www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্মৃতি কথা

একটা দুঃস্বপ্ন আমায় মাঝে মাঝে রাত্রির ঘুম হারাম করে। কখনো কখনো গভীর রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত , তার জন্য। তবে এটা কেন? এর কোন ব্যখ্যা নেই আমার কাছে। যখনি গভীর রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত, আমি ওঠে বসতাম। ঘুম দেবী আর উকি মারতো না আমার চোখে। সারা রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতাম। মনে হত সব দু:খ কষ্টের উত্তর নীল আকাশ জানে। যদিও আমি যখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম তখন আকাশ টা কালো ছিল। অনেক দিন আকাশের তারা গনার ব্যর্থ চেষ্টা ও করেছি। কখনো পঞ্চাশ কখনো একশ আবার কখনো দুইশ পর্যন্তও গুনেছি পরে নিজের বোকামির জন্য নিজে নিজেই হাসতাম। সেটা কেউ দেখতো না। কেউ জানত না আমি মাঝে মাঝেই রাত্রিতে ঘুমাই না। এটা আমার একান্ত্য নিজেস্ব ব্যপার। অনেকের মতে পৃথিবীতে ২ থেকে ৩ শতাংশ মানুষ আছে যাদের মধ্যে নাকি কোন ভাল মন্দ ফিলিংস নেই। তারা টাকার জন্য সব কিছু করতে পারে। এমন কি খুন অব্দী। আমার সবচেয়ে আনন্দের দিক হচ্ছে আমি সেই মানুষ গুলোর মধ্যে নেই। আমি আমার নিজেস্ব জগতের লোক। যেখানে সাবাই ন্যাচারাল। সবার মন খুবই সফ্ট।পিওর। প্রশ্ন হচ্ছে আমিও কি পিওর? আসলে তা কিন্তু নয়। আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে বলে নি যে, আমি পিওর একটা লোক। অনেকে ফাজিল বলেছে, পচা ছেলে ডেকেঁ ছে। এমনটি জান বলেও জেনেছে। কিন্তু পিওর ম্যান । নাহ! কখনোই আমাকে এই কথাটি বলে নি। হয়ত আমি পিওর নই বলে। অথবা জানিনা। আসলে আমি কাউকে বলিনি, কখনো বলিনি আজ বলছি। তবে ফিস ফিস করে। কাওকে বলা যাবে না কিন্তু। ঠিক তো। প্রমিস, প্রমিস, প্রমিস। আচ্ছা বলি ‘‘ আমি আসলে কিন্তু ভাল ছিলাম না। ইদানিং ভালো হচ্ছি। প্রচুর স্মোকিং করতাম। দেখো না আমর ঠোট গুলো কালো। যদিও এখন খাই না। যখন খেতাম তখন কিছু বাদ দেইনি, ব্ল্যক,অরিস, মোর, সবিই খেয়েছি। মানুষ কে ঠকিয়ে ছি। অন্যায় করেছি। তবে এখন আমি পুরো পুরি ভাল।’ আরো কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু সামনের থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে কথাটা আর বলা হল না আদির। আদির পুরো নাম হল আদিত্ত রায়। এলাকার সবাই ডাকে আদি বলে। এমন কি নিজের মা ও সেই নামটি ডাকতো। যদিও বন্যার সময় আদির মা মারা যায়। এখন আদি একা। বাবা ট া কোথায় ও সেটা জানে না। ভাবুক প্রকৃতির ছেলে আদি। লেখা পড়ার প্রতি বেশ আগ্রহ ওর। তাই তো বুদ্ধি মানদের মত লেখা পড়াটা বন্ধ করে নি। একাদশ শ্রেনীতে থাকা অবস্থায় একটা প্রেম ও করেছি। যদিও তা মাস খানেকও টিকে নি। একুশ অক্টবর থেকে সতেরো নভেম্বর। ঝুট করে সম্পর্ক টা হয়েছিল আবার ওভাবেই সম্পর্ক টা শেষ হয়ে যায়। এসব কিছুই ভুলে নি। তাই তো আজ ২০ বছর পরে সেই একাদশ শ্রেনীর এক জন প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে বক বক করেই যাচেছ। এর নাম হল পাপ্পি। আদি এবং পাপ্পি দু জনই ছিল তখন খুব ঘনিষ্ট। তারা একে ওপরের কাছে সব কিছু শেয়ার করত। কিন্তু এইচ. এস. সি পাশ করার পরে কারও সাথে তেমন একটা দেখা হত না। এমন কি ফোনে কথা ও হত না। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছিল। এক সময় যে তারা একে অপরের কত কাছের ছিল, আর এই কাছের মানুষ টির সাথে প্রায় বিশ বছর দেখা হয়নি ভাবতে দ্জুনই বেশ অবাক হল হয়তো দুজনের ই চোখের কোনা দিয় দু এক ফোট্াঁ পানি আসছিল সেটা কেউ কাউকে বুজতে দিল না। তার পর কত রকমের যে কথা। তা বলে দেখা শেষ করা যাবে না। আদি বলল , বাপ্পি তোর মনে আছে আমরা ব্রেক এর সময় কি মজা করতাম। ঐই যে তোর সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক ছিল। মাঝে মাঝে বাসা থেকে আমাদের জন্য খিচুরি রান্না করে আনতো। আমি ভাবি ভাবি বলে ডাকতাম। ভুলে গেলি নাকি?
না না ভুলি নি। তবে ,না মানে ভুলেই গিয়েছিলাম। ত্ইু মনে করালি বলে।
কি যেন নাম ছিল? বলল আদি।
মনে নেই রে। সহজ ভাবে উত্তর করল বাপ্পি।
হোয়াট ?
হুম।
অদ্ভুদ।
না না । অদ্ভুদ হতে যাবে কেন। এত পুরানো স্মৃতি কে কেউ মনে রাখে ? ও গুলো ভূলাই ভাল।
তা অবশ্য তুই মন্দ বলিস নি। চল চা খাই।
চা ? চল খাই।

তার পরে মাঝে মাঝে এই সবুজ ঘেরা প্রান্তরের মত মাঠ টিতে ওরা গল্প করত। অনেক দিন। এবার পাকা ভাবেই প্রতিঙ্গা করেছে যে আর তারা আলাদা হবে না। সব সময় যোগাযোগ রাখবে। আদি ওর জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে ছে। যুুদ্ধের সময় নিজের বোনটকে। সারাটা দিন যে ছেলেটার সাথে খেলতো সে ছেলেটাকে হারিয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিজের গ্রামের বাড়িটিও। নিজের লক্ষ্য ভুলে আদি সব সময় দিশে হারা ছিল। তাই ওকে ওর বন্ধুরা এবর্নমাল বলেও ডাকতো। আদি এমন এক জন মানুষ যে নিজেকে ভাল করে বুঝার আগেই জগৎটাকে বুঝতে হয়েছে। তাই আর তার জীবন থেকে বাপ্পি কে হারাতে চায় না। যদিও বাপ্পির সাথে ওর খুব বেশি একটা স্মৃতি নেই। আসলে মানুষের স্মৃতি গুলো নিজের সাথেই হয়ে থাকে। যখন থেকে নিজেকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করে দিয়েছে সেদিন থেকেই দেশটা নিয়ে ভাবা শুরু করে দিয়েছিল। তাতেও কাজ হয় নি। একহাত্তর এর সময় যুদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল, বয়স কম বলে কমান্ডার দলে নেয়নি। তবে রাইফেল স্পর্শ করার ইচ্ছাটা ঠিকই পুরন করেছিল। সেই কাহিনী টা না হয় নাই বলি।
হাঠাৎ করে রাত্রি সারে তিনটা বাজে আদির টেলিফোনটা বেঝে উঠলো। তারপরে আদির চোখ আবার ভিজে গেল। ঘরের মধ্যে আর কেই নেই বলে তার চোখের জলটা এবারও কেউ দেখলো না। পরদিন সকালে আদিকে দেখা গেল বাপ্পির বাড়িতে। নিঃ শ্চুপ আদি। মুখে কোন কথা নেই। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।


তার পর থেকে আদি আর বাপ্পিকে কোন দিন গল্প করতে দেখা যায় নি। রহিম চাচার দোকানে চা খেতেও দেখা যায় নি।




বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৬/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অরুদ্ধ সকাল ০৯/০৭/২০১৪
    পড়িলেম। ভালো ঠেকিল
  • মারুফা তামান্না ২৮/০৬/২০১৪
    বেশ ভাল
  • কবি মোঃ ইকবাল ২৮/০৬/২০১৪
    দারুন লেগেছে ভাই। শুভ কামনা রইলো।
    • রায়হান রহমান ২৮/০৬/২০১৪
      আপনাদের শুভ কামনা আছে বলেই তো এখনো লিখতে পারি। :D
  • বাহ সুন্দর তো। বেশ ভাল লেখনী।
 
Quantcast