www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

টোটনের এক দিন

সকাল বেলা পড়তে বসেই টোটন ভেবে নেবার চেষ্টা করে, আজ দিনে সে কি কি করবে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না। আজ তার ভাবনাগুলো এত তালগোল পাকাচ্ছে কেন?
তবুও কিছুটা বিরক্তি নিয়ে জোর করে ভাবতে গিয়ে মনে হলো,
আজ সে স্কুলে যাবে না।
কিন্তু তাই বা হয় কেমন করে!
মা’র যে রাগ স্কুলে না গেলে তো খেতেই দিবে না।
আর তার আবার একটা বদ অভ্যাস আছে, ক্ষুধা লাগলেই তার কাছে পৃথিবীটা ঝাপসা হয়ে যায়। কাউকে চিনতে পারে না। সবকিছু অন্য রকম মনে হয়। কখনো কখনো গাছের পাতাকে নীল মনে হয়। বিলের পানিকে লাল। মাকে বোন আর বাবাকে চাচা, আরও কত কি।
সে যাকগে স্কুলে তাকে যেতেই হবে। স্কুলের পড়া হয়নি বলে তার একটুও মন খারাপ হচ্ছে না। কারন, স্কুলের হেড মাস্টার তার চাচা এবং সহকারি শিক্ষক তার দাদা। অর্থাৎ তাদের অংক স্যার দাদা হন । তিনি দয়ালু মানুষ টোটনকে খুব ভালোবাসেন। আর সেই ভালোবাসাটায় টোটনের সুবিধে।
দাদা স্যার ক্লাসে এসেই বলবেন, এই, আজ কী তোমাদের দশের ঘর পর্যন্ত নামতা মুখস্থ হয়েছে?
তখন সবাই একসঙ্গে বলবে, হ্যাঁ।
টোটনও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বলবে, জ্বি, স্যার।
এরপর স্যার একের পর এক নামতা ধরে টোটনের কাছে এলে টোটন মুচকি হেসে বলবে, স্যার, আমি ছয়ের ঘর বলব?
স্যার কি বুঝে মিষ্টি হেসে বলবেন, বলো।
তক্ষনি টোটন শুরু করে দিবে ছয় একে ছয়, ছয় দুকুনে বার, তিন ছয় আঠার...। ভাবতে গিয়েই টোটনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
টোটনের অকারণে হাসি দেখে বাঁধন বলল, মামা, তুমি হাসচো কেন?
টোটন আদুরে গলায় বলে, ও তুমি বুঝবে না।
ঃ কেন আমি বুঝব না, মামা?
ঃ তুমি যে এখন ছোট্ট তাই। আমার মত বড় হলেই বুঝতে পারবে।
মামা, আমিও তোমার মত কবে বলো হব?
ঃ যখন তুমি বেশি বেশি খাবে তখন।
বাঁধন কিছু না বলে চলে গেল। টোটনও বইপুস্তক ব্যাগে গুছিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে দেখে, বাঁধন মায়ের কাছে অনেক খাবারের বায়না ধরেছে। মা যত বলছেন, তোর যত খুশি খা। বাঁধন তত বলছে, আমি অনেক খাব। সবগুলো খাব। কাউকে দিব না।
টোটন বাঁধনের কাছে গিয়ে বলল, আমাকেও দিবে না?
ঃ দিব, তুমি একতা খাও।
টোটন রুটি খাচ্ছে আর ভাবছে, আমি যে আজ স্কুলে যাব না সে কথা মাকে কেমন করে বলব?
মা কি বুঝলেন কে জানে। হঠাৎ বললেন, কীরে টোটন, ভাবছিস স্কুলে যাবি না, তাই না?
টোটন চমকে উঠলো; তার মনের কথা মা জানল কী করে?
টোটন মায়ের দিকে তাকাতেই মা বললেন, কোনো কথা নয়। স্কুলে যেতেই হবে নয়তো ভাত দিব না, বুঝলি তো!
ঃ হ্যাঁ, মা। আমি তো স্কুলে যাবই ভাবছি।
ঃ হ্যাঁ স্কুলের সময় হয়েছে তাড়াতাড়ি খেয়ে স্কুলে যা।
টোটন নিরূপায় হয়ে স্কুলে যাবার জন্য পা বাড়াল কিন্তু মন তার একটুও চাইছে না স্কুলে যেতে। প্রায় এক কিলো রাস্তা গ্রামের শেষ মাথায় রাস্তার ধারে দুটো ঝিল তাতে কিছু হাঁস বাচ্চাসহ চড়ছে। টোটন সেগুলোকে দেখছে আর হাঁটছে। খুব ভালো লাগছে তার হলুদ বাঁচ্চাগুলোকে। মা হাঁসটা হঠাৎ প্যাঁক প্যাঁক করে উঠতেই বাচ্চাগুলো কেমন ছোটাছুটি করতে লাগল।
ঝুপ করে একটা কাক এসে একটা হলুদ বাচ্চা ঠোঁটে করে নিয়ে উড়ে গেল। মা হাসটা খুব জোরে জোরে ডাকতে লাগল আর কাকের ঠোঁটের বাচ্চাটাও ডাকছে তাদের ভাষায়। হয়তো তার মাকে ডাকছে আর বলছে, মা! মাগো! আমাকে বাচাও! আমাকে বাচাও! আর মাটাও তার কান্না শুনে বলছে, খোকন সোনা আমার, যেও না বাছা। ছেড়ে দাও আমার বাচ্চাকে। কিন্তু না, ছাড়ছে না হিংসুটে কাকটা।
কাকটা উড়ে গিয়ে পড়ল একটা বাঁশের ডগায়। বাচ্চাটা তখনো কাঁদছে। টোটনের কষ্ট হচ্ছে। সে তো দেখতেই পাচ্ছে বাচ্চাটাকে, ঐ তো কাছেই একটা বাঁশ ঝাড়ে। টোটন দৌড়ে গেল সেখানে ঢিল ছুড়লো একের পর এক; কিন্তু না, ততদূর পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না ঢিলটা। টোটন এবার বাঁশ ঝাড়ে ঢুকে বাঁশ ধরে ঝাকাতে লাগল। কাকটা সেখান থেকে উড়ে গিয়ে একটা শিমুল গাছে পড়ল। টোটন দৌড়ে গেল শিমুল গাছের তলায়। বাচ্চাটা তখনো কাঁদছে। আবার ঢিল ছুড়লো সে। কাকটা আবার উড়ে গেল বাঁশ ঝাড়ে। টোটনও ছুটলো আগের মত। কাকটা পালাতে ব্যস্ত থাকায় বাচ্চাটাকে মারতে পারছে না। তাই বাচ্চা কাঁদছে আর কাঁদছে।
টোটন বাঁশ ঝাকাতেই কাকটা অন্য বাঁশে যাচ্ছে আবার টোটন সে বাঁশ ঝাকাল। কাকটা অন্য বাঁশে যাচ্ছে। কিছুতেই হাল ছাড়ছে না টোটন। তার কাছে এখন একটাই শব্দ। সেই বাচ্চাটার চ্যা চ্যা চ্যা শব্দ। অনেকক্ষন পর টোটন হাঁপিয়ে উঠল, কিন্তু তবুও ছাড়ছে না সে কাকটা। এবার বাচ্চাটাকে নিয়ে উড়াল দিলো দূরে কোথাও। হতাশ হলো টোটন। বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারল না সে।

এতক্ষণে মনে পড়ল তার স্কুলের কথা; কিন্তু এখন তো আর স্কুলে যাওয়া যাবে না। স্কুলের সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাড়িতেই বা ফিরবে কেমন করে! মা যদি জানতে পারেন তাহলে অবস্থা খারাপ করে দিবে। সবে তো সময় এগারটা। স্কুল ছুটি হবে একটায়।
এখনো দুঘন্টা সময় কি করে কাটাবে? তবে কি সে বাড়িতে গিয়ে মাকে সত্য কথাটাই বলে দিবে? মা তো সব সময় সত্য কথা বলতে বলেন। সত্য কথা বললে নাকি কোনোদিনও খারাপ হয় না। তাহলে সে সত্য কথাই বলে দিবে। যা হবার তাই হবে। টোটন ভাবতে ভাবতে বাড়ি এসে পৌঁছাল।
মা তখন রান্না ঘরে কি সব কাজ করছেন। বাঁধন খেলা করছে। টোটনকে দেখেই সে দৌড়ে এলো। বলল, মামা, আমি বড় হয়ে যাব। আমি সবগুলো লুটি খেয়েছি।
ঃ ভালো করেছিস। বাঁধন, মা কোথায় রে?
ঃ ঘরের ভিতর। মামা, এসো না আমাকে ঐ পেয়ারাটা পেরে দাও।
টোটন স্কুলের ব্যাগটা চেয়ারে রেখে আঙ্গিনার মধ্যে ছোট্ট একটা পেয়ারা গাছে উঠতে চাইলো। কাছের ডাল ধরে ঝুল খেতেই বাঁধন বলল, মামা, আমিও ঝুল খাব।
ঃ আমি ঝুল খাচ্ছিনা তো গাছে উঠছি।
ঃ না। তুমি গাছে উঠ না, মামা। আমাকে ডাল ধরে ঝুল খাইয়ে দাও।
দা-ওনা মামা আমাকেও ডাল ধরে ঝুল খাইয়ে দাও।
টোটন ডাল ছেড়ে বাঁধনকে আদুরে গলায় বলল, তুই তো ডাল ধরতে পারবি না, সোনা।
ঃ তুমি আমাকে ধরে দাও আমি ঝুল খাব।
টোটন কি যেন ভাবল; বলল, আচ্ছা দাড়াও, আমি গাছের ডাল ধরি আর তুই আমার কোমর ধর, আচ্ছা?
বাঁধন টোটনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলল, আচ্ছা।
টোটন ডাল ধরতেই বাঁধন ওর কোমর ধরল। টোটন ঝুল খেতে গিয়েই হাত খুলে গেল আর অমনি দুজনেই পড়ল গিয়ে গাছের নিচে রাখা একগুচ্ছ ভাঙ্গা ইটের উপর। বাঁধন নিচে থাকায় সেই পড়ল নিচে আর টোটন পড়ল তার উপর। বাঁধন সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানশূণ্য হয়ে একটা অস্বাভাবিক শব্দ করতে লাগল। শব্দটা ঠিক এ রকম, ওওডাডা ওডডাড।
শব্দ শুনে বেরিয়ে এলেন টোটনের মা মফলুতুন নেছা। দৌড়ে গিয়ে টোটনকে তুলেই লেগে দিলেন দু’চারটা থাপ্পড়। মায়ের হাত থেকে ঝটকা দিয়েই দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেল টোটন। টোটনের মা নাতনির অবস্থা দেখে কেঁদে দিলেন। ততক্ষণে দু’একজন প্রতিবেশি এসে বাঁধনের শরীর ঘসাঘসি করে তার জ্ঞান ফিরালো।
এদিকে টোটন ছুটতে ছুটতে মুন্নিদের বাগানে গেল। সেখানে বায়েজিদ মাজেদ খেলা করছিল। টোটনকে দেখেই নেচে উঠল তারা। টোটন তুই এসেছিস? জানিস, ভিকিদের বাগানের একটা গাছের আম না খুব মিষ্টি। আমরা এইমাত্র খেয়ে আসলাম।
ঃ তাই?
ঃ হ্যাঁ তো, বলছি কি?
ঃ কে দিল তোদের ভিকিদের বাগানের আম?
ঃ কে আর দিবে? ভিকি দিয়েছে।
ঃ ওমা! তাই নাকি? কেমন করে জানলি ভিকি ওদের বাগানের আম দিয়েছে তোদের।
ঃ আরে! আমরা শুনে নিয়েছি।
টোটনের বাঁধনের কথা মনে পড়ল। বাঁধন মিষ্টি আম খুব ভালোবাসে। বারবার বলে, মামা, আমি মিষ্টি আম খাব। আমাকে আম পেরে দাও।
ঃ চল আমাকে সেই মিষ্টি আম গাছটা দেখিয়ে দিবি।
ঃ হ্যাঁ, চল। আম পেড়ে সবাই মিলে খাব।
ঃ হ্যাঁ, সে তো খাবই।
ওরা পা বাড়াতেই অন্তু ডাকল, টোটন, এই টোটন।
টোটন ফিরে তাকাল।
ঃ কিরে অন্তু, তুই কোথায় যাচ্ছিস?
ঃ টোটন, তুই স্কুলে যাসনি?
ঃ না।
ঃ আমিও যাইনি।
ঃ কেন যাসনি তুই অন্তু?
ঃ যেতে ইচ্ছা করল না, তাই।
ঃ তোর মা বকবে না?
বকবে না কীরে? মায়ের বকুনিতে বাবা তো মারতেই ধরেছিল; কিন্তু আমি পালিয়ে এসেছি। দেখ না বাবা একটা মেরেওছে। কেমন দাগ হয়ে আছে।
টোটন অন্তুর পিঠে সেই দাগটা দেখে শিউরে উঠল। মনে মনে ভাবল, সে যখন বাবা হবে তখন তার ছেলে স্কুলে না যাবার জন্য সে কিছু বলবে না। তার ইচ্ছ হলে স্কুলে যাবে না হলে যাবে না।
ঃ কীরে টোটন, কী ভাবছিস?
ঃ কিছু না তো। চল্ অন্তু, যাবি আমাদের সাথে? আমরা মিষ্টি আম পাড়তে যাচ্ছি।
ঃ হাঁ যাবো তবে আমি গাছে উঠতে পারব না।
ঃ আরে না, তোকে গাছে উঠতে হবে না। তোরা নিচে থাকবি আমি গাছে উঠব।
টোটন হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠল।
ঃ কী হলো টোটন, তুই হাসছিস কেন?
টোটনের হাসির বেগ আরও বেড়ে গেল। হাসিতে যেন লুটোপুটি খাচ্ছে সে। অকারণে টোটনের হাসির সাথে তাল মিলিয়ে বায়েজিদ মাজেদও হাসতে লাগল। অন্তু কিছু বুঝে উঠল না, হঠাৎ কি এমন হলো যে এত হাসতে হবে? সে বলল, এই টোটন, কী হলো, যে এত হাসছিস?
টোটন হাসতে হাসতেই বলল, একটা কথা মনে পড়ল তো, তাই হাসি পাচ্ছে।
ঃ কি এমন কথা যে এত হাসি পাচ্ছে? অন্তু বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
টোটন হাসিটাকে সামলাতে সামলাতেই বলল, মনে আছে, তুই আর আমি গতবার আম গাছে উঠে কী হয়েছিল?
অন্তু এবার একটা শুস্ক হাসি দিল।
ঃ জানিস , সেদিন আমি অন্তুকে গাছে তুলে দিলাম কত কষ্ট করে। অথচ অন্তু গাছের একডাল থেকে কোথাও যায় না, নড়তেও পারে না, সরতেও পারে না। আবার ভয়ে সেকি কান্না তার! আমি তো ওকে ছেড়ে উপরেও উঠতে পারি না, নামিয়েও দিতে পারি না। শ্যালা! অতবড় দামড়া ছেলেকে কী ধরে নামানো যায়? আমি তাকে নামাতে পারছি না সেকথা যেই না বলেছি, অমনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিল।
আমাদের দুপুর বেলা গাছে দেখে বড় চাচা চিল্লাতে চিল্লাতে ছুটে আসছে । ভয়ে আমার অবস্থা তো খারাপ। আর অন্তু ডাল ধরে কাঁপতে লাগল। আমি তার ডালে পা রাখতেই ডালটা মড় মড় করে ভেঙ্গে গেল। ভাগ্যিস গাছের তলায় ধানের জমি ছিল তাও আবার পানিসহ।
আমরা কাদাতে পড়েই কাদা মেখে যে যার মত দিলাম ছুট। চাচা আমাদের এ অবস্থায় পালাতে দেখে অবাক হয়ে হাসতে লাগল।
গল্পটা শুনে ওরা ও জোরে হাসল। সে হাসিতে অন্তুও তাল মিলাল। ততক্ষণে তারা বাগানের কাছে এসে গেছে। টোটন বলল, এই, চুপ চুপ কোনো শব্দ করবি না।
ওরা চুপি চুপি ঢুকে পড়ল বাগানে।
মাঠের মাঝখানে বাগান ,একপাশে ধান ক্ষেত তার ওপারে একটা ছোট্ট নদী। ওরা বাগানে ঢুকতেই বায়েজিদ বলল, আচ্ছা, আমাদের কেউ যদি দেখে ফেলে?
ঃ দূর বোকা! এই দুপুরে কে আসবে? ধমক দিয়ে বলল টোটন।
অন্তুর ভয়ে হাত পা কাঁপছে। টোটন গাছে উঠল। অনেক আম ফেলছে সে। ওরা তিনজনেই কুড়াচ্ছে সেগুলো। টোটন বলল, এই, লক্ষ রাখিস কেউ এলে বলবি।
হঠাৎ ওপার থেকে কে যেন চিৎকার দিয়ে উঠল, কে রে? কে আম গাছে?
অন্তুর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কাঁপছে সে। বায়েজিদ বলল, টোটন, সর্বনাশ! রাজু চাচ্চু আসছে। টোটন জলদি নাম।
টোটন চোঁখের পলকেই গাছ থেকে নেমে অন্তুর হাত ধরে বলল, চল্, নদীর দিকে চল।
ওরা দৌড় দিল। পিছু ফিরে দেখল, রাজু চাচ্চু সমান তালে তাদের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। কিন্তু সে অনেক পেছনে পড়ে গেছে। ওরা নদীতে নেমে বসে পড়ল। না, ওদের আর দেখতে পারবে না। টোটনের তবুও ভয় হচ্ছে,। যদি রাজু চাচ্চু চলেই আসে তবে কী ওরা পানিতে ঝাপ দিয়ে ওপারে যাবে?। কিন্তু পানিতে যে নামবে সে তো ভালোভাবে সাঁতার জানে না। তবু সে না হয় একটু আধটু পারে কিন্তু ওরা কেমন করে পার হবে?
টোটন মাথা তুলে ভয়ে ভয়ে একবার দেখল, রাজু ”চাচ্চু আম কুড়িয়ে এদিকেই আসছে। দেখেই ভয়ে কেঁপে উঠল টোটনের বুক। অন্তু এবার জোরে জোরে কান্না শুরু করে দিল। বায়েজিদ তাকে ধরে বলল, এই অন্তু, চুপ চুপ। চুপ কর।
ওরা নদীর কোল ধরে অনেকটা দূরে চলে যাচ্ছে। অন্তু টোটনকে চাপা গুঞ্জনে কান্না জাড়িয়ে বলল, চল আমরা, আমার নানা বাড়ি যাই।
ভ্র কুচকালো ওরা।
ঃ সে কীরে, নানা বাড়ি যাবি, মানে?
ঃ ঐ তো, ঐ গ্রামেই আমার নানা বাড়ি। আমরা এখন গিয়ে বিকালে চলে আসব।
কথাটা টোটনের কাছে ভালো লাগলেও তার মনে হলো, বিকেলে সে যখন বাড়ি যাবে তখন মাকে কী বলবে? এতক্ষণ কোথায় ছিল জানতে চাইলে তো মিথ্যে বলা যাবে না। মা মিথ্যে একদম সইতে পারেন না। একে তো এত অপরাধ তার উপর মিথ্যে? না-না, এ অবস্থায় কোথাও যাবে না সে।
মাজেদ ধমক দিল অন্তুকে।
চুপ। এখন যাবি কী করে? দেখছিস না, রাজু চাচ্চু এখনো এদিকেই তাকিয়ে আছে।
ঃ তাহলে কতক্ষণ থাকব আমরা এখানে? টোটন আস্তে করে বলল যতক্ষণ চাচ্চু যায়নি।
অন্তু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে এখনো।
ঃ অন্তু তুই কী তোর নেকা কান্না থামাবি? ভালো লাগছে না।
একরাশ বিরক্তি ভরা মুখ নিয়ে বলল বায়েজিদ, সেই কতক্ষণ হলো, না জানি বাড়ি গিয়ে আজ কী অবস্থা হয়!
অন্তু আবার কেঁদে ফেলল। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি পাচ্ছিল টোটনের। কিন্তু না কীসের যেন বাধায় হাসিটা চেপে যাচ্ছে।
টোটন বলল, অন্তু, কাদিস না, ভয় নেই এতক্ষণে হয়তো চাচ্চু চলে গেছে।
ঃ না-না, টোটন। এখনি আমাদের ওদিকে যাওয়া ঠিক হবে না। আর একটু অপেক্ষা করি।
কি ভেবে সবাই বসে বসে বালি দিয়ে খেলছে আর কথা বলছে। অন্তুই শুধু কাঁদছে। বেশ কিছুটা সময় কেটে গেছে। ওরা এখন বালুতে সুখের খেলায় ব্যস্ত, কারও কোনো তাড়া নেই।
হঠাৎ অন্তু বাঁধন বলে লাফিয়ে উঠল। টোটন দেখল, বাঁধন হাসছে আর দৌড়ে দৌড়ে এদিকেই আসছে। টোটনও দৌড়ে গেল বাঁধনের কাছে, বাঁধন, তুমি?
ঃ হ্যাঁ মামা, আমি ভালো হয়ে গেছি।
টোটন বাঁধনের হাত ধরে নদীর কিনারে নিয়ে গেল বলল, বাঁধন, তুমি এখানে কেমন করে এলে?
ঃ কেন নানীমনি দিয়ে গেছে।
ঃ মা কেমন করে জানলো যে, আমরা এখানে আছি?
ঃ কেন? রাজু নানু বলেছে।
এতক্ষণে ওরা সবাই সবার দিকে চাইলো। বাঁধন বলল, চল মামা, নানী তোমাকে বাড়ি যেতে বলল।
ঃ এই চল এবার। এতক্ষণে অন্তু একটু ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে বলল, চল সবাই আর ভয় নেই।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৯৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৯/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast