সন্ধ্যাতারা
এক তলা একটি পৌঢ় বাড়িতে থাকেন মনসুর ও তার দাদী।পৌঢ় বাড়ি বলার কারণ মনসুরের দাদার পর কেউ আর এ বাড়ির বিন্দু মাত্র মেরামত কিংবা পরিবর্তন সাধন করে নি।তবে তারা কেউই আর বেঁচে নেই।বংশের প্রদ্বীপ হিসেবে আছে মনসুর এবং তার রক্ষক হিসেবে আছেন তার দাদী আম্বিয়া খাতুন।
বেলা বারোটা নাগাদ ঘুম ভাঙতেই মনসুর দেখে শরীরে কাঁথা নেই।অবাক হলো বটে।বেশ জোড়ে সে তার দাদীকে ডাকতে লাগলো।
বুড়ি কোথায় তুমি?
আমার কাঁথা নিয়েছে কে?
ছোট বেলা থেকে মা মরা ছেলে মনসুর দাদীকে বুড়ি বলে ডাকে।এই বুড়িই তাকে আগলে রেখে "মানুষ"করেছেন।মানুষ করেছেন বললে ভুল হবে,বলতে হবে সুশিক্ষিত করেছেন।কারণ জন্ম থেকেই মনসুর মানুষ।এভাবেই বলতে পছন্দ করেন গল্পের প্রধান চরিত্র।
মনসুর খুব তেঁদড় টাইপের ছেলে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ রসায়নে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।তবে তার সামনে ভুল বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যেন জার্মানি গিয়ে হিটলার মশাই কে শহীদ বলার সমতুল্য।
সিঁড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে ছাদ থেকে নামছে,মনসুরের দাদী আম্বিয়া খাতুন।বুড়ো হয়েছেন বটে তবে শরীরে চলার শক্তি এখনো নিঃশেষ হয়ে যায় নি।তিনিও একটু জোড় গলায় বললেন-
আইতাছি রে,বাইত একবারে হাক ডাক লাগাইয়া দিছে।
কি অইছে তোর?বোলাছ কে?
ডেকে ছিলাম ভিন্ন কাজে।তবে এই সকাল বেলা তোমার মুখে এক,দুই,তিন...হাতের আঙুলের কড় গুনতে শুরু করলো মনসুর।
হ্যাঁ তুমি মোট উচ্চারণ করেছো তের টি শব্দ।এর মধ্যে ভুল বলেছে ছয় টি।এই অর্ধেক সংখ্যক ভুল বাক্য গ্রহণ করছি না।সুতরাং তুমি এখন বিদায়।
আবার শুরু করছোস?
নিজের বিদ্যাসাগর ভাবস?
বিদায় যহন কবি তাইলে ডাকলি কে?
অতিমাত্রায় রাগের কারণে যেন বুড়ি একবারে কথাগুলো বলে দিলেন।
কয়েকমাস হল এই ভুল গণনা শুরু করেছে মনসুর।শুধু যে দাদির তা না,পাড়া মহল্লার বড় ছোট প্রত্যেকটা লোকের।ইদানীং কেউ কেউ তো মনসুর কে "কলিকালের বিদ্যাসাগর" উপাধি দিয়েছে।
আবার ভুল! থাক,তোমার আদরের নাতি হিসেবে ৪৭৮১ তম বারের মতো তোমাকে মাফ করলাম।
এখন বলো আমার কাঁথা কোথায়?
কাঁথা মাথা চিনি না।
তয় তোর গায় দেউওন্না খাতা আমি ছাদে রইদ দিয়া আইছি।হারাদিন তো, শুদ্ধ শুদ্ধ মারাছ।পাক-সাফ থাওনের তো নাম নাই।খাতার আঁইশটা গন্ধে আর টিকন যায় না।
আরে আমগো নবীজী কইছে,পাক-সাফ ঈমানে অঙ্গ।
এক,দুই,তিন...(মনসুর তার বুড়ির ভুল গুনুছে)
ওই দেক,আবার শুরু অইছে।এডি বাদ দিয়া হাত মুখ দুইয়া খাইতে আয়,বেলা কত অইছে খবর আছে?
আম্বিয়া খাতুন মনসুরের ঘর থেকে চলে এসেছেন।সকাল জন্য তিনি রেঁধেছেন ডাল আর চালে শুকনো খিচুড়ি যাকে আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন বউয়া ভাত সাথে খলিশা মাছের শুটকি।বউয়া ভাত মনসুরের অতি পছন্দের খাবার হলেও প্রতিদিন খেয়ে এবার অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে।
মনসুর,আয় খাইতে আয়।তোর মুখ ধোয়া অয় নাই?
পুরোনো কড়ই কাঠের টেবিলে খেতে বসেছে মনসুর।কয়েক জায়গায় ঘুনে খেয়ে ফেলেছে।তবও দিব্য গত আটাশ বছর যাবত চলছে এই টেবিলে বসে দিন রাত খাওয়া দাওয়া।
কিরে,মনসুর আইজ ভার্সিটি গেলি না কেন?বন্ধ নাহি?
ভুল শব্দ,৪৭৮২ তম বারের মতো মাফ!
না,বন্ধ না।তবে যাই নি।একটা ছোট কাজ আছে,দুঃখীত ভুল শব্দের জন্য।কাজ না,একজনের জন্য কিছু সময় অপচয় করবো তাই যাই নি।
তুই অহন কার লাইজ্ঞা বেইল বাজাবি?
আবার ভুল শব্দ।অহন,লাইজ্ঞা,বেইল বাজাবি আমি বুঝতে পারলেও এগুলো ভুল শব্দ।তোমাকে এর বিপরীতে বলতে হবে এখন,জন্য,সময় অপচয় করবি।
আর একটা কথা কইলে,এই হাতপাখা দিয়া বাইড়াইয়া তোর পিঠে দাগ বসাইয়া দিমু।
মনসুর আর কোন কথা না বলে নিরবে খাওয়া শুরু করেছে।আজ বেশ দেরি হয়ে গেছে।আজ মিলির কলেজে প্যারিক্টিক্যাল ক্লাস নেই।তাই আজ একটা নাগাদ কলেজ ছুটি হয়ে যাবে।তার জন্যই যাবে।
খাওয়া দাওয়া সেরে হালকা খয়েরী কালারের একটা শার্ট পড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।প্রথমে হেটে যাবে ভাবলেও দেরি হয়ে যাওয়া কারণে একটা রিকশায় উঠে বসলো মনসুর।
রিকশা খুব দ্রুত যে যাচ্ছে তেমনটি কিন্তু নয়,রিকশার সাধারাণ গতি থেকেও মন্থর। সেদিকে খেয়াল নেই তার,সে ভাবছে ভিন্ন কথা।মিলির সাথে দেখা করতে যাবে কারণ একটি নতুন কবিতা লিখেছে।এবং তার উৎসর্গ পত্রে মিলির নাম লিখেছে।কিন্তু আসলে কোন অধিকারে দিবে? মনসুর কে হয় তার?
কাকা,থামুন।
কেন;যাইবেন না?কলেজ তো আহে নাই।
কিসব ভুল শব্দ ব্যাবহার করো তোমরা?বলবা,যাবেন না?এখনো কলেজে পৌঁছায়নি।
কি যে কন ভাইসাব।এইডি হইলো বাপ-দাদার বুলি।বাপে যেমনে শিখায়া গেছে হেমনেই আমরা কমু।ভাষার জন্য সালাম,রফিক রক্ত দিছে না।
এই ভাষার জন্য নিশ্চয়ই দেয় নি।এখন কথা না বলে রিকশাটা সাইড করুন।
কত টাকা দিবো?
কলেজ তলাম গেলে পঁচিশ টেহা,তয় এনে নামছেন তাই পাঁচ টেহা কম দিয়েন।
মনসুর রীতিগত মতো রাগে ফুঁসছে,এই রাগ টাকার না ভাষার।
এই নেও টাকা।
যত দ্রুত এই আপদ বিদায় করা যায় ততই ভালো।এতো ভুল শব্দ নিয়ে বাঙালিরা বেঁচে আছে কি করে সেটা বুঝে আসে না মনসুরের।যদিও এতোদিন সে নিজেও ভুল বলতো তবে সে তো নিজেকে সংশোধন করে নিয়েছে।সংশোধনের পক্ষে মনসুর,তবে বারবার ভুলের পক্ষে না।
মিলির কলেজের সামনে যাবে না আজ।শত অভিযোগ অনুতাপ নিজের মনে রেখেই মনসুর হাটা শুরুর করলো,হানিফের দোকানের দিকে।
ফারুক অনেকক্ষন যাবত হানিফের দোকানে বসে আছে।ইতিমধ্যে দু-বার চা খাওয়া হয়ে গেছে।প্রতিদিনের অভ্যাস এখন যেন নেশায় পরিণত হয়েছে।ফারুক,মনসুর খুব ভালো বন্ধু আর তাদের বেশির ভাগ আড্ডা দেওয়ার সঙ্গী মোমেন ও তার মাঠের পাশের চায়ের দোকান।
হানিফ,আরেক কাপ চা দে।
এই মাত্র না খাইলি,আর কতো? শরীরটার দিকে একটু নজর দে,কষা হইয়া যাইবো তো।
দূর,এটাই তো প্রাণ।বিড়ি-সিগারেট তো আর খাইতে পারি না,চা'ই খাই।দে দে কথা কইস না।
ফারুক চা হাতে মাঠের দিকে তাকাতেই মাঠের বিপরীত পাশ থেকে রাস্তা ধরে মনসুর কে আসতে দেখে,হানিফের দিকে তাকিয়ে বললো আসছে,প্রেমিক পুরুষ।
মনসুর হানিফের চায়ের দোকানে ঢুকতেই হানিফ জোড়াল হাসি দিয়ে,আরে কবি সাহেব যে।তা নতুন কবিতা কি বাজারে আইছে কিছু?
মনসুর বিরক্তি নিয়ে বললো,একে তো ভুল শব্দ তাতে আবার ভুল বাক্য!
কবিতা কি মাছ,মাংস যে বাজারে আসবে।নাকি এটা তোর দোকানের মাখনতোলা রুটি?
ফারুক আর হানিফ দুজনেই হাসছে।
তা আজ কলেজের সামনে যাবি না?বলেই জিভে কামড় দিলো ফারুক।অতি আবগে অসচেতন হয়ে পড়েছিলো সে।মনসুর যে মিলিকে পছন্দ করে সেটা ফারুক আর আনিস ব্যাতিত অন্যকেউ জানে না।তাই মোমেনের সামনে কলেজের কথাটা বলে দ্বিধায় পড়ে গেলো।
না,যাব না আজ।
তা কবি সাহেব কলেজে কি কাম?রঙ ধরছে নাকি মনে?
তুই যে কি বলিস,কবি মনে রঙ লাগলে তা ফুটে তার কবিতায়।আমার কোন কবিতায় এখনো রঙ ফুটে নাই।
তা,নতুন কবিতা কি আইছে কিছু?
আগের কয়টা কবিতা পড়েছিস,বল!ভুল শব্দ নিয়ে কথা বলিস কিভাবে তোরা?যাই হোক আলাদা পাতির চা দে,দুধ আর চিনি বেশি দিয়ে।
এবার মনসুর ফারুকের দিকে তাকিয়ে বললো আনিস আসছিলো?
না,আসে নাই।তবে আজ নাকি ও রাহেলার সাথে কোথাও ঘুরতে যাবে।
ওহহ,আমাকে তো বলেছিলো।ভুলেই গিয়েছি।তো তোর খবর কী?
"কবি" চা! হানিফ চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলল।
মনসুর এবারও বিরক্তি নিয়ে বললো,ভাই তুই আর আমি সমবয়সী, আমাকে মনসুর ডাক,এইসব কবি টবি ডাকার কি দরকার?
আরে বুজলা না,এইটাই তো দিলের খোঁড়াগ। তোমারে কবি ডাকতেই আমার ভালো লাগে।
হানিফের কথায় পাত্তা না দিয়ে, মনসুর বললো,ফারুক পড়ে দেখ কবিতাটা।ওকে উৎসর্গ করবো ভেবেছি।পড়ে বল কেমন হয়েছে?
একটা সাদা মোড়ানো এ ফোর সাইজের পেপারে লেখা একটি কবিতা ফারুকের হাতে তুলে দিলো মনসুর।
ফারুক মোড়ানো কাগজটি খুলে সোজা করে পড়তে লাগলো,
বহুকাল ধরে;বাংলার পথে প্রান্তরে ঘুরে
ভালোবাসিয়াছি এক নারীকে,
ভালোবাসিয়াছি জীবন,
রক্তিম আভার গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যা তারার মতো-
মিটিমিটি আলোর ঝলকে আড়ালে আবডালে,
আগলে রেখেছি তাকে।
***
বাহ ভালোই তো।এখন কি ভাবলি এটা নিয়া?ওরে দিবি?
বুঝতে পারছি না!দ্বিধায় আছি।ও যদি বলে কেন দিলাম,আমি কে হই ওর?কোন অধিকার থেকে?
হুম,তাও ঠিক।দেখ কি করবি? As your khayesh.
আমি ভুল শব্দ পছন্দ করি না।জানা সত্যেও "khayesh" কী?wish বল।
তুই তো বাংলার ভুল ধরিস,ইংলিশের না।
তাই বলে ভুল তো আর মানা যায় না?
না মানতেই হবে।কারণ ভাষা হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশক।আমি যখন খায়েশ বলেছি তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ।তার মানে এটা সার্থক বাক্য।
মনসুর কিছু বলছে না।
বেলা বারোটা নাগাদ ঘুম ভাঙতেই মনসুর দেখে শরীরে কাঁথা নেই।অবাক হলো বটে।বেশ জোড়ে সে তার দাদীকে ডাকতে লাগলো।
বুড়ি কোথায় তুমি?
আমার কাঁথা নিয়েছে কে?
ছোট বেলা থেকে মা মরা ছেলে মনসুর দাদীকে বুড়ি বলে ডাকে।এই বুড়িই তাকে আগলে রেখে "মানুষ"করেছেন।মানুষ করেছেন বললে ভুল হবে,বলতে হবে সুশিক্ষিত করেছেন।কারণ জন্ম থেকেই মনসুর মানুষ।এভাবেই বলতে পছন্দ করেন গল্পের প্রধান চরিত্র।
মনসুর খুব তেঁদড় টাইপের ছেলে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ রসায়নে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।তবে তার সামনে ভুল বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যেন জার্মানি গিয়ে হিটলার মশাই কে শহীদ বলার সমতুল্য।
সিঁড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে ছাদ থেকে নামছে,মনসুরের দাদী আম্বিয়া খাতুন।বুড়ো হয়েছেন বটে তবে শরীরে চলার শক্তি এখনো নিঃশেষ হয়ে যায় নি।তিনিও একটু জোড় গলায় বললেন-
আইতাছি রে,বাইত একবারে হাক ডাক লাগাইয়া দিছে।
কি অইছে তোর?বোলাছ কে?
ডেকে ছিলাম ভিন্ন কাজে।তবে এই সকাল বেলা তোমার মুখে এক,দুই,তিন...হাতের আঙুলের কড় গুনতে শুরু করলো মনসুর।
হ্যাঁ তুমি মোট উচ্চারণ করেছো তের টি শব্দ।এর মধ্যে ভুল বলেছে ছয় টি।এই অর্ধেক সংখ্যক ভুল বাক্য গ্রহণ করছি না।সুতরাং তুমি এখন বিদায়।
আবার শুরু করছোস?
নিজের বিদ্যাসাগর ভাবস?
বিদায় যহন কবি তাইলে ডাকলি কে?
অতিমাত্রায় রাগের কারণে যেন বুড়ি একবারে কথাগুলো বলে দিলেন।
কয়েকমাস হল এই ভুল গণনা শুরু করেছে মনসুর।শুধু যে দাদির তা না,পাড়া মহল্লার বড় ছোট প্রত্যেকটা লোকের।ইদানীং কেউ কেউ তো মনসুর কে "কলিকালের বিদ্যাসাগর" উপাধি দিয়েছে।
আবার ভুল! থাক,তোমার আদরের নাতি হিসেবে ৪৭৮১ তম বারের মতো তোমাকে মাফ করলাম।
এখন বলো আমার কাঁথা কোথায়?
কাঁথা মাথা চিনি না।
তয় তোর গায় দেউওন্না খাতা আমি ছাদে রইদ দিয়া আইছি।হারাদিন তো, শুদ্ধ শুদ্ধ মারাছ।পাক-সাফ থাওনের তো নাম নাই।খাতার আঁইশটা গন্ধে আর টিকন যায় না।
আরে আমগো নবীজী কইছে,পাক-সাফ ঈমানে অঙ্গ।
এক,দুই,তিন...(মনসুর তার বুড়ির ভুল গুনুছে)
ওই দেক,আবার শুরু অইছে।এডি বাদ দিয়া হাত মুখ দুইয়া খাইতে আয়,বেলা কত অইছে খবর আছে?
আম্বিয়া খাতুন মনসুরের ঘর থেকে চলে এসেছেন।সকাল জন্য তিনি রেঁধেছেন ডাল আর চালে শুকনো খিচুড়ি যাকে আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন বউয়া ভাত সাথে খলিশা মাছের শুটকি।বউয়া ভাত মনসুরের অতি পছন্দের খাবার হলেও প্রতিদিন খেয়ে এবার অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে।
মনসুর,আয় খাইতে আয়।তোর মুখ ধোয়া অয় নাই?
পুরোনো কড়ই কাঠের টেবিলে খেতে বসেছে মনসুর।কয়েক জায়গায় ঘুনে খেয়ে ফেলেছে।তবও দিব্য গত আটাশ বছর যাবত চলছে এই টেবিলে বসে দিন রাত খাওয়া দাওয়া।
কিরে,মনসুর আইজ ভার্সিটি গেলি না কেন?বন্ধ নাহি?
ভুল শব্দ,৪৭৮২ তম বারের মতো মাফ!
না,বন্ধ না।তবে যাই নি।একটা ছোট কাজ আছে,দুঃখীত ভুল শব্দের জন্য।কাজ না,একজনের জন্য কিছু সময় অপচয় করবো তাই যাই নি।
তুই অহন কার লাইজ্ঞা বেইল বাজাবি?
আবার ভুল শব্দ।অহন,লাইজ্ঞা,বেইল বাজাবি আমি বুঝতে পারলেও এগুলো ভুল শব্দ।তোমাকে এর বিপরীতে বলতে হবে এখন,জন্য,সময় অপচয় করবি।
আর একটা কথা কইলে,এই হাতপাখা দিয়া বাইড়াইয়া তোর পিঠে দাগ বসাইয়া দিমু।
মনসুর আর কোন কথা না বলে নিরবে খাওয়া শুরু করেছে।আজ বেশ দেরি হয়ে গেছে।আজ মিলির কলেজে প্যারিক্টিক্যাল ক্লাস নেই।তাই আজ একটা নাগাদ কলেজ ছুটি হয়ে যাবে।তার জন্যই যাবে।
খাওয়া দাওয়া সেরে হালকা খয়েরী কালারের একটা শার্ট পড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।প্রথমে হেটে যাবে ভাবলেও দেরি হয়ে যাওয়া কারণে একটা রিকশায় উঠে বসলো মনসুর।
রিকশা খুব দ্রুত যে যাচ্ছে তেমনটি কিন্তু নয়,রিকশার সাধারাণ গতি থেকেও মন্থর। সেদিকে খেয়াল নেই তার,সে ভাবছে ভিন্ন কথা।মিলির সাথে দেখা করতে যাবে কারণ একটি নতুন কবিতা লিখেছে।এবং তার উৎসর্গ পত্রে মিলির নাম লিখেছে।কিন্তু আসলে কোন অধিকারে দিবে? মনসুর কে হয় তার?
কাকা,থামুন।
কেন;যাইবেন না?কলেজ তো আহে নাই।
কিসব ভুল শব্দ ব্যাবহার করো তোমরা?বলবা,যাবেন না?এখনো কলেজে পৌঁছায়নি।
কি যে কন ভাইসাব।এইডি হইলো বাপ-দাদার বুলি।বাপে যেমনে শিখায়া গেছে হেমনেই আমরা কমু।ভাষার জন্য সালাম,রফিক রক্ত দিছে না।
এই ভাষার জন্য নিশ্চয়ই দেয় নি।এখন কথা না বলে রিকশাটা সাইড করুন।
কত টাকা দিবো?
কলেজ তলাম গেলে পঁচিশ টেহা,তয় এনে নামছেন তাই পাঁচ টেহা কম দিয়েন।
মনসুর রীতিগত মতো রাগে ফুঁসছে,এই রাগ টাকার না ভাষার।
এই নেও টাকা।
যত দ্রুত এই আপদ বিদায় করা যায় ততই ভালো।এতো ভুল শব্দ নিয়ে বাঙালিরা বেঁচে আছে কি করে সেটা বুঝে আসে না মনসুরের।যদিও এতোদিন সে নিজেও ভুল বলতো তবে সে তো নিজেকে সংশোধন করে নিয়েছে।সংশোধনের পক্ষে মনসুর,তবে বারবার ভুলের পক্ষে না।
মিলির কলেজের সামনে যাবে না আজ।শত অভিযোগ অনুতাপ নিজের মনে রেখেই মনসুর হাটা শুরুর করলো,হানিফের দোকানের দিকে।
ফারুক অনেকক্ষন যাবত হানিফের দোকানে বসে আছে।ইতিমধ্যে দু-বার চা খাওয়া হয়ে গেছে।প্রতিদিনের অভ্যাস এখন যেন নেশায় পরিণত হয়েছে।ফারুক,মনসুর খুব ভালো বন্ধু আর তাদের বেশির ভাগ আড্ডা দেওয়ার সঙ্গী মোমেন ও তার মাঠের পাশের চায়ের দোকান।
হানিফ,আরেক কাপ চা দে।
এই মাত্র না খাইলি,আর কতো? শরীরটার দিকে একটু নজর দে,কষা হইয়া যাইবো তো।
দূর,এটাই তো প্রাণ।বিড়ি-সিগারেট তো আর খাইতে পারি না,চা'ই খাই।দে দে কথা কইস না।
ফারুক চা হাতে মাঠের দিকে তাকাতেই মাঠের বিপরীত পাশ থেকে রাস্তা ধরে মনসুর কে আসতে দেখে,হানিফের দিকে তাকিয়ে বললো আসছে,প্রেমিক পুরুষ।
মনসুর হানিফের চায়ের দোকানে ঢুকতেই হানিফ জোড়াল হাসি দিয়ে,আরে কবি সাহেব যে।তা নতুন কবিতা কি বাজারে আইছে কিছু?
মনসুর বিরক্তি নিয়ে বললো,একে তো ভুল শব্দ তাতে আবার ভুল বাক্য!
কবিতা কি মাছ,মাংস যে বাজারে আসবে।নাকি এটা তোর দোকানের মাখনতোলা রুটি?
ফারুক আর হানিফ দুজনেই হাসছে।
তা আজ কলেজের সামনে যাবি না?বলেই জিভে কামড় দিলো ফারুক।অতি আবগে অসচেতন হয়ে পড়েছিলো সে।মনসুর যে মিলিকে পছন্দ করে সেটা ফারুক আর আনিস ব্যাতিত অন্যকেউ জানে না।তাই মোমেনের সামনে কলেজের কথাটা বলে দ্বিধায় পড়ে গেলো।
না,যাব না আজ।
তা কবি সাহেব কলেজে কি কাম?রঙ ধরছে নাকি মনে?
তুই যে কি বলিস,কবি মনে রঙ লাগলে তা ফুটে তার কবিতায়।আমার কোন কবিতায় এখনো রঙ ফুটে নাই।
তা,নতুন কবিতা কি আইছে কিছু?
আগের কয়টা কবিতা পড়েছিস,বল!ভুল শব্দ নিয়ে কথা বলিস কিভাবে তোরা?যাই হোক আলাদা পাতির চা দে,দুধ আর চিনি বেশি দিয়ে।
এবার মনসুর ফারুকের দিকে তাকিয়ে বললো আনিস আসছিলো?
না,আসে নাই।তবে আজ নাকি ও রাহেলার সাথে কোথাও ঘুরতে যাবে।
ওহহ,আমাকে তো বলেছিলো।ভুলেই গিয়েছি।তো তোর খবর কী?
"কবি" চা! হানিফ চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলল।
মনসুর এবারও বিরক্তি নিয়ে বললো,ভাই তুই আর আমি সমবয়সী, আমাকে মনসুর ডাক,এইসব কবি টবি ডাকার কি দরকার?
আরে বুজলা না,এইটাই তো দিলের খোঁড়াগ। তোমারে কবি ডাকতেই আমার ভালো লাগে।
হানিফের কথায় পাত্তা না দিয়ে, মনসুর বললো,ফারুক পড়ে দেখ কবিতাটা।ওকে উৎসর্গ করবো ভেবেছি।পড়ে বল কেমন হয়েছে?
একটা সাদা মোড়ানো এ ফোর সাইজের পেপারে লেখা একটি কবিতা ফারুকের হাতে তুলে দিলো মনসুর।
ফারুক মোড়ানো কাগজটি খুলে সোজা করে পড়তে লাগলো,
বহুকাল ধরে;বাংলার পথে প্রান্তরে ঘুরে
ভালোবাসিয়াছি এক নারীকে,
ভালোবাসিয়াছি জীবন,
রক্তিম আভার গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যা তারার মতো-
মিটিমিটি আলোর ঝলকে আড়ালে আবডালে,
আগলে রেখেছি তাকে।
***
বাহ ভালোই তো।এখন কি ভাবলি এটা নিয়া?ওরে দিবি?
বুঝতে পারছি না!দ্বিধায় আছি।ও যদি বলে কেন দিলাম,আমি কে হই ওর?কোন অধিকার থেকে?
হুম,তাও ঠিক।দেখ কি করবি? As your khayesh.
আমি ভুল শব্দ পছন্দ করি না।জানা সত্যেও "khayesh" কী?wish বল।
তুই তো বাংলার ভুল ধরিস,ইংলিশের না।
তাই বলে ভুল তো আর মানা যায় না?
না মানতেই হবে।কারণ ভাষা হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশক।আমি যখন খায়েশ বলেছি তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ।তার মানে এটা সার্থক বাক্য।
মনসুর কিছু বলছে না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সঞ্জয় শর্মা ০২/০৬/২০২০As your khayesh...