রাত পোহাবার আগে ২৪
দলবাঁধা কষ্টের প্রতিটি পর্যায় বড় নির্মম, বড় নির্দয়। মাসুম সেই নিষ্টুর আর নির্দয় সময়কে অতিক্রম করেই এগিয়ে চলছে জীবন পথের দিশারী। অরাজকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এক ক্লান্ত পাখির মতোই অসহায় সে। চারপাশে শূন্যতা আর অশান্ত অস্থিরতায় বিসাদিত জীবন। ভালো লাগে না মাসুমের কোনো কিছু। বাঁচতে ইচ্ছে করে না তার। হারিয়ে ফেলে জীবনের প্রতি মায়া। বেড়ে যায় উত্তেজনা। খিটখিটে আর রোগাটে মনে হয় তাকে তার নিজের কাছে। কেটে যায় অগোছালো সময়ের চলন্ত ¯স্রোত। বোনদের কাছে মাসুম হয়ে উঠে কঠিন রাগি একজন আনাড়ী গার্জেয়ান। তাকে ভয় পায় মুন্নি, মম, মুক্তা। প্রয়োজনের কথা ভুলে যায় তারা। অভাবী হয়ে উঠে মাসুম। ঋণ করে সে জীবনের প্রয়োজন বাড়তে থাকে সে ঋণের ভার। এরি মধ্যে চলে যায় সাতটি মাস। মুক্তা অসুস্থ স্কুলে যেতে পারে না সে। মম’র বেতন বন্ধ। আবার যাতায়াত ভাড়ার কারণেই তার কলেজে যাওয়াও হয় না। মুন্নি কলেজে যায় কিন্তু তার অচারণ কিছুটা উৎভ্রান্ত। কিছুটা হলেও বুঝতে পারে মম, মুন্নির এই বেপোরোয়ার কারণ। নিষেধ করে তাকে।
মুন্নি বলতে পারে না তার অসহায়েত্বর কথা। কারণ, সে জানে মাসুম এই কষ্ট সইতে পারবে না। এমনিতেই দরিদ্রতা আর অরাজকতার গোগ্রাসে সে অনেকটা বিপন্ন। মুন্নি মমকে বুঝায়, সে যা করছে তা ভালোর জন্যই করছে। কিন্তু মুন্নির এ কথা কিছুতেই মানতে চায় না মম। সে বুঝায় এই দারিদ্রতা দীর্ঘস্থায়ী নয় আপু। এ যেমনি এসেছে তেমনি চলে যাবে। তুমি এই স্বল্পস্থায়ী দারিদ্রতার কারণে জীবনটাকে নিশেষ করে দিয়ো না আপু। তুমি যে পথে চলছো সে পথ ভালো নয়। ও পথ অন্ধকারের তেলহীন প্রদীপে মত,এতে আলো জ্বালা যায় কিন্তু সে আলো বেশিক্ষণ জ্বলে না। ওরা ক্ষমতার জোরে ছিনিয়ে নিবে কিন্তু ধরে রাখতে পারবে না।
ঃ না মম, তুই যা ভাবছিস আমি তা করছি না। আমি তো তোর বোন আমার উপর বিশ্বাস রাখ্। মনে রাখিস আমি কখনো তেলহীন প্রদীপে আলো জ্বালাবো না। আমি তো তোর মতোই ভাইয়ের আদর্শে বেড়ে উঠা মুন্নি।
হঠাৎ মাসুমের উপস্থিতিতে থেমে যায় দু’জনে। মম মাসুমের কাছে যেতেই মাসুম বলে,“মম, আজকেও পাইনি রে।”
ঃ সে যা হোক, ঘরে কিছু চাল আছে রাতটা চলবে। ভাইয়া, তোমার অফিসের কী খবর? বললো মুন্নি।
ঃ এইতো সামনে মাসে জয়েন্ট করবো। মিথ্যে বলতে গিয়ে কিছুটা কষ্ট হলো মাসুমের। তবু বললো, মুক্তা কই?
ঃ ঘুমাচ্ছে।
ঃ জ্বর কমেছে?
ঃ না।
ঃ খেয়েছে কিছু?
ঃ না।
মুক্তার কাছে গেলো মাসুম। বিভোরে ঘুমাচ্ছে মুক্তা। চোখে-মুখে একরাশ মলিনতা। কষ্ট হলো মাসুমের। আস্তে আস্তে মরণের দিকে এগিয়ে চলছে মুক্তা। পয়সার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না তার। মাসুম উপযুক্ত ভাই হয়েও কিছু করতে পারছে না তার জন্য। অথচ করা উচিৎ। মাসুম কিছুতেই মানতে পারে না মুক্তার এই অকালে মৃত্যু। উহ। চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে তার। মুক্তার কাছে গিয়ে বসে হাত রাখে মাথায়। চোঁখ পরে টেবিলে রাখা এক গাদা খাবারের উপর। জুস, পাওরুটি, আপেল, কমলা, বিস্কিট, হরলিস্ক আরো কি সব। খাবারগুলো ভালো করে দেখলো মাসুম। বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।
ঃ মম, বাসায় কে এসেছিলো?
ঃ কই কেউ না তো।
ঃ কেউ আসেনি? তাহলে এতো খাবার কোথা থেকে এলো?
ঃ ও, ওসব মুন্নি আপু এনেছে।
ঃ মুন্নি। কোথায় মুন্নি? ডাক তো। মাসুম আবার মুক্তার ঘরে গেলো। একটু পরেই মম, মুন্নি দুজনেই এলো।
ঃ জ্বি, ভাইয়া। কিছু বলবে?
ঃ হ্যাঁ, বস্। ওরা বসলো দু’জনেই। মুন্নি আমার কাছে মিথ্যে বলবিনা।
ঃ হ্যাঁ,
ঃএতো খাবার তোকে কে দিয়েছে?
মুন্নির মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখলো না মাসুম। সে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললো,“ভাইয়া, এসব আমার এক বন্ধু দিয়েছে।”
ঃ কেমন বন্ধু? ছেলে না মেয়ে?
ঃ ছেলে।
ঃ ওহ! আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তুই বন্ধদের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছিস?
ঃ না ভাইয়া, আমি তোমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছি না। শুধু এটুকু বলছি, আমি যা করছি ভালোর জন্যই করছি।
ঃ ওহ! ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছিস, তুই। আর তাই বন্ধদের কাছ থেকে নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।
ঃ ভাইয়া?
ঃ না। কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না আমি। তুই আমার বোন হয়ে এভাবে আমাকে ছোট করবি, ছিঃ! ভাবতে পারছি না আমি।
ঃ ভাইয়া, তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি কোনো অন্যায় করিনি। কোনো পাপ করিনি। আমাকে প্রশ্ন করো না। তাছাড়া আমি উত্তরও দিতে পারবো না। তুমি, শুধু বিশ্বাস করো, আমি তোমার বোন, তোমার আদর্শে বড় হয়েছি। আমি কোনো অন্যায় করিনি।
ঃ তাই যদি হয় তবে তুই আমার বোন হয়ে অন্যের দেওয়া জিনিস নিস কী করে?
থেমে যায় মুন্নি। চোখ ফেটে জল পড়ে তার। কষ্ট হয় তবু বলতে পারে না কিছু। মাসুম অনেক কথা বলে চলে যায় বাইরে। কষ্ট হয় তারো। বড় বেশি অসহায় মনে হয় নিজেকে নিজের কাছে। অকারণে হাঁটতে থাকে সে। ছোট একটা চায়ের দোকানে বসে। আজ তার পকেট একেবারেই শূন্য। চা খাওয়া যাবে না। মাসুম উঠতে যাবে সেই সময় শুনতে পেলো কেউ যেন বলছে, মুন্নি কি আর কিছু বলেছে? পাশ ফিরে তাকালো মাসুম। চেয়ারম্যানের ছেলে বারাক এবং তাদের মহল্লার অজয় কথা বলছে। মুহূর্তে মাথা গরম হয়ে গেলো মাসুমের। সোজা গিয়ে অজয়ের গালে একটা কষে চড় মারলো সে। হতভম্ব হলো বারাক। কাঁদো কাঁদো গলায় অজয় বললো,“আপনি আমাকে মারলেন কেন?”
ঃ নিজেকে প্রশ্ন করো। বদমায়েশ কোথাকার।
বারাক এবার কথা বললো,“একি ভাইজান, আপনি এখানে?”
ঃ চুপ করো বেয়াদব। জানো না মুন্নি আমার বোন?
মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিলো বারাক। বললো,“দেখুন ভাইজান, আমরা মুন্নিকে নিয়ে বাজে কোনো মন্তব্য করছি না। সে অনেক ভালো মেয়ে।”
ক’জন লোক এসে জটলা বাঁধালো। অন্য একটা লোক এসে টেনে নিয়ে গেলো মাসুমকে। ওরা সোজা মাসুমের বাসায় গেলো। মম তখন সবেমাত্র গোসল সেরে বাথরুম থেকে বের হয়েছে। মাসুমের সঙ্গে অন্তুকে দেখে অবাক হলো সে। হঠাৎ এ অবস্থায় কি করবে বুঝতে পারলো না মম। পালিয়ে গেলো নিজের রুমে।
চলবেই
মুন্নি বলতে পারে না তার অসহায়েত্বর কথা। কারণ, সে জানে মাসুম এই কষ্ট সইতে পারবে না। এমনিতেই দরিদ্রতা আর অরাজকতার গোগ্রাসে সে অনেকটা বিপন্ন। মুন্নি মমকে বুঝায়, সে যা করছে তা ভালোর জন্যই করছে। কিন্তু মুন্নির এ কথা কিছুতেই মানতে চায় না মম। সে বুঝায় এই দারিদ্রতা দীর্ঘস্থায়ী নয় আপু। এ যেমনি এসেছে তেমনি চলে যাবে। তুমি এই স্বল্পস্থায়ী দারিদ্রতার কারণে জীবনটাকে নিশেষ করে দিয়ো না আপু। তুমি যে পথে চলছো সে পথ ভালো নয়। ও পথ অন্ধকারের তেলহীন প্রদীপে মত,এতে আলো জ্বালা যায় কিন্তু সে আলো বেশিক্ষণ জ্বলে না। ওরা ক্ষমতার জোরে ছিনিয়ে নিবে কিন্তু ধরে রাখতে পারবে না।
ঃ না মম, তুই যা ভাবছিস আমি তা করছি না। আমি তো তোর বোন আমার উপর বিশ্বাস রাখ্। মনে রাখিস আমি কখনো তেলহীন প্রদীপে আলো জ্বালাবো না। আমি তো তোর মতোই ভাইয়ের আদর্শে বেড়ে উঠা মুন্নি।
হঠাৎ মাসুমের উপস্থিতিতে থেমে যায় দু’জনে। মম মাসুমের কাছে যেতেই মাসুম বলে,“মম, আজকেও পাইনি রে।”
ঃ সে যা হোক, ঘরে কিছু চাল আছে রাতটা চলবে। ভাইয়া, তোমার অফিসের কী খবর? বললো মুন্নি।
ঃ এইতো সামনে মাসে জয়েন্ট করবো। মিথ্যে বলতে গিয়ে কিছুটা কষ্ট হলো মাসুমের। তবু বললো, মুক্তা কই?
ঃ ঘুমাচ্ছে।
ঃ জ্বর কমেছে?
ঃ না।
ঃ খেয়েছে কিছু?
ঃ না।
মুক্তার কাছে গেলো মাসুম। বিভোরে ঘুমাচ্ছে মুক্তা। চোখে-মুখে একরাশ মলিনতা। কষ্ট হলো মাসুমের। আস্তে আস্তে মরণের দিকে এগিয়ে চলছে মুক্তা। পয়সার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না তার। মাসুম উপযুক্ত ভাই হয়েও কিছু করতে পারছে না তার জন্য। অথচ করা উচিৎ। মাসুম কিছুতেই মানতে পারে না মুক্তার এই অকালে মৃত্যু। উহ। চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে তার। মুক্তার কাছে গিয়ে বসে হাত রাখে মাথায়। চোঁখ পরে টেবিলে রাখা এক গাদা খাবারের উপর। জুস, পাওরুটি, আপেল, কমলা, বিস্কিট, হরলিস্ক আরো কি সব। খাবারগুলো ভালো করে দেখলো মাসুম। বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।
ঃ মম, বাসায় কে এসেছিলো?
ঃ কই কেউ না তো।
ঃ কেউ আসেনি? তাহলে এতো খাবার কোথা থেকে এলো?
ঃ ও, ওসব মুন্নি আপু এনেছে।
ঃ মুন্নি। কোথায় মুন্নি? ডাক তো। মাসুম আবার মুক্তার ঘরে গেলো। একটু পরেই মম, মুন্নি দুজনেই এলো।
ঃ জ্বি, ভাইয়া। কিছু বলবে?
ঃ হ্যাঁ, বস্। ওরা বসলো দু’জনেই। মুন্নি আমার কাছে মিথ্যে বলবিনা।
ঃ হ্যাঁ,
ঃএতো খাবার তোকে কে দিয়েছে?
মুন্নির মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখলো না মাসুম। সে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললো,“ভাইয়া, এসব আমার এক বন্ধু দিয়েছে।”
ঃ কেমন বন্ধু? ছেলে না মেয়ে?
ঃ ছেলে।
ঃ ওহ! আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তুই বন্ধদের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছিস?
ঃ না ভাইয়া, আমি তোমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছি না। শুধু এটুকু বলছি, আমি যা করছি ভালোর জন্যই করছি।
ঃ ওহ! ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছিস, তুই। আর তাই বন্ধদের কাছ থেকে নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।
ঃ ভাইয়া?
ঃ না। কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না আমি। তুই আমার বোন হয়ে এভাবে আমাকে ছোট করবি, ছিঃ! ভাবতে পারছি না আমি।
ঃ ভাইয়া, তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি কোনো অন্যায় করিনি। কোনো পাপ করিনি। আমাকে প্রশ্ন করো না। তাছাড়া আমি উত্তরও দিতে পারবো না। তুমি, শুধু বিশ্বাস করো, আমি তোমার বোন, তোমার আদর্শে বড় হয়েছি। আমি কোনো অন্যায় করিনি।
ঃ তাই যদি হয় তবে তুই আমার বোন হয়ে অন্যের দেওয়া জিনিস নিস কী করে?
থেমে যায় মুন্নি। চোখ ফেটে জল পড়ে তার। কষ্ট হয় তবু বলতে পারে না কিছু। মাসুম অনেক কথা বলে চলে যায় বাইরে। কষ্ট হয় তারো। বড় বেশি অসহায় মনে হয় নিজেকে নিজের কাছে। অকারণে হাঁটতে থাকে সে। ছোট একটা চায়ের দোকানে বসে। আজ তার পকেট একেবারেই শূন্য। চা খাওয়া যাবে না। মাসুম উঠতে যাবে সেই সময় শুনতে পেলো কেউ যেন বলছে, মুন্নি কি আর কিছু বলেছে? পাশ ফিরে তাকালো মাসুম। চেয়ারম্যানের ছেলে বারাক এবং তাদের মহল্লার অজয় কথা বলছে। মুহূর্তে মাথা গরম হয়ে গেলো মাসুমের। সোজা গিয়ে অজয়ের গালে একটা কষে চড় মারলো সে। হতভম্ব হলো বারাক। কাঁদো কাঁদো গলায় অজয় বললো,“আপনি আমাকে মারলেন কেন?”
ঃ নিজেকে প্রশ্ন করো। বদমায়েশ কোথাকার।
বারাক এবার কথা বললো,“একি ভাইজান, আপনি এখানে?”
ঃ চুপ করো বেয়াদব। জানো না মুন্নি আমার বোন?
মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিলো বারাক। বললো,“দেখুন ভাইজান, আমরা মুন্নিকে নিয়ে বাজে কোনো মন্তব্য করছি না। সে অনেক ভালো মেয়ে।”
ক’জন লোক এসে জটলা বাঁধালো। অন্য একটা লোক এসে টেনে নিয়ে গেলো মাসুমকে। ওরা সোজা মাসুমের বাসায় গেলো। মম তখন সবেমাত্র গোসল সেরে বাথরুম থেকে বের হয়েছে। মাসুমের সঙ্গে অন্তুকে দেখে অবাক হলো সে। হঠাৎ এ অবস্থায় কি করবে বুঝতে পারলো না মম। পালিয়ে গেলো নিজের রুমে।
চলবেই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২০/০৪/২০১৭
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ২০/০৪/২০১৭সমসাময়িক বাস্তবতার অনন্য কারিগর!!
লেখিকার জন্য রইল শুভ কামনা। সামনের পথ হোক উজ্জল ও মসৃন। -
মধু মঙ্গল সিনহা ২০/০৪/২০১৭ধন্যবাদ,আপনাকে ।
শুভেচ্ছা।