রাত পোহাবার আগে ২১
মাসুম হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো অনেকটা পথ। কোথায় যাবে সে জানে না। তবু হাঁটছে এলোমেলো। হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয়ে গেলো পরিচিত এক মুখের সঙ্গে। বহুদিনের পুরোনো সে মুখ। তার বাবার অফিসের কেরানি জব্বার চাচা। মাসুম ছালাম দিয়ে বললো,“চাচা, কেমন আছেন? চাচি আম্মা ভালো আছে তো?”
ঃ হ্যাঁ, বাবা। সবাই ভালো আছে। তোমরা ভালো আছো তো?
ঃ হ্যাঁ, চাচা। আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
ঃ তোমার বাবার মৃত্যুর পর আমার আর চাকরী করাই হলো না, তাই গ্রামে গিয়েছিলাম। এই তো ক’দিন হলো এসেছি।
মাসুম উদাস হয়ে শুনছে কিন্তু মন এখানে নেই তার। মন চলে গেছে অন্য কোথাও। যেখানে মুন্নি, মম আর মুক্তার মতো নিস্পাপ তিনটি মুখ চেয়ে আছে তার পথে। মাসুম কিছুটা সময় ব্যায় করে বাসায় ফিরলো। চোখে-মুখে তার অজস্র বিমর্ষতা। ভাইয়াকে অসময়ে ফিরতে দেখে খটকা লাগলো মম’র। মম মাসুমের রুমে গিয়ে অবাক হলো। মাসুম শুয়ে পড়েছে। কি যেন ভাবছে গভীর ভাবে। মম পাশে গিয়ে বসলো। হাত রাখলো মাসুমের কপালে। জিজ্ঞেস করলো,“ভাইয়া, কী হয়েছে তোমার?”
পাশ ফিরে তাকালো মাসুম। “কে মম? কলেজে যাসনি?”
ঃ না, ভাইয়া। আজ কলেজে ক্লাস হবে না। ভাইয়া, তুমি অফিস থেকে এখনি ফিরলে যে?
ঃ এইতো একটা কাজ আছে তাই আসতে হলো। মাসুম মিথ্যে বললো।
মম’র বিশ্বাস হলো না মাসুমের কথা। তবু বললো,“তুমি কী এখনি বেরুবে?”
ঃ হাঁ, একটু রেস্ট করেই বেরুবো।
ঃ ভাইয়া, আমি তোমার প্রিয় নারকেল দুধী পায়েশ রেঁধেছি, নিয়ে আসবো? মম’র মুখে মধুর হাসি।
মাসুম হাসতে চেষ্টা করলো। বললো,“যা নিয়ে আয়।”
মম চলে গেলো। মাসুম ভাবলো মমকে নিয়ে। মম যেমনি ডানপিটে তেমনি দূরন্ত। মাসুম কি ভেবে অনেকটা সচেতন হলো। মাসুমের কিছু হলে তার ঁেচাখে ধরা পড়বেই। কখনো সে তা স্বীকার করে। কখনো করে না। মাসুম জানে মম’র চোখে ধরা পড়েছে সে। তবু সে ভাব গোপন করেছে অনিশ্চিত ধারণার কারণ জানতে হয়তো। মাসুমের কষ্ট হচ্ছে, এদের মুখের নিস্পাপ হাসি কি সে ধরে রাখতে পারবে? নাকি মুছে যাবে এই হাসি? মাসুম বুঝতে পারে না অদিতা তার উপর এতোটা অসন্তষ্টির কারণ কী? কী এমন ক্ষতি করেছিলো সে তার? আর এমডি স্যার সেই বা কেমন ভালোবাসতো তাকে? কিছু না জেনে-শুনে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো কী করে? অন্তত একবার তো তার সঙ্গে কথা বলতে পারতো। জানতে চাইতে পারতো এর কারণ। মিথ্যে সব মিথ্যে। এমডি তাকে ভালোবাসেনি। সবই তার কাজের ক্ষাতিরে মিথ্যে অভিনয়। ওরা মাসুমের মূল্য দিতে জানে না। অন্যের কথা ভাবে না। নিজ স্বার্থের কাছে চিরকাল বন্দি। অন্যকে বুঝার ক্ষমতা ওদের নেই। মম’র আগমন বুঝতে পেরেই স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো মাসুম।
ঃ মম, মুন্নি কী কলেজে গেছে?
ঃ হ্যাঁ, ভাইয়া। মুক্তা আপুর সঙ্গেই ফিরবে।
ঃ তুই কী একাই বাসায় থাকবি?
এমন একটা প্রশ্নে অবাক হলো মম। এর আগে তো অনেক বার একা একা থেকেছে মম। ভাইয়া তো এমন প্রশ্ন করেনি কোনো দিন।
ঃ আচ্ছা ভাইয়া, তোমার কী হয়েছে বলতো?
থতমত খেয়ে গেলো মাসুম। বললো,“কই, কিছু না তো।”
ঃ না, ভাইয়া। তোমাকে কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে। তুমি কী যেন লুকাচ্ছো।
ঃ আরে না, এমনি বললাম এই আর কি? হেসে দিলো মাসুম জোর করা হাসি। মমও হাসলো কিন্তু সে হাসি মুক্ত নয়।
মম মাসুমকে পায়েশ পরিবেশন করলো। মাসুম খেতে পারলো না তেমন। তবু প্রসংশা করে বললো,“জানিস তোর রান্নাটা একদম মায়ের মতো হয়েছে। তুই খুব ভালো রাঁধিস। ঠিক মায়ের মতো। তোর শ্বশুর বাড়ি থেকে বেশ প্রসংশা আসবে রে।”
মম মেকি রাগ দেখালো। বললো,“কই, খেলেই না তো?”
ঃ রেখে দে, পরে খাবো। এখনি খেয়ে আসলাম তাই পেটে ধরছে না।
মম এবার হাসলো। মাসুমও হাসলো। কিন্তু সে হাসি মিলিয়ে গেলো হৃদয়ের জমা তিমির অন্ধকারে। নিজেকে আড়াল করে বাইরে চলে গেলো মাসুম।
মাসুম বেশ কয়েকখানে চাকরী খুঁজলো কিন্তু কোথাও একটি উপযুক্ত চাকরীর সন্ধান পেলো না। সারাটা বিকেল চললো তার এলোমেলো পথ চলায় শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরার পথে তার নির্বাক প্রিয়ার কথা মনে হলো। সেই বস্তির গলির পাশে উঁচু দালানটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো অনেকক্ষণ। কিন্তু না, দেখা পেলো না সেই হৃদয় দেবী অপূর্ব অপরূপার। মনটা তাই আরো বেশি খারাপ হলো তার । আস্তে আস্তে ঘরে ফিরে চললো সে। পৃথিবীটাকে মনে হলো ঘোর অন্ধকারে পাথরের মতো নিশ্চল। কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়লো মাসুম। রাত দশটার দিকে একবার মম এসে ভাইয়ার শান্ত মুখটার দিকে চেয়ে থাকলো। অসময়েই ঘুমিয়ে পড়েছে মাসুম। এতো তাড়াতাড়ি কখনোই শোয়না সে। মাথায় হাত রাখলো মম। ঘুম ভাঙ্গলো না মাসুমের। কিছুক্ষণ পরে গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো সে।
চলেবই
ঃ হ্যাঁ, বাবা। সবাই ভালো আছে। তোমরা ভালো আছো তো?
ঃ হ্যাঁ, চাচা। আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
ঃ তোমার বাবার মৃত্যুর পর আমার আর চাকরী করাই হলো না, তাই গ্রামে গিয়েছিলাম। এই তো ক’দিন হলো এসেছি।
মাসুম উদাস হয়ে শুনছে কিন্তু মন এখানে নেই তার। মন চলে গেছে অন্য কোথাও। যেখানে মুন্নি, মম আর মুক্তার মতো নিস্পাপ তিনটি মুখ চেয়ে আছে তার পথে। মাসুম কিছুটা সময় ব্যায় করে বাসায় ফিরলো। চোখে-মুখে তার অজস্র বিমর্ষতা। ভাইয়াকে অসময়ে ফিরতে দেখে খটকা লাগলো মম’র। মম মাসুমের রুমে গিয়ে অবাক হলো। মাসুম শুয়ে পড়েছে। কি যেন ভাবছে গভীর ভাবে। মম পাশে গিয়ে বসলো। হাত রাখলো মাসুমের কপালে। জিজ্ঞেস করলো,“ভাইয়া, কী হয়েছে তোমার?”
পাশ ফিরে তাকালো মাসুম। “কে মম? কলেজে যাসনি?”
ঃ না, ভাইয়া। আজ কলেজে ক্লাস হবে না। ভাইয়া, তুমি অফিস থেকে এখনি ফিরলে যে?
ঃ এইতো একটা কাজ আছে তাই আসতে হলো। মাসুম মিথ্যে বললো।
মম’র বিশ্বাস হলো না মাসুমের কথা। তবু বললো,“তুমি কী এখনি বেরুবে?”
ঃ হাঁ, একটু রেস্ট করেই বেরুবো।
ঃ ভাইয়া, আমি তোমার প্রিয় নারকেল দুধী পায়েশ রেঁধেছি, নিয়ে আসবো? মম’র মুখে মধুর হাসি।
মাসুম হাসতে চেষ্টা করলো। বললো,“যা নিয়ে আয়।”
মম চলে গেলো। মাসুম ভাবলো মমকে নিয়ে। মম যেমনি ডানপিটে তেমনি দূরন্ত। মাসুম কি ভেবে অনেকটা সচেতন হলো। মাসুমের কিছু হলে তার ঁেচাখে ধরা পড়বেই। কখনো সে তা স্বীকার করে। কখনো করে না। মাসুম জানে মম’র চোখে ধরা পড়েছে সে। তবু সে ভাব গোপন করেছে অনিশ্চিত ধারণার কারণ জানতে হয়তো। মাসুমের কষ্ট হচ্ছে, এদের মুখের নিস্পাপ হাসি কি সে ধরে রাখতে পারবে? নাকি মুছে যাবে এই হাসি? মাসুম বুঝতে পারে না অদিতা তার উপর এতোটা অসন্তষ্টির কারণ কী? কী এমন ক্ষতি করেছিলো সে তার? আর এমডি স্যার সেই বা কেমন ভালোবাসতো তাকে? কিছু না জেনে-শুনে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো কী করে? অন্তত একবার তো তার সঙ্গে কথা বলতে পারতো। জানতে চাইতে পারতো এর কারণ। মিথ্যে সব মিথ্যে। এমডি তাকে ভালোবাসেনি। সবই তার কাজের ক্ষাতিরে মিথ্যে অভিনয়। ওরা মাসুমের মূল্য দিতে জানে না। অন্যের কথা ভাবে না। নিজ স্বার্থের কাছে চিরকাল বন্দি। অন্যকে বুঝার ক্ষমতা ওদের নেই। মম’র আগমন বুঝতে পেরেই স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো মাসুম।
ঃ মম, মুন্নি কী কলেজে গেছে?
ঃ হ্যাঁ, ভাইয়া। মুক্তা আপুর সঙ্গেই ফিরবে।
ঃ তুই কী একাই বাসায় থাকবি?
এমন একটা প্রশ্নে অবাক হলো মম। এর আগে তো অনেক বার একা একা থেকেছে মম। ভাইয়া তো এমন প্রশ্ন করেনি কোনো দিন।
ঃ আচ্ছা ভাইয়া, তোমার কী হয়েছে বলতো?
থতমত খেয়ে গেলো মাসুম। বললো,“কই, কিছু না তো।”
ঃ না, ভাইয়া। তোমাকে কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে। তুমি কী যেন লুকাচ্ছো।
ঃ আরে না, এমনি বললাম এই আর কি? হেসে দিলো মাসুম জোর করা হাসি। মমও হাসলো কিন্তু সে হাসি মুক্ত নয়।
মম মাসুমকে পায়েশ পরিবেশন করলো। মাসুম খেতে পারলো না তেমন। তবু প্রসংশা করে বললো,“জানিস তোর রান্নাটা একদম মায়ের মতো হয়েছে। তুই খুব ভালো রাঁধিস। ঠিক মায়ের মতো। তোর শ্বশুর বাড়ি থেকে বেশ প্রসংশা আসবে রে।”
মম মেকি রাগ দেখালো। বললো,“কই, খেলেই না তো?”
ঃ রেখে দে, পরে খাবো। এখনি খেয়ে আসলাম তাই পেটে ধরছে না।
মম এবার হাসলো। মাসুমও হাসলো। কিন্তু সে হাসি মিলিয়ে গেলো হৃদয়ের জমা তিমির অন্ধকারে। নিজেকে আড়াল করে বাইরে চলে গেলো মাসুম।
মাসুম বেশ কয়েকখানে চাকরী খুঁজলো কিন্তু কোথাও একটি উপযুক্ত চাকরীর সন্ধান পেলো না। সারাটা বিকেল চললো তার এলোমেলো পথ চলায় শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরার পথে তার নির্বাক প্রিয়ার কথা মনে হলো। সেই বস্তির গলির পাশে উঁচু দালানটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো অনেকক্ষণ। কিন্তু না, দেখা পেলো না সেই হৃদয় দেবী অপূর্ব অপরূপার। মনটা তাই আরো বেশি খারাপ হলো তার । আস্তে আস্তে ঘরে ফিরে চললো সে। পৃথিবীটাকে মনে হলো ঘোর অন্ধকারে পাথরের মতো নিশ্চল। কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়লো মাসুম। রাত দশটার দিকে একবার মম এসে ভাইয়ার শান্ত মুখটার দিকে চেয়ে থাকলো। অসময়েই ঘুমিয়ে পড়েছে মাসুম। এতো তাড়াতাড়ি কখনোই শোয়না সে। মাথায় হাত রাখলো মম। ঘুম ভাঙ্গলো না মাসুমের। কিছুক্ষণ পরে গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো সে।
চলেবই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ০১/০৪/২০১৭বাংলা সাহিত্যের অপূর্ব সৃষ্টি
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ৩০/০৩/২০১৭সমসাময়িক বাস্তবতার এক চিত্র- বেকারত্ত্ব, বিপন্ন ক্যারিয়ার, স্বপ্ন-আশা, আত্মা, রোমান্টিকতা/ প্রেম/বিরহহের এক দারুণ চিত্র।
লেখিকার এক অনবদ্য সৃষ্টি, যতই পড়ি অবাক হৃদয়।
অনেক অনেক শুভকামনা