www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ১৫

এমডিকে বলে বাসায় ফিরলো মাসুম। মুন্নির অসুখ বেড়েছে। ওকে ডাক্তারের বাসায় নিতে হবে। মুক্তার অবস্থা ভালো নয়। মাসুমকে অসময়ে যেতে দেখে প্রতিবাদ করলো অদিতা।
ঃ বাবা, মাসুম সাহ্বে চলে গেলেন?
ঃ হে রে মা, ওর ছোট বোন অসুস্থ।
ঃ মানে, ওর ছোট বোন তো এসেছিলো?  
ঃ হ্যাঁ। ওর আরো ছোট দুটো বোন আছে। বাবা-মা নেই তাই বোনদের সব দায়িত্ব ওকে নিতে হয়েছে। জানিস ছেলেটা অনেক ভালো। আর যেমনি সৎ, তেমনি কর্মঠ। ওর মতো ছেলে হয় না। সততা ওর আদর্শের প্রতীক । আর এ জন্যইও
আমার এত ভালোলাগে।
ঃ বাবা, হয়েছে। এবার আমার কথা শুনো। আমি একটু রাজু আহম্মেদকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি।
ঃ সে কি মা মনি, অফিস চলবে কীসে? মাসুমও তো নেই।
ঃ হ্যাঁ। সেটাই তো আমার জন্য বোনাস। অদিতার কথা কিছু বুঝলো না এমডি আনাম চৌধুরী। চলে গেলো আদিতা। সে দিকে চেয়ে থাকলেন তিনি। কিযে করে মেয়েটা ?

ঃ মিস্টার রাজু, আপনি আমায় কিছু ইনফরমেশন দিবেন?
ঃ হ্যাঁ, বলুন। কী জানতে চান?
সে বলছিা, তার আগে একটা কথা বলে নেই। এই যে আপনার আর আমার যদি অফিসের বাইরে একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তবে কী আপনার আপত্তি আছে? চাইলো অদিতা রাজুর পানে। চঞ্চল হয়ে উঠলো রাজুর মন। শির শির করে উঠলো দেহ। অচিনা আনন্দে তোড়পাড় করছে বুকের ভেতরটা। ভয়ে আর আনন্দে অনুভূতি থেমে দিতে চাইছে তার চলা। কথা বেরুচ্ছে না মুখ দিয়ে। এমডি কন্যা স্বয়ং এমন একটা প্রস্তাব এতো তাড়াতাড়ি দিবে এ যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার।
ঃ কী হলো। কথা বলুন। হ্যাঁ নয়তো বা না। আমি তো এমন কঠিন কিছু বলিনি যে এতোক্ষণ ভাবতে হবে ।
ঃ না না, তা নয়। আপনি স্বয়ং মালিক কন্যা না বলা যায়। আমি এক সাধারণ কর্মচারী এ কি করে সম্ভব।
ঃ দেখুন মিস্টার রাজু, সম্পর্ক সবক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশের ফলাফল নয়। যেমন-তেমন হিসাব নিকাশের ফলাফলও সম্পর্ক নয়। সম্পর্কটা মনস্ত¯তান্তিক, বিধাতার প্রদত্ত একটি অলিখিত বন্ধন। আমি যে সম্পর্কের কথা বলেছি, এটি তেমনি একটী সম্পর্ক। এখানে উঁচু-নিচু, ছোট-বড় কোনোই পার্থক্য নেই।
রাজু ধীর গলায় বললো,“সহজ করে বলুন।”
হাসলো অদিতা। বললো,“আরে আমি চাচ্ছিলাম, আমরা অফিসের বাইরে বন্ধু হতে পারি না?”
ঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, তা পারি।
ঃ তাহলে আমরা বন্ধু, কী বলো?
ঃ হ্যাঁ। শুষ্ক একটা মলিন হাসি দিলো রাজু।
অদিতা বললো,“হ্যাঁ, রাজু। এবার আমার ইনফরমেশন দাও।”
অদিতার দিকে তাকালো রাজু। অদিতা জানতে চাইলো,“মাসুম সাহেব লোকটা কেমন?”
ঃ কেন? হঠাৎ মাসুম সাহেবের খবর কেন?
ঃ সে তোমাকে পরে বলছি।
ঃ ভালো, তবে জেদি আর আপনার প্রতি আত্মবিশ্বাসী সৎ হলেও দরিদ্র এবং আত্মঅহংকারী। মানুষকে মানুষ ভাবতে চায় না। আপন পরকে দু’চোঁখে দেখে, আবার নিম্নতাকে অবহেলা করে দূরে সরে রাখে। আর...।
ঃ আর কী?
ঃ আমার মতে উনার দ্বারা উন্নতি আশা করা যায় না। উনি সব সময় সাধারণ। যা আপনার আমার কারো কাছেই কাম্য নয়।
তাই না?
ঃ হ্যাঁ, দেখলেন না, সেদিন আপনি যখন দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলেন তখন উনি কেমন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন।
ঃ হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। আমিও লক্ষ্য করেছি। জানো রাজু, আমার না একটা বদ অভ্যাস আছে। আর তা হলো, ভালো মানুষকে ভুগানো। আর সততা সে আমার পরীক্ষায় পাশ করার পর।
ঃ মানে?
ঃ না, সে কিছু না। কথা ঘুরিয়ে নিলো অদিতি। আচ্ছা, উনার বাবা কী করতেন?
ঃ ঠিক জানা নেই আমার। তবে শুনেছি, উনিও কোনো এক ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার ছিলেন।
ঃ তাই। তাহলে তো ভালোই হলো, যুদ্ধটা জমবে ভালো।
ঃ দেখুন মিস অদিতি...।
ঃ উহু, দেখুন নয় দেখো। আমরা এখন বন্ধু। হাসলো অদিতি। হাসলো রাজু।
ঃ ঠিক আছে। দেখো অদিতি, আমি এখন সাধারণ। আমাকে এসবের মধ্যে জড়িও না । শেষ মেষ চাকরীটা চলে গেলে অসহায় হয়ে যাবো।
ঃ আরে না। তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। আর যদি বন্ধুর জন্য ক্ষতিই না মানো তবে লাভবান হবে কেমন করে?
ঃ না তা নয়, নিজের ক্ষতি করে লাভের আশায় অচেনা পথে পা বাড়ানো আমার সাজে না। আমি তো মাসুম সাহেবের মতো এত বড় সততার সেবক নয় যে, অনিশ্চিতের অন্ধকারে গা ভাসাবো।
ঃ তাই, এতোটাই সৎ তোমার মাসুম স্যার? এতোটা বিশ্বাস?
ঃ আরে না বিশ্বাস না।
ঃ মানে?
ঃ মানে কি বুঝলে না। আমার বিশ্বাস হয় না যে, উনি উনার পরিবারের আদর্শ ধরে রাখতে পারবে। ভয় হয় শেষে যেন কোনো কিছু না হয়। সে যাক অন্যের কথা ভাববার সময় আমার নেই।তাছাড়া বাস্তবতার ডাকে সাড়া দেওয়া আমার ধর্ম।
ঃ সাব্বাস এই না হলে আমার বন্ধু। এ সময়ের মানুষ হয়ে সততার দোহায় দিয়ে পিছিয়ে থাকার নাম জীবন নয়। মনে রেখো, জীবন একটাই এপার-ওপারের জন্যই। চলো ও দিকটাই হাঁটা যাক।
ঃ হ্যাঁ, চলো। হাঁটছে ওরা অনেকটা সময়। কথা হচ্ছে টুকটাক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।


মুন্নিকে দেখেই ডাক্তার জানালো, তেমন কিছু নয় তবে মানসিক দুশ্চিন্তায় উনার অসুস্থতার মূল কারণ। মাসুম মুন্নিকে বার বার জিজ্ঞাসা করলো কী হয়েছে তার? মুন্নি বলছে না কিছু। মাসুম ধরেই নিলো যে, হৃদয় ঘঠিত কোনো কারণ হয়তো। কিন্তু মম’র ধারণা, কেউ হয়তো ধোঁকা দিয়েছে তাকে। মম’র কষ্ট হলো মুন্নির কথা ভেবে। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো অন্তুর কথা। অন্তু কী তাকে শুধুই বন্ধু ভাবে? নাকি অন্য কিছু? মম তো তাকে শুধু বন্ধু ভাবে না বেশি কিছু। তবে কী এই বেশি কিছুটা তাকেও কষ্ট দিতে পারে? হ্যাঁ, পারে। অন্তু দেওয়া ছোট্ট একটা আঘাত তাকে কাঁদাতে পারে আজীবনকাল। মুছে দিতে পারে তার পৃথিবীর সমস্ত আনন্দ
মম, ?
মু্িন্নর ডাকে ফিরে আসে মম। মুন্নিকে ধরে নিয়ে গিয়ে রিক্সায় উঠে ওরা। মুক্তা আর মাসুম পরের রিক্সায় আসছে। মুন্নি লক্ষ্য করে তাদের রিক্সাকে অনুসরণ করছে একটি হুন্ডা। মাথায় হেলমেড। বুকটা কাঁপতে থাকে মুন্নির। কোনো দিকে না তাকিয়ে সে সোজা বাসায় গিয়ে নামে। দূর থেকে দেখছে হুন্ডা ওয়ালা লোকটা। দুটি কুকুর ভেঁও ভেঁও করে উঠে বিনা কারণে। ঘরে শুয়ে শুয়ে ভয় বাড়তে থাকে মুন্নির। সামনে তার পরীক্ষা আর মাত্র চারটা মাস বাকি। এ বছরে সে তো একটুও লেখাপড়ায় মন দেয় নি। সারাক্ষণ যাচ্ছিলো বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে। সেই বান্ধবীরাই আজ তার শত্রু। সবার একই কথা, তুই রাহাত ভাইয়ের হাতে ধরা দে। নয়তো বাঁচতে পারবি না। আর জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই সেও অসম্ভব। কী করবে মুন্নি? এক মুন্নি কজনের মন যোগোবে? সে তো চায় না এমন জঘন্য পথে পা বাড়তে। কিন্তু না কিছু ভালো লাগে না মুন্নির। মম খাবার তৈরি করছে রান্না ঘরে। সেখানে যায় মুন্নি। সাহায্য করে মমকে। মম বারণ করে কিন্তু মুন্নি শুনে না। মুক্তা, মাসুম ফিরে আসে অনেকগুলো ঔষধ নিয়ে মুন্নির আর মুক্তার জন্য। মাসুমের মুখের দিকে তাকায় মুন্নি। এই সেই ভাই তার জীবনের চেয়ে ভালোবাসে এই বোনদের । যার আদর্শে বেড়ে উঠেছে ওরা। কোনো দিন এতোটুকু কষ্ট দেয়নি তাদের। বিনিময়ে একটায় চাওয়া, তার সুন্দর সুস্থ্য নিষ্পাপ জীবন। আদর্শ আর সততা। কেমন করে তাকে ছোট করবে মুন্নি। কেমন করে সহ্য করবে মাসুম তার দেওয়া কষ্ট। না না আবারো ভাবনা ভুলার চেষ্টা করে মুন্নি। সবার সঙ্গে হারিয়ে যায় কিছুক্ষণ। তবুও ভুলতে পারে না যেন মনের অসন্তোষকে। ফিরে ফিরে এসে সামনে দাঁড়ায় বিপন্ন সেই ভাবনাগুলো।  




চলবেই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৫৩৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast