www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমার বঙ্গবন্ধু

আমি যতগুলো রাজনৈতিক বই পড়েছি তার মধ্যে সেরা টা হল অসমাপ্ত আত্মজীবনী - শেখ মুজিবুর রহমান বইটি।এটাকে ঠিক রাজনৈতিক বই বলা যায় কি?নাম থেকেই দেখা যাচ্ছে এটা একটা আত্মজীবনী।কিন্তু বইটা পড়লে বোঝা যাবে কেন আমি এটাকে রাজনৈতিক বই বলছি।একজন রাজনৈতিক এর জীবনের নানা উত্থান পতন,তার রাজনীতির পাঠ নেয়া এসব যখন জীবনের গল্প হয়ে যায় তখন সেই গল্প কে রাজনীতির শিক্ষামূলক পাঠ বলা যেতেই পারে।বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করতে চায় কিংবা রাজনীতির প্রতি যাদের আগ্রহ আছে তারা তো বটেই দেশের প্রতিটা মানুষের ই বইটা পড়া উচিৎ।

কাল ১৫ আগস্ট।একবার চিন্তা করে দেখি তো যদি ৭৫ এর ১৫ আগস্ট টা একটু অন্যরকম হত,তাহলে কি হত??

স্বাধীনতার পর দেশ ধ্বংস স্তূপ।রাস্তা ঘাট,ব্রিজ কিছুই নেই।কোষাগার শূন্য।স্বজন হারানো মানুষের আহাজারি,ঘর হারা মানুষের কান্নআ।পাকিস্তানে আটকে পড়া মানুষদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা-সব মিলিয়ে পুরো দেশে চরম বিশৃঙ্খলা।

সেই সাথে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র,সুবিধাবাদী চাটুকারের দল তো আছেই।এই পরিস্থিতি সামলানোর বিশাল দায়িত্ব শেখ মুজিবের কাঁধে।

আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী(আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী-গানের গীতিকার) বঙ্গবন্ধুর জীবনী লেখার কাজ করছিলেন।৭৫ এর ২৩ জুলাই তিনি লন্ডনে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেন।
'ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পচাত্তর'-নামক বইতে তিনি সেই কথোপকথন লিখেছেন।আমি সেখান থেকেই তুলে দিচ্ছি-

""শেষ সাক্ষাতের দিন অর্থাৎ ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রাখলেন।বললেনঃতুমি লন্ডনে ফিরে যাচ্ছ কবে?
বললামঃআগামিকাল দুপুরে প্লেন ধরছি।
বললেনঃকবে দেশে ফিরতে পারবে বলে আশা করছ?
বললামঃআমার স্ত্রীর চিকিৎসা শেষ হতে আরও কতদিন লাগবে জানি না।তবে মাস তিনেকের মধ্যে ফিরবো বলে আশা করছি।
তিনি বললেনঃআজ ২৩ জুলাই।২৩ আগস্টের মধ্যে তোমাকে ফিরতে হবে।যদি না ফিরে আসো-----
কথা অসমাপ্ত রেখে তিনি তাঁর প্রেস সেক্রেটারি কে বললেন গাফফার যদি ২৩ আগস্টের মধ্যে ফিরে না আসে তাহলে তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হবে।
বলেই আমার দিকে মুচকি হাসলেন।বললেনঃযদি তাড়াতাড়ি না আস তাহলে আত্মজীবনী লেখার কাজে আমাকে সাহায্য করতে পারবানা।বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য গত ২৫ বছর কী সংগ্রাম আমাদের করতে হয়েছে এবং এই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এখনো কত রকম চক্রান্তের মোকাবিলা করে চলেছি,তার একটা রেকর্ড আমি রেখে যেতে চাই।
বললামঃএত তাড়াহুড়োর কি আছে?
বললেনঃসময় পাবনা।তোমাকে বলছি,যে কোন মুহূর্তে আমাকে হত্যা করবে।দেশে একদিন তুমি ঠিক ই ফিরে আসবে কিন্তু ফেরার আগেই হয়তো শুনবে তোমার মুজিব ভাই আর নেই।একটা বুলেট আমাকে চেজ করে ফিরছে।কখন বুকে বিঁধবে আমি নিজেও জানিনা।""

অর্থাৎ মুজিব খুব ভাল করেই জানতেন তিনি যে কোন মুহূর্তে হত্যাকান্ডের শিকার হতে পারেন।(আগ্রহিরা বইটা পড়তে পারেন।মুজিব হত্যার পটভূমি সহ বিস্তারিত বইটিতে পাওয়া যাবে।বইটার কোন লিঙ্ক খুঁজে পেলাম না।বইটি প্রকাশ করেছে জ্যোৎস্না পাবলিশার্স)

অনেকের ধারণা বাকশাল প্রবর্তন করে তিনি গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরেছেন।যারা এমন ধারণা করেন তাদের বাকশাল সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।তারা এই কেখাটি পড়তে পারেন।
https://www.facebook.com/rafee.shams/posts/507698749300470

বাকশালের মাধ্যমেই ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশে উন্নতি হতে পারতো।কিন্তু সেটা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদি,সুবিধাবাদী ধনিক শ্রেণী মেনে নিতে পারেনি।সেই সাথে যোগ হয় ক্ষমতা লোভী কিছু মানুষ যারা জানতো বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাদের আশা কখনো পূর্ণ হবেনা।
তাদের ই চক্রান্তের ফসল ১৫ আগস্ট।

এত বিশ্লেষণ পড়েও একটা জিনিস কিছুতেই মাথায় আসেনা বঙ্গবন্ধু তাদের পথের বাঁধা হলেও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে ছোট্ট রাসেল কি অপরাধ করেছিল?ঘাতকের মনে কি একটুও মমতা জাগেনি রাসেলের মায়াময় মুখ টি দেখে?

বর্তমান বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান কেমন?তাকে হত্যার পর থেকে শুরু করে বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলার।কিন্তু নির্বোধ রা জানতো না যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তাকে ইতিহাস হারাতে দেয় না।আমরা দেখেছি স্বধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিএনপি কি নোংরা রাজনীতী করেছে।এত চেষ্টার পর ও তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।বঙ্গবন্ধু তাঁর অবস্থানেই রয়ে গেছেন।তবে তারা একটা বিভ্রান্ত প্রজন্ম সৃষ্টি করে যেতে পেরেছে যারা এসব মিথ্যাচার গুলো বিশ্বাস করে।এদের জন্য করুণা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

তবে বাঙালি মানেই বঙ্গবন্ধু,বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস-এটা যারা না মানবে তারা যে ইতিহাস কিংবা বাঙালি চেতনা থেকে অনেক দূরে তা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়না।

বঙ্গবন্ধু কে যেন আমরা রাজনীতি করণ না করে ফেলি।তিনি সমগ্র দেশের নেতা।বাঙ্গালি মাত্রই বঙ্গবন্ধু ভক্ত।তিনি কোন নির্দিষ্ট দলের নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশের।তিনি সকল বিতর্কের উর্ধে।

তবে এটা থিক যতদিন বাংলাদেশ থাকবে,ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যত আন্দোলন সংগ্রাম হবে-সব কিছুতেই বঙ্গবন্ধু হবেন পথপ্রদর্শক।আবার সেই বইটার কাছে ফিরে যাই।

আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বইটা শেষ করেছেন এভাবে-
"আজ নয়,অনাগত ভবিষ্যতে একদিন ইতিহাস প্রমাণ করবে মৃত মুজিব জীবিত মুজিবের থেকে বেশি শক্তিশালি।এবং সেই মুজিব ই বাংলাদেশে আরেক টি বিপ্লবেও নেতৃত্ব দেবেন।"

সব শেষে একটা ব্যক্তিগত কথা বলি।আমি ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।বঙ্গবন্ধু যেদিন নিহত হন ঐদিন তাঁর ঢাবি তে আসার কথা ছিল।নানা রকম বৃত্তি ও সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করার কথা ছিল।কিন্তু সেটা হল কই?

লেখাটির শুরুতে আমি বলেছিলাম আসুন কল্পনা করি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুমারা যান নি।তাহলে কি হত?

বাংলাদেশে কোন জঙ্গি সৃষ্টি হতনা।
জামাত আর কোন দিন সক্রিয় হতে পারতোনা।
সমাজতান্ত্রইক ধারায় দেশ পরিচালিত হত বলে ধনী গরিবের ব্যবধআন কমে যেত।এতদিনে আমরা বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর কাছালাছি চলে আসতাম।

তবে তিনি যেহেতু নেই তাই আমাদের কেই পূরণ করতে হবে তাঁর দেখে যাওয়া স্বপ্ন ।
একটা কথা মননে রাখতে হবে যদি কেউ বাংলাদেশে থাকতে চায় তাকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই থাকতে হবে।

এই মানুষ টির মধ্যে যে অসাধারণ কিছু আছে তা আমি বুঝেছি আমার বাবা কে দেখে।যে মানুষ টি ৫ ওয়াক্ত মানাযের পর চোখের পানি ফেলে নিজের মৃত বাবার জন্য দোয়া করার আগে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের জন্য দোয়া করে।বঙ্গবন্ধু আজ ও উদ্বেলিত করে সদ্য বুঝতে শেখা কিশোর টিকে।ভবিষ্যতেও করে যাবে...।

কেননা বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ,বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু।
জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু...
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ১২৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৮/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অনিত্য ১৪/০৮/২০১৩
    বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
 
Quantcast