রাত পোহাবার আগে ৪
দেখলো মাসুম মেয়েটা এখনো দাঁড়িয়ে। দেখতে প্রথম দিনের মতোই শান্ত মেয়েটা। প্রথম দিন, সে কি এক কারণে মেইন রাস্তা ছেড়ে বস্তির পাশে একটা গলি দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ চোখ পড়েছিলো সেই দোতলার ব্যালকনিতে। মেয়েটা সেদিনও দাঁড়িয়ে ছিলো এমনি করে। খোলা চুলে লেগে ছিল দক্ষিণা হাওয়া, ওড়নাটা উড়ছিলো শাসনহীন হয়ে। দেখছিলো সেও মাসুমের দিকে। ঠোঁটে লেগেছিলো মিষ্টি হাসি। অপূর্ব লাগছিলো মেয়েটাকে। আজ বহুদিন পর যেন তেমনি করে দেখছে মাসুম। কিন্তু আজ আর তার মুখে তেমন হাসি নেই, নেই কোন উচ্ছ্বলতা-চঞ্চলতা। সেই দীর্ঘ পাঁচটি বছরে প্রতিদিন দেখা হতো তেমনি করে। মাসুম মেইন রাস্তা ছেড়ে এ পথেই চলাচল করতো। একটিবার সেই অপূর্ব অপরুপাকে দেখবে বলে। সেই মেয়েটাও দাঁড়িয়ে থাকতো ব্যালকনিতে। হয়তো বা তারো ইচ্ছা মাসুমকে দেখার। প্রতিদিন দেখা হতো কিন্তু কথা হয় নি, এই সুদীর্ঘ দিনে। শুধু ইশারা আর অনুভূতিই কতো কথা হতো দু’জনার। কেউ জানতো না তাদের এই নিবর প্রণয়ের কথা। শুধু ওরা ছাড়া। একদিন কেউ কাউকে দেখতে না পেলেই বেদনায় ছেয়ে যেতো অন্তর। মাসুমের শুরু হতো অকারণে বার বার পথ চলা। আবার মেয়েটাকে দেখা যেতো নির্বাক হয়ে, পথে চেয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে। কতো চেনা দু’জন দু’জনার। কতো আপন একে-অন্যের। অথচ কোনোদিনো কথা হয় না তাদের। কেউ জানে না কারো পরিচয়। তবু চলে তাদের এই নিরব প্রণয় খেলা। দিন চলে যায়, মাস চলে যায়, নতুন বছর আসে। তেমনি করেই চলে তাদের প্রণয় গিরি। উত্তেজনা অস্থিরতা তোলপাল করে মাসুমকে। ইচ্ছে করে জানতে তাকে। অসময়ে ছুটে যায় সেই গলিতে, যেখান থেকে দেখা যায় সেই অপূর্ব অপরূপাকে। কিন্তু না, সাহস হয় না তাকে কিছু বলার। ফিরে আসে মাসুম। ভাবতে থাকে এলো-মেলো কতো ভাবনা। নিজেকে শাসন করে বুঝায় তার অবুঝ হৃদয়কে। কিন্তু না, সেই যে নিশা একটু দেখা, একটু হাসি,একটু চেয়ে থাকা, চোখে পড়তেই চোখ ফিরিয়ে নেওয়া সব মিলিয়েই ভালোলাগে মাসুমের। সে জানে না কেন এই ভালোলাগা। আর এ ভালোলাগার পরিণাম কী? তবু যা ভালোলাগে তাকে অস্বীকার করবে কেন? এমনি করেই চলতে থাকে। সময়ের স্রোতে হাজার পরিবর্তন হয় মাসুমের জীবনের প্রতিটি সময়। বদলে যায় তার জীবন বাস্তবতা। সে ইন্টার, অর্নাস, মাষ্টাস পাশ করে। কিন্তু বদলায় না শুধু অপূর্ব অপরূপার নিরব দর্শন। মাঝে মাঝে অবাক লাগে মাসুমের। কারণ, সে অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারে না মেয়েটার কোনো পরিচয়। সেই যে বান্ধবী তারো আর দেখা নেই। সে চলে গেছে প্রবাসে। স্বামী সংসারে বন্দি মেয়েটা দেশে ফেরে না অনেক দিন।
মাসুম চায় না কোনো অন্যায় কারীর সঙ্গী হতে। আর তাই সে কাউকে বলে না এই বিষয়ে। হয়তো বা সে কারণেই পারে না সে। তবু যা হোক, ভালোই তো আছে ওরা। দেখা হয়, কথা হয় প্রতিদিন মনের ভাষায় এর চেয়ে বেশি তো এখন কিছু চায় না মাসুম। মাষ্টাস শেষ করেছে, বাবা-মার ইচ্ছানুযায়ী কিছু করবে এবার। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে এলো-মেলো হয়ে যায় মাসুমের চলা। দিশেহারা মাসুম হারিয়ে ফেলে সব সুখ। হারিয়ে ফেলে অপুর্ব সেই অপরূপার দর্শন। পনেরো দিন পর সে যখন গলিতে যায় তখন আর দেখা হয় না মেয়েটার সঙ্গে। প্রায় পাগলের মতো বার বার গিয়েও দেখা হয় না আর তার সঙ্গে।
মাসুম ভাবে, হয়তো রাগ করেছে তাই দেখা করছে না। আবার ভাবে, আমার দেখা না পেয়ে হয়তো আর দাঁড়ায় না। নয়তো বা আমি যখন আসি সে তখন বের হয়না । হাজারো ভাবনায় বার বার ছুটে যায় মাসুম সেই গলিতে। কিন্তু না অনেক দিন চলে যায় আর দেখা হয় না তাদের। বাবা-মায়ের মৃত্যু এবং হৃদয়ের কষ্টে নিথর হয়ে যায় মাসুম। বেশ কিছু দিন ঘোর কাঁটে না তার। তবু জীবন বাস্তবতায় সব ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয় মাসুমকে আলোকৃত জীবনের পথে। ঘরে তার তিন তিনটি বোন। বড় আদরে বেড়ে উঠা বোনদের দুঃখ সহ্য হয় না মাসুমের। তাই ভুলে যায় সবি। আপন প্রয়োজনে না হোক। বোনদের জন্য । কিন্তু আজ এতো দিন পর এ হঠাৎ কোথা থেকে এলো সেই হাসি, সেই ছবি, সেই মুখ? বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে মাসুম।
অপলক চোখে চেয়ে আছে মেয়েটা। চেয়ে আছে মাসুমও। ভালো লাগছে তার যেন তৃষ্ণাত চোঁখ যতক্ষন না জোড়াই ততোক্ষণ চেয়ে থাকবে সে। বেশ কিছুক্ষণ পর এক বৃদ্ধর কথাই পিছন ফিরে তাকায় মাসুম।
ঃ এই যে বাবু, এখানে দাঁড়িয়ে কী করছো? বেশ কিছুক্ষণ দেখছি দাঁড়িয়ে আছো? কী দেখছো ওদিকে? ও মন মাধুরীকে দেখছো বুঝি। তা বেশ দেখলে তো। এবার যে যেতে হয়।
ঃ কেন?
ঃ সে জানবে বৈকি? দেরি করো না, চলে যাও এবার। বৃদ্ধার কথাই কিছুটা ভীতির উদ্দ্যেগ।
ঃ কাকা।
ঃ হ্যাঁ বাবু, তোমার ভালোর জন্যই বলছি। এবার যাও দিকি।
বৃদ্ধ প্রায় জোর করেই ঠেলে দিলো মাসুমকে। মাসুম বুঝতে পারলো না কিছু। শুধু হাঁটতে লাগলো অফিসের পথ ধরে। অফিস সময় অনেকটা অতিক্রম করে আসতে দেখে রেগে গেলেন ম্যানেজার। বদ মেজাজী লোকটা খিটমিট করে বললো,“কী ব্যাপার, এখন এলেন যে? সময় দেখেন তো? আমি কী আমার কাজ বাদ দিয়ে আপনার কাজ করবো? তাই যদি করতে পারতাম তো আপনার প্রয়োজন কী ছিলো?”
নিরবে শুনছে মাসুম। কিছুই বলার নেই তার। মাসুম জানে, এই লোকটার মধ্যে যতো বেশি নিষ্ঠুরতা ততো বেশি উদারতা। যথেষ্ট ভালোবাসে লোকটা মাসুমকে। তাই ভালোবাসার অধীকারেই শাসনকে জয় করেছে।
মাসুমকে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লোকটা ধমক দিয়েই বললো,“কী ব্যাপার? এলেন তো এক দুপুর খেয়ে আবার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান কাজে যান। যতো সব।”
চলে গেলো ম্যানেজার। মাসুমও চলে গেলো তার কাজে।
[চলেবই]
মাসুম চায় না কোনো অন্যায় কারীর সঙ্গী হতে। আর তাই সে কাউকে বলে না এই বিষয়ে। হয়তো বা সে কারণেই পারে না সে। তবু যা হোক, ভালোই তো আছে ওরা। দেখা হয়, কথা হয় প্রতিদিন মনের ভাষায় এর চেয়ে বেশি তো এখন কিছু চায় না মাসুম। মাষ্টাস শেষ করেছে, বাবা-মার ইচ্ছানুযায়ী কিছু করবে এবার। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে এলো-মেলো হয়ে যায় মাসুমের চলা। দিশেহারা মাসুম হারিয়ে ফেলে সব সুখ। হারিয়ে ফেলে অপুর্ব সেই অপরূপার দর্শন। পনেরো দিন পর সে যখন গলিতে যায় তখন আর দেখা হয় না মেয়েটার সঙ্গে। প্রায় পাগলের মতো বার বার গিয়েও দেখা হয় না আর তার সঙ্গে।
মাসুম ভাবে, হয়তো রাগ করেছে তাই দেখা করছে না। আবার ভাবে, আমার দেখা না পেয়ে হয়তো আর দাঁড়ায় না। নয়তো বা আমি যখন আসি সে তখন বের হয়না । হাজারো ভাবনায় বার বার ছুটে যায় মাসুম সেই গলিতে। কিন্তু না অনেক দিন চলে যায় আর দেখা হয় না তাদের। বাবা-মায়ের মৃত্যু এবং হৃদয়ের কষ্টে নিথর হয়ে যায় মাসুম। বেশ কিছু দিন ঘোর কাঁটে না তার। তবু জীবন বাস্তবতায় সব ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয় মাসুমকে আলোকৃত জীবনের পথে। ঘরে তার তিন তিনটি বোন। বড় আদরে বেড়ে উঠা বোনদের দুঃখ সহ্য হয় না মাসুমের। তাই ভুলে যায় সবি। আপন প্রয়োজনে না হোক। বোনদের জন্য । কিন্তু আজ এতো দিন পর এ হঠাৎ কোথা থেকে এলো সেই হাসি, সেই ছবি, সেই মুখ? বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে মাসুম।
অপলক চোখে চেয়ে আছে মেয়েটা। চেয়ে আছে মাসুমও। ভালো লাগছে তার যেন তৃষ্ণাত চোঁখ যতক্ষন না জোড়াই ততোক্ষণ চেয়ে থাকবে সে। বেশ কিছুক্ষণ পর এক বৃদ্ধর কথাই পিছন ফিরে তাকায় মাসুম।
ঃ এই যে বাবু, এখানে দাঁড়িয়ে কী করছো? বেশ কিছুক্ষণ দেখছি দাঁড়িয়ে আছো? কী দেখছো ওদিকে? ও মন মাধুরীকে দেখছো বুঝি। তা বেশ দেখলে তো। এবার যে যেতে হয়।
ঃ কেন?
ঃ সে জানবে বৈকি? দেরি করো না, চলে যাও এবার। বৃদ্ধার কথাই কিছুটা ভীতির উদ্দ্যেগ।
ঃ কাকা।
ঃ হ্যাঁ বাবু, তোমার ভালোর জন্যই বলছি। এবার যাও দিকি।
বৃদ্ধ প্রায় জোর করেই ঠেলে দিলো মাসুমকে। মাসুম বুঝতে পারলো না কিছু। শুধু হাঁটতে লাগলো অফিসের পথ ধরে। অফিস সময় অনেকটা অতিক্রম করে আসতে দেখে রেগে গেলেন ম্যানেজার। বদ মেজাজী লোকটা খিটমিট করে বললো,“কী ব্যাপার, এখন এলেন যে? সময় দেখেন তো? আমি কী আমার কাজ বাদ দিয়ে আপনার কাজ করবো? তাই যদি করতে পারতাম তো আপনার প্রয়োজন কী ছিলো?”
নিরবে শুনছে মাসুম। কিছুই বলার নেই তার। মাসুম জানে, এই লোকটার মধ্যে যতো বেশি নিষ্ঠুরতা ততো বেশি উদারতা। যথেষ্ট ভালোবাসে লোকটা মাসুমকে। তাই ভালোবাসার অধীকারেই শাসনকে জয় করেছে।
মাসুমকে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লোকটা ধমক দিয়েই বললো,“কী ব্যাপার? এলেন তো এক দুপুর খেয়ে আবার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান কাজে যান। যতো সব।”
চলে গেলো ম্যানেজার। মাসুমও চলে গেলো তার কাজে।
[চলেবই]
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এম এস সজীব ০২/১১/২০১৬অসাধারণ
-
মলয় ঘটক ২৮/১০/২০১৬Osadharon