www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গল্প

মা যখনি বলেছে তোর টোটন মামা কাল আসবে তখন থেকেই কি যে আনন্দ লাগছে রিয়াদের বলে বুঝানো যাবে না। একের পর এক মনের মধ্যে কত ইচ্ছা জাগছে।
উহ! টোটন মামাটা এলেই হয়।
সেবার এসে চলে যাবার সময় মামা বলেছিল, এবার এলে এই নদীতে একটা বাঁধ দিব, তখন দেখবি কত মাছ। তোরা তো মাছ ধরতে পারিস না।
তুইতো ছোট আর তোর বাবা একটা মোটাহাতি কিচ্ছু পারে না। বাবাকে মোটাহাতি বলায় রিয়াদের অবশ্য রাগ হয়েছিল কিন্তু কিছু বলেনি। কারণ, গালি দিলে মামা আর আসবে না। আর না এলে কি আর মাছ ধরা হবে? রিয়াদের কত দিনের ইচ্ছে, সে এই নদীতে মাছ ধরবে। শুধু কি দ্’ুএকটা মাছ? অনেক মাছ ধরবে সে। টোটন মামাটা আসলেই অনেক ভালো। জাল ফেলে কত মাছ ধরে। সব পারে মামা। গাছে উঠে আম পাড়ে। পাখি ধরে।
নানা বাড়িতে মামার যে শালিক পাখিটা সেটা নাকি কথা বলবে। রিয়াদের খুব হাসি পেয়েছিল, মামা যখন বলেছিল, জানিস, পাখিটা আমার নাম বলবে। তুই শিখালে তোরটাও বলবে। পাখি কী কথা বলে? পাখি তো শুধু কিচির মিচির করে ডেকে যায়।
রিয়াদের কথায় মামার সেদিন সে কি রাগ। ওর গালে কষে একটা চড় মেরে বলেছিল, এই হ্যাবলা, যা জানিস না তা নিয়ে কথা বলবি না বুঝলি। ফের যদি এমন কথা বলতে শুনি তো এর চেয়ে দিগুণ খাবি।
রিয়াদ প্রথমে বুঝতে পারেনি যে, মামা তাকে মারবে। কিন্তু যখন দেখল, সত্যি সত্যি মেরেছে । হঠাৎ এমন একটা চড় খেয়ে মাথাটা যেন ঘুরছিল ওর। যখন আবার শুনল, এর চেয়ে দ্বিগুণ খাবি তখনি কেঁদে ফেলল। কান্না শুনে ছুটে এলো নানি, মা এবং ছোট খালামনি। রিয়াদ ওদের দেখে আরও জোরে কান্না শুরু করল।
নানু আর কিছু না শুনেই একটা ছোট লাঠি নিতেই টোটন মামা দিল ছুট। সে আর কি বলবো টোটন মামার সেই দৌড়টায় যে কত জোর ছিল..।
রিয়াদ সেদিন অনেক কেঁদেছিল। শেষে নানি যখন বললেন, আসুক আজ ওর ভাত বন্ধ। তখন রিয়াদ থেমে গেল।

সকাল হতেই রিয়াদের মনে হলো, আজ টোটন মামা আসবে। রিয়াদ বিছানা থেকেই দেখতে পেল, অনিজা আর আম্মু কি যেন করছে। সে তখন আস্তে আস্তে গিয়ে দেখল, ওরা স্যারা পিঠার আয়োজন করছে। রিয়াদ মায়ের কাছে বসতে বসতে বলল, আম্মু ,আজ মামা আসবে তো?
অনিজা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, ভাইয়া, শুধু মামা না শ্রাবণ বাঁধনেরাও আসছে।
ঃ বল কী আপু? রিয়াদের চোঁখে মুখে মুহূর্তে একরাশ আনন্দে হিল্লোর বয়ে গেল।
ঃ হ্যাঁ ভাইয়া, আজ খুব মজা হবে।
মা ওদের আনন্দ দেখে হাসলেন। ওরা দুই ভাই বোনেতে কত কথা বলছে। রিয়াদ সকাল সকাল মাঝ ধরা জাল, পাখির খাঁচা, ব্যাট বল সব ঠিক করল। মা সব লক্ষ্য করলেন। অনিজাও ওকে সাহায্য করছে।
ঃ আচ্ছা ভাইয়া, তোরা যে মাছ ধরবি তো এখন যে নদীতে পানি নেই।
রিয়াদ হঠাৎ চমকে গেল। ঠিকই তো। এ কথা তো তার মনে একবারও আসেনি। তবু সে বলল, তাতে কি? আমরা নদীর জলাগুলোতে জাল ফেলে মাছ ধরব।
অনি আর কিছু বলল না। মায়ের কাছে গিয়ে বসল। মা পিঠা বানাচ্ছেন।
বলতে বলতে বেলা প্রায় যায় যায় তবু কেউ আসছে না। রিয়াদ বারবার মাকে বলছে, মা, মামা তো এখনো আসছে না আর শ্রাবণেরাও তো এলো না। আসবে তো?
ঃ আসবে বাবা।
অনিরও যেন আর সময় কাটছে না। বারবার সে বলছে, ভাইয়া, ওরা মনে হয় আজ আসবে না।
মনটা খুব খারাপ রিয়াদের। সত্যি সত্যিই ওরা মনে হয় আজ আসবে না। হঠাৎ ভূত দেখার মত চমকে উঠল সে। মামা ঘর থেকে বেরোচ্ছে।
সে বলল, আরে মামা, তুমি কখন এলে?
প্রায় দৌড়ে গিয়ে মামার কোলে উঠল রিয়াদ। অনিজাও ছুটে গিয়ে কোমর চেপে ধরল। হাসছে টোটন। বলল, আমি তো বেশ কিছুক্ষণ হলো এসেছি। তোরা-ভাই বনেতে গল্প করছিলি, তাই তোদের সামনে আসিনি।
ঃ মামা তুমি যে কি না। বলল অনি।
রিয়াদ কি করবে বুঝতে পারছে না। সে ঝটপট কোল থেকে নেমে বলল, মামা, আমি না পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছি।
ঃ সাব্বাশ। আর অনি?
ঃ আমিও ফার্স্ট হয়েছি, মামা।
ঃ এই না হলে আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি। এবার জন্মদিনে আমি তোদের ভালো উপহার দিব, কেমন।
হাসল ওরা। পেছন থেকে শ্রাবণ বলল, রিয়াদ ভাইয়া।
শ্রাবণ-বাঁধনকে দেখে মামাকে ছেড়ে দৌড়ে গেল রিয়াদ। ততক্ষণে অনি গিয়ে বাঁধনকে কোলে নিল। সবাই এলো মামা, আম্মু, আব্বু বাঁধনটা খুব সুন্দর হয়েছে। বড়রা গল্প করছে। রিয়াদ, শ্রাবণ, বাঁধন, অনি ওরা যেন আনন্দে আত্মহারা। সবাই গল্প করছে সে যে কত গল্প। ওদের গল্পে হঠাৎ টোটন মামা বিরক্ত হয়ে বলল,
এই, কি হচ্ছে? এত চিল্লাছিস কেন?
মামার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রিয়াদের আব্বু জামান সাহেব বললেন, চারটে বাচ্চাই এত আর দুটো হলে টিকাই যাবে না দেখছি।
রিয়াদ-অনি বলল, চল শ্রাবণ-বাঁধন, আমরা বাইরে যাই।
ঃ হ্যাঁ চল, আপু। নদী দেখতে যাব। বলল শ্রাবণ।
বাঁধন বলল, আমিও নদী দেখতে দাবো।
অনি বাঁধনকে কোলে নিল কিন্তু সে নিজেও ছোট তাই হাঁটতে পারছে কম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো চারপাশে। পাখি ডাকছে। বাসা থেকে নদী প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কিন্তু নদীর চর বাসার কাছ থেকে নদী পর্যন্ত বিস্তির্ণ তাই সুবিধে।

ওরা হাঁটছে বালিতে। বালুগুলো নরম কচি পায়ে সুরসুরি কাটছে। বাঁধন বলল, আপু, আমি নামব। আমি হাঁতব।
রিয়াদ শ্রাবণ দৌড়াদৌড়ি করছে। অনি বলল, শ্রাবণ, রিয়াদ, চলো ভাইয়া বাসায় যাই। সন্ধা নামছেÑ এখন শেয়াল আসবে। শিয়ালের কথা শুনে ভয় পেল বাঁধন। কেঁদে দিল সে। ওরা সবাই এলো বাঁধনের কাছে। শ্রাবণ বাঁধনকে বলল, শিয়াল নাই আপু।
ঃ ভাইয়া আমিও বালি যাব।
ওরা শুনতে পেল দূর থেকে টোটন মামা ডাকছে ওদের। সেদিন ফিরে এলো ওরা। রাতে খেয়ে শুয়ে পড়বে। রিয়াদের আম্মু নাহার বেগম বললেন, অনি, রিয়াদ, শ্রাবণ, তোমরা ও ঘরে তোমার খালুর কাছে শুয়ে পড়। টোটন, তুই কোথায় থাকবি?
ঃ আমি তোমাদের কাছে থাকব।
ঃ না আম্মু, আমরা মামার কাছে থাকব। মামা তুমি আমাদের গল্প শুনাবে। আমরা তোমার কাছে থাকব।
টোটন সমস্যায় পড়ে গেল।
বাঁধন বলল, মা, আমিও মামাল কাছে থাকব।
শেষে ওরা টোটনের সঙ্গে এক রুমে শুয়ে পড়ল। অন্য ঘরে দুই বোনেতে গল্প করছে। জামান সাহেব ও ঘরে বসে গল্প শুনছেন। হঠাৎ ও ঘরে এক সঙ্গে কেঁদে উঠল সবাই।
কী হয়েছে? কী হয়েছে? কেঁদেই চলেছে ওরা। হাসছে টোটন।
কী হয়েছে? হাসছিস কেন?
কান্না থামিয়ে ঘটনাটা খুলে বলল অনি। আম্মু টোটন মামা বলছে, এ আমাদের টোটন মামা না। এ একটা বড় রাক্ষস। টোটন মামাকে রাস্তায় খেয়ে টোটন মামার রূপ ধরে এসেছে। এ রাক্ষসটা মামার হাড় গোড় সব খেয়েছে। টোটন মামা আর বেঁচে নেই আম্মু।
আবার কাঁদল অনি। অনির কান্নার সঙ্গে ওদের আবারও কান্নার বেগ বাড়ল। সবাই কাঁদছে। খট খট করে হেসে দিল শ্রাবণের আম্মু গোলসান আরা। হাসছে টোটনও। বাঁধন কাঁদতে কাঁদতেই বলল, আম্মুল কাছে যাব। টোটন ওকে ধরতে চাইলেই বাঁধন বলল, না, যাব না। ওটা রাক্ষস। ভয় পেয়ে গেল বাঁধন। নাহার বেগম সবাইকে সন্ত¡না দিয়ে বলল,
ও মিছে কথা বলেছে তোমাদের। ভয় দেখিয়েছে। ওই তোমাদের টোটন মামা। অনেক করে বুঝাল নাহার বেগম এবং জামান সাহেব।
এক সময় বুঝল ওরা কিন্তু ওদের কান্নার ফোঁপানোটা থামছে না কিছুতেই। ওরা বার বার দেখছে টোটনের দিকে। হাসছে টোটন ওদের কান্ড দেখে। ওরা আর সে রাতে কেউ টোটনের কাছে শুলো না।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৮৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast