রাত পোহাবার আগে ৩
ঃ জেবা ? ধমক দেয় মম। কি ভেবে আবার নরম হয়ে বলে, জেবা, একথা আর মুখে এনো না। ভাইয়া শুনলে কষ্ট পাবে। শুনেছো না তোমার মা বলেছে, তুমি তার ছোট বোনের মতো?
ঃ তাতে কী হয়েছে? এমন তো কতো হয়।
মম বুঝতে পারে, এ মেয়ে নাঁছোড় বান্দা। তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলে, ।
একটা কথা বলবো, শুনবে?”
ঃ হ্যাঁ, বলেন।
ঃ ক’দিন বাদে ভাইয়ার পরীক্ষা। এ সময় ভাইয়াকে অনেক লেখা-পড়া করতে হয়। তাই বলছিলাম কি, তুমি ভাইয়াকে এ সময় ডির্স্টাব করো না।
মানে ?
মানে আবার কি । জেবা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। মমও চেয়ে থাকে জেবার দিকে। অজস্র মায়ায় জেবার চোখের কোণায় চিক চিক করে উঠে বাঁধন হীন লোনা জল। তবু কিছু বলে না মম। চলে যায় জেবা। মম আবিস্কার করে এক সরলা জেবাকে। যাকে গ্রাস করেছে মিথ্যা জরাগ্রস্থ কুশিক্ষার অজ্ঞতা।
ক’দিন বাদেই ভুলে যায় জেবা মম’র কথা। আবার সেই একই আচরণে বিরক্তি বোধ করে মাসুম। জেবাকে একদিন অনিচ্ছা সত্বেও নিয়ে যায় পার্কে।
বুঝানোর চেষ্টা করে তাকে। কারণ, একটায় মম’র সেদিনের বলা কথাটা। জানো ভাইয়া, মেয়েটা এখনো অবুঝ। জীবন বাস্তবতা বিমুখ। ওর যথেষ্ট শিক্ষার অভাব। তুমি বরং বুঝিয়ে বলো, ভালো হয়ে যাবে হয়তো। সে দিনের বিজ্ঞের মতো বলা মম’র কথাই অবাক হয়েছিলো মাসুম। সত্যিই যেন মম’র বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হয় মাসুম। ভাবতেও অবাক লাগে মম তারি ছোট বোন।
মাসুমকে উদাস দেখে জেবা বলে,“কী ভাবছেন?
ঃ কই, কিছু না তো?
ঃ আমার কাছে লুকাচ্ছেন?
ঃ আরে না, জেবা। আমি তোমাকে এখানে কেন এনেছি, জানো?
ঃ হ্যাঁ, জানি তো।
ঃ কী জানো, বলো দেখি?
ঃ বলবো না। হাসছে মেয়েটা অকারণে।
মাসুম সে হাসিতে কান না দিয়ে বললো,“জানো না। আমি তোমাকে কেন এখানে এনেছি।”
ঃ কেন? জানতে চাইলো জেবা।
ঃ আচ্ছা, তোমার শরীর থেকে এতো মিষ্টি একটা সুঘ্রাণ বেরচ্ছে, এটা কীসের?
ঃ কেন, পারফিউমের।জানো এটা বিদেশ থেকে মামা পাঠিয়েছে । ঃতাই ।
ঃহা,হাসছে মেয়েটা র্সাথকতার হাসি।
ঃকিন্তু তুমি কী জানো, পারফিউম ব্যাবহার কখন করা হয়?
ঃ না তো।
ঃ মেয়েরা পারফিউম ব্যাবহার করে বিয়ের পরে। সেও আবার শুধু স্বামীর কাছে। তুমি যে পারফিউম ব্যাবহার করে সবার মন আকৃষ্ট করছো, এতে তোমার পাপ হচ্ছে। আর হাদিসে এই পাপারিকে সরাসরি বেষ্যা বলা হয়।
মাসুম লক্ষ করলো, হঠাৎ জেবার মুখে কেমন একটা আবরণ পড়লো। আর এই যে তোমার পোশাক, এতে কী তোমার সম্মান বাড়ছে নাকি কমছে?
ঃ কেন? মাসুমের কথাই বোকার মতো প্রশ্ন করলো জেবা।
ঃ দেখেছো, তুমি যখন রিক্সায় আসছিলে কতো লোক তোমার দিকে তাকাচ্ছিলো?
ঃ হ্যাঁ, দেখেছি তো।
ঃ ওরা তোমার এই নগ্নতা দেখে মজা পাচ্ছিলো। তোমার জন্য ওদের লোভ হচ্ছিলো। আর তাতেও তোমার পাপ হচ্ছিলো। মেয়েদের শরীরের প্রত্যেক অঙ্গই অতি মূল্যবান যদি তার পর্দা থাকে। তাছাড়া হাদিসে আছে, নারীর শরীরের কোনো অংশ যদি কোনো পর পুরুষ দেখে, তবে সে অংশ বেহেস্ত যাবে না। এখন বলো, তুমি কী করবে? মানুষকে মজা দিয়ে নিজে পাপি হবে?
কথা বলে না জেবা। মাসুম বলেই চলে,“দেখেছো আমার বোনদের? ওরা আমাকে ভয় পায়। কারণ, আমি ওদের সাবধান করে দেই। তোমাকেও দিলাম। এখন মানা না মানা তোমার ব্যাপার। আর হ্যাঁ, তুমি এখনো অনেক ছোট। তাই তোমার কাছ থেকে এমন কোনো আচারণ আশা করবো না। যা আমাকে আর দশ জনের কাছে ছোট করে দেয়। আমাকে যদি বড় ভাই মনে করো তাহলে আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী যথেষ্ট উপকারে আসবো তোমার, কেমন?”
কথা বলে না জেবা। শুধু শুনে। ধমক দেয় মাসুম।
ঃ কী হলো, কথা বলছো না কেন?
ঃ কী বলবো?
ঃ বলতে হবে না। শুধু মনে রাখলেই হবে। যাও, বাসায় যাও। আমি অফিসে যাবো।
চলে যায় জেবা। শান্ত পদচরণে। নিরব অধরে তার নিদারুন মলিনতা। মাসুম চেয়ে আছে জেবার চলে যাওয়ার পথে। রিক্সা উঠে চলে যাচ্ছে মেয়েটা। আস্তে আস্তে রিক্সাটা অদৃশ্য হতেই হাঁটতে লাগলো সে। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে মাসুম, মেয়েটা খুব একটা মন্দ নয়, তবে কুশিক্ষা মানুষকে যে এতোটা অন্ধকারে ঠেলে দেয় সে কথা ভেবেই কষ্ট হয় মাসুমের। আর জেবার এই অজ্ঞতার জন্য তার মাকেই দায়ি মনে হয় তার কাছে। বেচারির বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি তবু যে সাজ তার? মেয়ে হয়ে জেবা করলে তার কাছে দোষের তো কিছু থাকে না। হ্যাঁ, জ্ঞান-হীনতায় অজ্ঞতার জন্ম দিচ্ছে।
হঠাৎ চমকে উঠে মাসুম। এতোদিন পর সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে আজ। চঞ্চল হয়ে উঠে মাসুমের মন। মেয়েটাও চেয়ে আছে তার দিকে। হাসলো মাসুম অচেনা আনন্দে। এই সেই মেয়ে যাকে চেনে মাসুম প্রায় দশবছর ধরে। এস. এস. সি পরীক্ষার পর একবার দেখা হয়েছিলো তাদের কলেজ চত্ত্বরে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে। কথা হয় নি মেয়েটার সঙ্গে সেদিন। শুধু ভালো লেগেছিলো প্রথম দেখায়। তারপর অনেক খুঁজেছিলো সে মেয়েটাকে। বাসায় গিয়ে বলেছিলো মাসুম সেদিন তার মাকে। মা হেসেছিলো আর বলেছিলো,“হে রে, তুইতো সবে মাত্র মেট্রিক দিচ্ছিস, তাতেই এতো ভালোলাগা এসে গেলো? ও মেয়ের অভিভাবক কী তোর মতো অকালপক্ক ছেলের সঙ্গে মেয়ে দিবে?”
ঃ কী যে বলো মা! আমি কী এখন বিয়ে করছি নাকি? ভালো লেগেছে তাই বললাম। তাছাড়া আমার কাধে কতো দায়িত্ব। ভালোভাবে লেখাপড়া করে তোমার ছেলে হতে হবে না? তুমি সেকালের উচ্চ শিক্ষিতা। আর আমি একালের হয়ে অধঃশিক্ষিত তা কী হয়?
মা সে দিন অনেক হেসেছিলো মাসুমের কথাই। কে জানতো সত্যি সত্যি মাসুমের ঘাড়ে এসে পড়বে সংসারের এই মহাভার। মুছে যাবে মায়ের মুখের সেই হাসি। কষ্ট হয় মাসুমের মায়ের সে হাসি মাখা মুখের ছবি ভেসে উঠতেই।
[চলবেই]
ঃ তাতে কী হয়েছে? এমন তো কতো হয়।
মম বুঝতে পারে, এ মেয়ে নাঁছোড় বান্দা। তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলে, ।
একটা কথা বলবো, শুনবে?”
ঃ হ্যাঁ, বলেন।
ঃ ক’দিন বাদে ভাইয়ার পরীক্ষা। এ সময় ভাইয়াকে অনেক লেখা-পড়া করতে হয়। তাই বলছিলাম কি, তুমি ভাইয়াকে এ সময় ডির্স্টাব করো না।
মানে ?
মানে আবার কি । জেবা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। মমও চেয়ে থাকে জেবার দিকে। অজস্র মায়ায় জেবার চোখের কোণায় চিক চিক করে উঠে বাঁধন হীন লোনা জল। তবু কিছু বলে না মম। চলে যায় জেবা। মম আবিস্কার করে এক সরলা জেবাকে। যাকে গ্রাস করেছে মিথ্যা জরাগ্রস্থ কুশিক্ষার অজ্ঞতা।
ক’দিন বাদেই ভুলে যায় জেবা মম’র কথা। আবার সেই একই আচরণে বিরক্তি বোধ করে মাসুম। জেবাকে একদিন অনিচ্ছা সত্বেও নিয়ে যায় পার্কে।
বুঝানোর চেষ্টা করে তাকে। কারণ, একটায় মম’র সেদিনের বলা কথাটা। জানো ভাইয়া, মেয়েটা এখনো অবুঝ। জীবন বাস্তবতা বিমুখ। ওর যথেষ্ট শিক্ষার অভাব। তুমি বরং বুঝিয়ে বলো, ভালো হয়ে যাবে হয়তো। সে দিনের বিজ্ঞের মতো বলা মম’র কথাই অবাক হয়েছিলো মাসুম। সত্যিই যেন মম’র বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হয় মাসুম। ভাবতেও অবাক লাগে মম তারি ছোট বোন।
মাসুমকে উদাস দেখে জেবা বলে,“কী ভাবছেন?
ঃ কই, কিছু না তো?
ঃ আমার কাছে লুকাচ্ছেন?
ঃ আরে না, জেবা। আমি তোমাকে এখানে কেন এনেছি, জানো?
ঃ হ্যাঁ, জানি তো।
ঃ কী জানো, বলো দেখি?
ঃ বলবো না। হাসছে মেয়েটা অকারণে।
মাসুম সে হাসিতে কান না দিয়ে বললো,“জানো না। আমি তোমাকে কেন এখানে এনেছি।”
ঃ কেন? জানতে চাইলো জেবা।
ঃ আচ্ছা, তোমার শরীর থেকে এতো মিষ্টি একটা সুঘ্রাণ বেরচ্ছে, এটা কীসের?
ঃ কেন, পারফিউমের।জানো এটা বিদেশ থেকে মামা পাঠিয়েছে । ঃতাই ।
ঃহা,হাসছে মেয়েটা র্সাথকতার হাসি।
ঃকিন্তু তুমি কী জানো, পারফিউম ব্যাবহার কখন করা হয়?
ঃ না তো।
ঃ মেয়েরা পারফিউম ব্যাবহার করে বিয়ের পরে। সেও আবার শুধু স্বামীর কাছে। তুমি যে পারফিউম ব্যাবহার করে সবার মন আকৃষ্ট করছো, এতে তোমার পাপ হচ্ছে। আর হাদিসে এই পাপারিকে সরাসরি বেষ্যা বলা হয়।
মাসুম লক্ষ করলো, হঠাৎ জেবার মুখে কেমন একটা আবরণ পড়লো। আর এই যে তোমার পোশাক, এতে কী তোমার সম্মান বাড়ছে নাকি কমছে?
ঃ কেন? মাসুমের কথাই বোকার মতো প্রশ্ন করলো জেবা।
ঃ দেখেছো, তুমি যখন রিক্সায় আসছিলে কতো লোক তোমার দিকে তাকাচ্ছিলো?
ঃ হ্যাঁ, দেখেছি তো।
ঃ ওরা তোমার এই নগ্নতা দেখে মজা পাচ্ছিলো। তোমার জন্য ওদের লোভ হচ্ছিলো। আর তাতেও তোমার পাপ হচ্ছিলো। মেয়েদের শরীরের প্রত্যেক অঙ্গই অতি মূল্যবান যদি তার পর্দা থাকে। তাছাড়া হাদিসে আছে, নারীর শরীরের কোনো অংশ যদি কোনো পর পুরুষ দেখে, তবে সে অংশ বেহেস্ত যাবে না। এখন বলো, তুমি কী করবে? মানুষকে মজা দিয়ে নিজে পাপি হবে?
কথা বলে না জেবা। মাসুম বলেই চলে,“দেখেছো আমার বোনদের? ওরা আমাকে ভয় পায়। কারণ, আমি ওদের সাবধান করে দেই। তোমাকেও দিলাম। এখন মানা না মানা তোমার ব্যাপার। আর হ্যাঁ, তুমি এখনো অনেক ছোট। তাই তোমার কাছ থেকে এমন কোনো আচারণ আশা করবো না। যা আমাকে আর দশ জনের কাছে ছোট করে দেয়। আমাকে যদি বড় ভাই মনে করো তাহলে আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী যথেষ্ট উপকারে আসবো তোমার, কেমন?”
কথা বলে না জেবা। শুধু শুনে। ধমক দেয় মাসুম।
ঃ কী হলো, কথা বলছো না কেন?
ঃ কী বলবো?
ঃ বলতে হবে না। শুধু মনে রাখলেই হবে। যাও, বাসায় যাও। আমি অফিসে যাবো।
চলে যায় জেবা। শান্ত পদচরণে। নিরব অধরে তার নিদারুন মলিনতা। মাসুম চেয়ে আছে জেবার চলে যাওয়ার পথে। রিক্সা উঠে চলে যাচ্ছে মেয়েটা। আস্তে আস্তে রিক্সাটা অদৃশ্য হতেই হাঁটতে লাগলো সে। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে মাসুম, মেয়েটা খুব একটা মন্দ নয়, তবে কুশিক্ষা মানুষকে যে এতোটা অন্ধকারে ঠেলে দেয় সে কথা ভেবেই কষ্ট হয় মাসুমের। আর জেবার এই অজ্ঞতার জন্য তার মাকেই দায়ি মনে হয় তার কাছে। বেচারির বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি তবু যে সাজ তার? মেয়ে হয়ে জেবা করলে তার কাছে দোষের তো কিছু থাকে না। হ্যাঁ, জ্ঞান-হীনতায় অজ্ঞতার জন্ম দিচ্ছে।
হঠাৎ চমকে উঠে মাসুম। এতোদিন পর সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে আজ। চঞ্চল হয়ে উঠে মাসুমের মন। মেয়েটাও চেয়ে আছে তার দিকে। হাসলো মাসুম অচেনা আনন্দে। এই সেই মেয়ে যাকে চেনে মাসুম প্রায় দশবছর ধরে। এস. এস. সি পরীক্ষার পর একবার দেখা হয়েছিলো তাদের কলেজ চত্ত্বরে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে। কথা হয় নি মেয়েটার সঙ্গে সেদিন। শুধু ভালো লেগেছিলো প্রথম দেখায়। তারপর অনেক খুঁজেছিলো সে মেয়েটাকে। বাসায় গিয়ে বলেছিলো মাসুম সেদিন তার মাকে। মা হেসেছিলো আর বলেছিলো,“হে রে, তুইতো সবে মাত্র মেট্রিক দিচ্ছিস, তাতেই এতো ভালোলাগা এসে গেলো? ও মেয়ের অভিভাবক কী তোর মতো অকালপক্ক ছেলের সঙ্গে মেয়ে দিবে?”
ঃ কী যে বলো মা! আমি কী এখন বিয়ে করছি নাকি? ভালো লেগেছে তাই বললাম। তাছাড়া আমার কাধে কতো দায়িত্ব। ভালোভাবে লেখাপড়া করে তোমার ছেলে হতে হবে না? তুমি সেকালের উচ্চ শিক্ষিতা। আর আমি একালের হয়ে অধঃশিক্ষিত তা কী হয়?
মা সে দিন অনেক হেসেছিলো মাসুমের কথাই। কে জানতো সত্যি সত্যি মাসুমের ঘাড়ে এসে পড়বে সংসারের এই মহাভার। মুছে যাবে মায়ের মুখের সেই হাসি। কষ্ট হয় মাসুমের মায়ের সে হাসি মাখা মুখের ছবি ভেসে উঠতেই।
[চলবেই]
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবু সাহেদ সরকার ২৫/১০/২০১৬বাহ্
-
সোলাইমান ২৩/১০/২০১৬অনেক ভাল।
-
মোনালিসা ২০/১০/২০১৬অসাধারন