www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ছেলেবেলা

তখন চতুর্থ ক্লাসে উঠেছি, রোজ স্কুলে যেতে হবে সেটা বাবার আদেশ ছিল, ফলে যাইহোক রোজ ঠিক সময় মতো স্কুলে পৌঁচে যেতাম, সুনীল দা ছিল ক্লাসের মনিটার , ৩ বছর ফেল করে এখনো চতুর্থ ক্লাসেই পড়ে আছে, বয়সে এবং চেহেরাতে দুটোতেই আমার থেকে শক্তিশালী ছিল ফলে যেটাই বলতো করতে হতো । একদিন সুনীল দা আমাকে ডেকে বল্য, এদিকে শোন বল্টু , আমি ভয়ে ভয়ে সামনে গিয়ে বললাম আমি বল্টু না আমার নাম শ্রী কানাই দাস , সুনীল দা হেসে বল্য, সে যাই হোক , শোন তোকে যেটা করতে হবে, কাল স্যার যে অঙ্ক গুলো করতে দিয়েছে সেগুলো করেছিস ? আমি এই কথা শুনে খুশী হলাম, কারন আমার সব অঙ্ক করা হয়ে গেছে। আমি বললাম হাঁ হাঁ সব করে নিয়ে এসেছি। এই শুনে সুনীল দা বলে দেখি খাতাটা, আমি খাতা বার করতেই সুনীল দা খাতা কেড়ে নিলো, আর বল্য , বুজলি কানাই কাল আমি অঙ্ক গুলো করতে পারিনি, আর আজ যদি স্যার কে বলি না করতে পারিনি তো স্যার খুব মারবে বুঝলি, তুই কি চাস যে আমি মার খায়? আমি বললাম তোমাকে দিয়ে দিলে তো আমি মার খাবো। সুনীল দা রেগে বল্য, স্যার যদি মারে তো খুব জোর ঘা কতক বেতের মার খাবি, আর যদি আমি মারি, তবে বুঝে নে, আমি ভয়ে আর বেশী কিছুই বললাম না , শুধু জিজ্ঞেস করলাম যে আমাকে অঙ্ক না করার কারন জিজ্ঞেস করলে আমি কি উত্তর দেবো ? কিছু না শুধু বলবি যে কাল রাতে দাদুর শরীর খারাপ ছিল তাই মা বল্য আজ আর আর পড়তে হবেনা ঘুমিয়ে পড় । সুনীল দার এই কথাটাই বলবো স্যার কে সেটাই ঠিক করলাম। কিন্তু বার বার ভাবতে লাগলাম যে মিথ্যে তো বলতে পারিনা যদি ধরা পড়ে যায়, এই ভাবতে ভাবতে স্যার এসেই পড়লেন, সবার খাতা দেখছে , প্রাই সবাই পড়া করে এসেছে, শুধু আমি ছাড়া কমল আর তপনের পড়া হয়নি, তপন আর কমলকে তো বাইরে নীলডাউন দিয়ে বসিয়ে দিলো, এবার আমার পালা, স্যার গম্ভীর ভাবে আমাকে না পড়ার কারন জিজ্ঞেস করলো, আমি তখন সুনীল দার শিখিয়ে দেওয়া কথা গুলিয়ে ফেলে বলে ফেলেছি কাল রাতে দাদু মারা গেছে তাই মা বল্য আজ আর পড়তে হবেনা। এটা বলার পড় আমি ভাবলাম যে কি ভুল করলাম। একি বলে ফেললাম, এবার কি হবে , স্যার কে বলতে যাবো যে স্যার এটা আমি ভুল বলেছি, টার আগেই স্যার আমাকে কোলে নিয়ে বললেন দাদু মারা গেছে, তাও তুমি স্কুলে এসেছ, আমি জানি তুমি পড়াশুনা করতে ভালোবাসো, কিন্তু এমন দিনে তোমার স্কুলে আসা ঠিক হয়নি, যাও তোমার ছুটি। আমি বরং সন্ধ্যে বেলা তোমার বাড়ি যাবো, তোমার দাদু খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমি স্যার কে আস্তে বারন করলাম নিন্তু স্যার নাছরবন্দা যে সে আসবেই, কি আর করা যায় , এই সুনীল দার কথা শুনে যে এতোবিপদে পড়বো ভাবতেই পারিনি । আর এসব ভেবেই বা কি হবে, এর থেকে বরং ভাবি এই অবেলাই বাড়ি গিয়ে কি বলবো, কেন এই সময় স্কুলের থেকে বাড়ি যাচ্ছি। যাই হোক ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। বাড়ির মধ্যে আস্তে করে ঢুঁকে দেখলাম যে বাবার জুতো নেই মানে বাবা এখনো বাইরেই আছে, যাক একটু হলেও এখনকার মতো বাঁচলাম, বাড়ি ঢুকেই দেখি মা একটা ঝাড়ু নিয়ে কাজ করছে, আমি ভেবে নিলাম যে আজ এই ঝাড়ু দিয়ে আমার পিঠ পরিস্কার হবে। মা আমাকে দেখে মারলো না বরং আদর করে বল্য, কি হয়েছে তোর শরীর খারাপ নাকি? তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে চলে এলি , জ্বর পেট বেথা কিছু করছে ? আমি একথা শুনে আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে বিছানাতে শুয়ে পড়লাম পেটে হাত দিয়ে , মা পাসে বলে নুনের জল দিয়ে বল্য এটা খা ঠিক হয়ে যাবে । আমি খেয়ে বললাম একটু ঠিক লাগছে মা, তবে আবার সন্ধ্যা বেলাতে বেথা বাড়তে পারে, মা আমার কথা বুঝতে না পেরে বল্য কেন, আমি কথা এড়িয়ে বললাম বাবা কই মা, কখন আসবে, মা বল্য কোনোদিন তো বাবার খবর নিস না, আজ হটাত কি ব্যাপার ? আমি বললাম সে কিছুনা মা এমনি জিজ্ঞেস করলাম , ছাড়ো বলতে হবেনা , মা আবার ঝাড়ু নিয়ে নিজের কাজে বেস্ত , তারপর বললেন তোর বাবার ফিরতে আজ রাত হবে বুঝলি, আর সন্ধ্যা বেলা আমি একটু বেরবো তোর কনক পিসির বাড়ি , আমি জেদ ধরলাম যে না আমিও যাবো তোমার সাথে, কিন্তু আমার তো পেটে বেথা তাই বেথা বাড়বে বলে মা বকা দিলো, আর বল্য যে তোর দাদু আর তুই গল্প করবি আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো , দাদু শূনেই এবার কেমন যেন সত্যি সত্যি বেথা বেথা করছে পেট টা । ঘড়ি যত ঘুরছে আমার মাথা ও তত ঘুরছে , বিকেল ৪ টে , মা বেরিয়ে গেলো আর বল্য চুপ করে শুয়ে থাক আমি তোর দাদু কে পাঠিয়ে দিচ্ছি । আমি মনে মনে ভাবছি আজ তো আমি শেষ, একটু ভুলের জন্য আমার যে কি হবে কি জানি, এখন তো স্কুল ও ছুটি হয়ে গেছে, স্যার ও এসে যাবে আমার বাড়ি , এরপর যদি দেখে আমার সামনেই আমার দাদু বসে তবে তো আমার মারা যাবার পালা । আবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৪.৩০ চোখ বন্ধ করে দিলাম। দাদুর দাদুভাই শব্দে চোখ খুললাম দেখি দাদু এসে হাজির । দাদুকে বললাম দাদু ঘুম পাচ্ছে, দাদু ও বলে তুই ঘুমো আমি পাসে আছি তোর। দাদুকে বোঝাবো কি করে , কিন্তু না বল্লেও না। শেষ মেশ বললাম দাদু একটা ঘটনা ঘটেছে, মিথ্যা কথা বলে আজ স্কুল থেকে আমি পালিয়ে এসেছি, এবার স্যার আমার বাড়ি আসবে এখন, আমি কি করবো বুঝতে পারছি না, দাদু এই কথা শুনে পুরো সিনেমার হিরো দের মতো বলে উঠলো , আমি তো আছি সব সামলে নেব, আমি থাকতে তোর কোন ভয় নেই, আমি বললাম তুমি আছো বলেই তো ভয় দাদু , দাদু ব্যাপার টা বুঝতে পারল না তাও বল্য তুই চিন্তা করিস না , আমি আছি সামলে নেব। আমি বললাম তুমি আছো বলেই তো যত ভয়, আসলে তুমি মারা গেছো এটা আমি স্যার কে বলে ফেলেছি তাই আমাকে ছুটি দিয়েছে । এই কথা শুনে দাদু চিন্তাই পড়ে গেলো , বল্য হতভাগা আর কিছু বলার জন্য পেলি না । এবার কি করবো ? আমি বললাম আমার জন্য মরার অভিনয় করো দাদু । দাদু অনেক ভেবে রাজি হল । তখনি দরজার ঠক ঠক শব্দ । স্যার এর গলার শব্দ , আমি শুনে পুরো শান্ত , মাথা কাজ করছেনা, দাদু একটা বুদ্ধি দিলো সেটা শুনে আমি দরজা খুললাম । স্যার ভেতরে এলেন এক ব্যাগ ফল মিষ্টি নিয়ে আর বললেন স্কুল ছুটির পর এই কিছু ফলাহার মিষ্টান্ন আনার জন্য দেরি হয়ে গেলো , তারপর দেখাজায় দাদু একটা সাদা চাদর ঢাকা নিয়ে খাটে শুয়ে আছে। স্যার দেখে প্রথমে ভয় পেলো আর বল্য একি , এখনো দেহ সৎকার হয়নি ? আমি কেঁদে বললাম স্যার দাদু মরে নি, ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল সবাই ভাবছিলাম মারা গেছে । পরে ডাক্তার এসে বললেন চোখে লেবুর রস দিলে নাকি ঘুম ভাঙ্গবে । স্যার তার ব্যাগ থেকে একটা লেবুর রস বারকরে চোখে দেওয়াতেই দাদু জেগে উঠলো । দাদু বল্য কাঁচা ঘুম কে ভাঙ্গালো ? এখন কেমন খিদে খিদে পাচ্ছে । স্যার ব্যাগ টা দিয়ে বললেন এই নিন, শুনে ভালো লাগলো সুস্থ আছেন । ভালো থাকবেন , আজ চলি কেমন , এই বলে চলে গেলেন স্যার আর আমাকে বললেন কাল সময়ে স্কুল চলে আসো । আমি খুশী হয়ে বললাম হাঁ স্যার ,সব পড়াও ঠিক করে নিয়ে যাবো । যাক এই যাত্রাতে বাঁচালাম ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২০২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর । খুব ভালো লাগলো । দু'একটা বানান সম্পাদনা করে নেবেন ।
  • স্মৃকিচারণ!!

    অপূর্ব
    • রাজা অধিকারী ০৪/০৫/২০১৭
      ধন্যবাদ
  • বেশ ভালো।
  • মধু মঙ্গল সিনহা ০২/০৫/২০১৭
    বেশ সুন্দর।
 
Quantcast