রাত পোহাবার আগে ৬
বাসায় ফিরেই অবাক হলো সে।
ঃ মুন্নি, কী হয়েছে রে?
কথা বলে না মুন্নি।
ঃ মম, কী হয়েছে? আন্টি কী কিছু বলেছে? এখানে কী করছেন উনি?
মুক্তা দৌঁড়ে গিয়ে মাসুমকে জড়িয়ে ধরে বললো,“ভাইয়া, জেবা আপু তোমাকে বিয়ে করবে। তোমার ঘরে বসে আছে। যাচ্ছে না, তাই আন্টি নিতে এসেছে।”
চমকে উঠলো মাসুম!
বলকি !মহূর্তে মুক্তাকে কোলে করে বাইরে গেলো সে। মম মুন্নিকে ডেকে বললো,“আমি দু’দিন বাইরে থাকবো। এর মধ্যে তোরা ওদের বিদায় করে দে। ছিঃ ছিঃ! সন্মান আর থাকলো না । মুন্নি, মম তোরা সাবধানে থাকিস। আমি আর বাসায় যাচ্ছি না।”
ভাইয়া ?
ঘেঁমে যাচ্ছে মাসুমের সমস্ত শরীর। মুন্নি বললো,“ভাইয়া, তুমি বরং অদিতের আম্মুকে একবার আসতে বলো।”
ঃ হ্যাঁ, উনি আসবে। তোরা সাবধানে থাকিস আর ওদের তাড়াবার ব্যবস্থা করিস। আমি গেলাম মম। মুক্তাকে দেখিস।
চলে যাচ্ছে মাসুম। হাত পা কাঁপছে তার। পৃথিবীটা ঘুরছে লজ্জায় আর ঘৃণায়। তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার। মানুষ এতোটা নিচু হয় কী করে? হাঁটছে মাসুম অজানার পথে। কোথায় যাবে ভাবছে। বস্তির গলিতে গিয়ে অবাক হলো মাসুম। ঐ তো মেয়েটা হাসছে তাকে দেখে। আচ্ছা, ব্যাপার তো। মেয়েটা কী সব সময় পথ চেয়ে থাকে? নাকি তাকে দেখেই বেরিয়ে আসে?
মাসুমকে আসতে দেখেই ছুটে এলো সেই বৃদ্ধ।
না বাবু না, এখানে দাঁড়াবে না।
ঃ কেন কাকা বাবু। আমার অপরাধ?
ঃ সে তো তোমার না, তোমার চোখের। কর্তা বাবু জানতে পারলে চোখের দেখাও জুটবে না। বুঝলে বাবু।
ঃ কিন্তু কেন কাকা বাবু?
ঃ আবার জিগায় যে? যাও, যাও। কর্তা বাবু দেখছে। পরে একদিন এসো, জানাবো নে।
চলে যায় মাসুম। তবু একবার দেখে মেয়েটার দিকে। এখনো চেয়ে আছে মেয়েটা সেই নিষ্পলক চোখে। অল্পক্ষণ হেঁটেই আড়াল হয় মাসুম। ঢেকে যায় যেন পূর্ণিমার চাঁদ মেঘের অলক্ষে। কেঁপে উঠে বুক অজানা আতংকে।
মুন্নি ভাবছে অনেক কথা। ঘুম আসছে না তার। কিন্তু মম-মুক্তা ঘুমিয়ে গেছে। তাদের মুখে অজস্র মায়া খেলা করছে। ভ্রমরের মতো মম’র দু’টি চোখ একটু একটু নড়ছে। সে কী ঘুমাচ্ছে? নাকি ঘুমের ভাব ধরে আছে? বিদ্যুৎ নাই বলে মমবাতির মলিন আলো ঘরের অর্ধেকটা দেখা যাচ্ছে। একটা ছোট ইদুর ছুটোছুটি করছে। হয়তো বা খাদ্যের অন্নেষণে? মুন্নি খানিকক্ষণ লক্ষ্য করলো ইদুরটাকে। পুরাতন ঐ পুস্তককের তাকে উঠে ইদুরটা এলোমেলো বইগুলোর মধ্যে হারিয়ে গেলো। উদাস হয়ে চেয়ে আছে মুন্নি। তবু যেন সেখানে নেই সে। তার ভাবনা অদূর থেকে সুদূরে ছুটে চলেছে। ইদুরটা লুকুনোর পর সেখান থেকে একটা মৃদু শব্দ হচ্ছে। কুট্ কুট্। কিন্তু সে শব্দ মুন্নির কাছে তেমন গুরত্ব পাচ্ছে না। সে ভেবেই চলেছে। কলেজের র্দুদান্ত এক ছেলের পল্লায় পড়েছে সে। ইচ্ছা করে নয়- অনিচ্ছাকৃত। সে দিন রুমির সঙ্গে যখন কি এক কথাই কথাই ক্যান্টিনে গিয়ে বসেছিলো কিছুক্ষণ তখন দেখা হয়েছিলো ছেলেটার সঙ্গে। ডানপিটে আর স্মার্ট ছেলেটা দেখতে মোটামুটি ভালোই। কিন্তু তারপরো মুন্নি এটা চায় নি। কারণ, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তার গার্জিয়ান তার বড় ভাইয়া। আর যদি তার ভাই জানতে পারে, তবে তাকে অবিশ্বাস করবে। আর সেও চায় না।
ছেলেটার নাম রাহাত। রাহাতে পরিবার তেমন সচ্ছল নয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ওরা। এক ভাই, চার বোন। সবার ছোট সে।বড় বোন শত কষ্ট করেও লেখাপড়া শিখাচ্ছে ওকে। কিন্তু তার কি বিবেক! সে একের পর এক প্রেমের অফার করে মেয়েদের। মেয়েরা ভয় পেয়েই সাড়া দেয় তার ডাকে। কারণ, তারা ভালো করেই জানে ওদের কর্মকান্ড সম্পর্কে। কোনো মেয়ে যদি তার ডাকে সাড়া না দেয়, তবে রাহাতের গ্রুপের অন্য ছেলেগুলো চান্সে থাকে সুযোগের। কেননা, নেতার পরে তারা অন্যায় করলে অপরাধ থাকে না ওদের। মুন্নি একটা বিষয় ভালো করেই লক্ষ্য করেছে যে, উপরে ছাত্র-ছাত্রী সেজে লেখা-পড়ার আড়ালে চলছে এক নিরব নির্যাতন। অসহায় মেয়েরা যখন বিদ্যার্জনের মহান দায়িত্ব নিয়ে বাবা-মাকে ছেড়ে চলে এসেছে এতোদূরে তখন বিদ্যার্জন না করে ফিরবে কেন। তাকে যে মানুষ হতে হবে। কাঁধে নিতে হবে বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা সংসারের কঠিন দায়ভার।
মুন্নিও তাই চেয়েছে। কিন্তু সে কি পারবে নাকি জড়িয়ে যাবে ওদের অরাজকতার জালে?
চলবেই
ঃ মুন্নি, কী হয়েছে রে?
কথা বলে না মুন্নি।
ঃ মম, কী হয়েছে? আন্টি কী কিছু বলেছে? এখানে কী করছেন উনি?
মুক্তা দৌঁড়ে গিয়ে মাসুমকে জড়িয়ে ধরে বললো,“ভাইয়া, জেবা আপু তোমাকে বিয়ে করবে। তোমার ঘরে বসে আছে। যাচ্ছে না, তাই আন্টি নিতে এসেছে।”
চমকে উঠলো মাসুম!
বলকি !মহূর্তে মুক্তাকে কোলে করে বাইরে গেলো সে। মম মুন্নিকে ডেকে বললো,“আমি দু’দিন বাইরে থাকবো। এর মধ্যে তোরা ওদের বিদায় করে দে। ছিঃ ছিঃ! সন্মান আর থাকলো না । মুন্নি, মম তোরা সাবধানে থাকিস। আমি আর বাসায় যাচ্ছি না।”
ভাইয়া ?
ঘেঁমে যাচ্ছে মাসুমের সমস্ত শরীর। মুন্নি বললো,“ভাইয়া, তুমি বরং অদিতের আম্মুকে একবার আসতে বলো।”
ঃ হ্যাঁ, উনি আসবে। তোরা সাবধানে থাকিস আর ওদের তাড়াবার ব্যবস্থা করিস। আমি গেলাম মম। মুক্তাকে দেখিস।
চলে যাচ্ছে মাসুম। হাত পা কাঁপছে তার। পৃথিবীটা ঘুরছে লজ্জায় আর ঘৃণায়। তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার। মানুষ এতোটা নিচু হয় কী করে? হাঁটছে মাসুম অজানার পথে। কোথায় যাবে ভাবছে। বস্তির গলিতে গিয়ে অবাক হলো মাসুম। ঐ তো মেয়েটা হাসছে তাকে দেখে। আচ্ছা, ব্যাপার তো। মেয়েটা কী সব সময় পথ চেয়ে থাকে? নাকি তাকে দেখেই বেরিয়ে আসে?
মাসুমকে আসতে দেখেই ছুটে এলো সেই বৃদ্ধ।
না বাবু না, এখানে দাঁড়াবে না।
ঃ কেন কাকা বাবু। আমার অপরাধ?
ঃ সে তো তোমার না, তোমার চোখের। কর্তা বাবু জানতে পারলে চোখের দেখাও জুটবে না। বুঝলে বাবু।
ঃ কিন্তু কেন কাকা বাবু?
ঃ আবার জিগায় যে? যাও, যাও। কর্তা বাবু দেখছে। পরে একদিন এসো, জানাবো নে।
চলে যায় মাসুম। তবু একবার দেখে মেয়েটার দিকে। এখনো চেয়ে আছে মেয়েটা সেই নিষ্পলক চোখে। অল্পক্ষণ হেঁটেই আড়াল হয় মাসুম। ঢেকে যায় যেন পূর্ণিমার চাঁদ মেঘের অলক্ষে। কেঁপে উঠে বুক অজানা আতংকে।
মুন্নি ভাবছে অনেক কথা। ঘুম আসছে না তার। কিন্তু মম-মুক্তা ঘুমিয়ে গেছে। তাদের মুখে অজস্র মায়া খেলা করছে। ভ্রমরের মতো মম’র দু’টি চোখ একটু একটু নড়ছে। সে কী ঘুমাচ্ছে? নাকি ঘুমের ভাব ধরে আছে? বিদ্যুৎ নাই বলে মমবাতির মলিন আলো ঘরের অর্ধেকটা দেখা যাচ্ছে। একটা ছোট ইদুর ছুটোছুটি করছে। হয়তো বা খাদ্যের অন্নেষণে? মুন্নি খানিকক্ষণ লক্ষ্য করলো ইদুরটাকে। পুরাতন ঐ পুস্তককের তাকে উঠে ইদুরটা এলোমেলো বইগুলোর মধ্যে হারিয়ে গেলো। উদাস হয়ে চেয়ে আছে মুন্নি। তবু যেন সেখানে নেই সে। তার ভাবনা অদূর থেকে সুদূরে ছুটে চলেছে। ইদুরটা লুকুনোর পর সেখান থেকে একটা মৃদু শব্দ হচ্ছে। কুট্ কুট্। কিন্তু সে শব্দ মুন্নির কাছে তেমন গুরত্ব পাচ্ছে না। সে ভেবেই চলেছে। কলেজের র্দুদান্ত এক ছেলের পল্লায় পড়েছে সে। ইচ্ছা করে নয়- অনিচ্ছাকৃত। সে দিন রুমির সঙ্গে যখন কি এক কথাই কথাই ক্যান্টিনে গিয়ে বসেছিলো কিছুক্ষণ তখন দেখা হয়েছিলো ছেলেটার সঙ্গে। ডানপিটে আর স্মার্ট ছেলেটা দেখতে মোটামুটি ভালোই। কিন্তু তারপরো মুন্নি এটা চায় নি। কারণ, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তার গার্জিয়ান তার বড় ভাইয়া। আর যদি তার ভাই জানতে পারে, তবে তাকে অবিশ্বাস করবে। আর সেও চায় না।
ছেলেটার নাম রাহাত। রাহাতে পরিবার তেমন সচ্ছল নয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ওরা। এক ভাই, চার বোন। সবার ছোট সে।বড় বোন শত কষ্ট করেও লেখাপড়া শিখাচ্ছে ওকে। কিন্তু তার কি বিবেক! সে একের পর এক প্রেমের অফার করে মেয়েদের। মেয়েরা ভয় পেয়েই সাড়া দেয় তার ডাকে। কারণ, তারা ভালো করেই জানে ওদের কর্মকান্ড সম্পর্কে। কোনো মেয়ে যদি তার ডাকে সাড়া না দেয়, তবে রাহাতের গ্রুপের অন্য ছেলেগুলো চান্সে থাকে সুযোগের। কেননা, নেতার পরে তারা অন্যায় করলে অপরাধ থাকে না ওদের। মুন্নি একটা বিষয় ভালো করেই লক্ষ্য করেছে যে, উপরে ছাত্র-ছাত্রী সেজে লেখা-পড়ার আড়ালে চলছে এক নিরব নির্যাতন। অসহায় মেয়েরা যখন বিদ্যার্জনের মহান দায়িত্ব নিয়ে বাবা-মাকে ছেড়ে চলে এসেছে এতোদূরে তখন বিদ্যার্জন না করে ফিরবে কেন। তাকে যে মানুষ হতে হবে। কাঁধে নিতে হবে বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা সংসারের কঠিন দায়ভার।
মুন্নিও তাই চেয়েছে। কিন্তু সে কি পারবে নাকি জড়িয়ে যাবে ওদের অরাজকতার জালে?
চলবেই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১১/১১/২০১৬অনেক বক্তব্য বুঝতে পারিনি।
-
আব্দুল হক ১০/১১/২০১৬নাইস