অপমৃত্যু
এটি একটি হোস্টেলের ঘটনা।
তুতু আর মিতু তারা দু’জন বেশ ভালো বন্ধু। এক সাথে খাওয়া, এক সাথে ঘুরাফেরা, এক সাথে থাকা। তাদের এই বন্ধুত্ব দেখে অনেকে হিংসে করে। অনেকবার অনেকে চেষ্টাও করেছে তাদের এই বন্ধুত্ব নষ্ট করতে। কিš‘ ওদের মনের এতোটাই মিল যে, ওরা কখনো দূরে সরে থাকতে পারে না। সব দোষ ক্ষমার চোখে দেখে বার বার ওরা এক হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও যখন কাজ হয় না তখন আর এই নিয়ে কেউ ভাবে না।
তুতু আর মিতু তারা দু’জনেই সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। তুতুর মা নেই। আর মিতুর বাবা নেই। ওরা যখন এই ম্যাচে এসেছে তখন থেকেই একই রুমে থাকে। দু’জনে দেখতেও প্রায় একই রকম। ওরা ওদের দুঃখের কথাগুলো ভাগ করে বলাবলি করে নিজেদের সান্ত্বনা দেয়। তুতুর মা নেই। সে তার সৎমায়ের কাছে কখনো আদর পায় না। সৎমা তাকে অনেক বকা দেয়। ঠিক করে খেতেও দিতে চান না। তাই তার বাবা তাকে দূরের এই স্কুলে ভর্তি করে ম্যাচে রাখেন। আর মিতুর বাবা নেই। মা তাকে অনেক স্নেহ করেন। কিš‘ তারা ভীষণ গরীব। তাই মা যখন কাজ করতে যায় তখন তাকে একা থাকতে হয়। মায়ের ই”ছা, মিতুকে লেখাপড়া শেখাবে তাই তাকে এই ম্যাচে ভর্তি করে দিয়েছে। তার মা অনেক কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া করা”েছ।
আজ কতোদিন মিতু মাকে দেখেনি। তুতুর বাবা মাঝে মাঝে আসে। তাই তুতুর তেমন খারাপ লাগে না। তার তো আর নিজের মা নেই।
আজ যখন স্কুলে স্যার বললো, কাল থেকে তোমাদের স্কুল তিনদিনের জন্য বন্ধ তখন খুশিতে নেচে উঠলো মিতুর মন। কাল সে মায়ের কাছে যাবে। কিš‘ তুতুর দিকে চেয়েই শান্ত হলো সে।
ঃ কি রে তুতু, তুই কাঁদছিস কেন?
ঃ কই নাতো। চোখে একটা পোকা পড়েছিলো তো তাই চোখটা জ্বালা করছে।
ঃ সে কি! চল্ চল্, পানি দিয়ে ধুবি।
ঃ না মিতু লাগবে না। ভালো হয়ে গেছে।
মিতুর দিকে চোখ ফেললো তিতু। তুতু মলিন কণ্ঠে ধীর গলায় বললো,“মিতু, তুই কী কাল বাসায় যাবি?”
ঃ হ্যাঁ, মাকে কতোদিন দেখিনি। তুই যাবি না?
ঃ না, মিতু। বাবা বলেছে, এমাসের পরের মাসে আমার মামার বিয়ে তখন যেতে।
ঃ তাহলে চল্ আমাদের বাসায় যাবি।
মুহূর্তে উজ্জ্বল হলো তিতুর মুখ। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,“তোর মা বকবে না?”
ঃ না, তুতু। আমার মা এমন নয়। আমার মা তোকে অনেক আদর করবে দেখিস।
ঃ তাই।
ঃ হ্যাঁ, যাবি?
ঃ হ্যাঁ, যাবো।
ওরা পরদিন স্কুল থেকে ফিরলো। স্কুল বন্ধ হঠাৎ বলে তুতু বললো,“মিতু, আমার খুব কষ্ট হ”েছ।”
ঃ সেকি! মিতু তুতুর কপালে হাত রেখেই চমকে উঠলো। বললো, একি! তোর তো জ্বর এসেছে। ও মাগো এতো অনেক জ্বর।
মিতু তিতুকে রুমে এনে শুয়ে দিলো। তারপর তুতুর বাবাকে ফোন করলো। তুতুর বাবা বললো,“আমি আসছি।”
মিতু ওর মাথায় পানি ঢাললো। তুতু বললো,“মিতু, তুই চলে যা। তোর মা তোর জন্য অক্ষো করছে। আমি যেতে পারলাম না। পরের বার যাবো।”
মিতু দেখছে, ম্যাচ থেকে সবাই চলে যা”েছ। সন্ধ্যা হতে আর বেশি দেরি নেই। তুতু ঘুমিয়ে পড়েছে। এদিকে ম্যাচও শূন্য হয়ে পড়েছে। এখন শুধু তারা দু’জনেই আছে। এতো বড় ম্যাচ হঠাৎ ভয় লাগলো তার। বুয়ারাও চলে গেছে। এখন কী হবে। তুতুর বাবাটা যে কখন আসবে! হঠাৎ দেখলো, তুতুর বাবা আসছে। সে তখন তিতুর বাবাকে দেখে বললো,“চাচা এসেছেন? আপনি তুতুকে নিয়ে যান। সন্ধ্যা হয়ে যা”েছ, আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি।”
ঃ হ্যাঁ, মিতু। তুমি যাও। আমি তো এসে পড়েছি। আমরা আজ আর বাড়ি যাবো না। রাতটা এখানে থেকে কাল সকালে চলে যাবো। অনেক দূরের পথ তো।
মিতু দেখলো, লোকটাকে কেমন যেন লাগছে। মুখটা শুকনো। হয়তো বাড়িতে ঝগড়া করে এসেছে। চোখ দু’টো লাল আর কণ্ঠটাও পিনপিনে।
মিতু তৈরি-ই ছিলো বলে তুতুর বাবাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে সে চলে যা”েছ। তুতু ঘুমা”েছ। তুতুর বাবা বাথরুমে গেলেন। মিতু তুতুকে ধীরে ধীরে ডেকে বললো,“তুতু, আমি বাড়ি যাচ্ছি। চাচাজান এসেছেন।”
ঃ কই, বাবা।
ঃ বাথরুমে।
ঃ ঠিক আছে। যা। সাবধানে যাস।
ঃ আছা। বলে চলে গেলো মিতু।
তুতু বাবার জন্য অপেক্ষা করছে। কিš‘ না, অনেকটা সময় চলে গেলো বাবা ফিরছে না।
কই, বাবা? এখনো আসছে না কেন? বাবা কী এসেছে নাকি মিছে কথা বললো মিতু? তাকে এভাবে একা ফেলে রেখে যেতে পারলো মিতু? তুতুর কান্না পেলো। হঠাৎ ভয়ে শিউরে উঠলো তার শরীর। ধক্ ধক্ করছে বুকটা। এতো বড় একটা ম্যাচে একা সে। তাতে কি দারোয়ান তো আছে। তাছাড়া মেট্রোনও তো আছে। তাদের রুমটা অবশ্য তার রুম থেকে অনেক দূরে। সে যা হোক, কাল সকালে সেও চলে যাবে। বাবা যা বলে বলবে। অনেক কথা ভাবছে তুতু।
হঠাৎ মিতুকে ফিরে আসতে দেখে তুতু হাসি দিয়ে বললো,“মিতু, তুই ফিরে এলি যে! বাসায় যাবি না?”
মিতু কথা বললো না। শুধু একবার চাইলো। আবারো ধক্ করে উঠলো বুকটা। মিতুর চোখ-মুখ কেমন লাল হয়েছে। তুতু ভাবলো, ও হয়তো রাগ করেছে। সন্ধ্যা নেমেছে বলে যেতে পারেনি, তাই।
মিতু তার বেডে শুয়ে পড়লো। চোখ-মুখ কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখলো। তুতুর খারাপ লাগলো। মনে হলো, মিতুর বুঝি খুব কষ্ট হ”েছ। তুতু ধীরে ধীরে উঠে মিতুর বেডে গিয়ে বললো,“মিতু, তুই কী গাড়ি পাসনি? ফিরে এলি কেন্?”
কথা বলছে না মিতু। তুতু আবার বললো,“তোর খুব কষ্ট হচেছ, তাই না রে? কষ্ট পাসনে। কাল দু’জনেই চলে যাবো। শুধু রাতটুকু কষ্ট করে থাক্।”
তখনো কথা বললো না মিতু। তুতু আস্তে আস্তে বাথরুমে গেলো। মনের ভেতর ছোট একটা জিজ্ঞাসা। বাবা কোথায় গেলো? এখনো আসছে না কেন? বাথরুমে ঢুকতেই গাটা ছম্ ছম্ করে উঠলো। ছোট একটা শব্দ শুনতে পেলো সে। উপরে তাকালো। ভয়ে শুকিয়ে গেলো আতœা। কাটা একটা পা ঝুলছে আর তার থেকে দেওয়াল বেয়ে গড়িয়ে আসছে তাজা রক্ত। নিচে তাকালো একি! একটা কাটা হাত লাফা”েছ! ভয়ে কষ্টে রুদ্ধ হয়ে যাবার জো। কাঁপছে সারা দেহ। চিৎকার দেবার শক্তিটাও হারিয়ে গেছে তার। তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়েই দৌড় দিলো তুতু। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। ভয়ে হাপা”েছ তুতু। চোখে-মুখে ঘাম ঝরছে তার দরদর করে।
মিতু এখনো কাঁথার নিচে। তিতু দৌড়ে গিয়ে মিতুকে ডাকলো কিš‘ মিতু শুনছে না। হাত দিয়ে ঝাকুনি দিলো কবার তবুও মিতু কথা বলছে না। দেখছেও না। তুতু কেঁদে ফেললো। বললো,“বাবা নেই। বাবাকে কে যেন মেরেছে।”
আবার একটা শব্দ হলো। সেদিকে চেয়েই চমকে উঠলো সে। একি, মিতু কাঁথা থেকে মাথা বের করে কেমন বিশ্রি ভাবে হাসছে। সে কি, এতো মিতু নয়। এ যে অন্য একটা মেয়ে। তাহলে মিতু কই? মিতু মিতু!
হাসছে মেয়েটা। বিকট হাসি। তুতু দৌঁড় দিলো দরজার দিকে। কিš‘ কে একজন তা বাবার মতো আগেই দরজা খুলে বের হলো। দরজাটা লেগে গেলো ওপার থেকে। কিছুতেই খুলছে না আর। তুতু কাদছে, ভয়ে কাঁপছে সে। মেয়েটা হঠাৎ কেমন করে ছাড়লো মুখ দিয়ে রক্ত। দাঁতগুলো বেশ বড় আর ধারালো। তার দিকেই এগিয়ে আসছে মেয়েটা। জোরে জোরে চিল্লা”েছ তুতু। কেউ শুনছে না তার চিৎকার। তুতু দিশেহারা হয়ে ছুটোছুটি করছে। না, পারছে না সে। মেয়েটা হাসছে, কেবলি হাসছে। তুতু এবার কথা বললো,“কে তুমি? কী চাও এখানে?”
মেয়েটা এবার থমকে দাঁড়ালো। বললো,“ঐ তো আমি।”
তুতু দেখলো, তার সিলিং ফ্যানে ঝুঁলছে একটা লাশ। হাত দু’টো কাটা, দু’টো পা কাটা। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে অবিরাম।
মেয়েটি হি হি করে একটা অট্রহাসি দিয়ে বলে উঠলো,“আমি নিরা। এই স্কুলে পড়তাম। কিš‘ আমাকে পড়তে দেয়নি ওরা। বাঁচতে দেয়নি। মেরে ফেলেছে। আমার হাত কেটেছে, পা কেটেছে। আমি মরতে চাইনি। সবাই মিলে মেরেছিলো আমাকে। আমিও তোমাকে মারবো। তোমার রক্ত খাবো। কতোদিন কিছু খাইনি আমি। ভালো পাইনি তাই খাইনি।”
তিতু ভয়ে থর থর করে কাঁপা গলায় বললো,“কিš‘ আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।”
নিরা মেয়েটি একটা ব্যঙ্গ হাসি দিয়ে বললো,“আমিও তো কারো কোনো ক্ষতি করিনি। তবুও ওরা আমাকে মেরেছে। কিš‘ কেন? আমিও সেদিন একা ছিলাম। তাই শয়তান মানুষগুলো আমাকে বাঁচতে দেয়নি। ওরা ভালো নয়।”
তিতু অসহায়ের গলায় বলছে,“কিš‘ তুমি তো ভালো ছিলে। তাহলে তুমি আমাকে মারতে চাইছো কেন?”
ঃ এখন আমি ভালো নাই। আমিও শয়তান হয়ে গেছি। তাই আমি তোমাকে খাবো। কেউ বাঁচাবে না তোমাকে। তোমার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তোমার বাবা সাজতে হয়েছে। সন্ধ্যে বেলায় মিতুর রূপ ধরে এসেছি তখন থেকে এখন অব্দি কষ্ট করছি।
মিতুর কাছে আসছে শয়তানী ভূতটা। তুতু ভয়ে জমে যাচেছ। কিছুতেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। হাত-পা জোরে জোরে কাঁপছে। দু’চোখ দিয়েও রক্ত বেরু”েছ ভূতটার। তুতু মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে দোয়া পড়তে লাগলো। ভূতটা চমকে উঠলো। বললো,“ওরে শয়তান মানুষ, এ কী করছিস তুই?” বলেই লম্বা একটা হাত বাড়িয়ে দিলো তুতুর দিকে। তুতু জ্ঞান শূন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এরপর যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন তার পাশে তার বাবা এবং মিতুকে দেখেই সে চিৎকার দিলো,“ভূত, ভূত। শয়তান ভূত।”
এর কিছুদিন পর তুতু সু¯’ হয়ে জানিয়ে দিলো, এ ম্যাচের অপমৃত্যুর কানিীটি। যা শুনে সকলেই শিউরে উঠলো।
তুতু আর মিতু তারা দু’জন বেশ ভালো বন্ধু। এক সাথে খাওয়া, এক সাথে ঘুরাফেরা, এক সাথে থাকা। তাদের এই বন্ধুত্ব দেখে অনেকে হিংসে করে। অনেকবার অনেকে চেষ্টাও করেছে তাদের এই বন্ধুত্ব নষ্ট করতে। কিš‘ ওদের মনের এতোটাই মিল যে, ওরা কখনো দূরে সরে থাকতে পারে না। সব দোষ ক্ষমার চোখে দেখে বার বার ওরা এক হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও যখন কাজ হয় না তখন আর এই নিয়ে কেউ ভাবে না।
তুতু আর মিতু তারা দু’জনেই সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। তুতুর মা নেই। আর মিতুর বাবা নেই। ওরা যখন এই ম্যাচে এসেছে তখন থেকেই একই রুমে থাকে। দু’জনে দেখতেও প্রায় একই রকম। ওরা ওদের দুঃখের কথাগুলো ভাগ করে বলাবলি করে নিজেদের সান্ত্বনা দেয়। তুতুর মা নেই। সে তার সৎমায়ের কাছে কখনো আদর পায় না। সৎমা তাকে অনেক বকা দেয়। ঠিক করে খেতেও দিতে চান না। তাই তার বাবা তাকে দূরের এই স্কুলে ভর্তি করে ম্যাচে রাখেন। আর মিতুর বাবা নেই। মা তাকে অনেক স্নেহ করেন। কিš‘ তারা ভীষণ গরীব। তাই মা যখন কাজ করতে যায় তখন তাকে একা থাকতে হয়। মায়ের ই”ছা, মিতুকে লেখাপড়া শেখাবে তাই তাকে এই ম্যাচে ভর্তি করে দিয়েছে। তার মা অনেক কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া করা”েছ।
আজ কতোদিন মিতু মাকে দেখেনি। তুতুর বাবা মাঝে মাঝে আসে। তাই তুতুর তেমন খারাপ লাগে না। তার তো আর নিজের মা নেই।
আজ যখন স্কুলে স্যার বললো, কাল থেকে তোমাদের স্কুল তিনদিনের জন্য বন্ধ তখন খুশিতে নেচে উঠলো মিতুর মন। কাল সে মায়ের কাছে যাবে। কিš‘ তুতুর দিকে চেয়েই শান্ত হলো সে।
ঃ কি রে তুতু, তুই কাঁদছিস কেন?
ঃ কই নাতো। চোখে একটা পোকা পড়েছিলো তো তাই চোখটা জ্বালা করছে।
ঃ সে কি! চল্ চল্, পানি দিয়ে ধুবি।
ঃ না মিতু লাগবে না। ভালো হয়ে গেছে।
মিতুর দিকে চোখ ফেললো তিতু। তুতু মলিন কণ্ঠে ধীর গলায় বললো,“মিতু, তুই কী কাল বাসায় যাবি?”
ঃ হ্যাঁ, মাকে কতোদিন দেখিনি। তুই যাবি না?
ঃ না, মিতু। বাবা বলেছে, এমাসের পরের মাসে আমার মামার বিয়ে তখন যেতে।
ঃ তাহলে চল্ আমাদের বাসায় যাবি।
মুহূর্তে উজ্জ্বল হলো তিতুর মুখ। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,“তোর মা বকবে না?”
ঃ না, তুতু। আমার মা এমন নয়। আমার মা তোকে অনেক আদর করবে দেখিস।
ঃ তাই।
ঃ হ্যাঁ, যাবি?
ঃ হ্যাঁ, যাবো।
ওরা পরদিন স্কুল থেকে ফিরলো। স্কুল বন্ধ হঠাৎ বলে তুতু বললো,“মিতু, আমার খুব কষ্ট হ”েছ।”
ঃ সেকি! মিতু তুতুর কপালে হাত রেখেই চমকে উঠলো। বললো, একি! তোর তো জ্বর এসেছে। ও মাগো এতো অনেক জ্বর।
মিতু তিতুকে রুমে এনে শুয়ে দিলো। তারপর তুতুর বাবাকে ফোন করলো। তুতুর বাবা বললো,“আমি আসছি।”
মিতু ওর মাথায় পানি ঢাললো। তুতু বললো,“মিতু, তুই চলে যা। তোর মা তোর জন্য অক্ষো করছে। আমি যেতে পারলাম না। পরের বার যাবো।”
মিতু দেখছে, ম্যাচ থেকে সবাই চলে যা”েছ। সন্ধ্যা হতে আর বেশি দেরি নেই। তুতু ঘুমিয়ে পড়েছে। এদিকে ম্যাচও শূন্য হয়ে পড়েছে। এখন শুধু তারা দু’জনেই আছে। এতো বড় ম্যাচ হঠাৎ ভয় লাগলো তার। বুয়ারাও চলে গেছে। এখন কী হবে। তুতুর বাবাটা যে কখন আসবে! হঠাৎ দেখলো, তুতুর বাবা আসছে। সে তখন তিতুর বাবাকে দেখে বললো,“চাচা এসেছেন? আপনি তুতুকে নিয়ে যান। সন্ধ্যা হয়ে যা”েছ, আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি।”
ঃ হ্যাঁ, মিতু। তুমি যাও। আমি তো এসে পড়েছি। আমরা আজ আর বাড়ি যাবো না। রাতটা এখানে থেকে কাল সকালে চলে যাবো। অনেক দূরের পথ তো।
মিতু দেখলো, লোকটাকে কেমন যেন লাগছে। মুখটা শুকনো। হয়তো বাড়িতে ঝগড়া করে এসেছে। চোখ দু’টো লাল আর কণ্ঠটাও পিনপিনে।
মিতু তৈরি-ই ছিলো বলে তুতুর বাবাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে সে চলে যা”েছ। তুতু ঘুমা”েছ। তুতুর বাবা বাথরুমে গেলেন। মিতু তুতুকে ধীরে ধীরে ডেকে বললো,“তুতু, আমি বাড়ি যাচ্ছি। চাচাজান এসেছেন।”
ঃ কই, বাবা।
ঃ বাথরুমে।
ঃ ঠিক আছে। যা। সাবধানে যাস।
ঃ আছা। বলে চলে গেলো মিতু।
তুতু বাবার জন্য অপেক্ষা করছে। কিš‘ না, অনেকটা সময় চলে গেলো বাবা ফিরছে না।
কই, বাবা? এখনো আসছে না কেন? বাবা কী এসেছে নাকি মিছে কথা বললো মিতু? তাকে এভাবে একা ফেলে রেখে যেতে পারলো মিতু? তুতুর কান্না পেলো। হঠাৎ ভয়ে শিউরে উঠলো তার শরীর। ধক্ ধক্ করছে বুকটা। এতো বড় একটা ম্যাচে একা সে। তাতে কি দারোয়ান তো আছে। তাছাড়া মেট্রোনও তো আছে। তাদের রুমটা অবশ্য তার রুম থেকে অনেক দূরে। সে যা হোক, কাল সকালে সেও চলে যাবে। বাবা যা বলে বলবে। অনেক কথা ভাবছে তুতু।
হঠাৎ মিতুকে ফিরে আসতে দেখে তুতু হাসি দিয়ে বললো,“মিতু, তুই ফিরে এলি যে! বাসায় যাবি না?”
মিতু কথা বললো না। শুধু একবার চাইলো। আবারো ধক্ করে উঠলো বুকটা। মিতুর চোখ-মুখ কেমন লাল হয়েছে। তুতু ভাবলো, ও হয়তো রাগ করেছে। সন্ধ্যা নেমেছে বলে যেতে পারেনি, তাই।
মিতু তার বেডে শুয়ে পড়লো। চোখ-মুখ কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখলো। তুতুর খারাপ লাগলো। মনে হলো, মিতুর বুঝি খুব কষ্ট হ”েছ। তুতু ধীরে ধীরে উঠে মিতুর বেডে গিয়ে বললো,“মিতু, তুই কী গাড়ি পাসনি? ফিরে এলি কেন্?”
কথা বলছে না মিতু। তুতু আবার বললো,“তোর খুব কষ্ট হচেছ, তাই না রে? কষ্ট পাসনে। কাল দু’জনেই চলে যাবো। শুধু রাতটুকু কষ্ট করে থাক্।”
তখনো কথা বললো না মিতু। তুতু আস্তে আস্তে বাথরুমে গেলো। মনের ভেতর ছোট একটা জিজ্ঞাসা। বাবা কোথায় গেলো? এখনো আসছে না কেন? বাথরুমে ঢুকতেই গাটা ছম্ ছম্ করে উঠলো। ছোট একটা শব্দ শুনতে পেলো সে। উপরে তাকালো। ভয়ে শুকিয়ে গেলো আতœা। কাটা একটা পা ঝুলছে আর তার থেকে দেওয়াল বেয়ে গড়িয়ে আসছে তাজা রক্ত। নিচে তাকালো একি! একটা কাটা হাত লাফা”েছ! ভয়ে কষ্টে রুদ্ধ হয়ে যাবার জো। কাঁপছে সারা দেহ। চিৎকার দেবার শক্তিটাও হারিয়ে গেছে তার। তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়েই দৌড় দিলো তুতু। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। ভয়ে হাপা”েছ তুতু। চোখে-মুখে ঘাম ঝরছে তার দরদর করে।
মিতু এখনো কাঁথার নিচে। তিতু দৌড়ে গিয়ে মিতুকে ডাকলো কিš‘ মিতু শুনছে না। হাত দিয়ে ঝাকুনি দিলো কবার তবুও মিতু কথা বলছে না। দেখছেও না। তুতু কেঁদে ফেললো। বললো,“বাবা নেই। বাবাকে কে যেন মেরেছে।”
আবার একটা শব্দ হলো। সেদিকে চেয়েই চমকে উঠলো সে। একি, মিতু কাঁথা থেকে মাথা বের করে কেমন বিশ্রি ভাবে হাসছে। সে কি, এতো মিতু নয়। এ যে অন্য একটা মেয়ে। তাহলে মিতু কই? মিতু মিতু!
হাসছে মেয়েটা। বিকট হাসি। তুতু দৌঁড় দিলো দরজার দিকে। কিš‘ কে একজন তা বাবার মতো আগেই দরজা খুলে বের হলো। দরজাটা লেগে গেলো ওপার থেকে। কিছুতেই খুলছে না আর। তুতু কাদছে, ভয়ে কাঁপছে সে। মেয়েটা হঠাৎ কেমন করে ছাড়লো মুখ দিয়ে রক্ত। দাঁতগুলো বেশ বড় আর ধারালো। তার দিকেই এগিয়ে আসছে মেয়েটা। জোরে জোরে চিল্লা”েছ তুতু। কেউ শুনছে না তার চিৎকার। তুতু দিশেহারা হয়ে ছুটোছুটি করছে। না, পারছে না সে। মেয়েটা হাসছে, কেবলি হাসছে। তুতু এবার কথা বললো,“কে তুমি? কী চাও এখানে?”
মেয়েটা এবার থমকে দাঁড়ালো। বললো,“ঐ তো আমি।”
তুতু দেখলো, তার সিলিং ফ্যানে ঝুঁলছে একটা লাশ। হাত দু’টো কাটা, দু’টো পা কাটা। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে অবিরাম।
মেয়েটি হি হি করে একটা অট্রহাসি দিয়ে বলে উঠলো,“আমি নিরা। এই স্কুলে পড়তাম। কিš‘ আমাকে পড়তে দেয়নি ওরা। বাঁচতে দেয়নি। মেরে ফেলেছে। আমার হাত কেটেছে, পা কেটেছে। আমি মরতে চাইনি। সবাই মিলে মেরেছিলো আমাকে। আমিও তোমাকে মারবো। তোমার রক্ত খাবো। কতোদিন কিছু খাইনি আমি। ভালো পাইনি তাই খাইনি।”
তিতু ভয়ে থর থর করে কাঁপা গলায় বললো,“কিš‘ আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।”
নিরা মেয়েটি একটা ব্যঙ্গ হাসি দিয়ে বললো,“আমিও তো কারো কোনো ক্ষতি করিনি। তবুও ওরা আমাকে মেরেছে। কিš‘ কেন? আমিও সেদিন একা ছিলাম। তাই শয়তান মানুষগুলো আমাকে বাঁচতে দেয়নি। ওরা ভালো নয়।”
তিতু অসহায়ের গলায় বলছে,“কিš‘ তুমি তো ভালো ছিলে। তাহলে তুমি আমাকে মারতে চাইছো কেন?”
ঃ এখন আমি ভালো নাই। আমিও শয়তান হয়ে গেছি। তাই আমি তোমাকে খাবো। কেউ বাঁচাবে না তোমাকে। তোমার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তোমার বাবা সাজতে হয়েছে। সন্ধ্যে বেলায় মিতুর রূপ ধরে এসেছি তখন থেকে এখন অব্দি কষ্ট করছি।
মিতুর কাছে আসছে শয়তানী ভূতটা। তুতু ভয়ে জমে যাচেছ। কিছুতেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। হাত-পা জোরে জোরে কাঁপছে। দু’চোখ দিয়েও রক্ত বেরু”েছ ভূতটার। তুতু মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে দোয়া পড়তে লাগলো। ভূতটা চমকে উঠলো। বললো,“ওরে শয়তান মানুষ, এ কী করছিস তুই?” বলেই লম্বা একটা হাত বাড়িয়ে দিলো তুতুর দিকে। তুতু জ্ঞান শূন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এরপর যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন তার পাশে তার বাবা এবং মিতুকে দেখেই সে চিৎকার দিলো,“ভূত, ভূত। শয়তান ভূত।”
এর কিছুদিন পর তুতু সু¯’ হয়ে জানিয়ে দিলো, এ ম্যাচের অপমৃত্যুর কানিীটি। যা শুনে সকলেই শিউরে উঠলো।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরিতোষ ভৌমিক ২ ২০/০৬/২০২৩গল্পটা দারুন তবে কোথায় যেন এমন একটা গল্প পড়েছি মনে হল ।
-
অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী ১৯/০৫/২০২৩খুব ভালো লাগলো
-
তাবেরী ০৯/০৫/২০২৩অসাধারণ
-
ফয়জুল্লাহসাকি ০৯/০৫/২০২৩চমৎকার!
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০৮/০৫/২০২৩অনন্যা
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ০৭/০৫/২০২৩বেশ!
-
ফয়জুল মহী ০৬/০৫/২০২৩সত্য সুন্দর সতত উপস্থাপন