www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ১৬

বস্তিরর গলি ধরে হাঁটছে মাসুম। আজ যদি বৃদ্ধ তাকে তাড়াতে আসে তো সে তাকে ধরে নিয়ে যাবে কোনো নির্জনে। জেনে নিবে তার অপূর্ব অপরূপ প্রিয়ার অজানা অধ্যায়। কিছুটা দূর থেকেই দেখতে পায় মাসুম। ঐ তো তার প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে তারই প্রতিক্ষায়। একটি বার দেখার মাঝে যেন তার অনন্ত সুখ ।আজ ইচ্ছে করেই একঘন্টা আগে বেরিয়ে আসে মাসুম। কাল যখন ডাক্তার মুন্নিকে দেখে বলেছিলো যে, মানসিক দুচিন্তা তখনি মাসুমের মনে হয়েছিলো তার দূর দর্শণ প্রিয়ার কথা। তারো হয়তো এমনি কষ্ট হয় মাসুমকে না দেখে। তাই তো চেয়ে থাকে প্রিয়া। মাসুমের মনে হয় সেও কী মানসিক রুগী হয়ে যাচ্ছে? মুন্নির মতো একটি বার সেই প্রিয়ার মুখ না দেখলেই তারো তো পাগল পাগল লাগে। কি এমন আছে ঐ নারীর মধ্যে যার দরুন এতোটা উন্নামনা তার? এতোটা উদাসিনতা, এতোটা নির্ভিকতা? যার সঙ্গে কথা হয় না। যার সম্পর্কে জানে না। যাকে বুঝতে পারেনি সেই এক নারী কেমন করে তার সবকিছু জয় করে বসেছে। কেন এমন হলো মাসুমের? হ্যাঁ, এভাবে আর নয় অজানার আন্নেষনে ।জানতে চায় মাসুম। বুঝতে চায় তাকে। কাছে টানতে চায়, এতোটা দূরে থাকতে চায় না সে। কাছে পেতে চায় খুব কাছে। যতোটা কাছে এলে জুড়াবে তার অতৃপ্ত হৃদয়। ধরে রাখতে চায় আপনার সীমানায় দুই হাতের কাছাকাছি। কিন্তু তাই বা কি করে সম্ভব। তার তো অনেক দায়িত্ব। কর্তব্যের কাছে সে তো জিম্মি। নিজের কথা ভাববার সময় তার এখন হয়নি। হঠাৎ দূর থেকে উঁকি দেয় দুটি করুণ মুখচ্ছবি। অশ্রুতে ভরে উঠে মাসুমের দুটি চোখ। এলোমেলো হয়ে যায় মাসুমের সামনে পেছোনের দিনগুলো। দাঁড়িয়ে আছে মাসুম ঝাপসা চোঁখে। উৎকন্ঠা প্রিয়ার অধরেও নেমেছে মনিলতা। অনেকক্ষণ দাঁড়ালো মাসুম। না, কেউ এলো না। জানা হলো না তার কিছু। ঘড়িতে চেয়ে চমকে উঠলো। সময় হয়েছে অফিসের। চলে যাচ্ছে সে। পাশ ফিরে আর একবার তাকালো। দেখলো, হাত ইশারায় কি যেন বুঝাতে চাইছে মেয়েটা। বুঝতে পারছে না মাসুম। আবার ফিরে গিয়ে সেও ইশারা করলো। শুনে বললো, কী? মেয়েটা আবারো কি যেন বুঝলো। কিন্তু কিছু বুঝলো না মাসুম। আরো কিছুক্ষণ থেকে হেসে উঠে ভেতরে চলে গেলো মেয়েটা। মাসুম আর দাঁড়াতে পারলো না। চলে গেলো অফিসে।

অফিসে প্রথমেই দেখা হলো অদিতার সঙ্গে। মাসুম এই ভয়টাই করছিলো মনে মনে। আজ তার অনেকটাই দেরি হয়েছে। তাই কেউ কিছু বললেও কিছু বলার নেই তার। তাই বলে অদিতার সামনেই পড়বে ভাবেনি। মেয়েটা যেন আগে এসে তারই প্রতিক্ষায় ছিলো। একটা দোষ পেলেই হয়। না জানি কি বলে বসে। উঁচু-নিচু কোনো কথা মুখে আটকায় না মেয়েটার। যাই বলুক ভয় পায় না মাসুম। নিজের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে সে সোজা নিজের েচম্বারে যায়। চেয়ারে বসেই স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। অবাক হয়ে যায় সে। এ কি? কিছু বললো না কেন মেয়েটা? এতোটা দেরি দেখে তো নিরব থাকার কথা নয় তার। তবে কী অন্য রকম কিছু আছে তার ভাগ্যে? বলা যায় না, হীম্মত ওয়ালি মেয়েদের মন বুঝা বড় কঠিন। বাবার আদুরে কন্যা কখন কি বলে, কি করে বসে কে জানে?

ভয় কাটে না মাসুমের। এই চাকরীটাই তার একমাত্র অবলম্বন। বাবা-মার অসুস্থতায় যা ছিলো সব শেষ করেছে মাসুম। এখন ঐ একটা বাসা ছাড়া কিছু নেই তার। যদি কিছু একটা হয়ে যায় তবে কেমন করে চলবে তার সংসার। অজানা ভয়ে আৎকে উঠে সে। ঘামতে থাকে তার সমস্ত শরীর। পায়চারি করতে থাকে কিছুক্ষণ। আবার বসে টেবিলে। খাতা বের করতে যাবে তাৎক্ষনিক কন্ঠ শোনা যায় অদিতার।
ঃ মিস্টার মাসুম, ভেতরে আসতে পারি?
ঃ হ্যাঁ, আসুন। কাঁপছে মাসুম।
ঃ কী ব্যাপার, আপনার শরীর খারাপ নাকি? সামনে এগুতে এগুতে বললো অদিতা।
ঃ না মানে হ্যাঁ। এই তো একটু জ্বর জ্বর লাগছিলো।
ঃ ও
ঃ এই! শুনলাম আপনার বোন নাকি অসুস্থ?
ঃ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আরে দাঁড়িয়ে কেন? বসুন।
ঃ থ্যাংক ইউ। বসলো অদিতা। দেখুন মিস্টার মাসুম, এই অফিসে ম্যানেজারের পরেই আপনার স্থান। আর তাই আপনার কিছু বিশেষ দায়িত্ব আছে নিশ্চয়?
ঃ হ্যাঁ।
ঃ যদি তাই হয় তবে আপনি আপনার বিষয়ে সক্রিয় হয়ে উঠুন। অফিসের বাইরেও এই অফিস আপনার পরিচয় বহন করে। মনে রাখবেন, এমডি আপনার বন্ধু নয়।
চমকে উঠলো মাসুম। কি বুঝাতে চায় মেয়েটা? আর কেনই বা এভাবে কথা বলছে? হঠাৎ অদিতি বলে উঠলো,“আমি আসছি, আপনি আপনার কাজ করুন।”
চলে গেলো অদিতা। অন্য রকম এক ধাককায় ঘুরতে লাগলো মাসুমের পৃথিবী। স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লাগলো তার। অফিস থেকে বেরুতেই দেখা হলো অন্তুর সঙ্গে। পাশের বাসার ভাড়াটিয়া হিসাবেই তার সঙ্গে মাসুমের একটা সম্পর্ক রয়ে গেছে। অন্য একটা কোম্পানীর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে অন্তু। মাসুমের কাছে অন্তুকে ম্যানেজার সাজে মানায় না। মাসুমের মনে হয় অন্তু অতি সাধারণ এক সরল প্রকৃতির লোক। স্বাধীন সত্ত্বায় তাকে অনেকটা আপন মনে করে। বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান ইচ্ছার বসবতি হয়েই স্বেচ্ছায় নেওয়া এই চাকরীতে অনেকটা সন্তষ্ট্য অন্তু। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরতে হয় বলেই অন্তু যেন প্রাণ ফিরে পায়। বন্ধি জীবন তার একেবারেই পছন্দ নয়। তাইতো অনেক কোম্পানীর অনেক চাকরী ছেড়েছে, এমন কি, সরকারী চাকরীও ছেড়েছে। চাকরি মান সম্পূর্ণ মনে হয়নি। অত্যন্ত জেদি আর আত্ম সচেতন ব্যক্তিত্ববান। এর জন্য অন্তুকে ভালো লাগে মাসুমের।
ঃ আরে অন্তু সাহেব!
ঃ হ্যাঁ ভাইজান, আপনি? চলেন একসঙ্গে যাওয়া যাক। মাসুমের মনে হলো কেউ একজন তার পথ চেয়ে আছে।
ঃ না, না। আপনি যান আমার একটু কাজ আছে।
ঃ হ্যাঁ, সে হবে ক্ষণে।
ঃ চলেন চা খাওয়া যাক আগে।
কি যে করেন না। হাসলো অন্তু। তাই বললেও ছাড়ছি না। শুনলাম আপনার ছোট বোন নাকি অসুস্থ?
ঃ হ্যাঁ।
ঃ এখন কেমন?
ঃ অনেকটা সুস্থ।
ঃ যাক আলহামদুল্লিাহ।
অন্তু তার হুন্ডাটা স্ট্যান্ড করে মাসুমকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে এগুচ্ছে। ও দের রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখে একটা ভিখারী শ্রেণীর লোক এগিয়ে এলো। স্যার, ও স্যার, আমারে একটু ভাত খাওয়াইবেন স্যার। কদিন কিছু খাই নাই। ক্ষিধায় পেট জ্বইলা যায়।
অন্তু বললো,“বসেন চাচা। এই যে চেয়ার। এই উনারে ইচ্ছা মতো খাইয়া দে।”
মাসুম দেখলো, লোকটার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। অন্তু বললো,“আচ্ছা মাসুম ভাই, চাচা জান, চাচী আম্মার মৃত্যুর কোনো কারণ জানতে পেরেছিলেন?”
ঃ না। ডাক্তার কোনো রোগ ধরতে পারেনি।
বাবা-মার কথাই উদাস হলো মাসুম। নিজেকে অপরাধী মনে হলো অন্তুর। তাই কথা পাল্টানোর চেষ্টা করলো। বললো,“মাসুম ভাই, বয়স তো কম হলো না। কী করা যায় বলুন তো? বাসা থেকে বাবা-মার নির্দেশ আসছে বিয়ে করতে হবে।”
ঃ তাই তো, তাহলে দেরি করছেন কেন? বিয়েটা করে ফেলুন। আর হ্যাঁ, দাওয়াত করতে ভুলবেন না যেন। আর না ইচ্ছে করলেই তো আর সব কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠে না সব সময়। তাই না?
ঃ হ্যাঁ জানেন, আমার না একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
ঃ কেমন?
ঃ আমার পরিচিত একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগে। কিন্তু সে কথা বলা হয় না তাকে।
হাসালো মাসুম।
ঃ কেন?
ঃ মেয়েটা একটু আলাদা। যদি ফিরিয়ে দেয়?
ঃ কী যে বলেন। আপনি বলেই ফেলুন না একবার। নিশ্চয় আপনি সে মেয়ের অযোগ্য নয়।
ঃ না, তা নয়। কিন্তু ভয় হয়। বুঝলেন অসম্ভব ভয়। যদি দূরে চলে যায়। তবে যা আছে তাও হারাবো।
ঃ আরে না, যাবে না। অন্তুর পিঠে হাত রাখে মাসুম। বলে, বিশ্বাসে বস্তু মেলে। হয়তো সেও আপনাকে পছন্দ করে।
ঃ ফুল চন্দন পড়ু–ক আপনার মুখে।
ঃ তাই ,এতোটা ।
ঃ হ্যাঁ তো বলছি কি।
ঃ আচ্ছা, আপনি এক কাজ করতে পারেন। আপনার অভিভাবকের দ্বারা প্রস্তাব পাঠাতে পারেন।
ঃ হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি। কিন্তু...।
ঃ আরে না কোনো কিন্তু নয়। আপনি এতো ভালোবাসেন যাকে তার প্রতি এতটা অবিশ্বাস সে কি হয়।
অন্তু ভাবে অন্য কথা। মাসুম বলে, আজ উঠি। কি বলেন আর মনের কথা বলে ফেলায় ভালো। নয়তো কষ্ট বাড়ে। চলে গেলো মাসুম। হাসলো অন্তু। সে তো বুঝলাম। কিন্তু সমস্যা যে সিরিয়ালের বেলায় । ভিক্ষুকটা ততক্ষণে খেয়েই চলেছে। অন্তু আর কিছুক্ষণ থেকে বিল মিটিয়ে চলে গেলো ।







চলবেই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৭৮৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast