রাত পোহাবার আগে ১৭
ক’দিন হলো এমডি অফিসে আসেনি। অসুস্থতার কারণেই তার দায়িত্ব পড়েছে মাসুমের উপর। মাসুম তার সাধ্যনুযায়ি এমডির কিছুটা দায়িত্ব পালন করে চলছে। এ মাসে যে মালগুলো ডেলিভারী দেবার কথা তার সম্পূর্ণগুলো অন্য এক কোম্পানীর কাছ থেকে নেওয়া। কারণ, এ মাসে তাদের তেমন কাজ নাই। আর তার একমাত্র কারণ হিসাবে মাসুম অদিতার উপস্থিতিটাকেই ধরে নিয়েছে। কেননা, অদিতার পেছনে রাজু আহম্মেদের সময় দেওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু তাকে সময় দিতে গিয়ে রাজু আহম্মেদ তার কাজে ফাঁকি দিচ্ছে আর সকল কর্মচারী সুযোগ পেয়ে তাই করে কোম্পানীর এতো বড় একটা ক্ষতি...।
মাসুম খাতাপত্র অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি না দেখে হতাশ হলো। রাজু আহম্মেদকে ঢেকে পাঠালো। সে সঙ্গে অদিতাকেও। রাজু আহম্মদ এসে ছালাম দিলে মাসুম তার কারণ জানতে চাইলো। মাসুম অদিতাকে বলে,“দেখুন মিস অদিতা, আমরা এখানে চাকরী করতে এসেছি। ব্যক্তিগত কোনো কারণে যদি কোম্পানীর বড় রকমের ক্ষতি করি তাহলে এর ক্ষতি পূরুণ শুধু মালিক নয়- কর্মচারীকেউ দেওয়া উচিৎ।
ঃ কেন? এ ক্ষতি তো কারো ব্যক্তিগত কারণের সঙ্গে জড়িত নয়। তাহলে ব্যক্তিগত কারণের কথা আসছে কেন?
ঃ এজন্যই আসছে যে, গতো পাঁচ বছরে এ কোম্পানী শুধু সুনাম পেয়েছে। কিন্তু এবার যা পাবে তা আপনাকে নয়, আপনার বাবাকেও অনেক ছোট করে দিবে।
ঃ সে আমাদের কাম্য নয় ঠিক। সে যার বিষয় সেই ভালো বুঝবে। আপনি এমডির দায়িত্বে আছেন; এমডি নন নিশ্চয় । দায়িত্ব আপনাকে যতোটা বলে ততোটা করুন। আগে পিছের আপনার কাজ নয়। হন হন করে চলে গেলো অদিতা। অবাক হলো মাসুম। এ কেমন মেয়ে রে বাপু, নিজের বাবার ভালো-মন্দ বোঝে না। মাসুম এবার রাজুকে বললো,“আপনি আমাদের ডেলিভারী ওয়াডার আর সে অনুযায়ী মালের হিসাবটা মিলিয়ে নিন।”
ঃ জ্বি, আচ্ছা। স্যার, আমার মনে হয় ম্যাডামের সাথে সংযত হয়েই কথা বলা উচিৎ। উনি একদম স্যারের মতো না। বাপ মেয়ে দু’টি আলাদা মানুষ।
মাসুম বললো,“অন্যায় জেনেও মানতে হবে এ বিষয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি বরং তোমার কাজ করো।”
ঃ জ্বি, আচ্ছা। বলে চলে গেলো রাজু। কলম মুখে দিয়ে মাসুম কিছু ভাবছিলো। এমন সময় পিয়ন এসে জানালো যে, অদিতা ম্যাডাম চলে যাচ্ছে। মাসুম কিছু বললো না শুধু শুনলো। কঠিন একটা পর্যায়ে এসে গেছে তার। একদিকে সততা অন্য দিকে চাকরী। মাসুম জানে, এ মেয়ে সব করতে পারে। বাবাকে বলে তার চাকরীটাও নষ্ট করে দিতে পারে। হয়তো বা তাই করবে এক সময়। কিন্তু কেন? এ কেমন অরাজকতা মেয়ে হয়ে বাবার ভালো-মন্দ বুঝবে না। আবার অন্যায় জেনেও তাই করতে হবে কেন? মাসুমের এতো দিনের আদর্শ। এতো দিনের সততা তিল তিল করে গড়া এমডি স্যারের এই কোম্পানীকে কেমন করে জেনে-শুনে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে মাসুম। মাসুমকে অফিসের বাইরেও অনেক ভালোবাসেন তিনি। তার সে ভালোবাসার প্রতিদান কী এভাবেই দিতে হবে মাসুমকে? না মাসুম পারবে না এতোটা অন্যায় করতে। যায় যাবে তার চাকরী। জীবন দিবে তবু অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করবে না। তাতে যা হবার তাই হবে। মাসুম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, এ অর্ডার-এর পেছনে একটা কঠিন ষড়যন্ত্র। যে মাল তারা তৈরি করেনি তার মালিক তারা হয় কি করে। রাজু আহম্মেদের চক্রান্তেই একাজে মদদ দিয়েছিলো এমডি। একমাত্র মেয়ের বিশ্বাসে বিশ্বস্ত কর্মচারী যে তার এতো বড় একটা ক্ষতি করবে উনি..? না এ অর্ডার কিছুতেই পাশ করবে না মাসুম। এতো বড় প্রতারণা, কোম্পানীকে ধ্বংস করে দিবে জেনে-শুনে তা হতে দিবে না মাসুম। আপাতত ক্ষমতা তার হাতে সে যা করবে তাই হবে। হ্যাঁ, তাই হবে। কিন্তু তার আগে একবার এমডিকে এ বিষয়ে কিছু বলা উচিৎ। হ্যাঁ, মাসুম কাল একবার তার বাসায় গিয়ে কথা বলবে তার সাথে। উনি জ্ঞানী লোক, মাসুমের কথা বুঝার চেষ্টা করবে নিশ্চয়। নিজের ভালো-মন্দ তিনি অবশ্যই বুঝবেন। মাসুমের চাকরীতে জয়েন্টের পর যতোগুলো মাল তারা ডেলিভারী দিয়েছে তার সবগুলোই ছিল সু-রুচি সম্পূর্ণ। আর সে কারণেই তাদের এই ছোট্ট কোম্পানীটি অল্প সময়ে এতোটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু আজ কি একটা সামান্য লাভের আশায় ধ্বংস হতে চলেছে এই সম্মান। না না এ হতে দিবে না মাসুম, কিছুতেই না।
মুন্নি অনেকটা সুস্থ। মুক্তা শরীরটা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। কদিন থেকেই সে বার বার বাবা-মায়ের কথা বলছে। বিভিন্ন মুখি প্রশ্ন, তার বাবা কেমন ছিলো? মা দেখতে কেমন? সবার বাবা নয়তো মা মরে যায়। কিন্তু তার বাবা-মা দুজনেই মরলো কেন? কেউ যেন বলেছে, তার ভাগ্যে ভালো নয় তাই তার জন্মে তার বাবা-মা দুজনকেই কেড়ে নিয়েছে। এ কথাই অনেক কষ্ট পেয়েছিলো ছোট্ট মেয়েটা। মম মুক্তার কথা শুনে বলেছে,“কে বলেছে মুক্তা তোকে এসব কথা?”
ঃ স্কুলের এক দিদি।
ঃ মিথ্যা বলেছে উনি। জানিস না এমন মানুষরা ভালো-মন্দ বোঝে না। কারণ, জানে না অকারণে মিছে কথা বলে দেয়। আমায় একবার দেখিয়ে দিবি তো তার মুখটা। এমন এক চড় লাগাবো গাল-মুখ সব এক হয়ে যাবে।
মম’র রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায় মুক্তা। মুন্নি বলে,“মম, এতো রাগছিস কেন?”
ঃ রাগবো না। এতো ছোট একটা মেয়েকে এধরনের কথা বলে কেউ! বেয়াদব মহিলা। উনার কি বিবেক বুদ্ধি আছে কিছু? তাই যদি থাকতো তবে মানুষকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। চল মুক্তা, আমরা ছাদে যাই।
মুন্নি ক’দিন পর আজ সইচ্ছাই হাঁটছে। ওরা দুজন ছাদে চলে যেতেই মম’র মনে হলো টুনাটুনির কথা সেও চলে গেলো ঝাউ গাছটার নিচে। উপরে চোখ যেতেই হাসলো মম। অন্তুও হাসছে। খুব খুশি লাগছে মম’র। কেউ তার জন্য পথ চেয়েছিলো ভেবে। মমকে আজ সুন্দর দেখাচ্ছে। অন্তুর মনে হচ্ছে, সে যেন কতোযুগ দেখেনি মমকে। নিস্পলক চোঁখে চেয়ে আছে সে। মম বুঝতে পারলো অন্তুর অবস্থা। গোলাপ গাছের একটা গোলাপ ছিড়ে দিবার ভান করলো সে। অন্তু হাসলো। একটু ক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলো সে। জানালার কাছ থেকে পরক্ষণে এসে কি একটা ফিকিয়ে দিলো মম’র দিকে। কাগজের একটা চিরকুট। তাতে সুন্দর করে লেখা ‘আমারটা তোমার কাছে রেখে দাও আমার করে’।
মম আবারো হাসলো। অন্তু চেয়ে আছে। মম গোলাপটা জড়িয়ে ধরে পালিয়ে গেলো। অন্তুর মনে হলো, সে যেন অন্য জগতে চলে গেছে।
মাসুম যে ধারণা করেছিলো, তার চেয়ে অনেকটা বেশি খারাপ মালগুলো ,একেবারেই গ্রহণ যোগ্য নয়। বিভিন্ন দোষে দুষ্ট। মাসুম ভাবতেও পারছে না এমন মানের মালের পক্ষে এমডি মত দেয় কী করে ? আমাদের মাল আর এমালের মধ্যে কতোটা পাথর্ক। স্যার তো এমন মাল পছন্দ করার কথা নয়। তবে কী স্যারকে দেখানো হয়নি মালগুলো?
এখানেও কী রাজু আর অদিতা? হ্যাঁ, এটা নিশ্চয় রাজু আহম্মেদের আর এক ফন্দি। তিনি নিশ্চয় স্যারের দুর্বলতার আঘাত হেনে তার মেয়েকে দিয়ে তার নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। কিন্তু না মাসুম থাকতে এতোবড় ক্ষতি সে কিছুতেই হতে দিবে না। যে করেই হোক, সে এ বিষয়ে এমডি সঙ্গে কথা বলবেই।
এমডি কাছে সে এখনোই একবার যাবে। কিন্তু মাসুম এই পাঁচ বছরে একবারো যায়নি তার বাসায়। তাছাড়া অদিতা তো আজ অফিসে আসেনি। বাসায় গিয়ে যদি তার সঙ্গেই আগে দেখা হয়ে যায়? অদিতা যদি বাসায় যাবার কারণ জানতে চায়?
হ্যাঁ পেয়েছি। বলবো, স্যারকে দেখতে এলাম।
মাসুম এমডি বাসায় পৌঁছাতেই দারোয়ান জানালো, উনারা কেউ বাসায় নাই। মাসুম দেখলো, একবার বাসাটার দিকে। বেশ বড় বাসা। কয়তলা হবে? সম্ভবত পাঁচতলা। মাসুম দারোয়ানের কাছে গিয়ে বললো,“আচ্ছা, উনার মেয়ে মিস অদিতাও কী বাসায় নেই?”
ঃ আরে না গো সাব। হেইতো সাররে লইয়া গেলো।
ঃ আচ্ছা, উনারা কবে ফিরবে বলতে পারেন?
ঃ না সাব, হেইডা কইতে পারুম না। তিনারা তো হেইডা কইয়া যায় নাই।
মাসুম পকেটে হাত দিলো। মোবাইলটা বের করে কল দিলো একবার। ওপার থেকে ভেসে এলো নারী কন্ঠ। হ্যালো, কে বলছেন?
ঃ কে মিস অদিতা?
ঃ হ্যাঁ, আমি বলছি।
ঃ কেমন আছেন?
ঃ জ্বি, ভালো। আমি কী একটু স্যারের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
ঃ সরি, বাবার কথা বলা নিষেধ। আপনি যা বলার আমাকেই বলতে পারেন।
ঃ না, মানে। আমি আপনাদের বাসায় এসেছিলাম স্যারের সঙ্গে কথা বলবো বলে।
ঃ হ্যাঁ, সে কথা আমাকেই বলুন না।
ঃ না, না। তেমন কিছু না। কথা লুকালো মাসুম।
ঃ দেখুন মিষ্টার মাসুম, আপনি আপনার কাজ করুন।
ঃ যান...।
ঃ আর হ্যাঁ, মালের ডেলিভারী অর্ডার হলে আমাকে জানাবেন প্লিজ। আর আমরা বেশ কিছু দিন এখানে আছি। মনে রাখবেন বাবার অনুপস্থিতিতে সব দায়িত্ব আপনার।
চলবেই
মাসুম খাতাপত্র অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি না দেখে হতাশ হলো। রাজু আহম্মেদকে ঢেকে পাঠালো। সে সঙ্গে অদিতাকেও। রাজু আহম্মদ এসে ছালাম দিলে মাসুম তার কারণ জানতে চাইলো। মাসুম অদিতাকে বলে,“দেখুন মিস অদিতা, আমরা এখানে চাকরী করতে এসেছি। ব্যক্তিগত কোনো কারণে যদি কোম্পানীর বড় রকমের ক্ষতি করি তাহলে এর ক্ষতি পূরুণ শুধু মালিক নয়- কর্মচারীকেউ দেওয়া উচিৎ।
ঃ কেন? এ ক্ষতি তো কারো ব্যক্তিগত কারণের সঙ্গে জড়িত নয়। তাহলে ব্যক্তিগত কারণের কথা আসছে কেন?
ঃ এজন্যই আসছে যে, গতো পাঁচ বছরে এ কোম্পানী শুধু সুনাম পেয়েছে। কিন্তু এবার যা পাবে তা আপনাকে নয়, আপনার বাবাকেও অনেক ছোট করে দিবে।
ঃ সে আমাদের কাম্য নয় ঠিক। সে যার বিষয় সেই ভালো বুঝবে। আপনি এমডির দায়িত্বে আছেন; এমডি নন নিশ্চয় । দায়িত্ব আপনাকে যতোটা বলে ততোটা করুন। আগে পিছের আপনার কাজ নয়। হন হন করে চলে গেলো অদিতা। অবাক হলো মাসুম। এ কেমন মেয়ে রে বাপু, নিজের বাবার ভালো-মন্দ বোঝে না। মাসুম এবার রাজুকে বললো,“আপনি আমাদের ডেলিভারী ওয়াডার আর সে অনুযায়ী মালের হিসাবটা মিলিয়ে নিন।”
ঃ জ্বি, আচ্ছা। স্যার, আমার মনে হয় ম্যাডামের সাথে সংযত হয়েই কথা বলা উচিৎ। উনি একদম স্যারের মতো না। বাপ মেয়ে দু’টি আলাদা মানুষ।
মাসুম বললো,“অন্যায় জেনেও মানতে হবে এ বিষয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি বরং তোমার কাজ করো।”
ঃ জ্বি, আচ্ছা। বলে চলে গেলো রাজু। কলম মুখে দিয়ে মাসুম কিছু ভাবছিলো। এমন সময় পিয়ন এসে জানালো যে, অদিতা ম্যাডাম চলে যাচ্ছে। মাসুম কিছু বললো না শুধু শুনলো। কঠিন একটা পর্যায়ে এসে গেছে তার। একদিকে সততা অন্য দিকে চাকরী। মাসুম জানে, এ মেয়ে সব করতে পারে। বাবাকে বলে তার চাকরীটাও নষ্ট করে দিতে পারে। হয়তো বা তাই করবে এক সময়। কিন্তু কেন? এ কেমন অরাজকতা মেয়ে হয়ে বাবার ভালো-মন্দ বুঝবে না। আবার অন্যায় জেনেও তাই করতে হবে কেন? মাসুমের এতো দিনের আদর্শ। এতো দিনের সততা তিল তিল করে গড়া এমডি স্যারের এই কোম্পানীকে কেমন করে জেনে-শুনে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে মাসুম। মাসুমকে অফিসের বাইরেও অনেক ভালোবাসেন তিনি। তার সে ভালোবাসার প্রতিদান কী এভাবেই দিতে হবে মাসুমকে? না মাসুম পারবে না এতোটা অন্যায় করতে। যায় যাবে তার চাকরী। জীবন দিবে তবু অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করবে না। তাতে যা হবার তাই হবে। মাসুম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, এ অর্ডার-এর পেছনে একটা কঠিন ষড়যন্ত্র। যে মাল তারা তৈরি করেনি তার মালিক তারা হয় কি করে। রাজু আহম্মেদের চক্রান্তেই একাজে মদদ দিয়েছিলো এমডি। একমাত্র মেয়ের বিশ্বাসে বিশ্বস্ত কর্মচারী যে তার এতো বড় একটা ক্ষতি করবে উনি..? না এ অর্ডার কিছুতেই পাশ করবে না মাসুম। এতো বড় প্রতারণা, কোম্পানীকে ধ্বংস করে দিবে জেনে-শুনে তা হতে দিবে না মাসুম। আপাতত ক্ষমতা তার হাতে সে যা করবে তাই হবে। হ্যাঁ, তাই হবে। কিন্তু তার আগে একবার এমডিকে এ বিষয়ে কিছু বলা উচিৎ। হ্যাঁ, মাসুম কাল একবার তার বাসায় গিয়ে কথা বলবে তার সাথে। উনি জ্ঞানী লোক, মাসুমের কথা বুঝার চেষ্টা করবে নিশ্চয়। নিজের ভালো-মন্দ তিনি অবশ্যই বুঝবেন। মাসুমের চাকরীতে জয়েন্টের পর যতোগুলো মাল তারা ডেলিভারী দিয়েছে তার সবগুলোই ছিল সু-রুচি সম্পূর্ণ। আর সে কারণেই তাদের এই ছোট্ট কোম্পানীটি অল্প সময়ে এতোটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু আজ কি একটা সামান্য লাভের আশায় ধ্বংস হতে চলেছে এই সম্মান। না না এ হতে দিবে না মাসুম, কিছুতেই না।
মুন্নি অনেকটা সুস্থ। মুক্তা শরীরটা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। কদিন থেকেই সে বার বার বাবা-মায়ের কথা বলছে। বিভিন্ন মুখি প্রশ্ন, তার বাবা কেমন ছিলো? মা দেখতে কেমন? সবার বাবা নয়তো মা মরে যায়। কিন্তু তার বাবা-মা দুজনেই মরলো কেন? কেউ যেন বলেছে, তার ভাগ্যে ভালো নয় তাই তার জন্মে তার বাবা-মা দুজনকেই কেড়ে নিয়েছে। এ কথাই অনেক কষ্ট পেয়েছিলো ছোট্ট মেয়েটা। মম মুক্তার কথা শুনে বলেছে,“কে বলেছে মুক্তা তোকে এসব কথা?”
ঃ স্কুলের এক দিদি।
ঃ মিথ্যা বলেছে উনি। জানিস না এমন মানুষরা ভালো-মন্দ বোঝে না। কারণ, জানে না অকারণে মিছে কথা বলে দেয়। আমায় একবার দেখিয়ে দিবি তো তার মুখটা। এমন এক চড় লাগাবো গাল-মুখ সব এক হয়ে যাবে।
মম’র রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায় মুক্তা। মুন্নি বলে,“মম, এতো রাগছিস কেন?”
ঃ রাগবো না। এতো ছোট একটা মেয়েকে এধরনের কথা বলে কেউ! বেয়াদব মহিলা। উনার কি বিবেক বুদ্ধি আছে কিছু? তাই যদি থাকতো তবে মানুষকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। চল মুক্তা, আমরা ছাদে যাই।
মুন্নি ক’দিন পর আজ সইচ্ছাই হাঁটছে। ওরা দুজন ছাদে চলে যেতেই মম’র মনে হলো টুনাটুনির কথা সেও চলে গেলো ঝাউ গাছটার নিচে। উপরে চোখ যেতেই হাসলো মম। অন্তুও হাসছে। খুব খুশি লাগছে মম’র। কেউ তার জন্য পথ চেয়েছিলো ভেবে। মমকে আজ সুন্দর দেখাচ্ছে। অন্তুর মনে হচ্ছে, সে যেন কতোযুগ দেখেনি মমকে। নিস্পলক চোঁখে চেয়ে আছে সে। মম বুঝতে পারলো অন্তুর অবস্থা। গোলাপ গাছের একটা গোলাপ ছিড়ে দিবার ভান করলো সে। অন্তু হাসলো। একটু ক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলো সে। জানালার কাছ থেকে পরক্ষণে এসে কি একটা ফিকিয়ে দিলো মম’র দিকে। কাগজের একটা চিরকুট। তাতে সুন্দর করে লেখা ‘আমারটা তোমার কাছে রেখে দাও আমার করে’।
মম আবারো হাসলো। অন্তু চেয়ে আছে। মম গোলাপটা জড়িয়ে ধরে পালিয়ে গেলো। অন্তুর মনে হলো, সে যেন অন্য জগতে চলে গেছে।
মাসুম যে ধারণা করেছিলো, তার চেয়ে অনেকটা বেশি খারাপ মালগুলো ,একেবারেই গ্রহণ যোগ্য নয়। বিভিন্ন দোষে দুষ্ট। মাসুম ভাবতেও পারছে না এমন মানের মালের পক্ষে এমডি মত দেয় কী করে ? আমাদের মাল আর এমালের মধ্যে কতোটা পাথর্ক। স্যার তো এমন মাল পছন্দ করার কথা নয়। তবে কী স্যারকে দেখানো হয়নি মালগুলো?
এখানেও কী রাজু আর অদিতা? হ্যাঁ, এটা নিশ্চয় রাজু আহম্মেদের আর এক ফন্দি। তিনি নিশ্চয় স্যারের দুর্বলতার আঘাত হেনে তার মেয়েকে দিয়ে তার নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। কিন্তু না মাসুম থাকতে এতোবড় ক্ষতি সে কিছুতেই হতে দিবে না। যে করেই হোক, সে এ বিষয়ে এমডি সঙ্গে কথা বলবেই।
এমডি কাছে সে এখনোই একবার যাবে। কিন্তু মাসুম এই পাঁচ বছরে একবারো যায়নি তার বাসায়। তাছাড়া অদিতা তো আজ অফিসে আসেনি। বাসায় গিয়ে যদি তার সঙ্গেই আগে দেখা হয়ে যায়? অদিতা যদি বাসায় যাবার কারণ জানতে চায়?
হ্যাঁ পেয়েছি। বলবো, স্যারকে দেখতে এলাম।
মাসুম এমডি বাসায় পৌঁছাতেই দারোয়ান জানালো, উনারা কেউ বাসায় নাই। মাসুম দেখলো, একবার বাসাটার দিকে। বেশ বড় বাসা। কয়তলা হবে? সম্ভবত পাঁচতলা। মাসুম দারোয়ানের কাছে গিয়ে বললো,“আচ্ছা, উনার মেয়ে মিস অদিতাও কী বাসায় নেই?”
ঃ আরে না গো সাব। হেইতো সাররে লইয়া গেলো।
ঃ আচ্ছা, উনারা কবে ফিরবে বলতে পারেন?
ঃ না সাব, হেইডা কইতে পারুম না। তিনারা তো হেইডা কইয়া যায় নাই।
মাসুম পকেটে হাত দিলো। মোবাইলটা বের করে কল দিলো একবার। ওপার থেকে ভেসে এলো নারী কন্ঠ। হ্যালো, কে বলছেন?
ঃ কে মিস অদিতা?
ঃ হ্যাঁ, আমি বলছি।
ঃ কেমন আছেন?
ঃ জ্বি, ভালো। আমি কী একটু স্যারের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
ঃ সরি, বাবার কথা বলা নিষেধ। আপনি যা বলার আমাকেই বলতে পারেন।
ঃ না, মানে। আমি আপনাদের বাসায় এসেছিলাম স্যারের সঙ্গে কথা বলবো বলে।
ঃ হ্যাঁ, সে কথা আমাকেই বলুন না।
ঃ না, না। তেমন কিছু না। কথা লুকালো মাসুম।
ঃ দেখুন মিষ্টার মাসুম, আপনি আপনার কাজ করুন।
ঃ যান...।
ঃ আর হ্যাঁ, মালের ডেলিভারী অর্ডার হলে আমাকে জানাবেন প্লিজ। আর আমরা বেশ কিছু দিন এখানে আছি। মনে রাখবেন বাবার অনুপস্থিতিতে সব দায়িত্ব আপনার।
চলবেই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০২/০৩/২০১৭আগে পড়ি পরে বলবো।
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ০২/০৩/২০১৭ওয়াও দারুন থিমে কাজ করে যাচ্ছেন আপনি। হয়ত পরে আরো গুছিয়ে-গাছিয়ে উপন্যাস বের করে ফেলবেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
ভালো থাকবেন আর লিখে যাবেন।