রাত পোহাবার আগে ৫
অফিসের কোনো কাজই মন বসাতে পারছে না মাসুম। সেই চোখ, সেই হাসি, সেই চাহনী। পাগল করে তুলছে মাসুমকে। নির্বাক সেই চোখের ভাষায় উদাস হয়ে উঠছে তার চঞ্চল মন। বার বার মনে হচ্ছে, এ তার স্বপ্ন নয়তো? হঠাৎ এতোদিন পর কোথায় থেকে এলো সে। আবার হারিয়ে যাবে না তো? ভয়, সংশয় আর উত্তেজনায় একাকার হয়ে যাচ্ছে মাসুমের অন্তকরণ। পারছে না সে স্থীর হতে। ভালো লাগছে না তার কোনো কিছু। বার বার দেখতে ইচ্ছে করছে, সেই স্বপ্ন কুমারীর মুখখানা। ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে, সেই বস্তি মুখি গলির বিশাল বাড়িটার কাছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,“ওগো অনামিকা, তুমি আমার শুধু আমার। তুমি হারিয়ে যেও না। তোমাকে হারালে আমি পাগল হয়ে যাবো। তোমাকে না দেখলে আমি বাঁচবো না।” চমকে উঠলো মাসুম। একি বলছে সে? সত্যি, কী তাই? নাকি মিথ্যা বলছে সে? কই, কতোদিন তাকে না দেখতে বেঁচে ছিলো সে। পাগলও হয় নি হারানোর দুঃখের। তবে কি সে অনেক কঠিন? নাকি জীবন বাস্তবতা নির্মমতা তাকে করেছিলো নিস্ক্রীয়?
এই যা এতো কী ভাবছি! কাজে মন দেবার চেষ্টা করলো মাসুম। খাতাপত্র টেনে নিয়ে চোখ রাখলো তাতে। কিন্তু লাভ হলো না। অজানায় আবারো চলে গেলো সে বস্তির মুখি গলিতে। সেই বৃদ্ধর কথা মনে হলো তার। কেন এমন করে তাড়িয়ে দিলো তাকে সেই বৃদ্ধ? কেন ভয় দেখালো তাকে?
কে ঐ মেয়ে? কী বা পরিচয় তার? তবে কী সে অসাধারণ কোনো পিতার সন্তান ? নাকি অন্য কোনো কারণ? কী কারণ হতে পারে? কেন বা সে হারিয়ে গিয়েছিল? আর কেনই বা ফিরে এলো?
হ্যাঁ, জানতে হবে মাসুমের। যাকে নিয়ে এতো ভাবনা, যার কারণে এতোটা কষ্ট তার পরিচয় জানা দরকার। হ্যাঁ, জানবেই মাসুম। জানতেই হবে তাকে। উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মাসুমের মনস্পট। খাতা থেকে চোঁখ তুলে বাইরে গেলো সে। অফিসের দোতলায় তার অফিস রুমের পাশে ছোট একটা ব্যালকনি। তাতে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ ।সেখানে মন স্থীর হলো না বেশিক্ষণ। চলে গেল অফিস রুমের খোলা জানালাটার পাশে। এখান থেকে দেখা যায় কৃষ্ণচূঁড়ার গাছটা। তাতে অজস্র ফুল। যেন থরে থরে সাজানো। অবারিত লালের মধ্যে ছোট ছোট সবুজ পাতাগুলো যেন সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে দিগুণ। সেদিকে মন স্থায়িত্ব হলো না মাসুমের। অজানা ভাবনা অচিনার কল্পলোকে দাঁড়িয়ে যেন ইশারা করছে বার বার।
হঠাৎ কার সাড়ায় পেছন ফিরে চায় সে।
ঃ স্যার, আপনারে এমডি স্যার ডাকছে। বললো এ অফিসের কর্মরত রামেস বাবু। পিয়ন হলেও তার ভাব সাব দেখে কেউ বলবে না যে, ইনি কোন সাধারণ পোষ্টে আছেন।
ঃ হ্যাঁ বলো, আসছি।
চলে গেলো রামেশ বাবু। মাসুম সহজেই বুঝতে পারলো তাকে এ সময় কেন ডেকেছে। তাই কিছুটা সংযত হয়েই এমডি চেম্বারে ঢুকলো সে।
ঃ আসবো স্যার?
ঃ হ্যাঁ, এসো। না তাকিয়েই বল্লেন বসো। তোমার সঙ্গে একটু শেয়ার করবো বলেই ডাকলাম। বিষয়টা যদিও আমার একান্ত। তবু বলছি, যদি তুমি এর কোনো সুফল জানো।
কিছু বুঝলো না মাসুম স্যারের কথা। বললো,“স্যার, কী বলছেন একটু বুঝিয়ে বলুন।”
ঃ হ্যাঁ, বলবো বলেই তো ডাকলাম। জানতো আমার একটা মেয়ে আছে?
ঃ জ্বি, স্যার।
ঃ ও আসছে আগামী কাল।
ঃ আসছে মানে? কোথায় থাকে ও?
ঃ নানা বাড়ি ছিলো এতোদিন। এই তো এবার ইন্টার ফাইনাল দিলো। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে, ও অনেক জেদি আর একরোখা। যা বলে তাই করে। যা ভালো বোঝে তাই করা চাই। অবশ্য, আজ পর্যন্ত ও কোনো অন্যায় কাজ করেনি। তবে উগ্র স্বভাবের। চঞ্চল আর দূরন্ত।
ঃ জ্বি, তা সমস্যাটা কী? তাছাড়া এ বয়সে অনেকে এমনটি হয়ে থাকে। পরে ভালো হয়ে যায়।
ঃ সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু ও বলেছে, ও নাকি আমার অফিসে কিছুদিন চাকরী করবে।
ঃ কী যে বলেন স্যার! তা কি হয়। ও সবে মাত্র ষ্টুডেন্ট। এ সময়...।
এমডি মাসুমের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,“হ্যাঁ, সমস্যাটাতো এখানেই। কিন্তু ও যা বলেছে তাই করবে। তাই ভাবছিলাম, তুমি কী আমাকে একটু হেল্প করবে?”
ঃ জ্বি, বলুন। কী করতে পারি আমি?
ঃ আমি জানি ও কোনো কষ্ট করতে পারে না। তাই ওর দ্বারা চাকরী হবে না। তবু যখন বলেছে, তখন আর ছাড়বে না। আর তাই ও যতোদিন এখানে থাকবে তুমি ওকে একটু সক্রিয় ভাবে সময় দিবে। যেন ওর কোনো সমস্যা না হয়। ও আমার একটি মাত্র মেয়ে, বড় আদরের। ওর সব আবদার মেনে নিই বলেই হয়তো ও এতোটা অবুঝ হয়েছে। তবু যা হোক, আমার মেয়ে তো ওর জন্য আমি সব করতে পারি। ওর সুখের জন্যই আমার এতো প্রচেষ্টা।
। এখন বলো, দেবে তো ?
ঃ জ্বি, স্যার। চেষ্টা করবো। কিন্তু যদি আপনার মেয়ে আমাকে ভালো ভাবে না নেয়?
ঃ আরে না! আমার বিশ্বাস, ও তোমার সাথে থাকতে আনন্দ বোধ করবে। আর আমিও তাই চাই। মাত্র ক’টা দিন তাই ও যেন আনন্দে কাটিয়ে যেতে পারে।
ঃ জ্বি, স্যার। তাই যেন হয়। আমিও চেষ্টা করবো।
ঃ এখন চলো, বাইরে গিয়ে চা খেয়ে আসি।
ঃ স্যার,
ঃ আজকে ভালো লাগছে না।
এতোদিন পর মেয়েটা আসছে হয়তো সেই সুখেই বলে হাসলো লোকটা।
ঃ আপনি আপনার মেয়েকে অনেক ভলোবাসেন, তাই না স্যার?
ঃ হ্যাঁ। কিন্তু এতো ভালোবাসা দিয়েও ওকে ধরে রাখতে পারি না। ওর মন যা চায় তাই করে ও। ছোট বেলা থেকে নানা বাড়ি থাকে। অথচ আমার বাড়ি শূন্য। এতো টাকা-পয়সা কিছুই মানে না ও। কিছুই চায় না ও। ওর একটা কথা, এখানে নাকি ওর একলা ভালো লাগে না। দোকলাও তো আর কেউ এলো না। তাই বাধ্য হয়েই ছাড়তে হয়েছে তাকে। তবে ভাবছি, মেয়েকে বিয়ে দিবো ঘর জামাই রেখে। শেষ বয়সটা মেয়ের সাথেই কাটিয়ে দিবো। ওর মায়েরও তাই ইচ্ছা।
ঃ কিন্তু আপনার মেয়ে যদি না চায়?
ঃ হ্যাঁ, ও যাতে চায় সে ব্যবস্থায় করতে হবে। কী বলো?
দুজনেই হাসলো অনেক গল্পে গল্পে অফিস ছুটিতে বাসায় ফিরলো মাসুম।বাসায় ফিরেই অবাক হল মাসুম..
চলবেই
এই যা এতো কী ভাবছি! কাজে মন দেবার চেষ্টা করলো মাসুম। খাতাপত্র টেনে নিয়ে চোখ রাখলো তাতে। কিন্তু লাভ হলো না। অজানায় আবারো চলে গেলো সে বস্তির মুখি গলিতে। সেই বৃদ্ধর কথা মনে হলো তার। কেন এমন করে তাড়িয়ে দিলো তাকে সেই বৃদ্ধ? কেন ভয় দেখালো তাকে?
কে ঐ মেয়ে? কী বা পরিচয় তার? তবে কী সে অসাধারণ কোনো পিতার সন্তান ? নাকি অন্য কোনো কারণ? কী কারণ হতে পারে? কেন বা সে হারিয়ে গিয়েছিল? আর কেনই বা ফিরে এলো?
হ্যাঁ, জানতে হবে মাসুমের। যাকে নিয়ে এতো ভাবনা, যার কারণে এতোটা কষ্ট তার পরিচয় জানা দরকার। হ্যাঁ, জানবেই মাসুম। জানতেই হবে তাকে। উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মাসুমের মনস্পট। খাতা থেকে চোঁখ তুলে বাইরে গেলো সে। অফিসের দোতলায় তার অফিস রুমের পাশে ছোট একটা ব্যালকনি। তাতে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ ।সেখানে মন স্থীর হলো না বেশিক্ষণ। চলে গেল অফিস রুমের খোলা জানালাটার পাশে। এখান থেকে দেখা যায় কৃষ্ণচূঁড়ার গাছটা। তাতে অজস্র ফুল। যেন থরে থরে সাজানো। অবারিত লালের মধ্যে ছোট ছোট সবুজ পাতাগুলো যেন সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে দিগুণ। সেদিকে মন স্থায়িত্ব হলো না মাসুমের। অজানা ভাবনা অচিনার কল্পলোকে দাঁড়িয়ে যেন ইশারা করছে বার বার।
হঠাৎ কার সাড়ায় পেছন ফিরে চায় সে।
ঃ স্যার, আপনারে এমডি স্যার ডাকছে। বললো এ অফিসের কর্মরত রামেস বাবু। পিয়ন হলেও তার ভাব সাব দেখে কেউ বলবে না যে, ইনি কোন সাধারণ পোষ্টে আছেন।
ঃ হ্যাঁ বলো, আসছি।
চলে গেলো রামেশ বাবু। মাসুম সহজেই বুঝতে পারলো তাকে এ সময় কেন ডেকেছে। তাই কিছুটা সংযত হয়েই এমডি চেম্বারে ঢুকলো সে।
ঃ আসবো স্যার?
ঃ হ্যাঁ, এসো। না তাকিয়েই বল্লেন বসো। তোমার সঙ্গে একটু শেয়ার করবো বলেই ডাকলাম। বিষয়টা যদিও আমার একান্ত। তবু বলছি, যদি তুমি এর কোনো সুফল জানো।
কিছু বুঝলো না মাসুম স্যারের কথা। বললো,“স্যার, কী বলছেন একটু বুঝিয়ে বলুন।”
ঃ হ্যাঁ, বলবো বলেই তো ডাকলাম। জানতো আমার একটা মেয়ে আছে?
ঃ জ্বি, স্যার।
ঃ ও আসছে আগামী কাল।
ঃ আসছে মানে? কোথায় থাকে ও?
ঃ নানা বাড়ি ছিলো এতোদিন। এই তো এবার ইন্টার ফাইনাল দিলো। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে, ও অনেক জেদি আর একরোখা। যা বলে তাই করে। যা ভালো বোঝে তাই করা চাই। অবশ্য, আজ পর্যন্ত ও কোনো অন্যায় কাজ করেনি। তবে উগ্র স্বভাবের। চঞ্চল আর দূরন্ত।
ঃ জ্বি, তা সমস্যাটা কী? তাছাড়া এ বয়সে অনেকে এমনটি হয়ে থাকে। পরে ভালো হয়ে যায়।
ঃ সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু ও বলেছে, ও নাকি আমার অফিসে কিছুদিন চাকরী করবে।
ঃ কী যে বলেন স্যার! তা কি হয়। ও সবে মাত্র ষ্টুডেন্ট। এ সময়...।
এমডি মাসুমের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,“হ্যাঁ, সমস্যাটাতো এখানেই। কিন্তু ও যা বলেছে তাই করবে। তাই ভাবছিলাম, তুমি কী আমাকে একটু হেল্প করবে?”
ঃ জ্বি, বলুন। কী করতে পারি আমি?
ঃ আমি জানি ও কোনো কষ্ট করতে পারে না। তাই ওর দ্বারা চাকরী হবে না। তবু যখন বলেছে, তখন আর ছাড়বে না। আর তাই ও যতোদিন এখানে থাকবে তুমি ওকে একটু সক্রিয় ভাবে সময় দিবে। যেন ওর কোনো সমস্যা না হয়। ও আমার একটি মাত্র মেয়ে, বড় আদরের। ওর সব আবদার মেনে নিই বলেই হয়তো ও এতোটা অবুঝ হয়েছে। তবু যা হোক, আমার মেয়ে তো ওর জন্য আমি সব করতে পারি। ওর সুখের জন্যই আমার এতো প্রচেষ্টা।
। এখন বলো, দেবে তো ?
ঃ জ্বি, স্যার। চেষ্টা করবো। কিন্তু যদি আপনার মেয়ে আমাকে ভালো ভাবে না নেয়?
ঃ আরে না! আমার বিশ্বাস, ও তোমার সাথে থাকতে আনন্দ বোধ করবে। আর আমিও তাই চাই। মাত্র ক’টা দিন তাই ও যেন আনন্দে কাটিয়ে যেতে পারে।
ঃ জ্বি, স্যার। তাই যেন হয়। আমিও চেষ্টা করবো।
ঃ এখন চলো, বাইরে গিয়ে চা খেয়ে আসি।
ঃ স্যার,
ঃ আজকে ভালো লাগছে না।
এতোদিন পর মেয়েটা আসছে হয়তো সেই সুখেই বলে হাসলো লোকটা।
ঃ আপনি আপনার মেয়েকে অনেক ভলোবাসেন, তাই না স্যার?
ঃ হ্যাঁ। কিন্তু এতো ভালোবাসা দিয়েও ওকে ধরে রাখতে পারি না। ওর মন যা চায় তাই করে ও। ছোট বেলা থেকে নানা বাড়ি থাকে। অথচ আমার বাড়ি শূন্য। এতো টাকা-পয়সা কিছুই মানে না ও। কিছুই চায় না ও। ওর একটা কথা, এখানে নাকি ওর একলা ভালো লাগে না। দোকলাও তো আর কেউ এলো না। তাই বাধ্য হয়েই ছাড়তে হয়েছে তাকে। তবে ভাবছি, মেয়েকে বিয়ে দিবো ঘর জামাই রেখে। শেষ বয়সটা মেয়ের সাথেই কাটিয়ে দিবো। ওর মায়েরও তাই ইচ্ছা।
ঃ কিন্তু আপনার মেয়ে যদি না চায়?
ঃ হ্যাঁ, ও যাতে চায় সে ব্যবস্থায় করতে হবে। কী বলো?
দুজনেই হাসলো অনেক গল্পে গল্পে অফিস ছুটিতে বাসায় ফিরলো মাসুম।বাসায় ফিরেই অবাক হল মাসুম..
চলবেই
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দ্বীপ সরকার ০৪/১১/২০১৬নাইস
-
অঙ্কুর মজুমদার ০৩/১১/২০১৬vlo--
-
আবু সাহেদ সরকার ০৩/১১/২০১৬অপেক্ষায় রইলাম