www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ২৭

সকালে উঠে মম চলে গেলো তার প্রিয় গোলাপ গাছটার নিচে। টোনাটুনির সেই বাচ্চা দুটি বড় হয়েছে। ওরা এখন একটু উড়তে চায়। মম উপরে তাকায়। অন্তুকে দেখা যাচ্ছে না। ধক করে উঠলো মম’র মন। উদাস
হলো কিছুক্ষণের জন্য। পরক্ষণেই শুষ্ক ঠোঁটের কোনায় জেগে উঠলো একটু মধুর হাসি। হাত ইশারা করছে অন্তু। বুঝতে পারছে না মম। আবারো দৃষ্টির আড়াল হলো অন্তু। মম চেয়েই আছে। অন্তুর পরিবর্তন লক্ষ্য করছে মম। একটু পরেই অন্তু এসে ছুড়ে দিলো একটু টুকরো কাগজ। চোঁখের সামনে ধরলো সেটা। স্পষ্ট অক্ষরে লেখা “দেখা করো আমার সঙ্গে। কথা আছে জরুরি এবং গুরুত্ব পূর্ণ অনেক কথা।” মম তাকালো উপরে। হাত ইশারা করলো। ছাদের কথা বুঝাতেই নিষেধ করলো অন্তু। কিছু বুঝতে পারলো না সে। তবু আর একবার দেখালো অন্তুর দিকে। অন্তু বিদায় জানালে চলে গেলো মম। কষ্ট হচ্ছে মম’র। অন্তনিহিত এই কষ্টের তীব্র দহনে স্থীর থাকতে পারছে না সে। কতোদিন কাছ থেকে দেখা হয় না অন্তুকে। অন্তু রোজ হয়তো মম’র জন্য এ পথেই চলে। কিন্তু মম তো আর কলেজে যায় না তাই দেখাও হয় না। অন্য সময় যদিও বা মম বাইরে যায় কিন্তু অন্তু অফিসে থাকে। যদিও ফোনে মাঝে মাঝেই অন্তু দেখা করতে বলে কিন্তু মম যায় না। কারণ, মাসুমকে এই সময় আর কষ্ট দিতে চায় না মম। মাসুম যদি কোনো ভাবে জানতে পারে যে, মম’র এই লুকোচুরি প্রেমের কাহিনী তবে আরো বেশি কষ্ট পাবে। হারিয়ে ফেলবে তার জীবনের এই সামান্য সান্তনাটুকু। আর মম তা চায় না। মম পারবে তার এই ভাইটির একটু সুখের জন্য জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটিকে বিসর্জন দিতে। জীবন দিতেও প্রস্তুত সে। কিন্তু আজ অন্তু কী গুরুত্বপূর্ণ কথা জানাতে চায় তাকে? অনেক কথা ভাবে মম। কিন্তু কিছুতেই স্থীর হতে পারে না। মম অপেক্ষা করে মাসুম বেরুবার। কখন যাবে ভাইয়া। অস্থীর লাগে তার। বেশ কিছুক্ষণ পর বের হয়ে যায় মাসুম। মুন্নি তেমন আর মম’র খোঁজ রাখে না। মুক্তা তার অসুস্থ দুর্বল শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। মম বাসা থেকে বের হয়ে বড় রাস্তার মোড়ে পৌঁছাতেই দেখলো অন্তু দাঁড়িয়ে আছে। মম এগিয়ে যাচ্ছে আর অন্তু চেয়ে আছে মম’র দিকে। অন্তুর চোখে-মুখে মায়া আর পূর্ণতার ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মম কাছে আসতেই একটা খালি রিক্সাকে ডাকলো অন্তু।
রিক্সা কাছে আসতেই মম বলে উঠলো,“সে কি! রিক্সায় করে কোথায় যাবে?”
ঃ কেন আপত্তি আছে?
ঃ হ্যাঁ, অন্তু ভাই। আমি বাসায় কাউকে বলে আসেনি।
ঃ তাতে কি! আমরা দেরি করবো না। এক-আধ ঘন্টার মধ্যেই ফিরবো।
ঃ না না, তা হয় না। তুমি যেন কি বলতে চেয়েছিলে সে কথাই বলো।
ঃ হ্যাঁ। সে তোমার আমার নয়। মাসুম ভাই আর মুন্নির কথা। কিন্তু তার আগে আমার যে একটা কথা ছিলো মম।
ঃ কী কথা?
ঃ না মম, এই কথাটা আমি এখানে বলতে চাই না।
ঃ কিন্তু অন্তু ভাই, আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। ভাইয়া যে কোন মুহূর্তে বাসায় ফিরবে।
অন্তু মম’র মুখের পানে চাইলো। দেখলো মমকে অস্থির দেখাচ্ছে। মম’র মনের ভাব বুঝতে পারলো,  ,“মম, তুমি কী জানো, ভাইজানের অফিসিয়াল সমস্যাটার কথা?
ঃ হ্যাঁ, জানি।
ঃ তুমি কতোটা জানো আমি জানি না। তবে সেখানে মাসুম ভাইয়ার কোনো দোষ ছিলো না। আর মুন্নি সেও জীবন যুদ্ধের সৈনিক। তাকে তোমরা ভুল বুঝেছো। মম, আমি বলছি, তুমি তাকে আর এড়িয়ে চলো না। ও তো তোমারি বোন।
ঃ অন্তু ভাই।
ঃ হ্যাঁ, মম। আমি তোমার বন্ধু বলেই এতোটা জানতে হয়েছে আমাকে।
মম অন্তুর দিকে তাকালো। মনে মনে বললো, শুধুই কি বন্ধু? অন্তু ভাবছে অন্য কথা। মম আজ তোমাকে আমার মনের কথা বলা হলো না। জানি না কবে শুনবে তুমি।


মুন্নি এমন একটি সুযোগের প্রতিক্ষায় ছিলো। মুক্তা এখনো ঘুমাচ্ছে। ব্যাগে কাপড়-চোপড় আর অন্যান্য জিনিসপত্র গোছানোই ছিলো, তাই দেরি হলো না তার। রাস্তায় গিয়ে রিক্সায় উঠে অন্য পথে চললো সে। না তেমন কারো সঙ্গে দেখা হলো না তার। অজয় কিংবা বারাকের দলের কেউ দেখলো না তাকে। কঠিন ভাবনায় ছিলো সে এতোক্ষণ। এখন আর ভয় নেই। এক ঘন্টার মধ্যেই সে ছেড়ে যাবে এই রাজধানীর মায়া। আপন জনদের মায়া ভুলে যাবে তার পায়ের তোলায় পরাধীন এক বন্ধি জীবনের নিষ্টুর বন্ধন। যেখানে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতো মুন্নির। হ্যাঁ, আজ মুন্নি স্বাধীন। আজ আর নেই তার পিছুটান। নেই কোনো শাসন। নেই কোনো অন্যায়ের আশংকা। চলছে মুন্নি অচেনার পথে, অজানার পথে। জানে না সে সেখানে কতোটা স্বাধীন থাকবে। শুধু জানে সকলের সুখেই এই অনিশ্চিত যাত্রা তার। গাড়িতে বসে অনেক কথাই ভাবছে সে। অনেকগুলো কষ্ট এসে জমা বেঁধেছে তার চোঁখের কোনায়। ঝাপসা হয়ে আসছে সে সব কষ্ট

। ভালো লাগছে না মুন্নির। কোনো দিনো ভাবেনি সে এমনি করে জীবনের পথে একা হয়ে যেতে হবে তাকে। ছাড়তে হবে আপন জনদের সীমানা। শোঁ শোঁ করে ছুটে চলছে গাড়ি। জানালা দিয়ে তাকালো সে। মনের কষ্টকে লুকানোর চেষ্টা করে অবারিত সবুজের মাঠে চেয়ে। না কিছুতে কাজ হচ্ছে না যেন। তবুও জোর করে চেয়ে আছে।
মম সোজা মুন্নির রুমে গেলো। না নেই মুন্নি। মুক্তা ঘুমাচ্ছে। মাসুম এখনো বাসায় ফেরেনি। মম ঘড়িতে চেয়ে দেখলো সবে এগারোটা পঁচিশ। হাসলো সে। এতো অল্প সময়ে ফিরেছে। মুক্তার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলালো। মুক্তা পাশ ফিরে আবারো ঘুমালো। মম চলে গেলো তার রুমে। এ রুমেই এতোদিন থাকতো তিন বোন। কদিন হলো মম এখানে একাই থাকে। ওরা চলে গেছে বাবা-মায়ের পুরুনো রুমে। মুন্নির উপর সত্যিই কী ওরা অন্যায় করেছে? তাহলে কী মুন্নি এ কথাটাই বুঝাতে চেয়েছিলো যে, তাদের মুন্নি কী সত্যিই কোনো অন্যায় করেনি? শুধু শুধু ওরা তাকে এতো কষ্ট দিয়েছে। তাহলে মুন্নি এতো টাকা-পয়সা কোথায় পায়? কেন পায়? সে যাকগে অন্তু তাকে নিশ্চয় মিথ্যে বলেনি। ও ভালো ছেলে। অন্যায়কে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। ও নিশ্চয় জেনেছে মুন্নির ব্যাপারে।
মম আবার মুন্নির রুমে গেলো। মুক্তা জেগে উঠেছে। শুয়েই আছে সে। হাত-পা নড়াচ্ছে। মমকে দেখেই বললো,“ছোট আপু, আমায় একটু খেতে দিবে? খুব খিদে পেয়েছে।”

মম মুক্তার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে দেখলো কপালে ঘাম জমেছে। মম টেবিল থেকে খাবার দিলো। জুসের প্যাকটা তুলতে গিয়েই অবাক হলো সে। চিঠির মতো কি একটা। মম কাগজটা হাতে নিয়ে মুক্তার কাছে গিয়ে বসলো। মুক্তা িকছুই খােচ্ছনা শুধ খােবা খাবো বলে নাড়ছে চাড়ছে । চিঠি খুলে এক নিঃশ্বাসে পড়েই স্তব্দ হয়ে গেলো সে। শেষ পর্যন্ত এতোবড় একটা কঠিন কাজ করতে পারলো মুন্নি!

একবারো ভাবলো না মম’র কথা, মুক্তার কথা, মাসুমের কথা। বাবার রেখে যাওয়া সম্মানের কথা। ছিঃ! ছিঃ! এতো বড় একটা কাজ করতে পারলো মুন্নি! চলে যেতে পারলো একটা মেয়ে মানুষ হয়ে! না অন্তু যা জেনেছে তা ভুল। ভুল জেনেছে অন্তু। মুন্নি ভালো ছিলো না। কখনোই না। চোখের কোনায় চিক চিক করে উঠলো জলের ধারা। অসহ্য হয়ে উঠলো বুকের ভেতরে। কাঁদতে ইচ্ছে করছে মম’র। কিন্তু না কাঁদতেও পারছে না সে।
এতক্ষণে মুক্তা বললো,“আপু, আমাই জুস দাও। সবটুকু দাও। সব খেয়ে ফেলবো।মম কথা বলছে না দেখে সে আবার বললো,“দাও না আপু।”
মম আর নিরব থাকতে পারলো না। মুক্তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মুক্তা কিছু বুঝলো না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকলো বোনের দিকে।



চলবেই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ১১১৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast