রাত পোহাবার আগে ১১
কিন্তু আজ অনেক প্রতিক্ষার পর সুযোগ এসেছে রাজু আহম্মেদের। এ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায় না সে। যে করেই হোক, এমডি স্যারের মেয়েকে বাগাতেই হবে। সুযোগ বারে বারে আসে না। একবারি আসে। আর যে সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে যে সে বোকা, কঠিন বোকা। রাজু সেই বোকা হতে চায় না। তার বহু দিনের স্বপ্ন, যে করেই হোক সফল হতে হবে তকে। রাজু এমন করে ভাবেনি কখনো। কিন্তু এমডি কন্যা যখন মাসুমকে ছেড়ে তার সঙ্গে এসে বসেছে তখন থেকে তার মনে হচ্ছে, এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। মাসুমের চেয়ে রাজুই বা কম কীসে। শুধু বিদ্যেটুকু কম বলে অবস্থানটা উঁচু-নিচু। চেহারায় মাসুমকে হার মানাবার ক্ষমতা রাখে সে। আর এমডি কন্যা তাকে অনেক বৃহৎ সাহস যুগিয়েছে। এ সাহসকে কাজে লাগাতে পারলেই কেল্লাফতে। রাজকন্যা সহ রাজ্য। ইয়াহু! কি যে খুশি লাগছে রাজুর। সে ভাবতেই পারেনি যে, তার ভাগ্য এতোটা প্রসন্ন।
হাঁটছে রাজু অজানার উদ্দেশে। ভালো লাগছে তার এভাবে এলোমেলো ভাবে হাটতে ,ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির সার্থক হাসি। মাসুমকে এমডি এতো পছন্দ করে অথচ তার মেয়ে তাকে পাত্তায় দিচ্ছে না। এতে রাজুর তো কোন দোষ নেই স্বয়ং এমডি কন্যাই তাকে নির্বাচন করেছে ক’দিনের বন্ধু হিসাবে। কিন্তু রাজু ক’দিনের নয়, সারা জীবনের সঙ্গী হতে চায় তার। জয় করে নিতে চায় তার সমস্ত অস্তির্ত। আর তার জন্য এ ক’টা দিন হবে রাজুর সারাজীবনের সঞ্চয়। আর যদি তাকে জয় করতে পারে তাহলে তো আর কোনো বাঁধা নেই তার সামনে। হঠাৎ আচমকা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো সে। থতমত খেয়ে বললো,“আসছালামু আলাইকুম স্যার।”
ঃ ওয়ালাইকুম সালাম।
ঃ স্যার, আপনি এখানে।
ঃ এই তো কেনাকাটা করতে এসেছিলাম।
ঃআপনার খবর কি ?
ঃএই তো স্যার আপনাদের দোয়ায় চলছে আরকি , আসি স্যার আমার একটু তারা আছে ।
ঃও কে ।
চলে গেলো রাজু।
মাসুম আর মুন্নি চলেছে বাসার দিকে। তখন গোধুলির রং ছড়িয়েছে দিগন্তের সীমা ছুঁয়ে।
ঃ কে যায় মম না?
পাশ ফিরে তাকায় মম। “আরে অন্তু ভাই যে! কী খবর? কেমন আছেন?”
ঃ ভালো না।
ঃ কেন? কী হয়েছে?
ঃ মনটা ভালো নেই। জানো তো, তুমি ছাড়া এখানে আমার কেউ নেই। বন্ধু বলো, ভাই বলো, পড়শী বলো, প্রিয়া বলো।
ঃ কী বললেন?
ঃ আরে না। বলে মাথা চুলকাচ্ছে অন্তু।
ঃ না বললেই হলো।
ঃ হলোই তো। জোর খাটায় অন্তু। তুমি আমার বন্ধু না বলো?
ঃ না,
ঃ মানে?
ঃ না, মানে না?
ঃ না, মানে। হ্যাঁ।
ঃ আচ্ছা মানুষ তো আপনি। সামান্য একটা উপকার করলেই বন্ধু হয়ে যায় কেউ কারো?
ঃ তাই তো? তাহলে যে আমি তোমাকে বন্ধু ভাবছি তার কী হবে? জানো এই মহল্লায় আমার পরে তুমি আমার একমাত্র চেনা।
ঃ ব্যস, ব্যস হয়েছে। আর বাড়িয়ে বলতে হবে না।
ঃ হ্যাঁ, তা বললাম না। কিন্তু আমার বন্ধুত্ব?
ঃ কীসের বন্ধুত্ব? একা একা কখনো বন্ধুত্ব হয় না?
ঃ তা হয় না। কিন্তু তুমিও জানো, তুমি আমার বন্ধু।
ঃ জ্বি, না। আমি আপনাকে বন্ধু ভাবি না।
ঃ ভাবো না মানে? একশবার ভাবো। হাজার বার ভাবো। ঐ যে ঝাউ গাছে টোনাটুনি দু’জনে স্বাক্ষী।
ঃ তাই বুঝি?
ঃ হ্যাঁ। তুমি যে রোজ আমার খোঁজ নাও ওরা তো জানে।
ঃ জানলেই বলবে বুঝি?
ঃ হ্যাঁ, বলবে।
ঃ সে দেখা যাবে। ওরা যদি বলে তো আমার বন্ধু হতে আপত্তি নাই। কিন্তু যদি না বলে তো আমার কিছু করার নাই।
ঃ না মম, যেও না প্লিজ। সত্যি বলছি, হেয়ালি নয়। আমার বন্ধুত্বকে ফিরিয়ে দিয়ো না প্লিজ।
ঃ অন্তু ভাই, বন্ধুত্ব করা সহজ কিন্তু ধরে রাখা কঠিন। তবু যদি তাই হয় তবে আমার বন্ধুত্বকে পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। পারবেন কিনতে?
ঃ হ্যাঁ, মম। বাঙ্গালী টাকা-পয়সাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়। আর আমিও বাঙ্গালী বলেই এই এক টাকার বিনিময়ে তোমার বন্ধুত্বকে কিনে নিলাম। তুমি আমার বন্ধুতের অমর্যাদা করো না।
হাসলো মম। অন্তু যেন তার মনের ভাব সহজেই বুঝে ফেলেছে। অন্তু বললো,“যদি কোনো দিন এই টাকা আমায় ফিরিয়ে দাও তবে বুঝবো, তুমি আমার বন্ধুত্বকে অস্বীকার করেছো। আমাকে তুমি ভুলে গেছো।”
হাসলো মম আবারো।
ঃ অন্তু ভাই।
ঃ তুমি আমার উপর বিশ্বাস রেখো। মৃত্যু ব্যতিত আমার বন্ধুত্বকে কেউ খর্ব করতে পারবে না
ঃমম?
হ্যাঁ। এই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। এখন যাই।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ঃ হ্যাঁ, এসো।
চলে গেলো মম। চেয়ে আছে অন্তু। কত দিন বলি বলি করে বলতে পারেনী যে কথাটি আজ তা বলতে পারায় কিযে খুশি লাগছে..ইয়া আল্লাহ তেমার দরবারে লাক্ষ কুটি শুকরিয়া।চোঁখের কোণায় চিক চিক করছে জল। ঠোঁটে হাসি আর অন্তরে উচ্ছ্বাস। ছেলে মানুষের ছলেই তার মনের কথাটা ব্যক্ত করেছে অন্তু। নিজের অজান্তেই মমকে তার এতো ভালো লেগেছে, যার পরিমাপ করা যায় না। অন্তু জানে, মম টাকার কাঙ্গাল নয়। এ তার সরল মনের অব্যক্ত কথা। হা, স্পষ্ট করে বলতে, সহস্র ভীতি আর সংশয়। কতো দিনের পরিচয় ওদের মনে করে অন্তু। সে যখন প্রথম এলো তখন মম মিষ্টি একটি মেয়ে। দূরন্ত আর ডান পিটে স্বভাবের। অন্তু তাকে দুষ্টুমির কারণে কতোবার বকেছে। মম শুধু নিরবে কেঁদেছে। কাউকে বলেনি। কোনো দিন প্রতিবাদ করেনি। চোখের সামনেই বেড়ে উঠলো মেয়েটা। যে কিনা আজ তার খুব কাছের খুব বেশি আপন। যাকে না দেখলেই খারাপ লাগে অন্তুর। মম’রও লাগে হয়তো। কিন্তু কেন এই খারাপ লাগা বোঝে না কেউ।
চলবেই
হাঁটছে রাজু অজানার উদ্দেশে। ভালো লাগছে তার এভাবে এলোমেলো ভাবে হাটতে ,ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির সার্থক হাসি। মাসুমকে এমডি এতো পছন্দ করে অথচ তার মেয়ে তাকে পাত্তায় দিচ্ছে না। এতে রাজুর তো কোন দোষ নেই স্বয়ং এমডি কন্যাই তাকে নির্বাচন করেছে ক’দিনের বন্ধু হিসাবে। কিন্তু রাজু ক’দিনের নয়, সারা জীবনের সঙ্গী হতে চায় তার। জয় করে নিতে চায় তার সমস্ত অস্তির্ত। আর তার জন্য এ ক’টা দিন হবে রাজুর সারাজীবনের সঞ্চয়। আর যদি তাকে জয় করতে পারে তাহলে তো আর কোনো বাঁধা নেই তার সামনে। হঠাৎ আচমকা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো সে। থতমত খেয়ে বললো,“আসছালামু আলাইকুম স্যার।”
ঃ ওয়ালাইকুম সালাম।
ঃ স্যার, আপনি এখানে।
ঃ এই তো কেনাকাটা করতে এসেছিলাম।
ঃআপনার খবর কি ?
ঃএই তো স্যার আপনাদের দোয়ায় চলছে আরকি , আসি স্যার আমার একটু তারা আছে ।
ঃও কে ।
চলে গেলো রাজু।
মাসুম আর মুন্নি চলেছে বাসার দিকে। তখন গোধুলির রং ছড়িয়েছে দিগন্তের সীমা ছুঁয়ে।
ঃ কে যায় মম না?
পাশ ফিরে তাকায় মম। “আরে অন্তু ভাই যে! কী খবর? কেমন আছেন?”
ঃ ভালো না।
ঃ কেন? কী হয়েছে?
ঃ মনটা ভালো নেই। জানো তো, তুমি ছাড়া এখানে আমার কেউ নেই। বন্ধু বলো, ভাই বলো, পড়শী বলো, প্রিয়া বলো।
ঃ কী বললেন?
ঃ আরে না। বলে মাথা চুলকাচ্ছে অন্তু।
ঃ না বললেই হলো।
ঃ হলোই তো। জোর খাটায় অন্তু। তুমি আমার বন্ধু না বলো?
ঃ না,
ঃ মানে?
ঃ না, মানে না?
ঃ না, মানে। হ্যাঁ।
ঃ আচ্ছা মানুষ তো আপনি। সামান্য একটা উপকার করলেই বন্ধু হয়ে যায় কেউ কারো?
ঃ তাই তো? তাহলে যে আমি তোমাকে বন্ধু ভাবছি তার কী হবে? জানো এই মহল্লায় আমার পরে তুমি আমার একমাত্র চেনা।
ঃ ব্যস, ব্যস হয়েছে। আর বাড়িয়ে বলতে হবে না।
ঃ হ্যাঁ, তা বললাম না। কিন্তু আমার বন্ধুত্ব?
ঃ কীসের বন্ধুত্ব? একা একা কখনো বন্ধুত্ব হয় না?
ঃ তা হয় না। কিন্তু তুমিও জানো, তুমি আমার বন্ধু।
ঃ জ্বি, না। আমি আপনাকে বন্ধু ভাবি না।
ঃ ভাবো না মানে? একশবার ভাবো। হাজার বার ভাবো। ঐ যে ঝাউ গাছে টোনাটুনি দু’জনে স্বাক্ষী।
ঃ তাই বুঝি?
ঃ হ্যাঁ। তুমি যে রোজ আমার খোঁজ নাও ওরা তো জানে।
ঃ জানলেই বলবে বুঝি?
ঃ হ্যাঁ, বলবে।
ঃ সে দেখা যাবে। ওরা যদি বলে তো আমার বন্ধু হতে আপত্তি নাই। কিন্তু যদি না বলে তো আমার কিছু করার নাই।
ঃ না মম, যেও না প্লিজ। সত্যি বলছি, হেয়ালি নয়। আমার বন্ধুত্বকে ফিরিয়ে দিয়ো না প্লিজ।
ঃ অন্তু ভাই, বন্ধুত্ব করা সহজ কিন্তু ধরে রাখা কঠিন। তবু যদি তাই হয় তবে আমার বন্ধুত্বকে পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। পারবেন কিনতে?
ঃ হ্যাঁ, মম। বাঙ্গালী টাকা-পয়সাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়। আর আমিও বাঙ্গালী বলেই এই এক টাকার বিনিময়ে তোমার বন্ধুত্বকে কিনে নিলাম। তুমি আমার বন্ধুতের অমর্যাদা করো না।
হাসলো মম। অন্তু যেন তার মনের ভাব সহজেই বুঝে ফেলেছে। অন্তু বললো,“যদি কোনো দিন এই টাকা আমায় ফিরিয়ে দাও তবে বুঝবো, তুমি আমার বন্ধুত্বকে অস্বীকার করেছো। আমাকে তুমি ভুলে গেছো।”
হাসলো মম আবারো।
ঃ অন্তু ভাই।
ঃ তুমি আমার উপর বিশ্বাস রেখো। মৃত্যু ব্যতিত আমার বন্ধুত্বকে কেউ খর্ব করতে পারবে না
ঃমম?
হ্যাঁ। এই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। এখন যাই।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ঃ হ্যাঁ, এসো।
চলে গেলো মম। চেয়ে আছে অন্তু। কত দিন বলি বলি করে বলতে পারেনী যে কথাটি আজ তা বলতে পারায় কিযে খুশি লাগছে..ইয়া আল্লাহ তেমার দরবারে লাক্ষ কুটি শুকরিয়া।চোঁখের কোণায় চিক চিক করছে জল। ঠোঁটে হাসি আর অন্তরে উচ্ছ্বাস। ছেলে মানুষের ছলেই তার মনের কথাটা ব্যক্ত করেছে অন্তু। নিজের অজান্তেই মমকে তার এতো ভালো লেগেছে, যার পরিমাপ করা যায় না। অন্তু জানে, মম টাকার কাঙ্গাল নয়। এ তার সরল মনের অব্যক্ত কথা। হা, স্পষ্ট করে বলতে, সহস্র ভীতি আর সংশয়। কতো দিনের পরিচয় ওদের মনে করে অন্তু। সে যখন প্রথম এলো তখন মম মিষ্টি একটি মেয়ে। দূরন্ত আর ডান পিটে স্বভাবের। অন্তু তাকে দুষ্টুমির কারণে কতোবার বকেছে। মম শুধু নিরবে কেঁদেছে। কাউকে বলেনি। কোনো দিন প্রতিবাদ করেনি। চোখের সামনেই বেড়ে উঠলো মেয়েটা। যে কিনা আজ তার খুব কাছের খুব বেশি আপন। যাকে না দেখলেই খারাপ লাগে অন্তুর। মম’রও লাগে হয়তো। কিন্তু কেন এই খারাপ লাগা বোঝে না কেউ।
চলবেই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোলাইমান ১৩/০১/২০১৭বাহ কি চমৎকার!
-
ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাস ০৬/০১/২০১৭পড়লাম। ভালো হয়েছে।
-
আব্দুল হক ০৫/০১/২০১৭সুন্দর লিখেছেন; মোবারকবাদ!