবহার করে।সুতরাং ঘরে বসে বাঙালির একাংশ চিনতে হলে আপনাকে ফেসবুক ব্যবহার করতেই হবে।এটা অনিবার্য বিষয়।তো এই ডিল্যাক্স সোসাইটির মানুষজন ছাড়াও অকালে পেকে যাওয়া কাঁঠালের মতো সদ্য জাগ্রত নিম্নদেশের চুল নিয়ে সুবোধ বালকের যে নাড়াচাড়া তার মতো কিছু ভার্চুয়াল ভাষায় সেলিব্রেটিদের বাঙালিদের প্রতি বড়ই আক্ষেপ।
তারা ছলেকলে কৌশলে পাশ্চাত্য নিজেদের মধ্যে ধারন করে স্মার্ট হওয়ার নামে নিত্যই "বাঙালি" শব্দটাকে ইতিমধ্যে গালিতে রূপান্তর করেছে।তো সেসব সেলিব্রেটিদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করার আমি কেউ না।তবুও গালিটি যখন "বাঙালি"তে তখন আমার কিছু বলতেই হয়।কারন নিম্নদেশের চুল যতই সদ্য জাগ্রত হোক না কেন তার বিনাশ ওই সুবোধ বালকের আনাড়ি হাতেই।তাহলে বলাই যায় এখানে আমি বালক চরিত্রে অভিনয় করবো।এবং সেসব আগাছা দূর করার চেষ্টা করবো যাদের ক্ষেত্রে বাঙালিদের একটা প্রবাদ খাটে,"দুই দিনের বৈরাগী,ভাতেরে কয় প্রসসাদ"।
হ্যাঁ অবশ্যই আপনি স্মার্ট হবেন।পাশ্চাত্য ধারন করবেন।যথার্থ। কারন এটা শুধু মাত্র আপনার উপর নির্ভর করবে।বাকস্বাধীনতার মতো চিন্তার স্বাধীনতাও আপনাকে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু আপনি যতই বড় হোন না কেন আপনাকে নিজের বাবাকে গালি দেওয়ার অধিকার কেউ এখনো দেয় নি।বাঙালি হলো আপনার বাবা।যদি না আপনি বিলেতি বংশোদ্ভূত না হন।
আপনি মিডিয়া,টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালিদের হাস্যকর কর্মকান্ড গুলো দেখছেন।আর মিডিয়ায় আপনার ব্যক্তিগত একাউন্ট গুলোতে বাঙালিদের হেনস্তা করে মজাদার পোস্ট করবেন।হ্যাঁ আপনার পেজ বা প্রোফাইলের সিংহভাগ এদেশীয়। কিন্তু একেবারেও যে বহিরাগত নেই তা কিন্তু নয়।মিডিয়া কতৃক প্রাপ্ত ব্লু ভেজের জন্য হোক বা আপনার কন্টেন্টের জন্য হোক অনেকেই আপনাকে অনুসরণ করে।এখন আপনি এভাবে বাঙালিকে গালি দিয়ে নিজে স্মার্ট সেজে গেলেন।কিন্তু এতে যে বহির্বিশ্বে বাঙালি কে কিভাবে রিপ্রেজেন্ট করছেন তা এখন আপনার উপর নির্ভর করবে!
এই যে আপনি বাংলায় লিখে বাঙালিদের গালি দিচ্ছেন,তাহলে আপনি কি বাঙালি ছিলেন না?বাঙালির যেসকল কাজ আজ আপনি এড়িয়ে গিয়ে স্মার্ট সেজে বাঙালিদের নেড়ো মাইন্ডের গেয়োভূত বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়,আপনার ছোট বেলাটা ইমাজিন করুন।হ্যাঁ আপনিও মাথায় ঠোকা খাওয়ার পর ২য় ঠোকার জন্য কত পীড়াপীড়ি করেছেন।এখন আপনি বলতে পারেন আমি সেসময় ভুল করে করেছি অথবা আমার বিশদ জানা ছিলো না।
আমিও সেটাই বলছি আজ আপনি যাদের বলছেন তারাও বিশদ জানে না।কেননা বাঙালি মানেই ঢাকার আবাসিক এলাকায় বাস করা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ না।এদের ছাড়াও বাঙালি আছে নদীবিধৌত এলাকায়,প্রতি বছরে নিয়ম করে বন্যা কবলিত এলাকায়,যাত্রাপালা করে জীবন যৌবন কাটিয়ে দেওয়া অবহেলিত শিল্পী হিসেবে,সারাজীবন দাঁড় টেনে নৌকা বেয়ে এখন ইঞ্জিন চালিত বোটের দিকে চেয়ে থাকা মাঝি সমাজে, বছরের বিশাল একটা সময় লবণাক্ততার জন্য চাষাবাদ করতে না পারা জনগোষ্ঠী হিসেবে এবং সুন্দরবনের অন্তরালে মৌচাক খুঁজে বেড়ানো মৌয়ালও একজন বাঙালি।
সুতরাং এরা সময় পায়নি নিজেদের ভুল শুদ্ধি করার।তাই বলে তো আর "বাঙালি" নামটাকেই গালিতে রূপান্তর করা যায় না।এখন আপনাকে জানতে হবে কোন প্রকার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার না করেই বটতলার পালা গানের মঞ্চেই গান গেয়ে আব্দুল করিমের মতো শিল্পীরা ছুঁয়ে গেছে এই বাঙাল মুলুকের মানুষের হৃদয়।এখন এটাও বলতে পারেন গেয়োরা গেয়োভূতের গান শুনবে বা শুনেছে এটা স্বাভাবিক।
না এটা স্বাভাবিক না।যেই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুবাধে আজ আপনি সেলিব্রেটি নামক ভয়ংকর সাপ সেই অক্সফোর্ড এ শাহ আব্দুল করিমের উপর হাজার মানুষ Ph.D ডিগ্রি অর্জন করছে।হ্যাঁ এই শাহ আব্দুল করিমও ছিলেন একজন বাঙালি।তাই আপনি যখনি এই বাঙালির উপর গালি দিবেন,"বাঙালি এমনি,তেমনি,ওমনি" তখন গালিটা এদের উপরেও পড়ে।এটা অবশ্যই মানতে হবে দু একজন মানুষ সমগ্র বাঙালিকে ধারণ করে না।
মূসা ইব্রাহিমের মতো সাহসী যুবক যেমন একজন বাঙালি তেমনি বাংলা ভাইয়ের মতো দুর্দর্শ সন্ত্রাসীও একজন বাঙালি।বঙ্গবন্ধুর মতো একজন সাহসী নেতা যেমন এক বাঙালি তেমনি খন্দকার মোশতাকের মতো কাপুরুষও একজন বাঙালি।বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি যেমন একজন বাঙালি তেমনি রাজাকার কাদের মোল্লাও একজন বাঙালি। গভর্নর আতাউর রহমান খান যেমন একজন বাঙালি তেমনি গভর্নর মোনায়েম খান একজন বাঙালি।
সুতরাং আপনি কাকে গালি দিবেন?কথাটা সোজা বললে হয়,"জায়গা মতো"।কিন্তু যদি বলেন "বাঙালি" এমনি হয়।তাহলে আপনি নিজে ভুল হয়ে যাবেন।কারণ গোটা বাঙালি জাতিসত্তা কোটি মানুষ বহন করছে।যাদের সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনাই নেই।
সুতরাং কোনভাবেই বাঙালি বলে গালি দিতে পারবেন না।গালি দিবেন জায়গা মতো।আর আপনিও যে ভুলের উর্ধে না।যেকোন সময় আপনার কাজেই আপনি গালির জলে ভেসে যেতে পারেন।কেননা ওই যে বললাম অকালে পেকে যাওয়া কাঁঠাল। তাই যেকোন সময় পঁচে যেতে পারেন।
তাই যেসকল বাঙালি জন্ম থেকে প্রথাগত জীবন ধারায় বড় হয়েছে তাদের নিয়ে গালি দিয়ে স্মার্ট সাজতে যাবেন না।এরা হয়তো নিজেদের বদলাতে পারেনি।কিন্তু ধীরে ধীরে এদের সন্তানেরা ঠিক বদলে যাবে।কিন্তু সেটা একদিন নয়,এক মাসেও নয় এমনকি বছরেও নয়।সময় দিতে হবে।যুগ পেরিয়ে গেলেও সমস্যা নেই।কেননা হাজার বছরের বিবর্তন আপনার মতো পাতি সেলিব্রেটি শুদ্রাতে পারবে না।
০৮ জুলাই ২০২০
নারায়নগঞ্জ
এখন বলতে গেলে আমার বিরুদ্ধে যে প্রশ্নটি প্রথম আসবে তা হলো,তুমি বলার কে? এবং এই প্রবন্ধে তুমিও বাংলার পাশাপাশি বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছ,কেন? এই প্রশ্নের দুটোর উত্তর দিয়ে লেখাটা শুরু করলে আমার ধারানা লেখাটা অনেকেরই হজম হবে,যদিও লেখা কোন খাবার সামগ্রী না।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে,"আমি বাঙালি"।তাই যখনি আমি নিষ্পেষিত হবো তখনি আমি আমার অধিকার আর ইনসাফের কথা বলবো।সুতরাং কারো আর বাকবিতণ্ডা থাকার কথা না।এবং দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর,আত্মহত্যা বললে আপনাদের গায়ে লাগে না কিন্তু সুইসাইড বললে গায়ে লাগে।তাই গায়ে লাগানোর জন্যই ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছি।প্রবন্ধটা ঝাঁঝাল করতে হবে না?
এবার কিছু টপিকস বা ইস্যু নিয়ে কথা বলি তাহলে "গেয়োভূতদের সারকথা"প্রবন্ধ নবীণ প্রবীণ সকল পাঠকদেরই বুঝতে সুবিধা হবে।বাঙালিদের স্থানীয় কিছু ইস্যু আছে।কোন একটা জায়গায় হট্টগোল লাগলো,মারামারি হলো।বাঙালি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো চলচিত্রটি দেখলেও এগিয়ে গিয়ে থামানোর কোন প্রক্রিয়ায় তারা যেতে অনিচ্ছুক।কেননা বাসায় ফিরেই বা পথে অন্য সহচর বা স্বজন যাকেই পাবে তাকে এই গল্পের সাথে ডালাপালা জুড়ে বিস্তর আলোচনা করতে হবে।এছাড়াও বহুকাল ধরে প্রচলিত ধ্যান ধারণার অংশ হিসেবে রয়েছে,গর্ভবতী নারী সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণের সময় কোনভাবেই বসতে পারবে না।তাকে হাটতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।তা না হলে তার নবাগত সন্তান অটিজম বা হাত,পা,কান,চোখ ইত্যাদি ইফেক্টেট হবে।চোখে অঞ্জলি হলে ছোট বাচ্চা ছেলের যৌনাঙ্গ চোখে ঘষে দিলে ভালো হয়ে যাবে।ভুলবশত মাথায় মাথায় একবার ঠোকা খেলে দ্বিতীয় বার ইচ্ছাকৃত ঠোকা খেতে হবে তা না হলে মাথায় শিং উঠবে।মুসলিম সন্তানের খতনার পর যৌনাঙ্গের কর্তন করা অংশ কাউকে না দেখিয়ে কলাপাতায় মুড়ে মাটিতে পুতে দিতে হবে।অন্যকেউ দেখলে টুনটুনি শুকাবে না।এগুলো হলো অগাধ বিশ্বাস।অনেক তো হলো প্রথার ধারাবাহিকতা এবার আসা যাক সমকালীন ইস্যু নিয়ে।
বর্তমানের করালগ্রাসী ভাইরাস হলো কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। চীনের উহান থেকে সৃষ্টি এই ভাইরাসের শুরুর দিকে বাঙালির জল্পনা কল্পনার গল্প শোনা যাক।
ফেব্রুয়ারি মাসের দিকেও বাংলাদেশে করোনা প্রবেশ করেনি।সারাবিশ্ব যখন এর ভ্যাকসিন বানাতে হিমশিম খাচ্ছে,তখন বাংলাদেশের মানুষের মাছে ছড়িয়ে গেছে "থানকুনি পাতা/টাকা পাতা" খেলে করোনা ভালো হয়ে যাবে।গোটা দিন দুয়েক বাঙালিরা এই পাতার ব্যাবসা করলো।সভ্যতার করাল গ্রাসের মতো হাসতে হাসতেই বিদায় নিলো এই ঔষুধি।
তারপর দেশে করোনা সংক্রমিত হতে থাকলে বিভিন্ন এলাকা লক ডাউন করা হলো।যেহেতু এটা আফগানিস্তান,ইরান,তুর্কি বা উজবেকিস্তান না তাই বাঙালিরা এই লকডাউন সম্পর্কে অবগত নয়।তাই তারা হরহামেশা ঘুরতে ফিরতে থাকলো।দেশ কঠোর হলো।তারা মাছের ড্রামে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল শুরু করলো।তাদের মাস্ক ব্যবহার করতে বললো,তারা একটা মাস্ক তিন চারজনে ব্যবহার শুরু করলো।দশ টাকার মাস্ক একশ টাকা ছুঁয়ে গেল।হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেড়ে গেল।কোন একটা বাড়ি করোনা রোগীর জন্য লকডাউন করা হলো তো এলাকার আবাল,বৃদ্ধ সকলে গিয়ে রোগীর বাড়ির আশে পাশে ভিড় করলো।আবার যদি এলাকার কোন ভিআইপি করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় নেওয়া হবে জানলে উক্ত মাঠে মানুষের এতোটা ভির জমে যে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার জায়গা থাকে না।
তো এই হলো গেয়ো বাঙালির পরিচয়।এবার আসা যাক মূল বিষয়ে।আজকের এই বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশেই যে বাঙালিদের বাস তা নয়।দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ আমাদের থেকে আলাদা হয়েছে।আলাদা দেশ।তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বাংলা ভাষাভাষীর লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে।তাদের কথা আমি বলবো না।কারন তাদের সম্পর্কে আমার বিস্তর জানারও কথা না।আমি যাদের কথা বলবো সেসব বাঙালি থাকে ঢাকায়,থাকে দেশের চৌষট্টি জেলার সিটি কর্পোরেশনের আবাসিক এলাকায়,এবং নানাবিধ সোশ্যাল মিডিয়ায়।
একবিংশ শতাব্দীর সোশ্যাল মিডিয়া গুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য ব্যবহার যোগ্য ব্যবস্থা হচ্ছে "ফেসবুক"।বর্তমান কালের অবহেলিত বস্তি থেকে শুরু করে শেরাটনের মতো ফাইভ স্টার হোটেল/আবাসিক এলাকায় বসবাসরত ডিল্যাক্স সোসাইটির মানুষজন এটি ব্যবহার করে।সুতরাং ঘরে বসে বাঙালির একাংশ চিনতে হলে আপনাকে ফেসবুক ব্যবহার করতেই হবে।এটা অনিবার্য বিষয়।তো এই ডিল্যাক্স সোসাইটির মানুষজন ছাড়াও অকালে পেকে যাওয়া কাঁঠালের মতো সদ্য জাগ্রত নিম্নদেশের চুল নিয়ে সুবোধ বালকের যে নাড়াচাড়া তার মতো কিছু ভার্চুয়াল ভাষায় সেলিব্রেটিদের বাঙালিদের প্রতি বড়ই আক্ষেপ।
তারা ছলেকলে কৌশলে পাশ্চাত্য নিজেদের মধ্যে ধারন করে স্মার্ট হওয়ার নামে নিত্যই "বাঙালি" শব্দটাকে ইতিমধ্যে গালিতে রূপান্তর করেছে।তো সেসব সেলিব্রেটিদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করার আমি কেউ না।তবুও গালিটি যখন "বাঙালি"তে তখন আমার কিছু বলতেই হয়।কারন নিম্নদেশের চুল যতই সদ্য জাগ্রত হোক না কেন তার বিনাশ ওই সুবোধ বালকের আনাড়ি হাতেই।তাহলে বলাই যায় এখানে আমি বালক চরিত্রে অভিনয় করবো।এবং সেসব আগাছা দূর করার চেষ্টা করবো যাদের ক্ষেত্রে বাঙালিদের একটা প্রবাদ খাটে,"দুই দিনের বৈরাগী,ভাতেরে কয় প্রসসাদ"।
হ্যাঁ অবশ্যই আপনি স্মার্ট হবেন।পাশ্চাত্য ধারন করবেন।যথার্থ। কারন এটা শুধু মাত্র আপনার উপর নির্ভর করবে।বাকস্বাধীনতার মতো চিন্তার স্বাধীনতাও আপনাকে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু আপনি যতই বড় হোন না কেন আপনাকে নিজের বাবাকে গালি দেওয়ার অধিকার কেউ এখনো দেয় নি।বাঙালি হলো আপনার বাবা।যদি না আপনি বিলেতি বংশোদ্ভূত না হন।
আপনি মিডিয়া,টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালিদের হাস্যকর কর্মকান্ড গুলো দেখছেন।আর মিডিয়ায় আপনার ব্যক্তিগত একাউন্ট গুলোতে বাঙালিদের হেনস্তা করে মজাদার পোস্ট করবেন।হ্যাঁ আপনার পেজ বা প্রোফাইলের সিংহভাগ এদেশীয়। কিন্তু একেবারেও যে বহিরাগত নেই তা কিন্তু নয়।মিডিয়া কতৃক প্রাপ্ত ব্লু ভেজের জন্য হোক বা আপনার কন্টেন্টের জন্য হোক অনেকেই আপনাকে অনুসরণ করে।এখন আপনি এভাবে বাঙালিকে গালি দিয়ে নিজে স্মার্ট সেজে গেলেন।কিন্তু এতে যে বহির্বিশ্বে বাঙালি কে কিভাবে রিপ্রেজেন্ট করছেন তা এখন আপনার উপর নির্ভর করবে!
এই যে আপনি বাংলায় লিখে বাঙালিদের গালি দিচ্ছেন,তাহলে আপনি কি বাঙালি ছিলেন না?বাঙালির যেসকল কাজ আজ আপনি এড়িয়ে গিয়ে স্মার্ট সেজে বাঙালিদের নেড়ো মাইন্ডের গেয়োভূত বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়,আপনার ছোট বেলাটা ইমাজিন করুন।হ্যাঁ আপনিও মাথায় ঠোকা খাওয়ার পর ২য় ঠোকার জন্য কত পীড়াপীড়ি করেছেন।এখন আপনি বলতে পারেন আমি সেসময় ভুল করে করেছি অথবা আমার বিশদ জানা ছিলো না।
আমিও সেটাই বলছি আজ আপনি যাদের বলছেন তারাও বিশদ জানে না।কেননা বাঙালি মানেই ঢাকার আবাসিক এলাকায় বাস করা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ না।এদের ছাড়াও বাঙালি আছে নদীবিধৌত এলাকায়,প্রতি বছরে নিয়ম করে বন্যা কবলিত এলাকায়,যাত্রাপালা করে জীবন যৌবন কাটিয়ে দেওয়া অবহেলিত শিল্পী হিসেবে,সারাজীবন দাঁড় টেনে নৌকা বেয়ে এখন ইঞ্জিন চালিত বোটের দিকে চেয়ে থাকা মাঝি সমাজে, বছরের বিশাল একটা সময় লবণাক্ততার জন্য চাষাবাদ করতে না পারা জনগোষ্ঠী হিসেবে এবং সুন্দরবনের অন্তরালে মৌচাক খুঁজে বেড়ানো মৌয়ালও একজন বাঙালি।
সুতরাং এরা সময় পায়নি নিজেদের ভুল শুদ্ধি করার।তাই বলে তো আর "বাঙালি" নামটাকেই গালিতে রূপান্তর করা যায় না।এখন আপনাকে জানতে হবে কোন প্রকার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার না করেই বটতলার পালা গানের মঞ্চেই গান গেয়ে আব্দুল করিমের মতো শিল্পীরা ছুঁয়ে গেছে এই বাঙাল মুলুকের মানুষের হৃদয়।এখন এটাও বলতে পারেন গেয়োরা গেয়োভূতের গান শুনবে বা শুনেছে এটা স্বাভাবিক।
না এটা স্বাভাবিক না।যেই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুবাধে আজ আপনি সেলিব্রেটি নামক ভয়ংকর সাপ সেই অক্সফোর্ড এ শাহ আব্দুল করিমের উপর হাজার মানুষ Ph.D ডিগ্রি অর্জন করছে।হ্যাঁ এই শাহ আব্দুল করিমও ছিলেন একজন বাঙালি।তাই আপনি যখনি এই বাঙালির উপর গালি দিবেন,"বাঙালি এমনি,তেমনি,ওমনি" তখন গালিটা এদের উপরেও পড়ে।এটা অবশ্যই মানতে হবে দু একজন মানুষ সমগ্র বাঙালিকে ধারণ করে না।
মূসা ইব্রাহিমের মতো সাহসী যুবক যেমন একজন বাঙালি তেমনি বাংলা ভাইয়ের মতো দুর্দর্শ সন্ত্রাসীও একজন বাঙালি।বঙ্গবন্ধুর মতো একজন সাহসী নেতা যেমন এক বাঙালি তেমনি খন্দকার মোশতাকের মতো কাপুরুষও একজন বাঙালি।বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি যেমন একজন বাঙালি তেমনি রাজাকার কাদের মোল্লাও একজন বাঙালি। গভর্নর আতাউর রহমান খান যেমন একজন বাঙালি তেমনি গভর্নর মোনায়েম খান একজন বাঙালি।
সুতরাং আপনি কাকে গালি দিবেন?কথাটা সোজা বললে হয়,"জায়গা মতো"।কিন্তু যদি বলেন "বাঙালি" এমনি হয়।তাহলে আপনি নিজে ভুল হয়ে যাবেন।কারণ গোটা বাঙালি জাতিসত্তা কোটি মানুষ বহন করছে।যাদের সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনাই নেই।
সুতরাং কোনভাবেই বাঙালি বলে গালি দিতে পারবেন না।গালি দিবেন জায়গা মতো।আর আপনিও যে ভুলের উর্ধে না।যেকোন সময় আপনার কাজেই আপনি গালির জলে ভেসে যেতে পারেন।কেননা ওই যে বললাম অকালে পেকে যাওয়া কাঁঠাল। তাই যেকোন সময় পঁচে যেতে পারেন।
তাই যেসকল বাঙালি জন্ম থেকে প্রথাগত জীবন ধারায় বড় হয়েছে তাদের নিয়ে গালি দিয়ে স্মার্ট সাজতে যাবেন না।এরা হয়তো নিজেদের বদলাতে পারেনি।কিন্তু ধীরে ধীরে এদের সন্তানেরা ঠিক বদলে যাবে।কিন্তু সেটা একদিন নয়,এক মাসেও নয় এমনকি বছরেও নয়।সময় দিতে হবে।যুগ পেরিয়ে গেলেও সমস্যা নেই।কেননা হাজার বছরের বিবর্তন আপনার মতো পাতি সেলিব্রেটি শুদ্রাতে পারবে না।
০৮ জুলাই ২০২০
নারায়নগঞ্জ
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৯/০৭/২০২০বেশ তো!
-
ফয়জুল মহী ০৯/০৭/২০২০মনোরম ও মহনীয় লেখা