রাত পোহাবার আগে ২৩
কেন যেন মাসুমের মনে হচ্ছে, গরীবের ঘরে সুন্দরী মেয়ে অভিশাপ সমতূল্য। তিন তিনটে সুন্দরী বোন কেন তার, মা-বাবার হীন সংসারে, অভাবে আর অরাজকতা নিথর করে দিয়েছে তাদের চলার গতি। সকলেই থেমে গেছে চলন্ত পথে। ওদের মুখে চাইতে পারে না মাসুম। কষ্ট হয় তার ,নিষ্পাপ সেসব মুখের পানে চাইলে কান্না পায় মাসুমের। মিথ্যে মনে হয় নিজের জীবনকে। কেন সে এসেছিলো ওদের জীবনের একমাত্র অবলম্বন হয়ে। এলোই যদি, তবে পারছে না কেন তাদের মুখে হাঁসি ফুটাতে। কেন পারছে না তাদের মুখে এক মুঠো ক্ষুধার অন্ন তুলে দিতে। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের অসুস্থতায় তাকে নিঃস্ব করে মাকেও নিয়ে গেলেন ওপারে। কিন্তুু কেন তাদের এই নিষ্ঠুরতা। কি অপরাধ করেছিলো মাসুম বাবা-মায়ের কাছে? তাকে কাঁদিয়ে তারা অকালে চলে গেলেন কেন? সে যে আর পারছে না। ক্ষিদের জ্বালাটা এতোক্ষণে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। মনে হলো, সে আজ সারাদিন কিছু খায়নি। অনেক কষ্টে ধার করা ক’টা টাকায় হালকা কিছু খাবার এনেছিলো, তাই খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে মম, মুক্তা আর মুন্নি। ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগে ওরা। মাসুম গিয়ে ওদের ঘুমন্ত মুখগুলোতে আদর করে দিয়েছে। চঞ্চল মুখগুলো তার কাছে দিন দিন কেমন শুকনো মনে হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের শুভ্রতা, আর সব কিছু হচ্ছে তার কারণে। সে পারছে না তাদের খাওয়াতে-পরাতে। ওদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে সেই কতো দিন আগেই। তারপরো কিছু বলেনি ওরা। বুঝতে শিখেছে বলেই রক্ষে। কিন্তু তাদের কাছে রক্ষে পেলেও কী ও নিজের কাছে রক্ষে পেয়েছে কখনো? সেই কতো দিন ঘুম হয় না তার। কথা বলতে পারে না বোনদের সঙ্গে মন খুলে। হাসি যেন ভুলেই গেছে। অথচ তাদের সংসারের প্রতিটা মুর্হূত ছিলো হাশি-খুশিতে মুখরিত। বাবা-মা তো তাদের সেই উচ্ছলতাকে পাগলামোই বলতো। বলতো, তোরা সবগুলোই এতো পাগল কেনরে? একজন কেউ কী ভালো হতে নেই?
মাসুমকে মা একদিন বলেছিলো,“ওরা না হয় মেয়ে মানুষ, তারপরে ছোট। কিন্তু তুই তো বড় হয়েছিস, তোকেও কী ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব সময় হাসতে হবে?”
ঃ কেন মা, বড়দের কী হাসতে নিষেধ আছে কোথাও? নাকি তুমি বলছো? হাসতে হাসতে সে আরো বলেছিলো,“জানো মা, যারা হাসতে জানে, কান্না তার কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। আর হাসি তোমাদের কাছে বিরক্তির হলেও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিই বটে।”
মা তখন বলেছিলো,“হয়েছে। তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। দেখিস, জীবনের কঠিন পথে হাসিকে আবার ভুলে না যাস।”
ঃ কী যে বলো মা! ভাইয়াই তো আমাদের হাসতে শিখিয়েছে। ভাইয়ার হাসিই আমাদের পথ দেখাবে, তুমি দেখে নিই? বলেছিলো মম।
ঃ হ্যাঁ, দোয়া করছি তাই যেন দেখায়। আমার আর ক’দিন।
ঃ কী যে বলো মা? তুমি আছো বলেই তো আমরা হাসছি। তোমরা না থাকলে আমরা হাসবো কী করে?
মাসুমের কথাই মা যেন তৎক্ষনাত অনমনা হয়েছিলেন। পরক্ষণেই বলেছিলেন,“মাসুম, আমরা না থাকলে তুই ওদের দেখিস বাবা। মনে রাখিস ওরা তোর ছোট বোন।”
ঃ মা, তোমার কী হয়েছে?
ঃ কই? কিছু না তো। বলেই মা হাসতে লাগলেন।
সেই মায়ের শেষ হাসির ঝংকার এখনো বাঁজে মাসুমের কানে। সে দিন মাসুম জানতো না। বাবা-মায়ের কঠিন অসুখের কথা সে যদি একটু জানতো..।
রাগ হয় মাসুমের। কেন তারা জানায় নি তাকে। কেন তারা এতো বড় নিষ্ঠুরতা করেছে তার সাথে। কাঁদছে মাসুম। একাকি নিরব রাতে। কষ্ট হচ্ছে তার। বুক ফেটে যেতে চাইছে অসান্ত অস্থিরতায়। হঠাৎ কার কথাই চমকে উঠলো সে।
ভাইয়া ?
ঃ কে, মম?
ঃ হ্যাঁ, ভাইয়া। তুমি এখনো ঘুমাও নি? চোখ রগরাতে রগরাতে কাছে এলো মম।
ঃ এই তো ঘুমাবো এখন। একটু কাজ ছিলো, তাই ঘুমাইনি।
ঃ ভাইয়া?
ঃ হ্যাঁ, মম। কিছু বলবি?
কাছে এলো মম।
ঃ কী হলো? কিছু বলছিস না?
কথা বললো না মম। মাসুমের পাশে বসে পড়লো।
ঃ মম, রাত অনেক হয়েছে। যা ঘুমিয়ে পড়্। দেখ্ না কতো শীত পড়ছে। শরীর খারাপ করবে যে।
ঃ শরীর কী শুধু আমার খারাপ করবে, ভাইয়া?
ঃ হারে, আমিও তো শুয়ে পড়বো।
তুমি আগে শুয়ে পড়্, তারপর আমিও শুয়ে পড়বো।
ঃ সে কি রে?
ঃ হ্যাঁ। আমাকে তো খুব মিথ্যে বলো।
ঃ সারাদিন কিছু খাওনি অথচ...?
ঃ খাই নি মানে? কে বলেছে, সারাদিন কিছু খাইনি আমি?
ঃ খেয়েছো কিনা খেয়েছো সে তুমিই ভালো জানো?
ঃ তবে আমার মন বলছে, সারাদিন কিছু খাওনি তুমি?
চমকে উঠলো মাসুম। ধরা পড়ার ভয়ে ,“পাগলি! তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস তো, তাই বেশি ভাবিস।”
মম মাসুমের খুব কাছে গিয়ে বসলো। তারপর বাতিটা জ্বালালো। মুহূর্তে অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোকিত হলো। মাসুম দেখলো, মম’র চোখে-মুখে অজস্র মায়া ঝল-মল করছে। চেয়ে আছে মাসুম সেই মায়াময় মুখে। নিজেকে তার হালকা মনে হচ্ছে যেন।
ঃ ভাইয়া, আমায় একটা সত্য কথা বলবে?
ঃ কী? বল্।
ঃ আমি কদিন থেকেই লক্ষ্য করছি, তোমার কি যেন হয়েছে। তুমি কেমন যেন হয়ে গেছো? জানি, আমরা তোমার জন্য কিছুই করতে পারবো না। তাই বলে কী জানতেও পারবো না তোমার মনে জমানো কষ্টের কথা। এতোটা বঞ্চিত করো না ভাইয়া। অন্তত জানতে দাও জীবনের এই কাঠিন্ন্যতাকে। বুঝতে দাও জীবন কতোটা নির্মম হয়ে ধরা দিতে পারে। নইলে যে হেরে যাবো তোমার অনুপুস্থিতিতে। তুমি কী তা চাও?
মম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,“তুমিই তো বলো, মানুষকে তার আপন শক্তিতেই এগিয়ে চলতে হয়। অন্যের সহায়তা শুধু সেই চলাকে দুর্বার করে। তাহলে সত্য জীবন সর্ম্পকে জানতে দিতে চাও না কেন তুমি?”
মাসুম যেন অবাক হয়ে শুনছে মম’র কথা। ছোট্ট মমকে অনেক বড় মনে হচ্ছে তার কাছে এই মুহূর্তে। কেন এমন করে কথা বলছে মম? কী জানতে চায় সে? কতোটা সহ্য করতে পারবে তার অবুঝ মন? সজাগ হয় মাসুম।
ঃ মম,
দেখেছিস ক’টা বাজে? চল্, তোকে ঘুমিয়ে দিয়ে আসি। আর তোকে এতোসব ভাবতে হবে না। আমি তো এখনো আছি তোদের পাশে? তাছাড়া বাবার সম্মান রক্ষার্থে তোমাদের কিছুটা কষ্ট মেনে নিয়েই বাঁচতে হবে। কারণ, অর্থ প্রতি-পতি নারীর সম্মান খর্ব করেই সুখ বয়ে আনে। আর সেটা অন্তত আমি তোদের কাছে আশা করি না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মম বললো,“ভাইয়া, তোমার মুখের উপর কথা বলার মতো দুঃসাহস আমার নেই, তবে একটা সত্য কথা বলতে ইচ্ছে করছে। তোমার অজান্তে ই তোমার সেই ছোট্ট বোনগুলি বেশ বড় হয়ে গেছে। তারা কিছুটা বুঝতে শিখেছে। তুমি চাইলেই পারো তাদের সঙ্গে তোমার দুঃখ-কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে? তুমি একা নও ভাইয়া, আর সম্মানের কথা বলছো? সম্মানের ফুল ফুটিয়ে অসম্মানের পূজা দেওয়া সে কেমন সম্মান ভাইয়া,
তুমি বলে দিবে? এ সম্মান জীবনের পথে কতোটা সার্থকতা বয়ে আনতে পারে?”
মম’র কথা শুনে অবাক হলো মাসুম। এ যেন অন্য মমকে দেখছে সে। সেই শান্ত মম’র রূপ ধরে এক অগ্নি কন্যা। ওর অবুঝ হৃদয়ে অসংখ্য প্রশ্ন জেগেছে। কিন্তু কেন এতো প্রশ্ন জাগলো? তবে কী কিছু জানতে পেরেছে মম? না, জানতে দেওয়া যাবে না ওকে। ও যে বড় জেদি আর এক রোখা।
এতোক্ষণে হাসলো মাসুম।
ঃ মম, তোর কী হয়েছে রে? এমন করে বলছিস কেন?
ঃ ভাইয়া, তুমি আমাদের জন্য মানুষের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছো। যারা তোমার ধারের কাছে আসবার যোগ্যতা রাখে না তাদের কাছেও এমন কি সঞ্জয়দার কাছেও....।
কাঁদছে মম।
ঃ মম, এই মম কাঁদছিস কেন? কে বলেছে, আমি ছোট হয়েছি? কারো কাছে লেনদেন করলে বুঝি কেউ ছোট হয়ে যায়?
ঃ না ভাইয়া, যে উপকারের কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে তাকে অপমান করে, সে তো অনেক ছোট। সেই ছোট লোকের কাছে অসম্মানিত হয়েও তুমি যা করছো আমাদের জন্য।
চমকে উঠলো মাসুম। এতো কথা কী করে জানলো মম? তবু সে ভাবকে আড়াল করে বললো,“তোদের খুব কষ্ট হচ্ছে, তাই না রে? কী করবো বল? তোদের সব কষ্টই বুঝি আমি। তবু পারছি না, ক’মাস থেকে অফিসের ঝামেলাটা বাড়ায় বেতনটা আটকা পড়েছে। এদিকে তোর লেখাপড়াটাও বন্ধ হয়ে গেলো। কেন যে সবকিছু এলোমেলো হতে চলেছে, বুঝতি পারছি না। যাগগে। কষ্ট তো মানুষের জন্য; সে নিয়ে ভাবলে চলবে না। যা মম ঘুমিয়ে পড় গিয়ে।”
ঃ ভাইয়া,
অনেক রাত হয়েছে দেখেছিস। ঠিক আছে, তুমিও ঘুমাও। আস্তে আস্তে চলে গেলো মম। অবাক হয়ে দেখলো মাসুম মম’র চলে যাওয়ার পথে ।
চলবেই
মাসুমকে মা একদিন বলেছিলো,“ওরা না হয় মেয়ে মানুষ, তারপরে ছোট। কিন্তু তুই তো বড় হয়েছিস, তোকেও কী ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব সময় হাসতে হবে?”
ঃ কেন মা, বড়দের কী হাসতে নিষেধ আছে কোথাও? নাকি তুমি বলছো? হাসতে হাসতে সে আরো বলেছিলো,“জানো মা, যারা হাসতে জানে, কান্না তার কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। আর হাসি তোমাদের কাছে বিরক্তির হলেও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিই বটে।”
মা তখন বলেছিলো,“হয়েছে। তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। দেখিস, জীবনের কঠিন পথে হাসিকে আবার ভুলে না যাস।”
ঃ কী যে বলো মা! ভাইয়াই তো আমাদের হাসতে শিখিয়েছে। ভাইয়ার হাসিই আমাদের পথ দেখাবে, তুমি দেখে নিই? বলেছিলো মম।
ঃ হ্যাঁ, দোয়া করছি তাই যেন দেখায়। আমার আর ক’দিন।
ঃ কী যে বলো মা? তুমি আছো বলেই তো আমরা হাসছি। তোমরা না থাকলে আমরা হাসবো কী করে?
মাসুমের কথাই মা যেন তৎক্ষনাত অনমনা হয়েছিলেন। পরক্ষণেই বলেছিলেন,“মাসুম, আমরা না থাকলে তুই ওদের দেখিস বাবা। মনে রাখিস ওরা তোর ছোট বোন।”
ঃ মা, তোমার কী হয়েছে?
ঃ কই? কিছু না তো। বলেই মা হাসতে লাগলেন।
সেই মায়ের শেষ হাসির ঝংকার এখনো বাঁজে মাসুমের কানে। সে দিন মাসুম জানতো না। বাবা-মায়ের কঠিন অসুখের কথা সে যদি একটু জানতো..।
রাগ হয় মাসুমের। কেন তারা জানায় নি তাকে। কেন তারা এতো বড় নিষ্ঠুরতা করেছে তার সাথে। কাঁদছে মাসুম। একাকি নিরব রাতে। কষ্ট হচ্ছে তার। বুক ফেটে যেতে চাইছে অসান্ত অস্থিরতায়। হঠাৎ কার কথাই চমকে উঠলো সে।
ভাইয়া ?
ঃ কে, মম?
ঃ হ্যাঁ, ভাইয়া। তুমি এখনো ঘুমাও নি? চোখ রগরাতে রগরাতে কাছে এলো মম।
ঃ এই তো ঘুমাবো এখন। একটু কাজ ছিলো, তাই ঘুমাইনি।
ঃ ভাইয়া?
ঃ হ্যাঁ, মম। কিছু বলবি?
কাছে এলো মম।
ঃ কী হলো? কিছু বলছিস না?
কথা বললো না মম। মাসুমের পাশে বসে পড়লো।
ঃ মম, রাত অনেক হয়েছে। যা ঘুমিয়ে পড়্। দেখ্ না কতো শীত পড়ছে। শরীর খারাপ করবে যে।
ঃ শরীর কী শুধু আমার খারাপ করবে, ভাইয়া?
ঃ হারে, আমিও তো শুয়ে পড়বো।
তুমি আগে শুয়ে পড়্, তারপর আমিও শুয়ে পড়বো।
ঃ সে কি রে?
ঃ হ্যাঁ। আমাকে তো খুব মিথ্যে বলো।
ঃ সারাদিন কিছু খাওনি অথচ...?
ঃ খাই নি মানে? কে বলেছে, সারাদিন কিছু খাইনি আমি?
ঃ খেয়েছো কিনা খেয়েছো সে তুমিই ভালো জানো?
ঃ তবে আমার মন বলছে, সারাদিন কিছু খাওনি তুমি?
চমকে উঠলো মাসুম। ধরা পড়ার ভয়ে ,“পাগলি! তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস তো, তাই বেশি ভাবিস।”
মম মাসুমের খুব কাছে গিয়ে বসলো। তারপর বাতিটা জ্বালালো। মুহূর্তে অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোকিত হলো। মাসুম দেখলো, মম’র চোখে-মুখে অজস্র মায়া ঝল-মল করছে। চেয়ে আছে মাসুম সেই মায়াময় মুখে। নিজেকে তার হালকা মনে হচ্ছে যেন।
ঃ ভাইয়া, আমায় একটা সত্য কথা বলবে?
ঃ কী? বল্।
ঃ আমি কদিন থেকেই লক্ষ্য করছি, তোমার কি যেন হয়েছে। তুমি কেমন যেন হয়ে গেছো? জানি, আমরা তোমার জন্য কিছুই করতে পারবো না। তাই বলে কী জানতেও পারবো না তোমার মনে জমানো কষ্টের কথা। এতোটা বঞ্চিত করো না ভাইয়া। অন্তত জানতে দাও জীবনের এই কাঠিন্ন্যতাকে। বুঝতে দাও জীবন কতোটা নির্মম হয়ে ধরা দিতে পারে। নইলে যে হেরে যাবো তোমার অনুপুস্থিতিতে। তুমি কী তা চাও?
মম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,“তুমিই তো বলো, মানুষকে তার আপন শক্তিতেই এগিয়ে চলতে হয়। অন্যের সহায়তা শুধু সেই চলাকে দুর্বার করে। তাহলে সত্য জীবন সর্ম্পকে জানতে দিতে চাও না কেন তুমি?”
মাসুম যেন অবাক হয়ে শুনছে মম’র কথা। ছোট্ট মমকে অনেক বড় মনে হচ্ছে তার কাছে এই মুহূর্তে। কেন এমন করে কথা বলছে মম? কী জানতে চায় সে? কতোটা সহ্য করতে পারবে তার অবুঝ মন? সজাগ হয় মাসুম।
ঃ মম,
দেখেছিস ক’টা বাজে? চল্, তোকে ঘুমিয়ে দিয়ে আসি। আর তোকে এতোসব ভাবতে হবে না। আমি তো এখনো আছি তোদের পাশে? তাছাড়া বাবার সম্মান রক্ষার্থে তোমাদের কিছুটা কষ্ট মেনে নিয়েই বাঁচতে হবে। কারণ, অর্থ প্রতি-পতি নারীর সম্মান খর্ব করেই সুখ বয়ে আনে। আর সেটা অন্তত আমি তোদের কাছে আশা করি না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মম বললো,“ভাইয়া, তোমার মুখের উপর কথা বলার মতো দুঃসাহস আমার নেই, তবে একটা সত্য কথা বলতে ইচ্ছে করছে। তোমার অজান্তে ই তোমার সেই ছোট্ট বোনগুলি বেশ বড় হয়ে গেছে। তারা কিছুটা বুঝতে শিখেছে। তুমি চাইলেই পারো তাদের সঙ্গে তোমার দুঃখ-কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে? তুমি একা নও ভাইয়া, আর সম্মানের কথা বলছো? সম্মানের ফুল ফুটিয়ে অসম্মানের পূজা দেওয়া সে কেমন সম্মান ভাইয়া,
তুমি বলে দিবে? এ সম্মান জীবনের পথে কতোটা সার্থকতা বয়ে আনতে পারে?”
মম’র কথা শুনে অবাক হলো মাসুম। এ যেন অন্য মমকে দেখছে সে। সেই শান্ত মম’র রূপ ধরে এক অগ্নি কন্যা। ওর অবুঝ হৃদয়ে অসংখ্য প্রশ্ন জেগেছে। কিন্তু কেন এতো প্রশ্ন জাগলো? তবে কী কিছু জানতে পেরেছে মম? না, জানতে দেওয়া যাবে না ওকে। ও যে বড় জেদি আর এক রোখা।
এতোক্ষণে হাসলো মাসুম।
ঃ মম, তোর কী হয়েছে রে? এমন করে বলছিস কেন?
ঃ ভাইয়া, তুমি আমাদের জন্য মানুষের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছো। যারা তোমার ধারের কাছে আসবার যোগ্যতা রাখে না তাদের কাছেও এমন কি সঞ্জয়দার কাছেও....।
কাঁদছে মম।
ঃ মম, এই মম কাঁদছিস কেন? কে বলেছে, আমি ছোট হয়েছি? কারো কাছে লেনদেন করলে বুঝি কেউ ছোট হয়ে যায়?
ঃ না ভাইয়া, যে উপকারের কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে তাকে অপমান করে, সে তো অনেক ছোট। সেই ছোট লোকের কাছে অসম্মানিত হয়েও তুমি যা করছো আমাদের জন্য।
চমকে উঠলো মাসুম। এতো কথা কী করে জানলো মম? তবু সে ভাবকে আড়াল করে বললো,“তোদের খুব কষ্ট হচ্ছে, তাই না রে? কী করবো বল? তোদের সব কষ্টই বুঝি আমি। তবু পারছি না, ক’মাস থেকে অফিসের ঝামেলাটা বাড়ায় বেতনটা আটকা পড়েছে। এদিকে তোর লেখাপড়াটাও বন্ধ হয়ে গেলো। কেন যে সবকিছু এলোমেলো হতে চলেছে, বুঝতি পারছি না। যাগগে। কষ্ট তো মানুষের জন্য; সে নিয়ে ভাবলে চলবে না। যা মম ঘুমিয়ে পড় গিয়ে।”
ঃ ভাইয়া,
অনেক রাত হয়েছে দেখেছিস। ঠিক আছে, তুমিও ঘুমাও। আস্তে আস্তে চলে গেলো মম। অবাক হয়ে দেখলো মাসুম মম’র চলে যাওয়ার পথে ।
চলবেই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৫/০৪/২০১৭ভালো লাগলো প্রিয়।
-
আব্দুল হক ১৩/০৪/২০১৭সুন্দর মোহনীয় লিখেছেন! মোবারকবাদ!