রাত পোহাবার আগে ২২
ঘুমিয়ে পড়েছে মম, মুক্ত, মাসুম। ঘুম আসেনি শুধু মুন্নির চোঁখে। কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। চোঁখ জ্বালা করছে, মাথাটা কিট কিট করছে, বুকের ভেতরে চাপা একটা ব্যাথা মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। প্রচন্ড ব্যাথায় ঝিমিয়ে আসছে তার অশান্ত পৃথিবী। বারাক তাকে বলে দিয়েছে, তার সমস্ত দায়িত্ব সে নিতে চায়। কিন্তু মুন্নির পক্ষে তা কি করে সম্ভব। আজ দায়িত্ব নিতে চায় কাল অধিকার চাইবে। পরশু তা জোর করে আদায় করে নিবে। আস্তে আস্তে চলে যাবে মুন্নি চরিত্রহীন বারাকের অধিকারে। যা কখনো মেনে নিতে পারবে না মুন্নি কিংবা মাসুম। ভাবছে মুন্নি কষ্ট কাতর হৃদয় নিয়ে ভাবনার শেষ হচ্ছে না তার। ভাবনার শাখা-প্রশাখায় বিস্তার করছে নতুন নতুন বিপন্ন ভাবনাগুলো। মুক্তার অসুস্থতা বেড়েই চলেছে। মেয়েটা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই বসে পড়ে। অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠে। তেমন হাঁটতে পারে না। স্কুল করতেও ভালো লাগে না। প্রায় প্রায় অচেতন হয়ে যায় আর প্রচন্ড শীতে কাতরায়। মম’র মনে তেমন কোনো ভাবনা নেই। সে সব সময় চঞ্চল আর আনন্দ প্রিয়। কিন্তু তার মনেও হঠাৎ ছায়া পড়ে মাসুমের অনিপুন চাল-চলনে। সজাগ হয়ে উঠে সে। মাসুম যেখানে যায় সেখানেই ছায়ার মতো উপস্থিত হয় একটি স্মৃতি ছায়া। প্রথম দিনে চাকরীর হবার সম্ভাবনা থাকলেও পরক্ষণে তা হয়ে উঠেনি। মাসুম বুঝতে পারে না এর কারণ। তবু চেষ্টা চালিয়ে যায় সে। মানসম্পূর্ণ কাজের আশা ছেড়ে দেয়। এক সময় মনে হয় তার একটা চাকরীর দরকার। হোক তা নিম্মা মানের আপাতত ধরে থেকে পরে খুঁজে নিবে। কিন্তু না তাও পারে না সে। মাসুম হঠাৎ চমকে উঠে রাজু আহম্মেদের সাড়াই বুঝতে দেরি হয় না তার চাকরী না হবার কারণ। সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই সামনে দাড়ায় রাজু আহম্মেদের। রাজু আহম্মেদ কিছু বলার আগেই গাড়ি থেকে নেমে এলো অদিতা।
ঃ আরে মাসুম সাহেব যে! কী ব্যাপার, আপনি এখানে?
ঃ এই প্রশ্নটাই যদি আমি আপনাকে করি।
ঃ তাতে কোনো আপত্তি নেই। হাসলো অদিতা দুষ্ট হাসি। আচ্ছা, আমার পেছনে লাগার কারণটা জানতে পারি?
ঃ অফকোর্স। এর উত্তরটা সিম্পল ছিলো। তবু বলছি, ক্ষমতার লড়ায়ে সততার শক্তি পরীক্ষা।
চমকে উঠলো মাসুম। এমন একটি কঠিন কথা শুনতে হবে ভাবতে পারিনি সে। একজন আদর্শ বাবার সন্তান হয়ে এতোটা অধঃপতনে যেতে পারে কেউ? তা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না মাসুম। মাসুমকে নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে অদিতাই বললো,“ভয় নেই মিষ্টার মাসুম। সততা আপনাকে সার্থকতা দিবে এ বিশ্বাসে ফাটল ধরাবেন না।” আবারো একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে গেলো অদিতা। রাজু আহম্মেদও চলে গেলো তার পিছু পিছু। অবাক হয়ে চেয়ে দেখলো মাসুম। বুঝার চেষ্টা করছে অদিতার কথার ধরণ। মাসুমের ইচ্ছে হচ্ছে না আর কোনো চাকরীর পিছে ছুটতে। যেখানে তার উপযুক্ত একটি প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এ চেষ্টা তার অহেতুক। কিন্তু তাই বলে সে থেমে যাবে থামার ভয়ে। করবেই বা কি আর কিছু না করলে চলবেই বা কেমন করে।
ভালো লাগে না মাসুমের কিচ্ছু। মাসুম চলে যায় একটু সুখের আশায় চেয়ে থাকে সে উঁচু ফ্লাটটার দিকে। সেখানে প্রতিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে তার প্রাণের প্রতিমা- হৃদয়ের দেবী। অস্থির লাগে মাসুমের না দেখা যায় না তাকে। অনেকটা সময় অতিক্রম হয়ে যায়। একবারো পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে না প্রতিক্ষার চন্দ্র যুথি। হাঁপিয়ে উঠছে মাসুম নিজের অজান্তে। কষ্টের ঘুর্র্নি যেন তোড়পাড় করছে বুকের ভেতরে। কার সাড়ায় পেছন ফিরে চায় মাসুম। সেই বৃদ্ধ। আজ আর তার ঁেচাখে-মুখে নেই কোনো বিরক্তির চিহ্ন। সে আজ বড় শান্ত আর বিনয়ী।
ঃ কাকা, আজ আমায় একটু সময় দিন। প্লিজ, শুধু একবার দেখেই চলে যাবো। ক’দিন দেখিনি তো খুব খারাপ লাগছে। মনটাও ভালো নেই। কথাগুলো নিসংকচেই বললো মাসুম।
মাসুমের কথাই বৃদ্ধের ঁেচাখে জলের ধারা চিক চিক করে উঠলো। কথা বলতে পারছেন না তিনি। মাসুম আবারো বললো,“ভয় নেই কাকা, আপনার সমস্যা করবো না। কেউ দেখে ফেলার আগেই চলে যাবো।”
শুধু একটি বার হাত ইশারা করলো মাসুম। বৃদ্ধ এবার মাসুমের পিঠে হাত রাখলো। শান্ত কন্ঠে বললো,“আজ তুমি তাকে দেখতে পাবে না বাছা। ও তো চলে গেছে অনেক দূরে, এই বাংলার সীমানা ছেড়ে।”
হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলো মাসুম। মুহূর্তে অন্ধকার হয়ে উঠলো তার পৃথিবী। দেহের সব শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে তার। কষ্টের ধারা ঝর ঝর করে ঝরছে দু’চোখ দিয়ে। বৃদ্ধ তাকে শক্ত করে ধরে বললো,“আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবু সত্যকে মানতেই হবে। জানতে হবে সত্যের সত্যতা। শুনো বাছা, তুমি ভুল করেছিলে। তুমি মুসলিম আর সে ছিলো হিন্দু। তার পিতা জমিদার কিছু দিনের জন্য এসেছিলো এখানে। ভারতে তাদের পূর্ব বাসস্থান; সেখানেই চলে গেছে তারা। আর তুমি যাকে ভালোবাসতে সে ছিলো জন্ম থেকেই প্রতিবন্দি।”
ঃ প্রতিবন্দি! এতক্ষণে কথা বললো মাসুম।
ঃ হ্যাঁ, সে বোবা। কথা বলতে পারে না। আর তার উপরে তোমার ছায়া পড়াই তারা এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো। নয়তো আরো কিছু দিন থাকতো।
মাসুম কিছুই বলছে না। শুধু শুনছে বৃদ্ধের কথা। যে কথা শুনার জন্য বৃদ্ধকে খুঁজছিলো সে বার বার। আজ বৃদ্ধ তা যেচে বলছে কিন্তু সে বলার মধ্যে নেই কোন সৌন্দর্য কিংবা সার্থকতা। অনেকটা সময় পার হয়ে গেলে, গোধূলী যখন বিদায়ের রং মেখে চলেছে অন্ধকারের আড়ালে তখন বাসায় ফিরলো মাসুম। এক বুক শূন্যতার হাহাকার নিয়ে।
চলবেই
ঃ আরে মাসুম সাহেব যে! কী ব্যাপার, আপনি এখানে?
ঃ এই প্রশ্নটাই যদি আমি আপনাকে করি।
ঃ তাতে কোনো আপত্তি নেই। হাসলো অদিতা দুষ্ট হাসি। আচ্ছা, আমার পেছনে লাগার কারণটা জানতে পারি?
ঃ অফকোর্স। এর উত্তরটা সিম্পল ছিলো। তবু বলছি, ক্ষমতার লড়ায়ে সততার শক্তি পরীক্ষা।
চমকে উঠলো মাসুম। এমন একটি কঠিন কথা শুনতে হবে ভাবতে পারিনি সে। একজন আদর্শ বাবার সন্তান হয়ে এতোটা অধঃপতনে যেতে পারে কেউ? তা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না মাসুম। মাসুমকে নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে অদিতাই বললো,“ভয় নেই মিষ্টার মাসুম। সততা আপনাকে সার্থকতা দিবে এ বিশ্বাসে ফাটল ধরাবেন না।” আবারো একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে গেলো অদিতা। রাজু আহম্মেদও চলে গেলো তার পিছু পিছু। অবাক হয়ে চেয়ে দেখলো মাসুম। বুঝার চেষ্টা করছে অদিতার কথার ধরণ। মাসুমের ইচ্ছে হচ্ছে না আর কোনো চাকরীর পিছে ছুটতে। যেখানে তার উপযুক্ত একটি প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এ চেষ্টা তার অহেতুক। কিন্তু তাই বলে সে থেমে যাবে থামার ভয়ে। করবেই বা কি আর কিছু না করলে চলবেই বা কেমন করে।
ভালো লাগে না মাসুমের কিচ্ছু। মাসুম চলে যায় একটু সুখের আশায় চেয়ে থাকে সে উঁচু ফ্লাটটার দিকে। সেখানে প্রতিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে তার প্রাণের প্রতিমা- হৃদয়ের দেবী। অস্থির লাগে মাসুমের না দেখা যায় না তাকে। অনেকটা সময় অতিক্রম হয়ে যায়। একবারো পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে না প্রতিক্ষার চন্দ্র যুথি। হাঁপিয়ে উঠছে মাসুম নিজের অজান্তে। কষ্টের ঘুর্র্নি যেন তোড়পাড় করছে বুকের ভেতরে। কার সাড়ায় পেছন ফিরে চায় মাসুম। সেই বৃদ্ধ। আজ আর তার ঁেচাখে-মুখে নেই কোনো বিরক্তির চিহ্ন। সে আজ বড় শান্ত আর বিনয়ী।
ঃ কাকা, আজ আমায় একটু সময় দিন। প্লিজ, শুধু একবার দেখেই চলে যাবো। ক’দিন দেখিনি তো খুব খারাপ লাগছে। মনটাও ভালো নেই। কথাগুলো নিসংকচেই বললো মাসুম।
মাসুমের কথাই বৃদ্ধের ঁেচাখে জলের ধারা চিক চিক করে উঠলো। কথা বলতে পারছেন না তিনি। মাসুম আবারো বললো,“ভয় নেই কাকা, আপনার সমস্যা করবো না। কেউ দেখে ফেলার আগেই চলে যাবো।”
শুধু একটি বার হাত ইশারা করলো মাসুম। বৃদ্ধ এবার মাসুমের পিঠে হাত রাখলো। শান্ত কন্ঠে বললো,“আজ তুমি তাকে দেখতে পাবে না বাছা। ও তো চলে গেছে অনেক দূরে, এই বাংলার সীমানা ছেড়ে।”
হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলো মাসুম। মুহূর্তে অন্ধকার হয়ে উঠলো তার পৃথিবী। দেহের সব শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে তার। কষ্টের ধারা ঝর ঝর করে ঝরছে দু’চোখ দিয়ে। বৃদ্ধ তাকে শক্ত করে ধরে বললো,“আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবু সত্যকে মানতেই হবে। জানতে হবে সত্যের সত্যতা। শুনো বাছা, তুমি ভুল করেছিলে। তুমি মুসলিম আর সে ছিলো হিন্দু। তার পিতা জমিদার কিছু দিনের জন্য এসেছিলো এখানে। ভারতে তাদের পূর্ব বাসস্থান; সেখানেই চলে গেছে তারা। আর তুমি যাকে ভালোবাসতে সে ছিলো জন্ম থেকেই প্রতিবন্দি।”
ঃ প্রতিবন্দি! এতক্ষণে কথা বললো মাসুম।
ঃ হ্যাঁ, সে বোবা। কথা বলতে পারে না। আর তার উপরে তোমার ছায়া পড়াই তারা এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো। নয়তো আরো কিছু দিন থাকতো।
মাসুম কিছুই বলছে না। শুধু শুনছে বৃদ্ধের কথা। যে কথা শুনার জন্য বৃদ্ধকে খুঁজছিলো সে বার বার। আজ বৃদ্ধ তা যেচে বলছে কিন্তু সে বলার মধ্যে নেই কোন সৌন্দর্য কিংবা সার্থকতা। অনেকটা সময় পার হয়ে গেলে, গোধূলী যখন বিদায়ের রং মেখে চলেছে অন্ধকারের আড়ালে তখন বাসায় ফিরলো মাসুম। এক বুক শূন্যতার হাহাকার নিয়ে।
চলবেই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ০৮/০৪/২০১৭ভাল লাগল
-
আব্দুল হক ০৭/০৪/২০১৭আপনার প্রতিটি লিখা পড়লে আবেগে , আফ্লুত হয়ে যাই!!
-
মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন ০৬/০৪/২০১৭হুম।।।
ভাল লাগলো ,,,,,অফুরন্ত ভাল লাগা।
সেই প্রথম গল্পের মতই।।। -
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ০৬/০৪/২০১৭দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে....
অবশেষে এল: পর্ব- ২২
ধন্যবাদ