কোন এক বৃষ্টি রাতে
আকাশের এই ঘন কালো মেঘ ও বজ্রপাতের আলোর বিকিরণ যেন মাঝে মাঝে রাতের আকাশ দিন করে দিচ্ছে, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর অনবরত কিছু কলা বেঙ কর্কশ গলায় ঘেং ঘেং করেই চলেছে, এই বৃষ্টি নামলো বলে, এই যাহ্, বলতে বলতে শুরু হয়ে গেলো মুশল ধারা। আজকের এই মুহূর্ত দেখে একটা পুরনো দিনের কথা মণে পড়ে গেলো, তখন আমি থাকতাম মা বাবার সাথে গ্রামের বাড়ীতে, না ছিল পাকা দালান বাড়ী আর না ছিল বিদ্যুৎ, হ্যারিকেনের আলোতেই আলোকিত হতো আমাদের মাটির বাড়ী, আর বৃষ্টি হলেই মা আমাকে নিজের পাসে বসিয়ে একটা বড় ছাতা মেলে দিতো, মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনির বাড়ী, তাই বৃষ্টির জল খড়ের ছাউনি ভেদ করে বাড়ির মদ্ধ্যে পড়তো, বাইরে বৃষ্টি বন্ধ হলেও বাড়ির বৃষ্টি বন্ধ হতো না, যতক্ষণ অব্দি খড় না শুকিয়ে যায়। এক রাতে একটা অবিশ্বাস কর ভয়ানক ঘটনা ঘটলো, তখন প্রায় রাত দুটো, বাড়ীতে মা আর আমি ঘুমচ্ছি, বাবা বাড়ীতে ছিলনা, হটাত মুখে কে যেন জল ঢেলে দিলো, তৎক্ষণাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ভয় পেয়ে মা মা করে ডাকলাম, মা আমার পাসে এলো, মা পাসে এসে বসলো আমার, ছাতা ধরে, বল্য ভয় পাবার কিছু নেই গোপাল বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আমি তোর পাসে আছি তুই ঘুমো, মা আমাকে গোপাল বলে ডাকতো, কিন্তু এভাবে হটাত ঘুম ভেঙ্গে যাবার জন্য আর ঘুম পাইনা, শুধু এদিক ওদিক তাকাতে থাকি, একটা হ্যারিকেন জ্বলছে শুধু, বাইরে ঝড়ের শব্দ শোণা যাচ্ছে আর জানালা দিয়ে বিদ্যুতের আলোর চটা ঢুকছে মণে হচ্ছে কেও যেন জানালা দিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে দেখার চেষ্টা করছে যে আমারা বাড়ির ভেতর কি করছি, আমাকে ঘুমতে বলে এদিকে মা নিজে ঘুমিয়ে পড়েছে । আমার বার বার জানিনা কেন মণে হচ্ছে যে বাইরে বেরই, কিন্তু সে উপাই তো আর নেই, উঠলেই মা বকা দেবে, নাহ ঘুমিয়েই পড়ি, ঘুমতে যাবো ঠিক সেই সময় একটা জানালা দিকে তাকাতেই একটা ভয়ানক দৃশ্য দেখে আমি পুরো স্তব্দ হয়ে গেলাম, সেই কথা ভাবলেই কেমন গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে, আমি দেখলাম একটা কালো মূর্তি জানালা দিয়ে আমার দিয়ে তাকিয়ে আছে, বিদ্যুতের আলো যেহেতু পিছন থেকে আসছে তাই মুখটা পরিস্কার বোঝা গেলো না, আবার তৎক্ষণাৎ লুকিয়ে পড়লো, আমার ভয় তো ছিল আবার তার থেকেও বেশী উৎসাহ জাগল মণে, সাথে নানান প্রশ্ন, কে হতে পারে লোকটা, এই বৃষ্টির মদ্ধে এতো রাতে এখানেই বা কি করছে, চোর নইত? হইত আমাদের বাড়ীতে কিছু চুরি করতে এসেছে, আবার এটাও ভাবলাম চোর যদি হয় তো আমাদের বাড়ীতে আসবে কেন চুরি করতে, আমরা তো এমনিতেই গরীব, কি বা পাবে এখানে, তাহলে কে? যত ভাবছি ততো উথসাহ বাড়ছে ব্যাপার টার ওপর, শেষমেশ আর থাকতে না পেরে আস্তে করে মায়ের হাত আমার মাথা থেকে সরিয়ে আস্তে করে উঠে জানালার পাসে গেলাম, কিন্তু কিছু লাভ হল না, কারন জানালের বাইরে কেউ ছিলনা, একটু অপেক্ষা করলাম টাও কেউ নেই, তাহলে এটা আমার মনের ভুল এভেবে জানালা বন্ধ করতে যাবো ঠিক সেইসময় একটা মটা গলাতে কে যেন বাইরে থেকে বলে উঠলো “কে গোপাল নাকি” । এটা শোণা মাত্র আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো, আমার কণ্ঠ স্থির হয়ে উঠলো। আমি শুধু চুপ করে জানালার বাইরে নিরব দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকলাম, বাইরে তখন বেশ ভালো বৃষ্টি হচ্ছে, পুরো জল জমেছে রাস্তাই বিদ্যুতের আলোতে সব বোঝা যাচ্ছে, হটাত দেখি অন্ধকারে কিছু একটা উজ্জ্বল আলো দ্যাখা যাচ্ছে মণে হচ্ছে কোন কারো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর সেটাও উধাও হয়ে গেলো, এদিকে বৃষ্টি যেন প্রলয় রুপ ধারন করেছে। আবার একটা বিদ্যুতের আলোর ছটা এলো, এবং এবার যেটা দেখলাম আমার যত ভয় ছিল সব নিমেষের মধ্য উড়ে গেলো, দেখালাম একটা লোক লুঙ্গি আর সাদা গেঙ্গি পরে মাছ ধরছে, এবার বুঝলাম সামনে পুকুর আছে বৃষ্টির জলে পুকুর ভর্তি হয়ে গেছে তাই মাছ গুলো ওপরে উঠেছে, সেটা ধরার জন্য এই লোকটা এসেছে, এই গ্রামে অনেক এমন আছে যারা রাত দিন মানেনা, মাছের খবর পেলেই ধরতে চলে যাবে, আমি দেখার চেষ্টা করছি লোকটা কেমন করে মাছ ধরছে, কারন মাছ ধরা দ্যাখা আমার খুব ভালো লাগে, বাবার সাথে প্রায় পুকুরে যায় মাছ ধরতে, কিন্তু ভালো ভাবে দ্যাখা যাচ্ছে না, বিদ্যুতের আলোতে যতোটুকু দ্যাখা যায় দেখছি, কিন্তু এবার তো আবার বিদ্যুতের ছটাই লোকটাকে দ্যাখা গেলনা। কেন? তবেকি মাছ পেয়েগেছে অনেক বলে বাড়ী চলে গেলো? কি জানি হবে হইত, রাত অনেক এবার ঘুমনোটাই ভালো হবে, যেই জানালা বন্ধ করতে যাবো তখন আবার সেই মটা কর্কশ গলা শোণা গেলো ঠিক জানালার বাইরে “ কি গোপাল, মাছ ধরতে ইচ্ছা করছে নাকি? তবে দরজা খোলো বাইরে আসো”, আমি বল্লাম কে তুমি? সে উত্তর দিলো “ আমি আমি বংশী মাঝি, ওপাড়াই আমার বাড়ী, বাইরে আসো গোপাল, অনেক মাছ ধরেছি তুমিও কিছু
নাও, আর গরম খিচুড়ি আছে সাথে, খাব বাইরে আসো। খিচুড়ি আর মাছের কথা শুনে আর থাকতে পারলাম না, অবশেষে বাইরে যাবার জন্য দরজা খুললাম, দেখলাম সেই লুঙ্গি পরা ভদ্রলোক পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছি ভদ্রলোক ততো আগে চলে যাচ্ছে, আমি পুরো ভিজে গেছি বৃষ্টিতে। হটাত আমার পিঠে দু থাপ্পড় পড়লো আমি চমকে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি মা, আমাকে কানে ধরে বাড়ী নিয়ে গেলো, আমি কাঁদতে কাঁদতে বল্লাম “ আমি যেতে চাইনি মা ওয় বংশী মাঝি তো বল্য মাছ দেবে” । এই বংশী মাঝির নাম শুনে মায়ের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো, আমি বল্লাম কি হল মা? মা বলে ওয় মাঝি পাড়ায় বংশী মাঝির বাড়ী ছিল, আজ থেকে এক বছর আগে এই মাছ ধরতে গিয়ে রাতের বেলা পুকুরে ডুবে মারা যায় বংশী মাঝি। এর পর থেকে অনেকেই মাঝে মাঝে দেখতে পায় বংশীর আত্মা, এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর বলে হে ঠাকুর বাঁচাও, শেষ মেশ আমার গোপাল কেই? এভাবে কখন সকাল হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না, সকালেই মা আমাকে একটা পীর বাবার কাছে নিয়ে গেলো সেখানে একটা বড় হাড় ও ময়ুর পেখম মাথাই দিয়ে বল্য, “ যা নিয়ে যা আর কোন আত্মা তোর ছেলেকে কিছু করতে পারবে না। এটা শোনার পর মায়ের মণে একটু শান্তির আভাস দ্যাখা গেলো, বাড়ী ফিরলাম।
এর পর থেকে ওয় জানালা সন্ধের পর বন্ধ হয়ে যশোমাপ্টো।
........................................................সমাপ্ত................................................................................
নাও, আর গরম খিচুড়ি আছে সাথে, খাব বাইরে আসো। খিচুড়ি আর মাছের কথা শুনে আর থাকতে পারলাম না, অবশেষে বাইরে যাবার জন্য দরজা খুললাম, দেখলাম সেই লুঙ্গি পরা ভদ্রলোক পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছি ভদ্রলোক ততো আগে চলে যাচ্ছে, আমি পুরো ভিজে গেছি বৃষ্টিতে। হটাত আমার পিঠে দু থাপ্পড় পড়লো আমি চমকে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি মা, আমাকে কানে ধরে বাড়ী নিয়ে গেলো, আমি কাঁদতে কাঁদতে বল্লাম “ আমি যেতে চাইনি মা ওয় বংশী মাঝি তো বল্য মাছ দেবে” । এই বংশী মাঝির নাম শুনে মায়ের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো, আমি বল্লাম কি হল মা? মা বলে ওয় মাঝি পাড়ায় বংশী মাঝির বাড়ী ছিল, আজ থেকে এক বছর আগে এই মাছ ধরতে গিয়ে রাতের বেলা পুকুরে ডুবে মারা যায় বংশী মাঝি। এর পর থেকে অনেকেই মাঝে মাঝে দেখতে পায় বংশীর আত্মা, এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর বলে হে ঠাকুর বাঁচাও, শেষ মেশ আমার গোপাল কেই? এভাবে কখন সকাল হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না, সকালেই মা আমাকে একটা পীর বাবার কাছে নিয়ে গেলো সেখানে একটা বড় হাড় ও ময়ুর পেখম মাথাই দিয়ে বল্য, “ যা নিয়ে যা আর কোন আত্মা তোর ছেলেকে কিছু করতে পারবে না। এটা শোনার পর মায়ের মণে একটু শান্তির আভাস দ্যাখা গেলো, বাড়ী ফিরলাম।
এর পর থেকে ওয় জানালা সন্ধের পর বন্ধ হয়ে যশোমাপ্টো।
........................................................সমাপ্ত................................................................................
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোহেল রানা আশিক ২৫/০৪/২০১৭মনোমুগ্ধকর
-
মুহাম্মাদ রাসেল উদ্দীন ২৫/০৪/২০১৭সুন্দর