www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এটি একটি রোমান্টিক প্রেমের বড় গল্প

ঘাস ফুল




রাবেয়া মৌসুমী

জননী হীন জীবন যেন আলো হীন প্রদ্বীপের মতোই, এই জননী হীন গৃহে প্রাচুর্যও যেন রুগ্ন ধুসর তাই অগোছালো অনিপুন কবিতার জীবনে সৌন্দয্যের ছোয়া লাগেনা। তবু ও চলতে হয় বলেই চলা। মাঝে মাঝে বড় বিষাদিত আর সুর শুন্য জগৎ যেন ক্রোন্দসির হা হা কারে বিক্ষুব্ধ সুখ চোরা মনে হয় কবিতার কাছে। একাকিত্তের নিদারুন যাতনায় দগ্ধ দিশাহীন অন্তরে নিজেতেই রচে এক  র্নিমম সত্য..।
সকলে যখন নিজেকে বিকশিত করতে ব্যস্ত কিশোরি কবিতা তখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে আপন সীমানায়। যেখানে পিতার ব্যস্ততা, কিশোরির পথ প্রদর্শনে ব্যর্থ, সেখানে তার অবচেতন অন্তরার একমাত্র সহায়ক পুরানো কাজের বুয়া রূপালির মা। যার অন্তপরিচর্য়ায় বেড়ে উঠেছে তার একমাত্র কন্যা রূপালি এবং মালিক কন্যা কবিতা। দুজনে একে অপরের সহায়ক। অর্থবৃত্তের দুরন্ত পনা কিংবা শহরের কোলাহল  কখনো স্পর্শ করেনি তাদের, বড় জোর স্কুলের সহপাটি পর্যন্ত ওদের উৎচ্ছলতা।
কিন্তু সমস্যা ঘটলো সহজ বুদ্ধিমত্তা রূপার লেখা পড়া বন্ধ হওয়ায়। মায়ের বয়স বেড়েছে, তার বোধ শক্তি ও কম তাই তাকে স্কুলে পাঠানোর সাহস হয়না মার। রূপা এতটা সরল যে, যে যা বলবে তাই শুনবে এবং করবে, ভালেমন্দ বুঝবার ক্ষমতা নাই তার। লোক চোখের আড়ালে অনেকে নির্বোধ বলেন তাকে। কবিতা সংকৃর্ণ মনে আপন সীমানায় বেষ্টিত হলেও বুয়া তার সর্বত্র দিয়ে তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ভদ্র মার্জিত করে তুলার প্রচেষ্টায় অটু্ট। অতএব কবিতা ভদ্র শান্ত সভ্য।
কবিতা মানুষকে ভয় পায়, আড়াল করে নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে। দুরে সরে থাকে একা আনমনা হয়ে। রুপা না থাকায় কষ্ট হয় তার। কাঁদতে ইচ্ছে করে। কবিতা বসে আছে একটি গাছের নিচে কি যেন ভাবছে সে । কি ভাবছে মেয়েটা ?  ঈশ্বর তার অন্তিম শক্তিকে সৃষ্টি করেছে এক মানুষের প্রতি অন্য মানুষের অন্তিমতায়।
আর তাই হয়তো প্রকৃতি তাকে ঠিকি টেনে নেই মানুষের সংস্পর্শে। তুমি কবিতা না? তুমি একা একা এখানে  কি করছো? তোমাকে সব সময় একা দেখি এভাবে একা কি কেউ বাঁচতে পারে ? চলে গেল আগন্তুক। মহূর্তে যেন  বৃষ্টি নেমে এলো তার হৃদয়ের চৈতি খরা দুপুরে। শুর বেজে উঠলো বেশুর অন্তরের তানপুরায়, কে এই নিভৃত হৃদয়ের নিষ্চুপ অগন্তুক। দুরন্ত তার গতি, দৃর্বার তার আকর্ষন। কোথাও ঠাই নাই, সুখ নাই শান্তি নাই।  তার একটি কথা। কেন আমায় উদাস করলো কেন আমায় বেহায়া করলো? কাঁদছে কবিতা হৃদয়ের বিষে। কেন এমন করে বলল আমায়, একি সহানুভুতি নাকি তিরস্কার ?
 পর দিন স্কুলে গিয়ে কবিতার দু চোখ খুজে চলে তাকে। কিন্তু কি অর্চায্য সেই গাছতলায় ছেলেটার সঙ্গে দেখা হতেই মিষ্টি হেসে চলে গেল ছেলেটি। কবিতা ভয় আর কাপুনিতে বসে পড়লো সেখানে। সে দিন ক্লাস করা হলোনা তার। পরদিন আর সেই গাছতলায় যাবার সাহস পেলনা সে, শুধু দেখতে পেল দুর থেকে। সেই থেকেই আড়ালে আবডালে লুকিয়ে লুকিয়ে ছেলেটিকে দেখে কবিতা। দেখতে ভালোলাগে তার। ছেলেটি ও দেখে। কি যে তীব্র সেই চাহুনি, নিমিশেই যেন নিস্তেজ করে তাকে। কবিতা পারে না নিজেকে আড়াল করতে। কষ্ট হয় তার, মন চায় এখনি সামনে গিয়ে দাড়াতে কিন্তু এক রাশ ভয় আর লজ্জা এসে রোধ করে তার পথ। গত হয় আরো কটা দিন। হাজারো ভাবনার সমাধান হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে  সাহসি সরলা রূপালির মুখশ্রী।
হ্যা রূপা, সেই পারবে কবিতাকে এই মর্মজাতনা থেকে মুক্ত করতে। রুপা তার একান্ত আপন, বাধ্যগত, তাই রুপাকে তার ভয় নেই।
পড়ন্ত বিকেল। গোধুলির আবির ছুয়েছে দিগন্ত। তখনো পুতুল বিয়ে খেলায় ব্যাস্ত রূপা। কবিতা শান্ত পায়ে এগিয়ে চলে। কাছে গিয়ে ডাক দেয় রূপা। সরল হাসিতে উজ্জল হয়ে উঠে রূপার মুখ।
তুমি এসেছো, খেলবে এসো, আজ ছোট পুতুলির বিয়ে হবে। তুমি ছেলের মা আর আমি মেয়ের। দেখনা ওদের কত সাজিয়েছি ।
রূপা, এখন কি খেলার সময়। সন্ধা নেমে এসেছে যে?
ওমা তাইতো। অমি তো বুঝতেই পারিনি। আজ আর নয় মা বকবে,কালকে খেলবো।
হ্যা চল। এখন দুজনে পড়তে বসি।
নাহ্। আমি পড়বোনা, মা বলেছে আমার লেখাপড়া করে কাজ নেই।
না রূপা তা হয়না। লেখাপড়া না করলে ভালো মানুষ হওয়া যায়না। ভালো জীবন গড়া যায় না।
কিন্তু মা যে বলল্, আমাদের পয়সা নেই, আর লেখাপড়া করলে অনেক পয়সা লাগে ?
মা ঠিকি বলেছে। পয়সা আমিই দেব, তুই স্কুলে যাবি, তাছাড়া তুই ভালো ছাত্রী..?
আমি তো পরীক্ষা দিলাম না।
তাতে কি? পরের বারে দিবি। এক বছর ওকিছু না।
আচ্ছা তুমি বলছো তাই স্কুলে যাবো, আবার আমি লেখাপড়া করবো। জানো তোমার সঙ্গে স্কুলে যেতে আমার খুব ভালোলাগে। তুমি কত ভালো, আমায় কত ভালোবাস।
রুপা যা তোর বাসা থেকে বই নিয়ে আয়।
আচ্ছা ? সনন্দে চলে গেল সে।
কবিতা ভাবছে, ভাবনার অতলে ডুবে ছিল তাই কখন রূপা এসে শিয়রে দাড়ালো বুঝতেই পারেনি। বুয়ার কথায় ফিরে তাকালো সে।
রূপা তোর হাতে বই কেন? তুই এখানে কি করছিস ?
রূপা ভয় পেয়ে গেল।
খালা আমি ওকে আনতে বলেছি। ও আমার সঙ্গে লেখা পড়া করবে, রাতে আমার কাছে ঘুমাবে।
কি বলছো  তুমি ?
হ্যা খালা, রাতে একা আমার ভয় লাগে, আর স্কুলে একা যেতেও ভালো লাগেনা।
কিন্তু ?
কোন কিন্তুনা। টাকাপয়সার কথা তোমাকে ভাবতে হবেনা?
না না।তা হয়নাততত
না করোনা খালা। কেউ না জানলেও বুয়া জানে কবিতার অবস্থা, মানুষ চোরা কবিতার একমাত্র বন্ধু এই রূপা, তাই কিছু বলতে চেয়েও বলা হলনা আর, চলেগেলেন তিনি। সেই থেকে ওরা এক জায়গায় খায় ঘুমায়, গল্প করে, হাসি ঠাট্টায় মুখর হয়ে উঠে দুজনে। অবাক হয় বুয়া কবিতার এই পরির্বতনে। কিছু যেন বুঝতে চান তিনি। কিন্তু পেরে উঠেন না।

দুই
স্কুলে এসে কবিতা দেখালো ছেলেটাকে,ঐযে ঐ ছেলেটি।
রূপা কি ভেবে বলল তুই দাড়া আমি আসছি।
সে কি রে যাচ্ছিস না কি? কি বলবি, আমার কিন্তু ভয় করছে।
কেন? আরে ভয় নেই, আমি তোর বন্ধু না? পুতুল খেলার সাথি। একটা পুতুল তোকে দিতে পারবোনা তাকি হয় ?
চলে গেল রূপা।
ছেলেটা ফুল গাছের পরিচর্যা করছে। রূপা সামনে গিয়ে একটা ফুল ছিড়লো। ছেলেটা মালিকে কি বলে চলে এলো রূপার কাছে।
এই মেয়ে ফুল ছিড়লে কেন?
ফূল টা খুব ভালো লেগেছে তাই?
তোমার সাহস তো কম নয়। ফুলটা তোমার ভালোলাগলো আর তুমি কিছু না ভেবেই ফুলটা ছিড়লে?
হ্যা, ভালোলাগার জন্য মানুষ কত কিছু করে এইতো আপনার ভালোলাগে বলেই আপনি ফুলগাছ লাগাচ্ছেন। ভালোলাগার জন্যই মানুষ পয়সা খরচ করে কোথায় না কোথায় যায়। আর আমি মাত্র একটা ফুল ছিড়েছি, আমার তো পয়সা নেই, তাই ভালোলাগলেও কিছু করতে পারিনা । ফুল ছিড়তেতো পয়সা লাগেনা তাই ছিরে ফেললাম। একটা ভালো লাগা..
স্টপ। পেচাল বন্ধ কর।
আচ্ছা,
আচ্ছা মানে?
মানে আর কি, আমার এক বান্ধবী এই ফুলিটাকে খুব পছন্দ করেছে, তাই ওকে দিবার জন্যই।
তোমার বান্ধবী কে ?
ঐ যে.. রেলিংয়ের পাশে। কবিতা তাকিয়ে ছিল রূপার দিকে।
কবিতা। ও তোমার বান্ধবী ?
হ্যা তো ছোটবেলার বান্ধবী।
ছেলেটা কবিতার দিকে তাকিয়ে আছে। চলে গেল রূপা।
পর দিন আবার এলো রূপা।
এ কি তুমি আজ আবার ..।
হ্যা কাল আপনার নাম জানতে পারিনি তাই?
কে বলেছে কবিতা ?
হ্যা, তোমার সাহস তো কম না। কোন ক্লাসে পড়?
ক্লাস টেনে।
যাও ক্লাসে যাও। ধমক দেয় ছেলেটি।
আচ্ছা। চলে গেল রূপা।
ছেলেটি দেখলো কবিতা দুরে দাড়িয়ে দেখছে। মনটা খারাপ হল ছেলেটির কেন এভাবে বললাম, অন্যভাবে বুঝিয়ে বললেই হত। ছেলেটি কাজে ব্যস্তহবার ভাবে লেুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে তাদের। রূপা কাছে যেতেই কবিতা কি যেন জিজ্ঞাস  করলো, কি বলল রূপা কে জানে, হাসছে কবিতা। ছেলেটার বুঝতে বাকি রইলো না রূপার মিথ্যে কথা কবিতার হাসির কারন। সেদিন বিকেলে ভালো লাগলো না তার, বার বার কবিতার কথা মনে পড়ছিল। পর দিন আবার রূপা এলো, আবারো হমক দিল নিলয়। চলে গেল রুপা। এমনি করে প্রতিদিন অকারনে এসে দাড়ায় রূপা। দুএকটা কথাবলেই ধমক খেয়ে চলে যায় ।নিলয় ভেবে পায়না রূপার এই পাগলামির কারন। কবিতার প্রতি রূপার এই ভালোবাসা নিলয়কে কবিতার কাছে ঠেলেদেয়। আস্তে আস্তে মুখর হয়ে উঠে কবিতা। নিলয় দেখে কবিতা হাসতে শিখেছে, কথা বলতে শিখেছে, ক্লাসমেডদের সঙ্গে মিশতেও দেখাযায় তাকে। হঠাৎ একদিন কবিতার সামনে দাড়ায় নিলয়। কবিতা ভয় পেয়ে কথা বলতে পারেনা, বুঝতে পেরে দ্রুত চলে যায় নিলয়।
নিয়ে যায় কবিতার সৌন্দয্যের মুগ্ধতা। পরদিন রূপা এলে  নিলয় তাকে নিয়ে চলেযায় সেই গাছতলায়। নিলয় জানায় তার পরিচয় এবং জেনে নেয় কবিতার পরিচয়। মুগ্ধ হয় নিলয় কবিতার পরিচয়ে, কিন্তু সে ভাব গোপন করে রূপাকে বলে। সবি বুঝলাম কিন্তু তুমি এত অবুঝ কেন, এভাবে অন্যের জন্য প্রতিদিন বকা খাও?
মুহুর্তেই শান্ত হয়ে যায় রূপা, আস্তে আস্তে বলে, তাতে কি কবিতা আমায় খুব ভালোবাসে।
বাহ! তুমিতো দেখছি ভালেবাসার কাঙ্গাল। ঠিক আছে এবার যেতে পারো।
আচ্ছা।
রূপা শোন, ফুল নিবে? কথা বলেনা রূপা। নিলয় একটি  ফুল দেয় তার হাতে..রূপার মায়াময় মুখশ্রীতে ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি।
চলে যায় রূপা।
নিলয়ের পরিবার ছেলের মতের অপেক্ষায় ছিলেন। ছেলের মুখে তার পছন্দের কথাশুনে লোক পাঠালেন কবিতার বাসায়। কিন্ত কবিতার বাবা দেশে না থাকায় বিলম্ব। এ দিকে রূপার ভয় কেটে গেল। স্কুলে এসেই নিলয়ের সামনে দাড়ালো সে।
স্যার আজ কিন্তু আমি ভয় করছিনা ?
কেন ?
ওমা, আপনি জানেননা,আপনার বিয়ে হবে।
হ্যা সেতো হবেই। তো ?
কবিতার সঙ্গেই হবে।
সে তোমায় কে বলেছে ?
কবিতা বলেছে। কবিতা আমাকে নতুন ড্রেস কিনে দিয়েছে। খুব সুন্দর।
তাই ? বল কি। তো নতুন ড্রেস পরে এলে না ?
বানানো হয়নিতো।
ও আচ্ছা। তো কবিতা তোমায় আর কি বলেছে?
আর বলেছে আমি অনেক ভালো। আমার জন্যেই ..না বলা যাবে না।
তাই নাকি? কবিতা তো ঠিকি বলেছে... আরে না না স্যার মিথ্যে বলেছে ও আমাকে ভালোবাসেতো তাই।
রূপা তুমি আমায় হঠাৎ স্যার বলছো কেন?
আপনিতো আমাদের নতুন স্যার। সরি স্যার আমি জানতামনা।
কেন জানলে কি আমার কাছে আসতে না,
না, কবিতা বলেলও না?
মাথা চুলকায় রূপা, নিলয় দেখতে পায় এক সরল রূপাকে, অসম্ভব সুন্দর দেখায় তাকে।
রূপা ফুল নেবে না?
না এবার আপনি ওকে নিজেই দিয়েন। অনেক খুশি হবে।
মানে, তুমি কি ফুল নিয়ে কবিতাকে দাও ?
হ্যা।
হাসে নিলয়..অবাক হয়ে দেখে রূপা। কিছু বুঝতে পারে না সে। রুপা চলে যাচ্ছে কেন যেন অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে..তাই পালাতে চায় এবার। এই পাগলি যাচ্ছো কেন ফুল নিয়ে যাও, এটা তোমার জন্য। ফিরে না রূপা দৌড় দেয় সে। আবারো হাসিতে ভাসতে থাকে নিলয়..।
তিন দিন হল আজ আবারো অস্থির চিত্তে স্কুলে যায় নিলয়। কিন্তু স্কুলের পরিবেশ হঠাৎ অসুন্দর লাগে তার কাছে, বাসায় ফিরে অসময়ে।
ছাদে উঠে গোলাপ গাছটার কাছে যায়,সন্দর একটি গোলাপ ফুটেছে। ফুল টাকে ধরতে গিয়ে চোখ পড়ে গাছের নিচে টবে ফুটন্ত একটি ঘাস ফুলে। কি সুন্দর ফুলটা। মনে হল রূপার কথা রূপা এই ফুলটি পেলে খুব খুশি হত।
আরো তিন দিন পর দেখা হল রূপার সঙ্গে। আজ রূপা কবিতার দেওয়া নতুন ড্রেস পরেছে।
রূপা তুমি এসেছো এই কদিন কোথায় ছিলে, তোমাকে কত খুজেছি?
রূপা মাথা নিচু করে বলল,আমি অসুস্থ ছিলাম। কবিতা আপনাকে কিছু বলেনি? ওর তো আপনার সাথে কথা বলার কথাছিল ?
তার আর দরকার নেই, ও রকম র্নিবোধ মেয়ে ? সে যাক, এখন কেমন আছো তুমি?
হা ভালো।
চল গাছ তলায়, তোমার সঙে কথা আছে আমার।
এখানেই বলেন না?
না, চল গাছতলায় বসি। ওরা পাশাপাশি বসেছে, নিলয় লক্ষ্য করলো রূপার মধ্যে আজ কোন চঞ্চলতা নেই।
রূপা, আমি আজ হেরে গেছি তোমার কাছে, তুমি জাননা তোমার অনুপস্থিতি আমাকে বার বার বলে দিয়েছে তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। আমি তোমাকে ছাড়া ভালো ছিলাম না রূপা। জানিনা কখন তুমি আমার এত আপন হয়েছো। আমি, আমি তোমার ভালবাসা চাই..কিন্তু আমার তো ভালোবাসা নেই স্যার। ছন পাতার একটি ভাঙা কুঠির যেখানে বৃষ্টি পড়ে। ঝড় এলে উড়ে যায়। আর তখন ভালোবাসা প্রতিষ্টিত কবিতা আমায় থাকতে দিয়েছে, খেতে দিয়েছে, লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ভালোবাসা তো তার জন্য। ও আমার নেই স্যার। হাসছে নিলয় রূপার কথায়
রূপা, এই রূপা তুমি এত বড় হলে কবে? এত সুন্দর করে কথা বলছো। তুমি কি জান আজ তোমাকে কত সুন্দর লাগছে ? আমি ধন্য আমি কবিতা নয় তোমাকে চাই।
না স্যার আপনি এভাবে এত বড় অন্যয় করতে পারেননা। কেদে দেয় রূপা, আপনি আমাকে করুণা দেখিয়ে অপমান করছেন।
না রূপা তুমি ভুল ভাবছো। কবিতা অর্থবিত্তে আমার যোগ্য হলেও ব্যক্তিত্বে নয়। ওর মত মানুষ বিদ্বেষী অসামাজিক একটা মেয়ে, রূপা তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়োনা প্লিজ।
এসব কি বলছেন আপনি..?
হ্যা আমি সত্যি বলছি..।
এখন ভেবে দেখ তুমি কি করবে। রূপা আমি আবারো বলছি, তোমার সব জেনেই আমি তোমাকে চাই। আমি আমার সব ভালোবাসা তোমাকে দিতে চাই।
আপনি ভুল করছেন কবিতা অনেক ভালোমেয়ে।
ভুল হলেও কিছু করার নেই আমার, আমি তোমাকে জানি আর তোমাকে..
কিন্তু,
কোন কিন্তু নয় রূপা,
চলে যাচ্ছে রূপা, কি হল চলে যাচ্ছো যে..
হা ,আমাকে বহুদুর যেতে হবে।
আমাকে একা ছেড়ে?
নাহ।
তাহলে আমায় কিছু বল্লে নাতো?
হাসলো রূপা, বারে আপনি এতটা অবুঝ কেন?
রূপা,
হাঁ । ভালো থাকবেন স্যার আল্লাহাফেজ।
নিলয়, সুর মেলালো আল্লাহাফেজ।

রূপা আর একবার দুর থেকে ফিরে তাকালো। চেয়ে আছে নিলয় ও।
সকাল থেকেই কবিতার মনটা ভালোনেই। রূপার যে কি হয়েছে বুঝতে পারছেনা। অসুস্থতার কথা বলে কদিন স্কুলে যায়নি। মন খুলে কথাও বলছেনা। শুধু একা একা থাকছে, খালার কাছে জানতে চাইলে বলল আমিও তো বুঝতে পারছিনা রে মা। কাল রাতে ও কিছুই খায়নি ?
কবিতা চলে গেল নিজের রুমে এখনো বিভোরে ঘুমোচ্ছে রূপা, ঘড়িতে চেয়ে দেখলো দশটা বেজে পনের মিনিট। এই রূপা আর কত ঘুমোবি স্কুলে যাবিনা? শরিরে হাত দিয়েই চমকে উঠলো কবিতা। চিৎকার করলোসে। ছুটে এলো রূপার মা। মুহুর্তে ডুকরে কেদে উঠলেন তিনি, এ তুই কি করলিরে মা। কেন আমায একা করলি, তুই যে আমার এক মাত্র... র্মূচ্ছ গেলেন রূপার মা । কবিতা শক্ত করে ধরে আছে রূপাকে না রূপা তোকে আমি কোথাও যেতে দিবনা। তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারিস না। আমার কথার অবাধ্য হতে পারিসনা। প্রলাপ বকছে কবিতা, কোন ভাবে কেউ তাকে সরাতে পারছেনা রূপার কাছ থেকে। সবাই দেখছে করূন দৃশ্য। কিন্তু যে যেতে চায় তাকে ধরে রখা যায় না কবিতাও পারে না রূপাকে ধরে রাখতে। সকল মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে রূপা চলল তার আপন ঠিকানায়..আজ আর তার কোন ভার নেই। কোন দায় নেই। মুক্ত সে আপনার পথে...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬৪৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/১০/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast