www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ২০



মুন্নি আজ বেশ কিছু দিন পর কলেজে যাবার জন্য পা বাড়ালো ছোট্ট একটা ভয় নিয়েই। কিছুদূর হেঁটেই রিক্সায় উঠলো সে। রিক্সা এগিয়ে যাচ্ছে আর দূর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসছে। কিন্তু সে দিকে খেয়াল নেই মুন্নির। তার ভাবনা কতক্ষণে সে কলেজে পৌঁছাবে। কলেজের গেটেই দেখা হলো রনজুর। রনজু ওকে দেখেই একগাল হাসি দিয়ে বললো,“আরে মুন্নি, তুমি! কেমন আছো? তুমি নাকি অসুস্থ ছিলে?
ঃ হ্যাঁ, কে বলেছে?
ঃ রবিন বললো।
ঃ রবিন? ঁেচাখ কুঁচকালো মুন্নি।
ঃ হ্যাঁ। ও নাকি তোমার ছোট বোনের কাছ থেকে জেনেছে।
ঃ ওহ, হ্যাঁ। অসুস্থ ছিলাম। মুন্নি দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো। বললো, এখন ভালো আছি।
মুন্নি ভেতরে ঢুকছে। ওকে দেখেই দূর থেকে এগিয়ে এলো রাহাতের দু’ বন্ধু, বনি আর আতিক।
ঃ কী ব্যাপার মুন্নি, কেমন আছো? হারিয়ে গেছিলা নাকি?
মুন্নির কথা বলতে ইচ্ছে করলো না তাদের সঙ্গে। তাই এদের কথা না শুনার ভান করেই এগিয়ে চললো। মুন্নির বন্ধুরা মুন্নিকে দেখেই অবাক।
ঃ কী রে, তোরা এভাবে দেখছিস কেন?
একজন এগিয়ে এসে বললো,“মুন্নি, তুই আবার লেখাপড়া করবি?
ঃ লেখাপড়া করবো মানে! কী বলছিস তোরা?
বান্ধবীরা সবাই একে-অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ী করছে। কিছু বুঝতে পারছে না। মুন্নি সম্পার দু’হাত ধরে নিয়ে যায়।
ঃ সম্পা, বলতো কী হয়েছে? কী বলছিস তোরা?
সম্পা বুঝতে পারে কিছু। মুন্নিকে বলে,“মুন্নি, আরে তেমন কিছু না। চল্, ওদিকটায় গিয়ে বসি।”
ওরা একটা মহুয়া গাছের নিচে বসলো। মুন্নি এখনো উৎকন্ঠা। “বলো না সম্পা। কী হয়েছে?”
সম্পা অনমনা হয়ে বললো,“আমি জানি তুই এসবের কিছুই জানিস না। অথচ সারা কলেজ জুড়ে তোর সমালোচনা চলছে।”
ধক করে উঠলো মুন্নির মন। মানে?
ঃ মানে আর কি। ক’দিন আগে বারাক নামের একটা ছেলে এসেছিলো। সে নাকি চেয়ারম্যানের ছেলে। অনেক দাপট তার বাবার। ছেলেটাকে দেখেই রাহাত পর্যন্ত ভয় পেলো। জানিস। থেমে গেলো সম্পা।
ঃ কী হলো সম্পা, বলো।
ঃ কি আর হবে। ছেলেটা সবাইকে বলেছিলো, তুই নাকি তার বাগদত্তা। তোর দিকে যেন কেউ নজর না দেয়। যদি দেয় তো বাঁচবে না সে।
চমকে উঠলো মুন্নি। আন্ধকার দেখছে সে। হীম হয়ে আসছে শরিলের সমস্ত রক্ত। তবে কী মুন্নি বাঁচতে পারলো না ঐ পিচাশটার হাত থেকে?
সম্পা বুঝতে পারলো মুন্নির মন। সে তাকে সান্তনা দিবার চেষ্টা করলো। বললো,“মুন্নি, এভাবে ভেঙ্গে পরিস না। কিছু হবে না। দেখবি একদিন সব ঝামেলা চুকে যাবে। ও ছেলে চরিত্রহীন। আজ তোকে ভালো লেগেছে, ক’দিন পরে অন্য কাউকে। ওদের আবার মনের শক্তি আছে নাকি? ওরা বাহ্যিক শক্তির বলেই চলে। সে শক্তি সিমীত সময়ের। তুই ধৈর্য র। কাঁদিস না।
ঃ কিন্তু সম্পা, একথা ভাইয়া জানলে কী হবে একবার ভেবেছিস?
ঃ হ্যাঁ, জানি। মাসুম ভাই সইতে পারবে না এ অপমান। তবু ওদের সঙ্গে লাগা যাবে না রে। ওরা মানুষ না। তুই ভাইয়াকে একথা জানাস না।
ঃ কিন্তু ভাইয়া যদি জানে?
ঃ জানবে না। শোন, তুই বারাকের সঙ্গে এমন আচরণ করবি যাতে সে মনে করে ওকে তুই ভালোবাসিস। অনেক ভালোবাসিস। আর এরমধ্যে পরীক্ষাটা শেষ কর। তারপর সিদ্ধান্ত নিস কি করবি। জানিস এটাতে তোর একটা ভালোই হয়েছে। তোকে আর কেউ বিরক্ত করবে না।
ঃ কিন্তু সম্পা বারিক কী আমাকে আস্থ রাখবে?
ঃ আরে ভয় পাসনে। খারাপ মানুষেরা অনেকটা ভালো হয়। তুই ওকে ভালোবেসে বুঝাবি আমার মনে হয় ও ভালোবাসা পেলে তোর কথা শুনবে। চেষ্টা করে দেখ, ওর যদি সত্যি ভালোলাগে তবে শুনতেও পারে। নয়তো তুই কিছুতেই বাঁচবি নারে। ওরা যে কঠিন হিংস্র।

ঃ সম্পা, ভাইয়াকে এ ব্যাপারে বলিস না। ভাইয়া অসংযত হয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবে। মুন্নি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। কেঁদে দেয় সে। সম্পা এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলো না। হঠাৎ মুন্নির কান্না ব্যাথিত করে তাকে। সেও কাঁদে তার সঙ্গে অনেকক্ষণ। পরে হালকা হয় মুন্নি। সম্পা তাকে বুঝায়। মুন্নির মনে হয় এ তার ভাগ্যের বিড়ম্বনা। সৌন্দর্যের অভিশাপ। অনেকক্ষণ গল্প করার পর চলে যায় ওরা। ফিরে যায় গন্তব্যে।

মাসুমের আশংকার সত্য রূপ নিলো। অফিস রুমের সামনেই দেখা হলো রাজু আহম্মেদের সঙ্গে। সে সাগ্রহে মাসুমকে লম্বা একটা ছালাম দিয়ে জানতে চাইলো,“কেমন আছেন স্যার?”
ঃ জ্বি, ভালো। আপনি ভালো তো?
ঃ হ্যাঁ।
মুচকি মুচকি হাসছে লোকটা। মাসুমের সন্দেহ হলো, নিজ টেবিলে বরখাস্ত লেটারটা দেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো সে। তারপর সেটা হাতে করে এমডির চেম্বারে গেলো। না এমডি স্যার নেই। তার আসনে বসে আছে অদিতা। মাসুম কাছে গেলো। অদিতা খাতা দেখছিলো তাই তার দিকে না তাকিয়েই বললো,“কিছু বলবেন?”
ঃ জ্বি। তবে স্যার থাকলে বেশি কিছু বলতাম। কিন্তু তিনি যখন নেই তখন আপনাকে শুধু একটা কথা বলছি। মিথ্যে চমৎকার হলেও সত্য কিন্তু সুন্দর আর সে সৌন্দর্যের সন্ধান সবাই পায় না। আমি চলে যাচ্ছি, তবে আসবো। গুডবাই। শান্তভাবে চলে গেলো মাসুম। সেদিকে চাইলো অদিতা। বুকটা কেঁপে উঠলো তার। ঠোঁটের কোনায় ভেসে উঠলো সার্থকতার হাসি। মাসুম অফিস রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে গেলো। অদিতা দেখলো দূর থেকে। রাজু আহম্মেদ কাছে এসে দাঁড়ালো অদিতার। অদিতা টের পেলো না কিছু। কথা বললো রাজু আহম্মদ। হলো তো, আমি কতোবার বুঝিয়েছিলাম উনাকে যে, ম্যাডামের সঙ্গে সংযত হয়ে কথা বলুন। না, উনি শুনলেন না বরং উল্টা আমাকেই উপদেশ শুনিয়ে দিলেন যে, ন্যায়ের পথ পিচ্ছিল হলেও মজবুত। এ পথে চলতে গেলে পড়ে যাবার ভয় থাকবেই তাতে ভয় পেলে চলবে না। এখন। এখন তিনিই পড়ে গিয়ে ল্যাংড়া হলেন।
রাজু আহম্মেদের দিকে তাকালো অদিতা। আর কিছু সাহস হলো না রাজুর।
ঃ কি হলো, থামলে যে? বলো, আর কী বলেছিলো মাসুম?
রাজুর কাছে হঠাৎ অদিতাকে অচেনা মনে হলো। সে কিছুই বললো না। অদিতা রাজুর মুখের দিকে চেয়ে বললো,“দূর্বলতা চিরকাল ভীরু।”
রাজু অদিতার কথার কোনো মানে বুঝলো না। চলে গেলো অদিতা। রাজু ভাবছে, কথাটা কাকে বললো অদিতা। মাসুমকে নাকি তাকে?


চলবেই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৯০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৩/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast